যুগে যুগে মীর জাফরদের আবির্ভাব। মইন ইউ. আহমদদের মিশরীয় ভার্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৪৩:১২ রাত
দীর্ঘ বত্রিশ বছর জগদ্বল পাথরের ন্যায় মিশরীয় জনগণের বুকের উপর চেপে বসা নিষ্ঠুর জালেম স্বৈরশাসক কুখ্যাত হোসনি মোবারক আরব বসন্ত তথা বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে সেখানে প্রথম বারের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুরসিকে কেন ক্ষমতা থেকে অবৈধভাবে উৎখাত করা হলো? মিশরে আজ পৃথিবীর মানুষ কি দেখছে? ড. মুরসি কাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে? এমন কি অপরাধ করেছে ড. মুরসি তাকে এক বছর যেতে না যেতেই ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে? হোসনী মোবারককে ব্যবহার করে যারা দীর্ঘদিন মরুর অঞ্চল মিশরকে প্রশাসনিকভাকে মরুভূমিতে পরিনত করে গোটা মধ্যপ্রাচ্য তথা জাজিরাতুল আরবের গুটিকয়েক শাসকগোষ্ঠীর পারিবারিক ও গোষ্ঠীগত ভোগবিলাসিতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের খনিজ সম্পদকে যারা এতোদিন খুক্ষিগত করে নিজেদের অর্থনীতি ও অস্ত্রভান্ডারকে ফুয়েলিং করে আসছে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন ভিন্ন হলেও কয়েকটি জায়গায় তাদের স্বার্থ একই সুত্রে গাথা।
ইখওয়ানুল মুসলেমিনের নেতৃত্তে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের রাজনৈতিক উত্থানের ফলে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার স্বার্থে আঘাত এবং চির অভিসপ্ত জায়নবাদী ইয়াহুদীদের গায়ের জ্বালাতন শতগুণ নয় বরং হাজার গুন বেড়েছে। স্বৈরচারী হোসনি মোবারককে দিয়ে মিশরের রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোগত সব সংস্থা ও বিভাগকে দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতাহীন একটি অতি সেকুলারপন্থী ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি দরদহীন শক্তিশালী ভোগবাদী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে রেখেছিল। যাতে কায়েমী স্বার্থের তল্পীবাহকদের স্বার্থে আঘাত না লাগে। এই শক্তিশালী গোষ্ঠীর সদস্যদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে রেখে হোসনি মোবারক দীর্ঘ বত্রিশ বছর ক্ষমতায় থেকে মিশরকে পৃথিবীর বুকে আত্মমর্যাদাহীন ও অর্থনৈতিকভাকে পঙ্গু করে রাখলেও আমেরিকা ও ইয়াহুদীদের স্বার্থকে বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে ক্ষমতার কুরসিকে নিরাপদ রাখার জন্য। আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ্যবীলনীয় সভ্যতার প্রাচীন এই মরুর দেশ মিশর যদি কোন একদিন নিজস্ব স্বকীয়তায় আত্মমর্যাবোধে জেগে উঠে তবে মানবতার শত্রু ও অর্থনৈতিক নাফরমানদের পৃথীবির গরীব মানুষদের শোষণ করার সহজ পদ্ধতি ভেস্তে যাবে। শোষণবাদী আন্তর্জাতিক শকুনদের আশংকা বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তিহীন মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ সম্পদে ভরপুর ক্ষমতাহীন বিভিন্ন রাষ্ট্রের খনিজ সম্পদ লোটপাটের দরজাও বন্ধ হয়ে যাবে।
অপর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ভোগ বিলাস ও অপচয়কারী শাসকদের ক্ষমতার তখতে তাউস উড়ে যাওয়ার আশংকায় তথাকথিত মুসলিম উম্মাহর স্ব-ঘৌষিত কান্ডারী ও খাদেমদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পেটের খাদ্যের বদহজমের কারণে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে সেই তেউনিশিয়ার মুহাম্মদ বু-আলীর গায়ে পেট্রোলিয়ামের আগুনের লেলিহান শিখায়। তাই তারা ঘোষণা দিয়েছে- “কিসের ইসলাম, কিসের ধর্ম, তুমি আমি এক জাত
ক্ষমতার কুরসি ঠিকিয়ে রাখতে সব বেদাভেদ বাদ
তাই তারাও ইখওয়ানের নেতৃত্বে ইসলামের রাজনৈতিক উত্থামের মাধ্যমে ইসলামকে একটা নিছক আচার অনুষ্ঠান সবর্স্ব ধর্ম হিসেবে নয় বরং পরিপূর্ণ এবং চুড়ান্ত জীবন বিধান হিসেবে মেনে নিয়ে মানব সমাজ থেকে যাবতীয় অনাচার, অশান্তি, হিংস্রতা, অরাজকতা দুর করে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণকর একটি সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানুষের পার্থিব সুখ শান্তি এবং পারলৌখিক জবাবদিহিতার উপযোগি হিসেবে গড়ে তোলার একটি কার্যকর সর্বাত্মাক আন্দোলনকে দমন করার জন্য বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা, শোষণবাদী ইউরোপিয়ান খ্রিস্টীয় শক্তি আর চির ষড়যন্ত্রবাদী জায়নিষ্ট ইয়াহুদীদের সাথে হাত মেলাতে মোটেও তাদের বিবেগে বাধে না।
তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য যুগে যুগে কিছু বিবেক বিকৃত অপদার্থ মোনাফিক মুসলিম মিল্লাত তথা মানবতার ধর্ম ইসলামের ঘরে জন্ম গ্রহণ করে। আমাদের এই বাংলাদেশকে প্রায় দু’শ বছর শোষণ ত্রাষণ ও লোটপাঠের মাধ্যমে চাঁড়া বানিয়ে ১৯৪৭ সালে ফেলে পালিয়ে যায় কার বদৌলতে? সেই মীর জাফর আলী খাঁন ওরফে মির জাফর। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় মির জাফর তথা মইন ইউ আহমদ এর আরেক মোনাফেকীর কারণে এদেশের মুসলমানদের উপর ইতিহাসের ভয়াবহতম নির্যাতন ও দেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে দেয়। এই অপকর্মের খল নায়ক হচ্ছেন এই সেই জেনারেল মইন ইউ. আহমদ। এই মোনাফেকরা শুধু বাংলাদেশে নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আর্ভিভুত হয়। আজকে দেখা যাচ্ছে মিশরকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ফেরাউনের নব্য আদর্শিক সন্তান আরেক মোনাফিক মীর জাফর জেনারেল সিসিকে। ইখওয়ানুল মুসলিমিন দীর্ঘ একাশি বছর ধরে তিলে তিলে, অসংখ্য দেশপ্রেমিক মরদে মুমিনের বুকের তরুজাতা রক্ত দিয়ে, অগণিত কর্মীর সীমাহীন জেল জুলুম ও নির্যাতনের বিনিময়ে মিশরের উর্ভর ভুমিকে ইসলামের জন্য চুড়ান্তভাবে তৈরী করেছে।
শোন হে তাগুতের পুজারী খোদার দুশমন মানবতার শত্রুরা! ”তোমরা কি ভেবেছো এক ফুৎকারেই মিশরের মাঠি থেকে মুসা’র বংশধরদের ধ্বংস করে দিবে? অথচ আল্লাহ একজন আছেন। হয়তো নিতি চাচ্ছেন তার দ্বীনকে মিশরের মাঠিতে, মিশরের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুরিপুর্ণভাবে অধিষ্ঠিত করাবেন। তোমরা এতে যতই অন্তর জ্বালায়, নিজেদের গোমরাহীর আগুনে জলতে থাকো না কেন! আর কত ইখওয়ানের রক্ত ঝড়াবে? কত লাশ তোমরা চাও? শহীদদের প্রতিটি কষ্টদায়ক আত্নচিৎকার, গড়িয়ে পড়বে, তাদের প্রতিটি রক্ত বিন্দু বুলেট হয়ে তোদের মত জালিমের বুকে বিদ্ধ হবে।
পেছনে পলায়নের কোন সুযোগ নেই হে মিশরবাসী! সামনে এগিয়ে যাও। হয় ফেরাউনের দোষরদের খতম করে নীল নদে ভাসিয়ে দাও, না হয় সেই প্রচেষ্টায় নিজের জীবন বিলিন করে শহীদ হয়ে সোজা জান্নাতের পথে রাওনা দাও। তৃতীয় কোন বিপল্প নেই তোমাদের।
মইন ইউ. আহমদের মিশরীয় ভার্ষণে মনে হচ্ছে অনেক ভুল ভ্রান্তি রয়েছে। মিশরের মইন ইউ আহমদ এখন ফাটা কলে আটকে যাবেন। সে এমন একটি গর্তে পা দিয়েছেন যেখানে ঘুমন্ত ঘোকরা শাপের লেজ রয়েছে। আর সেই শাপের মাথাটি এখন ভিন্ন একটি গর্ত দিয়ে বের হয়ে ফনা তুলেছে।
বিষয়: বিবিধ
২৪৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন