বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর উদ্দেশ্য খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ২৭ মে, ২০১৩, ০৩:৪২:৪৫ দুপুর
বঙ্গবীর জনাব আব্দুল কাদের সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ সময়োগি সত্য উচ্চারণের জন্য। সুযোগ পেলে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার লেখা কলামগুলো পড়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে আমার দেশ এবং নয়াদিগন্তে তার লেখা বের হলে আগ্রহ সহকারে পড়ি। সম্ভবত এরশাদের পতনের পরেই জনাব কাদের সিদ্দিকী রাজনীতিতে এবং বাংলাদেশে পুণরায় প্রত্যাবর্তন করেন। এতোদিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান, রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং ধর্মীয় ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি আমরা তরুণ সমাজ পেয়েছি।
১৯৭৫ সালে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের করুণ মৃত্যুর পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ভুমিকা কি ছিল সে ব্যাপারে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বেখবর, কোন ধারনা নেই। এ সময়টাতে তার ব্যাপারে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলে থাকে। কিন্তু ইদানিং তার কিছু সাহসী উচ্চারণ এবং কর্মকান্ডের ফলে দেশের প্রকৃত তরুণ প্রজন্মের নিকট তিনি বেশ গুরুত্বের সাথে নতুনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন। তরুণ প্রজন্ম অনুভব করতে পারছে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তার ব্যক্তিগত দুর্বলতা কতখানি গভীর।
স্বাধীনতা উত্তর শেখ মুজিব নিজের কর্মকান্ডের কারণে হোক কিংবা উচ্চবিলাসী রাজনৈতিক টাউট-টন্নী চাটুকারদের অতি তোসামুদির কারণেই হোক আকাশচুম্বী বিশাল জনপ্রিয়তা পেলেও মরহুম শেখ মুজিব পুরো জাতির হৃদয়ে স্থান নিতে পারেন নি। কারণ শুধুমাত্র তার সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ার পরিবতে শোষণ-ত্রাশন আর লোটপাটের মগের মুল্লুকে পরিনত করার বেপরোয়া সুযোগ দেয়ার জন্য। অথচ এর জন্য তিনি নিজে কতটুকু দায়ী ছিলেন তা এখনো পর্যন্ত নিরপেক্ষভাবে নির্ণয় করা যায়নি । কিন্তু আপসোসের বিষয় হচ্ছে মানবতার শত্রুরা, রাজনৈতিক ময়দানের মানুষরুপী শয়তানগুলো তাকেই বলির পাঠা বানিয়েছে।
১৬ কোটি মানুষ অধ্যুশিত এই বিশাল জনসংখ্যার দেশে সত্যিকার অর্থে কত শতাংশ মানুষ শেখ মুজিবকে জাতির জনক হিসেবে গ্রহণ করে? কত ভাগ মানুষ বঙ্গবন্ধ হিসেবে গ্রহণ করে? কত ভাগ মানুষ শুধু শেখ মুজিব হিসেবে বিবেচনা করে? কিন্তু কেন এমন হবে? কারা এর জন্য দায়ী? আব্রাহাম লিংকন কিংবা লেসনস মেন্ডেলার মত পুরো জাতির গ্রহণযোগ্য নেতা হতে না পারার পেছনে কাদের ভুমিকা সব চেয়ে বেশী?
জনাব আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর কাছে তরুণ প্রজন্মের বিনীত প্রশ্ন মরহুম শেখ মুজিব যাকে আপনি রাজনৈতিক পিতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন। এর জন্য কি ১৯৭১ সালে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তিই কি দায়ী? তারাতো সেই সময়ে অস্তিস্থ সংকঠে দুলিঃশ্বাত হয়ে গিয়েছিল কিংবা যে দুয়েকজন পালাতে পেরেছিল তারা তো চত্রবঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। আজ আপনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাহসের সাথে সত্য উচ্চারণ করছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের নিকট আপনার সময়োপযোগী সাহসী উচ্চারনের কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সত্যিই হারানো শ্রদ্ধাবোধ ফিরে আসছে।
ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে সেসব রাজনীতিবিদদের দেশ গড়ার ক্ষেত্রে যে অবদান আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কি বিপরীত মেরুর সেই প্রবল শক্তিশালী পক্ষ জাতির খেদমতে উপস্থাপন করতে পেরেছ? আপনার লেখালেখির ফলে তরুণ প্রজন্মের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে ব্যক্তি জীবনে আপনি কিছুটা ধর্মপরায়ন।
বিগত ৪২ বছরে ধরে ঘুরে ফিরে স্বাধীনতার জন্য যারা আন্দোলন করেছে তারাই তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র শাসন করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে শুরু করে সব কিছু তাদের হাতে ছিল এবং এখনো আছে। যদিও বা তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন দলে অবস্থান করছে।
কি পরিমাণ নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন যোগ্য লোক তৈরী করতে পেরেছে তারা? বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ধর্ষনে সেঞ্জুরিয়ান এবং সামগ্রিকভাবে নীতি নৈতিকতাহীন একটি ভোগবাদী দেশপ্রেমহীন উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী সৃষ্টি করা ছাড়া তাদের কি অবদান আছে?
আপনি তার বিপরীত মেরুতে একটু নজর দিন। দেশ স্বাধীনের পর থেকে দেশের অর্থব্যবস্থাকে সুদমুক্ত মানব কল্যাণমুখী করার পেছনে কাদের অবদান বেশী? পারস্পরিক সন্দেহ অবিশ্বাসে নিমজ্জিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি তত্বাবদায়ক বা কেয়ারটেকার সিস্টেমের পাইওনিয়ার কারা? প্রতিবেশী দেশের বড় ভাই সুলভ আগ্রাসী ভুমিকার কড়া সমালোচক কারা? স্বাধীনতার পর থেকে তথাকথিত প্রগতিশলীতার নামে বস্তুবাদী, নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যপক প্রসারের ফলে আমাদের ঐতিয্যবাহী সামাজিক বন্ধন, মুল্যবোধ, তাহজীব তামাদ্দুন, ভদ্রতা আর মানবতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে? আলেমের ঘরে পর্যন্ত জন্ম নিচ্ছে খোদাদ্রোহী শাহবাগী নাস্তিক।
বিপরীত মেরুতে আপনি একবার খোজ খবর নিয়ে দেখুন কারা এমন যোগ্যলোক তৈরী করছে যারা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সত্যিকারের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, জনকল্যাণ, ব্যক্তির অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক সাম্য, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক অধিকারসহ ইহকালীন জীবনের সার্বিক কামিয়াবী এবং পরকালীন অনন্ত জীবনে যেন আল্লাহর আদালতে দুনিয়াবী জীবনের সার্বিক কর্মকান্ডের জবাবদিহিতার উপযোগী পূর্নাঙ্গ ইনসানে কামেল হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
প্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের সিদ্দিকী, অনেক কথা লিখে ফেললাম। তরুণ মানসে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে ইদানিং আপনার অন্তরচক্ষু খুলতে শুরু করেছে। তাই এসব কথা বলা। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে অন্যতম একজন। তেমনি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানও একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু আমাদের দেশের নষ্ঠ রাজনীতিবিদরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে তাদের উচ্চাসন থেকে নামিয়ে সর্বদা অপমানে ব্যস্ত। আজ আপনার কিছুটা বীরোচিত ভুমিকার কারণে গোটা দেশবাসী এবং তরুন প্রজন্মের নিকট নতুনভাবে মুল্যায়িত হচ্ছেন তাকে ধরে রাখতে হলে আপনাকে আরো সত্যাশ্রয়ী এবং আরো সাহসী ভুমিকা পালন করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম এবং দেশবাসী আপনাকে শেখ মুজিব, জিয়া, মাওলানা ভাসানীর কাতারে দেখতে চায়। আপনাকে শুধু টাঙ্গাইলের এক সময়ের কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান হিসেবে দেখতে চায় না। দেশ আজ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে তাতে দেশে মিশর-তিউনিসিয়া কিংবা তুরস্কের পরিস্থিতি বিদ্যমান। দেশের সচেতন গুনীজন ও দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবিরা আজ মাঠে নেমেছে প্রিয় মাতৃভূমিকে নতুনভাবে স্বাধীন করার জন্য।
সেই বৃটিশ আমল এবং পাকিস্তান পিরিয়ট সহ বাংলাদেশের ৪২ বছর যোগ করলে ২৬৮ বছরের ইতিহাসে এতো ভয়াবহ নারকীয় অবস্থা আর কখনো হয়নি। দেশ আজ দুনিয়ায়র সব চেয়ে নিকৃষ্ট বর্গী, মানবরূপী এমন এক দৈত্য জানোয়ারের খপ্পরে পড়েছে যার হাতে আজ মানবতা লাঞ্জিত। অসংখ্য বদি আদমের জীবনের কোরবানী এবং রক্ত স্রোতের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতা আজ হুমকির সম্মুখীন। এই হিংস্র জানোয়ারটির বিষাক্ত চোবলে দেশের কম্পক্ষে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ অধিষ্ঠ, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত।
এই হিংস্র হায়েনা জানোয়ারের কবল থেকে এই জাতি, এই দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাত্বক প্রতিরোধের বিকল্প নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে এই শয়তানদের সাথে এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এদের শিকড় সীমানার বাইরে অন্য কোথাও। দেশের ০২ % মানুষও পাওয়া যাবে না এদের সমর্থক হিসেবে। এদের প্রতিরোধ করে প্রিয় মাতৃভুমিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক যুগের আইয়ামে জাহিলিয়ার পাওয়ানিয়ার এ. এল. তথা আল্লাহর লা’নত পার্টির কবল থেকে এদেশকে উদ্ধার করতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে ন্যায় ও ইনসাফ।
তাই এই মুহুর্তে আপনার জীবনের চুড়ান্ত বীরত্বের পরিচয় দেয়ার সময় এসেছে। দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ আজ প্রস্তুত আসন্ন সেই বাংলা বসন্ত তথা বিপ্লবের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রিয়মাতৃভূমিকে প্রকৃত অর্থেই অর্থবহ স্বাধীন করার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন