জামায়াতের উচিত ছিল.................. ভবিষ্যতে জামায়াতের কি করা উচিত?

লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৪৯:১৪ দুপুর

১. দলের নামঃ

যখন নির্বাচন কমিশনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ জামায়াতের গঠনতন্ত্র নিয়ে টালবাহানা শুরু করে তখন জামায়াতের উচিত ছিল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজের অন্তর্ভূক্তিকে প্রত্যাহার করে নেয়া। এবং সাথে সাথে ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার পার্টি’ টাইপের একটা পার্টি কায়েম করে সেটির নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা।

এতে যেন-তেনভাবে একটা ‘কম-ইসলামী’ গঠনতন্ত্র টাইপ করে সাইন করে দিয়ে শেষ রক্ষার এই ব্যর্থ চেষ্টা হতে বাঁচা যেত।

‘কামারুজ্জামান ফর্মূলা’ অনুযায়ী এই সম্ভাব্য মধ্যপন্থী দলটি জামায়াত আর বিএনপি’র মাঝে সমন্বয় করতে পারতো। নির্বাচনে জামায়াত ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার পার্টি’ কে সমর্থন দিতো।

এখনো সেটি করা যেতে পারে।

২. নামের ফযিলতঃ

ছাত্র শিবির না করে যদি ‘ছাত্র সংঘ’ নাম রাখা হতো তাহলেও ছাত্রদের একাংশ সে সংগঠনটি করতো। ফুলকুঁড়ি নাম না দিয়ে যদি ‘শিশু শিবির’ টাইপের কোন সংগঠন কায়েম করা হতো তাহলেও কিছু শিশু কিশোর সেটিতে থাকতো। ছাত্র শিবির না করে যদি ‘জামায়াতের ছাত্র শাখা’ রাখা হতো তাহলেও কিছু হেদায়েত নসীব হওয়া আল্লাহর বান্দাহ্ সেটিতে শামিল হতো। যেভাবে জামায়াতে ইসলামী নাম রাখা সত্বেও ইসলামপন্থীদের একাংশ এই ‘বিতর্কিত’ সংগঠনের পতাকাতলে শামিল হয়েছে।

বাতিলের সাথে ইসলামপন্থীদের সংঘাতের ফোকাল পয়েন্ট ইসলাম ও কুফরের মতো গ্লোবাল ইস্যুর পরিবর্তে এদেশে ১৯৭১ সালের মতো একটা নিতান্ত লোকাল ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইসলামপন্থীদের তাবৎ ক্রিয়া-কলাপ ঘুরপাক খাচ্ছে! নির্বাচন কমিশন হতে ‘ইসলাম ইস্যু’তে নিজেকে উইথড্র করে না নেওয়ায় জামায়াত ইসলামী আন্দোলনকে মূল স্রোতে রাখার দ্বিতীয় ঐতিহাসিক সুযোগ নষ্ট করেছে।

৩. আন্দোলন-সংগ্রামের ত্বরীকাঃ

চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম তথা কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য জামায়াত-শিবিরের উচিত ছিল ‘যুব কমান্ড’ টাইপের একটা প্লাটফরম করা যারা সমাবেশ, মিছিল, ঘেরাও ও হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচী দিতো। জামায়াত ও শিবির সেগুলোতে সমর্থন দিতো। তাতে, আন্দোলন ও আদর্শ – উভয়টাই অনেকবেশী রক্ষা হতো।

এখনো সেটি করা যেতে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণঃ

বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম ছাত্র আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে ১৯৯১-৯২ সালে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সিনেটের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যকে কর্মরত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে অপসারণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ এগারো মাস বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অচল ছিল। তখন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের মোকাবিলায় শিবিরের এক সদস্যে নেতৃত্বে ‘সংগ্রামী ছাত্র ঐক্য’ নামে ‘সাধারণ ছাত্র’দের একটা ফোরাম করা হয় যারা অবরোধ, হরতাল ইত্যপ্রকারের নেতিবাচক কর্মসূচীসমূহ ঘোষণা করতো আর শিবির সেসব কর্মসূচীর সমর্থনে মাঠে নামতো।

এ ধরনের কৌশল অবলম্বনের খেয়াল কি কারো হয়নি?

৪. রাজনীতির না বুঝে রাজনীতি করাঃ

জোরকরে লোকদেরকে নিজেদের ‘বিকল্প সঠিক অবস্থানকে’ গ্রহন করানোর চেষ্টা না করে লোকেরা যেভাবে বুঝে সেভাবে এপ্রোচ করা উচিত নয় কি? রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহের অদ্ভূত প্রকৃতি হচ্ছে, পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তকে ডিফাইন করে যদিও উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় পরবর্তী ঘটনা কারো জানা থাকে না। এজন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ সর্বদাই ট্যানটেটিভ হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে বিকল্প, এমনকি বিপরীত সিদ্ধান্ত বা অবস্থানসমূহও সমভাবে সঠিক হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

বনু কুরাইজাকে ঘেরাও করার সময়ে যারা ফলন্ত খেজুর গাছ কাটছিলেন আর যারা এটি সঠিক মনে করছিলেন না, তাঁদের উভয়বিধ সিদ্ধান্তকেই আল্লাহ তায়ালা সঠিক হিসাবে ঘোষণা করে অহী নাযিল করেছিলেন।

এমনকি জামায়াত যদি প্রথম থেকে অব্যাহতভাবে ৭১ ইস্যুকে এড্রেস করতো, তাহলে এতদিনে এটি মাঠে মারা যেতো। জামায়াততো একাই ‘স্বাধীনতা’র বিরোধিতা করেনি, সকল ইসলামপন্থীরাই পাকিস্তান রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় ৭১ নিয়ে খোলামেলা আলোচনাতে জামায়াত নেতাদের এত সংকোচ কেন

প্রসঙ্গঃ

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। (01 Aug, 2013)

কারণগুলো হলো;

১. জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে না। সেইসঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না।

২. গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সাম্প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। অথচ কাজে কর্মে ও বিশ্বাসে জামায়াত একটি সাম্প্রদায়িক দল।

৩. নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষপদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবে না।

লেখকের মন্তব্য

বিপ্লবের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের এক বা একাধিক কলামকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিতে হবে। ছাত্র অংগন, ব্যবসায়ী, কৃষক, সেনাবাহিনী, ধর্মীয় সেক্টর ইত্যাদি হলো এক একটি পিলার। মিডিয়া, আমলাতন্ত্র, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি - এসব হলো সহযোগি ফ্যক্টর।

গণতন্ত্রের মাধ্যমে বিপ্লবের প্রস্তুতি নেয়া যাবে বা নিতে হবে। গণতান্ত্রিক পন্থায় বিপ্লবের ধারনা বাস্তবতা বর্জিত। সরকার পরিবর্তন মানে বিপ্লব নয় যদিও বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার ও সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন হয়ে থাকে।

বিপ্লব ও গণতন্ত্র সহ প্রয়োজনীয় নোশনগুলো সম্পর্কে শীর্ষ জামায়াত নেতৃবৃন্দ স্বচ্ছ ধারনা রাখে কিনা জানিনা। আমার সন্দেহ, তাঁরা ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি নিয়ে একধরনের ফ্যান্টাসীতে ভোগেন। এ ধরনের কঠোর মন্তব্যের জন্য আমি দুঃখিত!

আজকের আর্টিক্যালটি লিখেছেন

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক

সহযোগী অধ্যাপক,

দর্শন বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

লেখকের অন্যন্যা ব্লগ পড়ার জন্য এখানে ভিজিট করুন।

বিষয়: বিবিধ

২৫৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File