কলিকালের রাজনীতি বনাম কমরেডদের হজ্জ পালন
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:০৭:৪৮ রাত
যারা কমিউনিস্টদের লাল বই সম্পর্কে জানেন অথবা কমিউনিস্টদের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ সম্পর্কে যাদের অতি সামান্য জানা-শোনা আছে তাদের কমিউনিস্টদের কয়েকটি বহুল প্রচারিত শ্লোগানের কথা মনে থাকার কথা। কার্ল মার্কস বলেছেন ‘ধর্ম আফিম স্বরুপ- মানুষ আফিম খেলে যেমন নেশাগ্রস্থ হয়, ঠিক তেমনি যাকে ধর্মীয় আবহ পায় সে আফিম খোড়ের মতো স্বাভাবিক কান্ড জ্ঞান হাড়িয়ে ধর্মীয় উম্মাদনায় মেতে ওঠে’’ লেনিনের অতি পরিচিত বক্তব্য ‘‘ টঘ-ঝঊঊঘ ওঝ ঘঙঞঐওঘএ, এঙউ ওঝ ঘঙঞঐওঘএ, ঞঐঊজঊ ওঝ ঘঙ এঙউ. অর্থাৎ অদৃশ্য বস্তুর অস্তিত্ব নেই, অতএব খোদার (আল্লাহর) কোন অস্তিত্ব নেই’’। ধর্মকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেই কমিউনিস্টদের ‘কমরেড’ হতে হয়। সত্তর এবং আশির দশকে বাংলাদেশে যারা ‘কমরেড’ ক্যাডারে উন্নীত হতো তাদের রাশিয়া গিয়ে ট্রেণিং নিতে হতো। কমরেডরা কখনো কোন প্রকার ধর্মীয় নিয়ম কানুন তো দূরে থাক, কোন প্রকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যেত না। একসময় তারা পৃথিবীব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু নিজ দেশেই কমিউনিস্ট আদর্শ আত্মহত্যা করেছে। বাংলাদেশেও সত্তর এবং আশির দশকে অধিকাংশ মেধাবী ছাত্ররা কমিউনিস্টদের রাজনীেিততে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের কমিউনস্টরা শুরুতেই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরে। বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণগুলোতে যখন কমিউনিস্ট ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপক জোয়ার তখনই দেখেছি তারা নানা নামে বিভক্ত। কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ইউনিয়ন, ওয়াকার্স পার্টির ছাত্র মৈত্রী, ন্যাপের ছাত্র সমিতি, জাসদের জাসদ ছাত্রলীগ, এ ছাড়াও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফ্রন্টসহ আরো বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ছিল। এ সকল কমিউনিস্টরা কখনো ধর্ম কর্ম পালন করতো না। যার কারণে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে কমিউনিস্ট রাজনীতি শিকড় গাড়তে পারে নি। তবে কমিউনিস্টরা তাদের নাস্তিক্যবাদী চিন্তার দ্বারা এক সময়ে যাদের প্রভাবিত করেছে তারা এখন রাজনীতি, অর্থনীতি, মিডিয়াসহ অনেক যায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকিত করে আছে। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী পরিষদে তো এখন সাবেক কমিউনিস্টদের সংখ্যাই বেশী। বি এন পিতেও সাবেক কমিউনিস্টদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বড় বড় মিডিয়া টাইকুনরা সাবেক কমিউনিস্টদের হাতে বন্দী। এ সকল কমিউনিস্টরা ভালভাবেই জানে তারা নিজেদের মতবাদ এবং আদর্শ নিয়ে কখনো জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা পাবে না। তাই তারা কেউ অর্থনীতিবিদ, কেউ সমাজকর্মী, কেউ গবেশষক, কেউ সাংবাদিক বাকীরা আওয়ামীলীগে অবস্থান নিয়েছে এরা সবাই মূখোশের আড়ালে খাটি কমিউনিস্ট না হলেও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিরোধী। তারা সরাসরি ইসলামের বিরোধীতা না করে একটু ঘুড়িয়ে বলে, ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের সাথে তুলনা করে- ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা তা মানতে অস্বীকার করে, আর ইসলামী রাজনীতির মূলোৎপাটন তাদের প্রধান টার্গেট। যাদেরকে আমরা কখনো মসজিদে যেতে দেখিনি, এমনকি ঈদের নামাযেও যাদের কখনো দেখা যায়নি। তারা আজ হজ্জে যাচ্ছে। কমিউনিস্টরা কেউ বাম চিন্তা থেকে দুরে সরে এসে কিছুটা লিবারেল ডান হয়েছে, কেউ পরিচয় গোপন করে নাস্তিক্যবাদী চিন্তার বাস্তবায়নে এখনো তৎপর আছে, কেউ বাধ্য হয়ে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকার জন্য ধর্মীয় কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করছে। আবার কেউ সত্যিকার অর্থেই সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। আমার এক খালাতো ভাই ছাত্র জীবনে (৮৫-৯০ সাল) বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর প্রথম সাড়ির কর্মী ছিলেন, আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন ‘‘তোরা যে নামায পড়িস নামায পড়ে কখনো কিছু পেয়েছিস?’’ তিনি এখন কমিউনিস্ট রাজনীতির ধারে কাছেও নেই, নিয়মিত কুরআন পড়েন, জামায়াতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন। কিন্তু যারা চিন্তায় চেতনায় আদর্শে মননে এখনো কার্ল মার্কস আর লেলিনের চিন্তাকে লালন করেন আর ইসলামী রাজনীতির চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করেন- তাদের হজ্জে গমন নিয়ে জনগণ প্রশ্ন তুলতেই পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কার কাছে শুনেছিলাম মনে করতে পারছিনা, বলেছিল শেষ জামানায় হজ্বে গরিব যাবে ভিক্ষা করতে, মধ্যবিত্ত যাবে ঘুরতে, ধনী যাবে টাইটেল কামাতে।
নির্বাচনী পোস্টারে এদের নাম হবে এরুপ "হাজী কমরেড অমুক, আলহাজ কমরেড তমুক"।
ভাব এবং গাম্ভীর্যে বেজাল আনা। বেক্তি গুরুত্ব হয়তো বাড়ল কিন্তু ধর্মের নিখাদ গুরুত্ব কে অপমান করলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন