কিভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা সম্ভব?
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ৩০ মে, ২০১৩, ০৪:২৪:০৭ বিকাল
আমার ধারণা ছিল বাবু শ্রী সঞ্জিব চৌধুরী এবং মানবাধিকার নেত্রী ড. মিনা ফারাহ মুসলমান। হয়তো চদ্ম নামে লিখেন। কিছুদিন পুর্বে তাদের নিজেদের লেখা পড়েই আমার ভূল ভেঙ্গেছে। মুসলমানদের ব্যাপারে এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মাঝে এমন কতগুলো ভুল ধারণা এতো গভীরভাবে কিভাবে গ্রোথিত হলো তার জন্য গবেষণা করার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের মধ্যে কিছু দুর্বৃত্ব টাইপের লোক এই বীজ বপন করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে যারা এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চর্চা করে আসছে কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে পাশে থেকে ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভক্ষণে ব্যস্ত ছিল এবং এখনো আছে তারাই এসব বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। যাতে দেশের মানুষকে ভালভাবে শোষন করা যায়। অন্যায়ভাবে দুর্বলের সম্পদকে গ্রাস করা যায়। এখানে একজন দুর্বল অসহায় হিন্দুর সম্পদকে প্রবল শক্তিশালী ব্যক্তি যখন গ্রাস করে তখন এটাকে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের যুক্তি খোজার চেষ্ঠা করা হবে কেন? এদেশে প্রভাবশালী কর্তৃক হিন্দু ধর্মের অনুসারী কোন দুর্বলের উপর আগ্রসন হলে সম্প্রদায়গত পরিচিতি প্রধান্য পায় কেন? এরকম আগ্রসন কি শুধু হিন্দুদের উপর হয়? সমাজের অন্য কোন শ্রেণীর উপর যখন এ ধরণের জুলুম নির্যাতন হয় তখন তার ধর্ম পরিচয় উল্লেখ করা হয় না কেন? এদেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্যই সংখ্যলঘু এবং সংখ্যগুরুর ধুয়া তুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের দুষ্ট লোকরাই তাদের মনের কুপ্রবৃত্তি টিকিয়ে রাখার জন্য এই বিভাজন চালু রেখেছে। এদেশে কোন অসহায় হিন্দুর উপর কোন ধরণের নির্যাতন করা হলে যেভাবে হৈ চৈ করতে দেখা যায় অন্য কোন সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন লোকের উপর এধনের জুলুম নির্যাতন করা হলে হৈ চৈ তো দুরে থাক কোন মিডিয়াতে এ নিয়ে কোন আলোচনা সমালোচনা করা হয় না। অথচ ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুশিত আমাদের দেশে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কত মানুষ কতভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। এর মধ্যে কতভাগ মানুষ মুসলিম আর ভাগ মানুষ হিন্দু বা বৌদ্ধ? যদি সঠিক পরিসংখ্যান বের করা হয় তবে নিঃসন্দেহে তুলানামূলকভাবে মুসলিমদের সংখ্যা বেশী হবে। আক্রান্ত মজলুম ব্যক্তি বা আক্রমণকারী প্রভাবশালী জালেমের রাজনৈতিক কানেকশন থাকলে সেই ঘটনাটি মিডিয়ায় যে যার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রচার ও বিশ্লেষণ করে। যার ফলে প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটন হওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন রঙ ছড়িয়ে প্রচার করে। মজলুমের পক্ষ অবলম্বনকারী সংখ্যায় কম হলেও তাদের প্রকাশ ভঙ্গিতে যেমন অতি আবেগ জড়িত থাকার কারণে যতটুকু ক্ষয়-ক্ষতি হলো তার চেয়ে বেশী বিলাপ যেমন লক্ষণীয় তেমনি প্রভাবশালী জালেমদের লাঠিয়াল মিডিয়ার মিথ্যাজীবি সন্ত্রাসীরা তাকে অতি ফেরেস্তা বানানোর জবরদস্তিমূলক প্রচারণার কারণে খলনায়ককে নায়ক বানানো, ঘসেটী বেগম ডাইনীকে রাবেয়া বসরী বানানোর এক আজব যুগের মধ্যে আমরা বসবাস করছি। আমাদের দেশের মতলববাজ কিছু লোক মুসলিম ছাড়া অন্য কোন সম্প্রদায়ের কেউ নির্যাতিত হলে তখন তাকে সাম্প্রদায়িক উস্কানী হিসেবে প্রচার করে প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এই অপ্রপ্রচারের ফলে এদেশের আদিবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ জনগণের মধ্যে একটা কল্পিত আতংক বিরাজ করে। স্বাধীনতার পর থেকে ৪২ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের সেকিউলার রাজনীতির প্রচারণার ফাদে পড়ে এদেশের সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ও নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসন আমলেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে নির্যাতনকারী ক্ষমতাবান লোকটি আওয়ামী ঘরানার। অতি সাম্প্রতিক রানা প্লাজার কুখ্যাত মালিক একজন অসহায় হিন্দুর সম্পদ গ্রাস করে সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মরার ফাদ তৈরী করেছিল আওয়ামী লীগের আশ্রয় পশ্রয়ে বেড়ে উঠা সন্ত্রাসী সোহেল রানা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে একটি বিষয় খুবই স্পস্টভাবে ধরা পড়ে যে সংখ্যালগু হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু মতলববাজ চরিত্রহীন লোকদের বেপরোয়া জীবনাচার দেশবাসীর নজরে পড়ার মতো। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের দাপটে সাধারণ মানুষ অসহায়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এদের আধিপত্যের কারণে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সামাজিক শৃংঙ্খলা, সাম্পদ্রায়িক সম্প্রতি বিনষ্ঠের আশংকা দেখা দেয়। এসব ধান্দাবাজ হিন্দুদের পূর্বসুরীদের ইতিহাস লক্ষ্য করলে আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। এই সব হিন্দুরাই অবিভক্ত বাংলার অবহেলিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়ন হোক তা চাইনি। সামাজিকভাবে মুসলমানরা আত্মমর্যাদায় বলিয়ান হয়ে মাথা উছু করে দাড়াক, তা মেনে নিতে পারেনি সাম্প্রদায়িক মনোভাবাসম্পন্ন হওয়ার কারণে। এদের ষড়যন্ত্রের কারণেই ভঙ্গবঙ্গ রদ করা হয়েছিল। এরাই এই ভঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিরোধীতা করেছিল।প্রচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করলেও বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এসব সাম্প্রদায়িক উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের স্বদম্ভ অস্থিত্ব ও ধাপটের কারণে সাধারণ মানুষ কত যে অসহায় তা ভুক্তভোগীরা ভাল জানে। এদের প্রভাব এতো তীব্র যে সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর নাম পর্যন্ত বাদ দিতে হয়েছে। এ দেশকে এখনো পর্যন্ত এরা অন্তর থেকে ভালবাসে না। এরা থাকে এদেশে, রুজি-রুটি উপার্জন করে এদেশে আর সম্পদের পাহাড় এদেশ থেকে পাচার করে জমা রাখে ইন্ডিয়ায়। উদাহরণ দিতে গেলে ভুরি ভুরি দেয়া যায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে ব্যবসা করে অর্থ পাচার করে ভারতে। এসব কালো বিড়ালদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব। এসব কালো বিড়ালরাই আজ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের হর্তাকর্তা সেজে প্রকৃত অর্থে সাধারণ সনাতন ধর্মের অনুসারী হিন্দুদেরই ক্ষতি করছে বেশী। বিভিন্ন মিডিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার যেসব ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে তার ভিতরের রহস্য উদঘাটন করা জরুরী। কিন্তু কে শুনে কার কথা? জামাত শিবিরের তান্ডব বলে মিডিয়া সন্ত্রাসীদের লাগামহীন মিথ্যা গলাবাজীর কারণে সাধারণ হিন্দুরা জানতেই পারছে না তাদের আসল শত্রু কারা? বার বার তারা প্রতারিত হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী ধর্মহীন চরম এক সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাতে। দেশে এবং দেশের বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের কান্ডরী হিসেবে পরিচয়দানকারী এসব লোকগুলো কারা? কি তাদের অবদান হিন্দুদের অধিকার আদায় ও সংরক্ষণে? মুসলিম নামধারী অনেক ব্যক্তিরাও আজ হিন্দুদের জন্য মায়াকান্না করে চোখের জল ঢেলে জলাতংক রুগীর চেয়েও ভয়ানকভাবে হাউমাউ করে বিলাপ করতে দেখি। এসব নামধারী মুসলিমরা তো নিজের ধর্মকেই মানে না। নিজের ধর্মে কি লিখা আছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে কি ধরণের আচরণ করতে হবে তাও জানেনা না। এরা সব সময় নিজের ধর্ম ও নিজের ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটনা ও সার্বক্ষণিক গালিগালাজ করেই নিজেকে অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল হিসেবে পরিচয় দেয়। এরা কি আসলেই প্রগতিশীল? নাকি দুর্গতিশীল? এই অপদার্থগুলো আসলেই কি অসাম্প্রদায়িক? যারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কালজয়ী আদর্শ নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে জগাখিচুড়ি মার্কা ধর্মহীন জীবনাচার বেচে নিয়েছে তারা কি করে আরেকটি ধর্ম সম্প্রদায়ের কান্ডারী হতে পারে? মানবাধিকার কমিশনের মিজানুর রহমান আর নারী নেত্রী সুলতানা কামাল চক্রবর্তীদের ফাদেঁ যতদিন এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আটকে থাকবেন ততদিন এদেশের হিন্দুদের প্রকৃত অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা হবে না। হিন্দু মুসলিম সহ-অবস্থানের জন্য এদেশের প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক যারা তাদের সাথেই থাকতে হবে। মতলববাজ ডামী কান্ডরীদের খপ্পরে যেন আর পড়তে না হয় সে বিষয়ে আমি একটি নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এখানে উল্লেখ করে আজকের লেখার ইতি টানছি।
১৯৯৬ সালের মাঝমাঝির ঘটনা। আমার গ্রামের বাড়ীর পার্শ্ববতী একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের পাড়া আছে। স্থানীয়ভাবে শীলপাড়া হিসেবে পরিচিত। ঐ শীল পাড়ার এক হিন্দু ভদ্রলোক স্থানীয় মুসলিম কয়েকজন গ্রামীন চায়ের দোকানের আড্ডাবাজ ঝগরাটে লোকদের সাথে তার খুব খাতির। সেও তাদের মতই স্বভাব চরিত্রে। এই লোকগুলো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী। একদিন এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বাড়াবাড়ির একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় “ওডা ডান্ডির বাইচ্চা! হি হ’লিদি” বলেই তাকে মেরে রক্তাক্ত করে দিল। আমরা কয়েকজন মুসলিম তখন পাশ্ববর্তী মসজিদে মাগরিবের নামাজে ব্যস্ত ছিলাম। অথচ যারা ঐ হিন্দু লোকটার উপর আঘাত করল তাদের কোনদিন আমি মসজিদে নামাজ পড়তে দেখিনি। এমনকি শক্রবারে জুমা’র নামাজ পড়ে কিনা সন্দেহ। ফরজ আদায়ের পড়ই ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝগড়াঝটির রেশ চলছে দেখে আক্রান্ত হিন্দু লোকটিকে আমি এবং আমাদের এলাকার এক কলেজ পড়ুয়া ছেলের সহায়তায় তাকে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বাড়ীতে ফেরত পাঠালাম। সেই কলেজ পড়ুয়া ছেলেছি আজ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুবাদে চট্টগ্রাম শহরে থাকে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার পর সারা দেশ প্রতিবাদে উত্থাল হলেও আমাদের এলাকাতে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। কোন মিছিল কিংবা প্রতিবাদ সভা কিছুই হয়নি। তার পরেও এলাকার মানুষের মধ্যে ভিতি ও আতংক বিরাজ করছে। কখন পুলিশ এসে হয়রানী করে মামলার জ্বালে আটকে দেয়। দেশ ও রাজনীতি সচেতন অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মত আজকের সেই যুবকটির মনেও আতংক বিরাজ করছে। অনেকে ভয়ে বাড়ী ঘর পর্যন্ত যাওয়া আসা ছেড়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। জানি না কখন দেশের এই আতংকজনক শাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।
বিষয়: বিবিধ
২০৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন