ডিজিটাল দুঃশাসন থেকে জনগণ মুক্তি চায়

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৪৮:৩০ সকাল



ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার শ্লোগান নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসীন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃতত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। তাদের শ্লোগান ভিশন-২০৪১, অর্থাৎ ২০৪১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবে এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিবে। তাদের এক নেতার বক্তব্যে শুনলাম যে, তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে মালয়শিয়ার চেয়েও উন্নত করবেন। তারা বলছেন, মালয়েশিয়ার উন্নয়নের কারণ মাহাথির মোহাম্মদ একাধারে ২২ বছর সে দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাই হাসিনাকেও ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখতে হবে। আমার এক বন্ধু ব্যবসায়িক কাজে গত মাসে মালয়শিয়া সফর করে এসেছেন, তার কাছে শুনলাম, মালয়েশিয়ায় এমন সব এলাকায় রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ লাইন বসানো আছে যেখানে বর্তমানে কোন জনবসতি নেই, আগামী পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত যতো নতুন বসতি গড়ে উঠবে তাদের জন্য আর নতুন করে রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে না, সেখানে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের মাত্র ৩% লাভে যে কোন খাতে বিনিয়োগ করা হয়, চাঁদাবাজী কি জিনিস তা সে দেশের ব্যবসায়ীরা কল্পনাও করতে পারে না। হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশে তার সোনার ছেলেদের কথা না হয় বাদই দিলাম, রাস্তায় পুলিম যেভাবে চাঁদাবাজি করে তাতে ব্যবসায়ীদের ত্রাহি অবস্থা। আামি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই প্রতিষ্ঠানের কিছু মালামাল ট্রাকে করে মগবাজার থেকে বাংলাবাজার নিয়ে যাওয়ার পথে নাকি চার স্থানে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়েছে; চাঁদা না দিলে রেকার ডেকে রেকারে টেনে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। এইতো চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। সরকারের বিরোধী মতের লোকদের উপর নির্যাতনের জন্য পুলিশকে শুধু অবাধ লাইসেন্সই দেয়া হয়নি, বরং বিরোধী নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতন করলে, বেশী বেশী গ্রেফতার করতে পারলে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। গণ গ্রেফতার, গণ রিমান্ড, রিমান্ডে নিয়ে মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্যাতন, দেখামাত্র গুলি, গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া, বন্দুক যুদ্ধের নামে বিরোধী মতের তরুণদের হত্যা করা, শুধু তরুণ নয়, লক্ষীপুরে একজন স্বনামধন্য চিকিৎসককে তার নিজের বাসার ছাদে নিয়ে যেভাবে নারকীয় কায়দার হত্যা করা হয়েছে তা ভাবতেও গা শিউড়ে ওঠে। গুম-খুন এ সরকারের কাছে নস্যি ব্যাপার। জনগণের জীবন রক্ষা নয়, যেন ভিন্ন মতের সব লোকের জীবন সংহারের জন্যই তাদের ক্ষমতায় আরোহন। ভিন্ন মত কেন, সরকারী দলের সোনার ছেলেরা যেভাবে নিজেদের লোকদের হত্যা করছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কোন যায়গা বাদ যাচ্ছে না ছাত্রলীগের নারকীয় সন্ত্রাস থেকে। দখল, হামলা, মামলা, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী হেন কোন কাজ নেই যা সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা করছে না। দুর্নীতিতেও সরকার চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে পদ্মা সেতু, রেলের কালো বিড়াল, সোনালী ব্যাংকের অর্থ লোপাট, হলমার্ক, শেয়ার বাজার সব খাওয়া শেষ। সরকারের রাবিশ আর বোগাস মন্ত্রী চার হাজার কোটি টাকাকে কোন টাকাই মনে করেন না। টাকার বস্তাসহ আটক হওয়ার পরও রেলের কালো বিড়াল বহাল তবিয়তে থাকেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও তারা দেশ প্রেমিকের সার্টিফিকেট পায়। প্রশ্নপত্র ফাস, পরীক্ষায় বেশী নম্বর দেয়া, ডিজিটাল জিপিএ-৫, যেন শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জোয়ারে মঙ্গল গ্রহে যাত্রা শুরু করেছে। শিক্ষায় ডিজিটাল উন্নয়নের জোয়ারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শতকরা ২% পাশ করে। এরপরও সাবেক কমিউনিস্ট শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার মান নিয়ে গর্ব করেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বিসি এস এর প্রশ্ন পর্যন্ত যে দেশে ফাস হয়, সে দেশে আশাবাদি মানুষেরা ভয় এবং আতংকের মধ্যেই বসবাস করে। যে দেশে একটি সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বলা হয় তোমাদের চাকুরীর দায়িত্ব আমাদের সে দেশে আশাবাদী মানুষেরা আতংকিত হবেই। প্রশ্নপত্র ফাস, চাকুরীতে বিশেষ কোন জেলা, বিশেষ একটি সংগঠন এবং বিশেষ একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠির যখন আধিপত্য তখন হতাশার আধারে জাতির কোন কুল খুজে না পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকাই স্বাভাবিক। প্রতিবাদী জনতা পুলিশের বন্দুকের নলের টার্গেট। গুম, খুন, দেখামাত্র গুলি, গ্রেফতারের পর পঙ্গু করে দেয়া, রিমান্ডে বর্বর নির্যাতন এ সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানতম কর্মসূচী হয়ে দাড়িয়েছে। শোকার্ত জনতার শোক প্রকাশ করার সূযোগ নেই। নির্যাতনে নিপীড়নে দুঃখী মানুষগুলো কাঁদতেও পারবে না। ডিজিটাল উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে ভেসে আমরা কি আটলান্টিকের অতলে তলিয়ে যাবো নাকি উন্নয়নের জোয়ার আমাদের মহাশুন্যে নিয়ে যাবে তা আমরা জানি না। তবে এমন উন্নয়নের জোয়ার জনগণ চায় না। যে উন্নয়নে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সূযোগ নেই। সরকার শুধু গণতন্ত্রের শ্লোগান শোনাচ্ছে। এমন আজব গণতন্ত্র থেকে জনগণ মুক্তি চায়। বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করলেই সরকার বলে তারা নাকি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আন্দোলনের কথা বললে সরকার বলছে সন্ত্রাস সহিংসতা করতে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না। সরকারের সমালেচানা করলে রাস্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়, রাস্ট্র এবং সরকারের সংজ্ঞা তাদের কাছে এখন একাকার হয়ে গেছে। সরকারী দলের এবং পুলিশের ভাষা এখন প্রায় অভিন্ন হয়ে গেছে। ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার ২০ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে ৫জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনের আগে পরের বিরোধী দলের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন ‘‘আমাদের দুঃসময়ের কথা ভুলে গেলে চলবে না, সে সময় দেশ বিরোধী শক্তি যা করছিল তা আমরা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেছি’’ পুলিশের কাছে বিরোধী দল দেশ বিরোধী শক্তি? খবরের কাগজে এসেছে মফস্বলের এক থানার ওসি স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক সম্মেলনে নিজেই মাইক হাতে নিয়ে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটনের কমিশনার বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ‘‘এই সরকার জনগণের সরকারের নয়’’। এইতো চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ এ ধরণের দুঃশাসন চালিয়ে দেশকে মালয়শিয়া বানানো যাবে না। সরকার তাদের উন্নয়নের জোয়ার দেখাবার জন্য সারাদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ বিল বোর্ড লাগিয়েছে কিন্তু বিল বোর্ডের উন্নয়নের সাথে বাস্তবতার কোন মিল আছে কি? জনগণ এমন উন্নয়নের জোয়ার চায় না। তারা চায় প্রাণ ভরে নিঃশাস নিতে, তারা চায় মুক্ত আবহাওয়া, তারা চায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা

বিষয়: বিবিধ

১৪৫১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

296421
২২ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০৫
হতভাগা লিখেছেন : জনগন বোকামী করেছিল একটা জোটকে ৮৭% এরও বেশী আসন পাইয়ে দিয়ে । অতিরিক্ত ক্ষমতা যে কাউকে স্বৈরাচারী করে দেয় - এটা বাংলাদেশের মানুষ বুঝেও না বোঝার ভান করে।

তাদেরকে তো এর মজা চাখতেই হবে ।

You get the government you deserve

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File