বাবার বিয়ের পর আমার মা’ ছিল একজন। কিন্তু আমি বিয়ে করার পর আমার মা হলেন তিনজন।

লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ১৯ জুন, ২০১৩, ০৮:১০:২২ রাত

আমার জন্মদাতা পিতা তথা আমার আব্বার বিয়ের দীর্ঘ ১৩ বছর পর আমার মাতা-পিতার সর্বশেষ এবং চতুর্থ সন্তান হিসেবে এই দুনিয়াতে আগমন। মা’র গর্ভে থাকাবস্থায় কি পরিমাণ কষ্ঠ দিয়েছি মা’কে তা কখনো বুঝার চেষ্টা করিনি। অনুভব করা তো অনেক পরের কথা। দশ মাস দশ দিন ছিলাম স্বর্গসুখে।

কিন্তু এই স্বর্গে যিনি অতি আদরে যতনে রেখেছেন তার সীমাহীন কষ্ঠ, এক মূহুর্তেরও যন্ত্রনা, দৈর্য্যের পরাকাষ্ঠা কখনো অনুভব করিনি।

অতুলনীয় নিষ্ঠুরতা, সীমাহীন যন্ত্রণা দিয়ে দুনিয়ায় আগমণ মুহুর্তে অনুভব করার বোধশক্তি ছিল না কি পরিমাণ কষ্ঠ দিয়েছি মা’কে।

এই যে কষ্ঠ, এই যে যন্ত্রণা! এসব পরিমাপ করার কোন যন্ত্র কি আবিস্কার হয়েছে দুনিয়ায়?

হয়তো জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ যন্ত্রনা ও শারিরিকভাবে দুর্বলতম মূহুর্তে সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে কোন গর্ভধারিনী মা চরম খুশী এবং পরম সুখ অনুভব করেন!

আমি জানি না মা’কে দুনিয়াতে আসার মুহুর্তে আমার কান্নার আওয়াজে তখন কতটুকু খুশী করতে পেরেছিলাম।

সে সময়ের প্রতিটি নবজাতক শিশুর একটু কান্নার আওয়াজ তার মা’কে সীমাহীন আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দেন।

কত আনন্দ-বেদনা, মান-অভিমান ও আদর যত্নে লালন-পালন করে সন্তানকে মানব সমাজে মর্যাদার আসনে বসিয়ে বুক ভরা আশা ভরসা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে জীবন চক্রের বিকাল বেলায় চলে যান গর্ভধারীনি মা।

কিন্তু আমাদের এই সমাজে সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পর মা’য়ের কষ্ঠের কথা ও যন্ত্রনার স্মৃতি অনেকেই ভুলে যায়।

আমার দ্বিতীয় মা’য়ের গর্ভকালিন তার গর্ভধারিনীর কষ্ঠ ও যন্ত্রণা দেখে কিছুটা আঁচ করার চেষ্টা করেছি প্রথম মা’য়ের গর্ভে থাকাবস্থায় আমি কি পরিমাণ কষ্ঠ ও যন্ত্রাণা দিয়েছি।

সময়ের ব্যবধানে সিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে মানুষের সচেতনতা। এর ফলে বর্তমান যুগের মা’য়েরা গর্ভকালিন ও সন্তান প্রসব পরবর্তী কষ্ঠ, যন্ত্রনাকে মোকাবেলা ও জয় করার কলা কৌশল রপ্ত করেছে।

আমার প্রথম মা’ সেই সুযোগ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল।

হয়তো গ্রামগঞ্জের সে যামানার অনেক মা’রা উন্নত সিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কারণে এখনো সে সময়ের ক্ষত ও যন্ত্রানার বোঝা শরীরে বয়ে বেড়ায়।

আমরা সন্তানরা কখনো কি চিন্তা করি- যে মা’ এতো কষ্ঠ ও যন্ত্রানা স্বীকার করে আমাদের দুনিয়া দেখালেন তার জন্য কি কি করা উচিত? কিভাবে মা’র প্রতি কৃতজ্ঞ ও শোকরিয়া আদায় করা উচিত?

আমার প্রথম মা’ বর্তমানে জীবন দিবসের বিকাল বেলাতে।

দ্বিতীয় মা’য়ের বয়স সাত বছর ছয় মাস।

তৃতীয় মা’য়ের বয়স চার বছর চুই চুই।

আমার তিন মা’য়ের তিন ধরণের স্বভাব। কারো স্বাভাবের সাথে কারো মিল নেই।

স্বভাবের মিল না থাকলে কি হবে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে মিলের অভাব নেই।

আমার দ্বিতীয় মা’ চেহারা সুরুতে অনেকটা আমার ফটোকপি।

অথচ সে আমাকে গর্ভ ধারণ করেনি। আমি গর্ভ নিয়েছি আমার প্রথম মা’র ঔরষে।

দ্বিতীয় মা’কে যখন জিজ্ঞাসা করি- মা’ তোমার সাথে আমার চেহারার মিল থাকলো কেমনে?

তখন সে বলে- তুমি আমার ছেলে না?

মা-ছেলে তো চেহারার মিল থাকবেই!

আর তখনই প্যাঁচালটা লেগে যায়।

আমার প্রথম মা’র সাথে দ্বিতীয় মা’য়ের তখন লেগে যায় যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কলা কৌশল ও অস্ত্র-শস্ত্র উভয় পক্ষকে যোগান দিতে চতুর্থ একপক্ষের উদয় হয় তখন। আপনি বলতে পারেন অনেকটা আমেরিকান কৌশল। বিবধমান দু’পক্ষেরই বন্ধু সেজে নিজে একটু সুবিধা আদায় করে নেয়া আর কি। (আমার আব্বাজান)

প্রথম মা’ বলেন- ঐ তুই আমার ছেলেকে পুরোটাই দখলে নিয়ে যাবি নাকি?

এই ঝগড়া ঝাটিতে তৃতীয় পক্ষের ভুমিকা ছিল এরকম-

আব্বু ওরা ঝগড়া করুক। আপনি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিন। আমার তৃতীয় মা’ যে নাকি আমার স্বভাব চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে, তাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেই কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি না।

গভীর রাত্রে আমার প্রথম মা’র শোবার রুম থেকে প্রতি রাত্রের রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে সেই সু-মধুর আওয়াজ ভেসে আসে আমার ঘুমন্ত কর্ণে বিদ্ধ করে-

ইয়াসিন ওয়াল কুরআনিক হাকিম.......,

ইয়াআ আইয়্যুহাল মুজ্জামিল!

ক্কুমিল্লাইলা ইল্লাহ কলিলাহ...........

অপর দিকে অদৃশ্য কোন এক ঘৃণিত আত্মা পরম যত্নে মাথায় এবং পিঠে ভার্চুয়াল হাত বুলাচ্ছে। হয়তো সেই অদৃশ্য ঘৃণিত আত্মা মনে মনে বলছে- রাত আরো অনেক বাকী। তুমি আরেকটু আরামে ঘুমাও। রাতের শেষ ভাগের ঘুমটা না কত মঝাদার! এদিকে বালিশ এবং আরামের বিছনাটাও যেন চুম্বুকের মত আটকে রাখতে চাইছে। নিজের নফস আর চোখের মনস্তাত্তিক দন্ধে ঘুম আসে আর যায়। কিন্তু বিছনা ছাড়তে মন চায় না।

এরিমধ্যেই সেই মহাজাগতিক ডাক শুরু হয়ে গেলো-

আল্লাহু আকবর ।। আল্লাহু আকবর। .............

আসসালাতু খাইরুন মিনান্নাউম।.........

এদিকে আমার প্রথম মা’ এবার আর দেরি নয়। সরাসরি ডাক দিলেন- বাবা উঠো আজান দিয়েছে, সকাল হয়ে যাচ্ছে, আমার তোমার সবার রব-এর ডাকে সাড়া দাও। (আহমদ মুসাকে উদ্দেশ্য করে)

মা!

এখানেও তুমি?

অদৃশ্য সেই ঘৃণিত আত্মার ফাঁদ থেকে নিজের সন্তানকে বাচাঁনোর জন্য আমার প্রথম মা’ সিংহের গর্জনের চেয়েও ভয়ানকভাবে ডাক দিলেন- উঠ্ঠো! সুর্য উদিত হওয়ার পূর্বেই তোমার রবের হক আদায় কর!!!

সত্যিই মা তুমি তুলনাহীন!

তোমার তুলনা তুমিই!

[পাঠকের প্রতি আবেদন: আমার প্রথম মা’য়ের মত যেন আমার দু’মেয়েকে আদর্শ নারী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি সেই দুআ করবেন।]

বিষয়: বিবিধ

৪৮৪৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

334128
০৬ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৪
জাহাঙ্গীর ফারুক লিখেছেন : ভীষণ ভালো লাগা এক অনুভুতি আমার শিরদাড়া দিয়ে বের হয়ে গেল। আল্লাহ জগতের সকল মাকে সর্বোত্তম প্রতিদান দিন। মায়েরা তো কিছু পাবার আশায় সন্তানকে ভালবাসেন না।ভালবাসেন তুমি যে সন্তান সুখ তুমি দিয়েছ মায়ের রিপুতে, মায়ের সত্ত্বার মধ্যে তার কারনেই মা তোমার ইচ্ছার প্রতিধ্বনি করে। তোমার ইচ্ছাই মায়ের ইচ্ছা। তাকে তুমি সর্বোত্তম পুরুস্কারে ভূষিত কর। আর মেয়ে সন্তানেরা এক কালে বাবাদের মা হয়ে যায় তোমার দেয়া গুনের বরকতেই। তুমি সেই মা রুপি মেয়েদেরকেও সর্বোত্তম সুরক্ষা দান কর । আমীন। চুম্মাহ আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File