কোথাকার কোন অখ্যাত গোলাম!! সেও সেলিব্রিটি নাকি?
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ২৬ জুন, ২০১৩, ০৬:১৫:২৪ সন্ধ্যা
আমাদের দেশের যে কয়েকজন মহান ব্যক্তি বা হাই প্রোফাইল সেলিব্রিটি মহামানব ছিল তাদেরকে যার যার আদর্শগত গন্ডির মধ্যে থেকে স্মরণ ও বিচার বিশ্লেষণ করে। তাদের জীবনের বিভিন্ন কর্মকান্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের রেখে যাওয়া আদর্শকে পুজি করে তাদের ভক্ত-অনুরক্তরা মৃত্যূর পরেও তাদেরকে ঠিকিয়ে রাখার চেষ্টার মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিলের বিভিন্ন কলা কৌশল প্রয়োগ করে নিজের অস্তিস্থ ধরে রাখার চেষ্টা করে। বিশেষ করে আমাদের দেশের রাজনীতিতে এই সিস্টেমটা খুবই কার্যকর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় হাই প্রোফাইল সেলিব্রিটির পক্ষে প্রচার প্রচারণা ও স্তুতি বাক্যের মাধ্যমে তাকে ফেরেস্তার আসনে বসানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি উক্ত সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্বকে দুর্ণাম ও অপপ্রচারের মাধ্যমে তাকে শয়তানের আসনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এটা আমাদের দেশের একটি চলমান রাজনৈতিক ট্র্যডিশন। কিন্তু রাজনীতির বাইরেও আবার অনেক মহান ব্যক্তিত্ব আছেন যাদের অবদানে গোটা জাতি ও দেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিতি করানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক ভুমিকা রাখছে। তারাও কিন্তু আমাদের দারুণ অথবা মারাত্মক সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্ব।
দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের কাছে প্রধান সেলিব্রিটি পুজনীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। তেমনি বিএনপি’র নিকট দলীয় প্রচার-প্রচারণায় প্রধানতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হচ্ছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ জিয়াউর রহমান ছাড়াও আমাদের রয়েছেন আরো অনেক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সহ অনেক বিখ্যাত সেলিব্রিটি। উল্লেখিত সেলিব্রিটিদের কর্মকান্ড ও অবদান কিংবা অপকর্মের কারণে দেশ ও জাতি যেমন উপকৃত হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থও হয়েছে বিভিন্নভাবে। আর এই ক্ষতিগ্রস্থ কিংবা লাভমানের দৃশ্যটা হচ্ছে অনেকটা আপেক্ষিক। যারা নিজেদের সিলিব্রিটি ব্যক্তিত্বকে ফেরেস্তার আসনে বসাতে চেষ্টারত তাদের কাছে প্রতিপক্ষের সেলিব্রিটিকে শয়তানের আসনে নামিয়ে ফেলার কারণে তার সব ভাল কর্মকান্ডই অপকর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে প্রতিপক্ষের নিকট। এজন্যই আওয়ামী লীগের চোখে বিএনপির সব কর্মকান্ড খারাপ, দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী। অপর দিকে বিএনপির’ চোখে আওয়ামী লীগের সব কর্মকান্ড দেশপ্রেমহীন জনবিরোধী ও ফ্যসিবাদী আচরণ। এই দুই রাজনৈতিক গোষ্টীর একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে ক্ষমতা আখড়ে থাকার জন্য বা ক্ষমতা থেকে বিতাড়নের জন্য এমন সব গর্হিত কাজকর্ম করে যাচ্ছে যার ফলে এদেশের সাধারণ মানুষের দুর্গতি ও দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আখড়ে থাকার জন্য এমন নিষ্ঠুর ও ফ্যসিবাদী পন্থা বেচে নিয়েছে যার ফলে আমাদের দেশের অনেক মহান সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্ব সীমাহীন জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বলির পাঠা হিসেবে আজ দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার আয়োজন চলছে। আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী এমন একজন মহান সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্ব যাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই এদেশের মানুষের কাছে। ”আল্লামা সাঈদী” হিসেবেই যাকে বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ সহ পৃথিবীর অগনিত মানুষ চিনে।
মুজিব, জিয়া, এরশাদ, হাসিনা-খালেদা কিংবা ড. ইউনুসকে যেমন এদেশের সর্বস্তরের মানুষ চিনে ও জানে তেমনি সাঈদী সাহেবকেও সবাই চিনে ও জানে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী জালেমরা তাদের ক্ষমতায় ঠিকে থাকার ক্ষেত্রে পথের কাটা মনে করার কারণেই আজকে জামায়াতে ইসলামী এবং তার নেতৃবৃন্দকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যই মুলত তথাকথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের নাটক মঞ্চস্থ করে যাচ্ছে।
সাঈদী সাহেবের মামলায় আইনী প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হওয়ার সুযোগ পেয়ে অনেক অখ্যাত-কুখ্যাত নরাধমও রাতারাতি আলোচিত-সমালোচিত হয়ে দেশবাসীর নজরে এসেছে। যেমন- তাদের মধ্যে কয়েকজন-
১ নিজামুল হক নাসিম (একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন), ২ রানাদাস গুপ্ত নাকি কানাদাশ কি যেন নাম, ৩) জিয়াদ আল মালুম নামের কোথাকার কোন বে-মালুম বটতলার উকিল, ৪ গোলাম টিপু নামের অখ্যাত নিষিদ্ধ পল্লীর দালালসহ বেশ কয়েকজন হঠাৎ পরিচিত হয়ে উঠেন। এসব ফালতু গার্বেজগুলো সাঈদী সাহেবের জুতা বহন করার যোগ্যতাও রাখেন না। কিন্তু তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় হত্যা করার মিশনের সদস্য হওয়ার কারণে এসব নাফরমানগুলোও দেশের বেশ কিছু সচেতন মানুষের নজরে এসেছে।
গোলাম টিপুর মত একজন বেইশ্যার দালাল কি শেখ মুজিবের ধারে কাছেও যেতে পারবে?
অনেক বড় সেলিব্রিটি ছিল শেখ মুজিব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তাকে তো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংগালীর এক নম্বর আসনে বসিয়ে এই জাতির পিতা বানিয়ে গেলানোর জন্য কাগুজে মুদ্রার টাকা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সহ দেশের আনাচে কানাচেঁ এমনকি কোথাও কোথাও পয়ঃনিষ্কাশনের টয়লেটে পর্যন্ত ছবি টাঙগিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত তার মর্যদা এক নম্বরে ধরে রাখার সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কালের বিবর্তনে তার দু:স্বাশনে অধিষ্ঠ হওয়ার কারণে তার করুণ মৃত্যুতে সমবেদনা জানায়নি এদেশের মানুষ। যে শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর তৎকালিক দেশের আট কোটি মানুষ শোকাহত না হয়ে তার জানাজায় শরীক হওয়ার পরিবর্তে অনেকেই এই বলে শোকরানার নামাজ পড়েছিল- একজন ফেরআউনের পতন ঘটেছে। অথচ বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে তার নাম অঙ্গাঙ্গিভাবেই জড়িত হয়ে আছে।
অপর দিকে সাঈদি সাহেব এমন এক ব্যক্তিত্ব যার জনপ্রিয়তা শুধু বাংলাদেশের সীমার মধ্যে আবদ্ধ নেই। গোটা বিশ্বময় তার মুক্তির জন্য ডাক উঠেছে। হয়তো একারণেই তার ছেলের নামাজে জানাজাতে গগণবিদারী কান্নার আওয়াজে লক্ষ লক্ষ শোকাভিভুত মানুষের জনসমুদ্র সৃষ্টি হয়েছিল।
অন্যদিকে কোথাকার কোন অখ্যাত গোলাম টিপু? এই নাফরমানের ভাগ্য ভাল বলতে হবে এজন্যই যে সে কোন বিখ্যাত সেলিব্রিটি না হওয়ার কারণে তাকে দেশের সাধারণ মানুষ চিনে না। যদি দেশের মানুষ চিনতো তবে তার কোন আপনজনের বিয়োগান্তে দেশবাসীর কি পরিমাণ ঘৃণা ও ধিক্কার তার প্রতি নিক্ষেপ হতো আল্লাহই মালুম! এই অখ্যাত গোলাম টিপু নিজের সর্বশক্তি দিয়ে শতাব্দীর নিকৃষ্টতম এক মিথ্যা মামলার দুতিয়ালীর মাধ্যমে দুনিয়ার জঘন্যতম মিথ্যাচারে মেতে উঠেছে। পৃথিবীর কোন সৎ আইনজীবি এসব মিথ্যা মামলা পরিচালনা করার কোন নজীর নেই। কিন্তু এই গোলামরা তাদের তথাকথিত মুনিব ইনডিয়ান নরপিচাশ ও তাদের এদেশীয় তল্পীবাহক নাস্তিক কুলাঙ্গারদের মনঃতুষ্টির আশায় একটি অন্যায় মামলাকে পুজি করে রুটি-রুজির সুযোগ করে রাতারাতি পরিচিত হওয়ার জন্য তাতে আত্মনিয়োগ করেছে।
প্রত্যেক মৃত্যুই তার আপনজনের জন্য বেদনার কারণ। কোন কোন মৃত্যু বেদনার শোক আপনজনকে চাড়িয়ে তার পাড়া প্রতিবেশি গ্রাম-শহর ছাড়িয়ে গোটা দেশের মানুষকে এমনকি সারা দুনয়ার মানুষকে শোকাহত করে। আবার অন্যদিকে তার বিপরীতও নজীর রয়েছে। সাঈদী সাহেবের মামলায় আইনি প্রকৃয়ায় জড়িত গোলামের শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার ও মারাত্মাক পাপের ভাগিদার কোন অবস্থাতেই তার পরিবারের সদস্যেদের উপর বর্তায় না। এই গোলামের একমাত্র মরহুম ছেলে সন্তানের দুনিয়াবী আমল অনুযায়ীই মহান আল্লাহ নির্ধারণ করবেন আখিরাতে তার অবস্থান কোথায় হবে। একজন বিশ্বাসী মুসলমান মাত্রই এটাই বিশ্বাস করে। কিন্তু এই গোলাম টিপুর ছেলে হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত হৃদয়ের প্রতি দেশবাসীর কোন সহানুভুতি আছে? গত বছর ঢাকা মহানগরীতে দুটো বড় বড় নামাজে জায়নাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একটি আল্লামা সাঈদীর প্রাণপ্রিয় সন্তান মরহুম মাওলানা রাফিক বিন সাঈদী অপরটি হচ্ছে মরহুম মাওলানা মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রা)। কেন তাদের জানাজায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছিল? কারণ তাদের সাথে ছিল এদেশের মাটি ও মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। তারাই বহন করতো এদেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার ও জীবনবোধের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব। তাই তাদের জানাজাতেই আত্মার টানে, জীবনবোধের টানে শোকাহত হৃদয়ের অনুভুতি প্রকাশের সম্মিলিতি জনসমুদ্র দেখি। কিন্তু কোন নাস্তিক কিংবা আধা নাস্তিক তথাকথিত প্রগতিশীল নামের প্রকৃত অর্থেই দুর্গতিশীল সেলিব্রিটির মৃত্যুবরণ করলে আমরা তো এতো বড় জানাজা হতে দেখি না! তার পরেও এই গোলামদের বোধদয় হবে কিনা আল্লাহই ভাল জানেন। রাফিক এবং আমিনীর জানাজায় আগত উপস্থিত লক্ষ লক্ষ জনতার অশ্রুসিক্ত কান্নার আওয়াজ তাদের প্রতি এদেশের মানুষের ভালবাসা ও তাদের পরিবার পরিজনদের প্রতি দরদ ও সমবেদনাই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু গোলাম টিপুদের মত কোন নাফরমান কুলাঙ্গারের আপনজন বিয়োগান্তে কিংবা "থাবা বাবা" নামের আত্ম স্বীকৃত খোদাদ্রোহীদের জাহান্নামে যাওয়ার প্রাক্কালে এদেশের মানুষের নিরবতাই তাদের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার বহিপ্রকাশ।
এখনো সময় আছে তাওবা করে নিজের কৃতকর্মের জন্য বাকী জিন্দেগীতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন