ফিলিস্তিনী ইন্তিফাদা- ইসরাইলী আগ্রসান ঃ পরিশেষে স্বাধীনতাকামীরাই বিজয়ী হবে

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ১২:১৪:৩৫ দুপুর



ফিলিস্তিন এক রক্তাক্ত জনপদের নাম। এখানে রক্ত ঝড়ছে ষাট বছর যাবৎ। মানবাধিকারের ফেরীওয়ালারা ইসরাইলী বর্বর বাহিনীকে এখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংঘনের জন্য সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে কখনো প্রকাশ্যে কখনো অপ্রকাশ্যে। নিজ ঘরে আজ ফিলিস্তিনীরা পরবাসী। যাদের এক সময় ঘর ছিল, বাড়ি ছিল, তারা আজ উদ্বাস্তু। সচ্ছল সামর্থ্যবান পরিবারগুলো আজ বস্তি অথবা তাবুর অধিবাসী। নিজ ঘড়, নিজ বাড়ি, নিজের চাষাবাদের জমি, আপন দেশ, মাতৃভূমি হাড়িয়ে আজ তাদের লড়াই করতে হচ্ছে আপন মাতৃভূমির জন্য একদল বিশ্ব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। ইসরাইলীরা প্রতিদিন বিমান, ট্যাংক আর কামান নিয়ে হামলে পড়ছে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনী জনগণের উপর। তাদের হামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিহত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। পৃথিবীর অধিকাংশ সাধারণ জনগণের বাড়িঘর গুলো বোমা হামলায় মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। অসহায় ফিলিস্তিনীদের চিৎকার আর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হচ্ছে। শিশুরা আর নারীরাই যেন ইসরাইলীদের প্রধান টার্গেট। ইসরাইলী এক নারী মন্ত্রী সংসদে প্রকাশ্য দম্ভোক্তি করে বলেছে ‘ওদের নারীদের হত্যা করা হবে যাতে তারা আর সন্তান জন্ম দিতে না পারে, ওদের শিশুদের হত্যা করা যাতে তারা বড় হয়ে যোদ্ধা হতে না পারে, ওদের পুরুষদের হত্যা করা হবে যাতে ওরা পরবর্তী বংশ বিস্তার করতে না পারে’। যিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন তিনি একজন নারী- যে জাতির একজন নারী এ ধরণের বক্তব্য দিতে পারে সে জাতি আসলে কত জঘণ্য কত হিং¯্র তা বুঝতে কারো বাকী থাকে না। ওরা শুধু বাড়িঘরই গুড়িয়ে দিচ্ছে না, স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল কোন কিছুই তাদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আহত মানুষগুলো যখন হাসপাতালের বেডে বসে কাতরাচ্ছে তখন সে হাসপতালে ওরা আবার বিমান হমালা চালিয়ে তাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় মিডিয়া পশ্চিমা ধনকুবের এবং ইহুদী মালিকানাধীন হওয়ার কারণে ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতার চিত্র তারা খূব কমই প্রচার করে। এরপরও সোস্যাল মিডিয়ার কারণে ইসরাইলী বর্বরতার সব চিত্র আজ বিশ্ববাসী দেখার এবং জানার সূযোগ পাচ্ছে। পিতার হাতে শিশুর ক্ষয়ে যাওয়া লাশ, মস্তিস্ক বিকৃত, দেহের অর্ধেক নেই, দেহ উড়ে গেছে শুধু মাথা আছে, অথবা মাথা উড়ে গেছে শুধু দেহ আছে এভাবে বিভৎস বিকৃত লাশ নিয়ে পিতা-মাতার আহাজাড়ি আমরা প্রতিদিন সোস্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের নামকরা মিডিয়াগুলো দায়সারা গোছের রিপোর্ট করে ইসরাইলী বর্ববরতা আড়াল করলেও কোন কিছুই গোপন থাকছে না। শতকরা পচানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ; এ দেশের মিডিয়াগুলোও আধিপত্যবাদী শক্তির দেখানো পথে নিউজ-ভিউজ পরিবেশন করে। বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলই যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বর্বরতার সংবাদ প্রচার করা দরকার তা তারা করেনি, যারা করার তারা কেউ সরকারের রোষানলে কেউ নিষিদ্ধ হয়ে আছে। বাংলাদেশে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে আওয়ামী সরকারের ইসলাম নির্মূূল কর্মসূচীর সংবাদ, ইসলামী নেতৃবৃন্দের চরিত্র হণনের জন্য সরকার পরিবেশিত কাল্পনিক গল্প প্রচার এবং তাদেরকে জনগণের সামনে ঘৃণিত ব্যাক্তি হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তাদের চেস্টার ত্রুটি করে না অধিকাংশ মিডিয়া। বরং সরকার যদি ইসলাম পন্থীদের বিরুদ্ধে বলে পাঁচ, তবে এ সব মিডিয়া বলে পঞ্চাশ। আর তাই আমরা বাংলাদেশের মিডিয়ায়ও ফিলিস্তিনে ইসরাইলী আগ্রাসনের সব খবর পাইনি। তারা দর্শক এবং পাঠক ধরে রাখার জন্য যতটুকু সংবাদ না দিলেই নয় ততটুকু দায়সারা গোছের সংবাদ প্রচার করেছে। জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে হামলা করার পর ১৩ জন জাতিসংঘ কর্মকর্তা নিহত হলে মিনমিনে কন্ঠে শুধু একটি প্রতিবাদ জানিয়ে তারা তাদের দায়িত্ব সম্পন্œ করেছে। জাতিসংঘের বর্তমান ভুমিকাই প্রমাণ করে যে উদ্ধেশ্যে এ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এ প্রতিষ্ঠানটি। জাতিসংঘ জাতিরাস্ট্রের নয় এখন শক্তিমানদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিষ্ঠান। ইসরাইলীদের অন্যায় আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞকে সর্বোৎভাবে সহযোগিতা করছে আমেরিকা-বৃটেন। আর আমেরিকার বৃটেনের ই”চ্ছার বাইরে কোন কিছু করার ক্ষমতা জাতিসংঘ হারিয়ে ফেলেছে। ইসরাইল নামক যে রাস্ট্রটিকে আমেরিকা বৃটেন প্রচ্ছন্ন সাহায্য সহযোগিতা ও মদদ দিচ্ছে সে রাস্ট্রটির জন্মের মূলত কোন বৈধতা নেই। আমরা যদি ইসরাইল রাস্ট্রটির জন্মের ইতিহাস খুজি তবে দেখা যায়। পৃথিবীতে প্রথম পরমানু বোমার থিওরী আবিস্কার করে ইয়াহুদীরা। তাদের কাছ থেকে এ থিওরাী কিনে নেয় তৎকালীন পরাশক্তি বৃটেন। এ ক্ষেত্রে তাদের শর্ত ছিল তাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিতে হবে। তারা দাবী জানিয়েছিল ‘পৃথিবীর সকল জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীন আবাস ভূমি আছে কিন্তু আমাদের কোন স্বাধীন আবাসভূমি নেই। আমার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাযাবর জীবন যাপন করছি আমাদের একটি নিজস্ব ভূমি দিতে হবে’। তাদের এ প্রস্তাবে তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাদেরকে বলে তোমরা কোন দেশটি চাও তারা প্রথমে চায় আর্জেন্টিনা বৃটিশরা এটা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের দ্বিতীয় দাবী ছিল উগান্ডা এটাও অস্বীকার করার পর তৃতীয়বার দাবী করে দক্ষিন সুদান এরপর দাবী করে ইরিত্রিয়া কিন্তু কোনটিই বৃটিশরা দিতে রাজী হয়নি কারণ এগুলো সবই ছিল বৃটিশ কলোনী। তারা সর্বশেষে ফিলিস্তিন চাইলে বৃটিশরা রাজী হয়, কারণ ফিলিস্তিন ছিল তুর্কী খিলাফতের অধীনে। তৎকালীন অটোমান স¤্রাজ্যের কর্ণধাররাও প্যালেস্টাইনকে দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইয়াহুদীরা বৃটিশদের পরামর্শে অত্যন্ত সুকৌশলে প্রথমে জমি কেনা শুরু করে। এ জমি কেনায় নেতৃত্ব দেয় মিস্টার বেলফোর। তারা ১৯২০ সালে জমি কেনা শুরু করে এবং ১৯৪৮ সালে ইসলাইল রাস্ট্রের ঘোষনা দেয়। এভাবে প্রথমে জমি কিনে তারা কিছু লোক বাড়ি করে পরে আস্তে আস্তে তাদের বসতি যখন বেড়ে যায় তখন তারা ইসরাইল রাস্ট্রের ঘোষনা দেয়। এখানে একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেই ইহুদীদের পরামর্শে হিটলার বিশ্ব জয়ের জন্য দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা করেছিল তাদেরকে হিটলার বিশ্বাস করতে পারে নি। হিটালার প্রায় দশ লক্ষ ইহুদীকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করেছে। কথিত আছে যে হিটলার বলেছিল আমি কেন ইহুদীদের হত্যা করেছি এ প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই কিছু ইহুদীকে জীবিত রেখেছি। যাযাবরের জীবন যাপনকারী একদল সন্ত্রাসীর মূল কর্ণধররা ইসরাইল রাস্ট্রটির গোড়াপত্তন করে। ১৯৪৮ সালের আগে ইহুদীদের সন্ত্রাসী সংগঠন ইরগুনজাইলিউমির প্রধান ডেভিড বেলগুরিয়ানকে যে বৃটেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসী পরবর্তীতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল এবং তাকেই আবার জাতিসংঘ শান্তি পুরস্কার দিয়েছিল। ইয়াহুদীদের আরো কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন আছে যাদের কাজ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস পরিচালনা করা, এগুলো হচ্ছে ঃ হাসমুনাইম, আতশমাউত,আল হার হাশেম এবং মোশাদ। যাকে বৃটেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল তাকেই আবার জাতিসংঘ পুরস্কৃত করলো। এতে বোঝা যায় ইসরাইলী সন্ত্রাসের পিছনে জাতিসংঘের প্রচ্ছন্ন মদদ আছে। ইসরাইল-ই পৃথিবীর একামাত্র রাস্ট্র যার কোন সীমানা নেই অবৈধ দখলদারিত্বের মাধ্যমে তারা যতটুকু ভুমি দখল করতে পরে সেখানেই তারা তাদের সীমানা বৃদ্ধি করে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে নীল নদ হতে ফোরাতকুল পর্যন্ত ইয়াহুদী রাস্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করা। একদিকে ইসলরাইলীদের দখলদারিত্ব বাড়ে অপরদিকে ফিলিস্তিনীদের ভূমি কমে। নিজ ভূমি উদ্ধারের লড়াই করছে ফিলিস্তিনীরা দীর্ঘ ষাট বছর যাবৎ। পি এল ও শুধু আলোচনা আর সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতা হাতে পেয়েছে আর বৈদেশিক সাহয্য লোপাট করেছে ফিলিস্তিনী জনতার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। দখল করা এক খন্ড ভূমিও উদ্ধার হয়নি, থামেনি ইসলরাইলী বসতি নির্মাণ। এ প্রেক্ষাপেটে হামাসের জন্ম এবং উত্থান। হামাস হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসিলিমীনের ভাবধারায় উজ্জীবীত প্রতিরোধ ও স্বাধীনতাকামী সংগঠনের নাম। একটি রাস্ট্র যা করতে পারে নি, হামাস তা করেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তঘাট নির্মান, মসজিদ নির্মান, বাড়িঘর নির্মাণ মোদ্দা কথা একটি রাস্ট্রীয় কাঠামোতে যা দরকার সকল আয়োজন তারা সুচারুরুপে করছে। এ সেবার মাধ্যমে তারা জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করেছে।

পি এলও-র ব্যর্থতার বেলাভূমিতে হামাসের উত্থান ঃ। ইয়াসির আরাফাত ছিলেন আপোসহীন এবং আরাফাতের নেতৃত্বে পিএলও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন আর ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত পিএলও ছিল দুর্দান্ত এক মিলিট্যান্ট সংগঠন কিন্তু জতিসংঘের প্রস্তাবে আরাফাত তথা পিএলও অস্ত্র পরিত্যাগ করে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসে কিন্তু বিল ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় ১৯৯৩ সালে আসলো শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় ফাতাহ। আর এর বিনিময়ে আরাফাত পান নোবেল পুরস্কার। এই চুক্তি সম্পর্কে ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর এডওয়ার্ড সাইদ বলেছেন, ”অসলো চুক্তি শুধু ফিলিস্তিনি দুর্বলতার প্রকাশই নয়, বরং বড় ধরণের অযোগ্যতা এবং ভুল হিসাবের কারণে হয়েছে, যার ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। আরাফাত যে একটা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র পান নাই তা বুঝতেও তার এক বছরের মতো সময় লেগেছে। অসলোর গোপন চুক্তি সে করেছে কেবল নিজেকে বাঁচানোর জন্যে। আরাফাত শুধু তার নিজের স্ট্যাটাস সংক্রান্ত প্যারাটাই পড়েছেন। তা পড়েই ভেবেছেন তিনি প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র পেয়ে গেছেন।"এরপর ইসরাইল আলোচনার নামে সময়ক্ষেপন করে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল অব্যাহত রাখে আর অবৈধ বসতি স্থাপনের কাজ চলে জোর গতিতে। আলোচনার ফলাফল ফিলিস্তিনি জমিতে নতুন নতুন ইহুদি বসতি! আজকের ফাতাহ শাসিত পশ্চিম তীরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে ইহুদী বসতি। ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলো মানে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম অঞ্চল মৌমাছির মৌচাকের মতই ইহুদি বসতিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। পিএলও অস্ত্র পরিত্যাগ করে শান্তি আলোচনায় মনোযোগী হওয়াতে পশ্চিমা নেতাদের বাহবা কুড়ালেও উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন করতে না পারায় তখন থেকেই ফাতাহ'র ক্ষয় শুরু আর স্বাভাবিকভাবেই শূন্যস্থান পূরণে উত্থান হতে থাকে ফাতাহ'র চেয়ে আরো সাহসী ও দুর্দান্ত যোদ্ধাদের সংগঠন হামাসের। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইসরাইল এবং জাপান হামাসকে 'সন্ত্রাসবাদী' সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সৌদি আরব, মিশর, আরব আমিরাতসহ আরো কিছু আরব দেশ হামাসকে 'সন্ত্রাসী' সংগঠন হিসাবেই বিবেচনা করে। অন্যদিকে ইরান, সিরিয়া, কাতার, তুরস্ক, রাশিয়াসহ বিশ্বের আরো বিভিন্ন দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন নয় বরং একটি স্বাধীনতাকামী ও প্রতিরোধকামী সংগঠন হিসেবেই দেখে। এমনকি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জন কেরী হামাসকে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। হামাসের পূর্ণ নাম হচ্ছে ‘আল হাব্বাতুল মোকাওয়ামাতুল ইসলামিয়্যাহ’ । হামাসের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফিলিস্তিনি ধমীয় নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন। শেখ আহমেদ ইয়াসিন ছিলেন একজন পঙ্গু মানুষ এবং ইসরাইরলী কারাগারে থাকা অবস্থায় তার দৃস্টিশক্তি নস্ট হয়ে যায়। তিনি চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে করে। যখন তার বয়স ১২ বছর তখন তিনি একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধী হন। ২০০৪ সালের ২২ মার্চ ভোরে বাসা থেকে ১০০ মিটার দূরের মসজিদে হুইল চেয়ারে করে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ৬৪ অ্যাপাচি হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে হত্যা করে ইসরাইল। এ সময় তার সঙ্গে থাকা বডিগার্ডসহ আরো ৯ জন পথচারী নিহত হন। শেখ আহমেদ ইয়াসীন শহীদ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে ইসরাইল একই প্রক্রিয়ায় হত্যা করে হামাসের সদ্য নতুন প্রধান আবদুল আজিজ আল রানতিসিকে।

শারিরক সক্ষমতা নয় ঈমানই বড় অস্ত্র ঃ শারিরিক সক্ষমতা নয় ঈমানই সবচেয়ে বড় অস্ত্র এ কথা প্রমাণ করেছেন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিন । ইসরাইলের অধিকৃত আশকালন শহরের কাছেই এক ছোট গ্রাম আল জুরায় ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন শেখ আহমদ ইয়াসিন। ১৯৪৮ সালে তাদের গ্রাম ইসরাইলের দখলে চলে গেলে দশ বছরের বালক আহমেদের জায়গা হয় গাজার ‘আল সাথি’ শরণার্থী শিবিরে। শিবির জীবনের দু’বছরের মাথায় যখন তার বয়স মাত্র বারো, বন্ধুর সঙ্গে কুস্তি খেলতে গিয়ে মেরুদন্ডে প্রচন্ড আঘাত পান। টানা ৪৫ দিন তার গর্দান প্ল্যাস্টার করে রেখেও শেষ রক্ষা হয় না। তিনি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। কায়রোর বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর অসুস্থতার কারণে তাকে শরণার্থী শিবিরে ফিরে আসতে হয়। তিনি বাড়িতে বসে পড়ে ফেলেন দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি আর ধর্ম, সমাজতত্বসহ পৃথিবীর নানা বিষয়। মসজিদে জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য ডাক আসে তার; তার খুৎবা ছিল খুবই জ্ঞানগর্ভ আর দৈনন্দিনের সমস্যাকে সহজে তুলে ধরার এক নৈপুণ্যে ভরা শিল্প। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত সেসব। মানুষ খুঁজে নিত কোন মসজিদে শেখ আহমদ ইয়াসিন খুতবা দিবে। তার খুতবায় সবচেয়ে বেশী আকৃস্ট হতো তরুণরা। কুরআন হাদীসের আলোকে বর্তমানের সাথে মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি আর আধুনিক মনস্ক কথা-বার্তায় তরুণরা হতো উজ্জীবীত। যেখানেই তার বক্তৃতা সেখানেই মানুষের ঢল। কিন্তু খুতবা দিয়ে অথবা বক্তৃতা দিয়ে আমাদের দেশের মৌলভী সাহেবদের মতো অর্থ কামাই তার জ্ঞান এবং রচিবিরুদ্ধ কাজ। বক্তৃতা, খুৎবায় মানুষের ঢল নামলে পেট চলে না, পেট চালানোর জন্য চাই একটা চাকরি বা ব্যবসা। শেষ পর্যন্ত এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশাকে বেছে নেন নিজের জীবনের জন্য। স্কুলের হেড মাস্টার মোটেও রাজি ছিলেন না। কিন্তু পরে বিস্ময়ের সাথে তিনি লক্ষ করেন, ছাত্রদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক, পরম আপনজন। শুধু ক্লাসে নয়, ছাত্ররা তার পিছু পিছু মসজিদেও যেতে থাকে। অনেক অভিভাবকের আপত্তি ছিল ক্লাসের বাইরে তাকে অনুসরণের ক্ষেত্রে। কিন্তু তিনি ক্রমশই সবাইকেই তার অনুরাগী করে তোলেন। অনেকের মতে, অন্যের কষ্ট অনুধাবনের এক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল তার। আসলে তিন বছর বয়সে পিতা হারিয়ে দশ বছর বয়সে শরণার্থী হয়ে- বারোতে এসে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে তিনি এতোটাই জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন যে, তাকে এক কথা দু’বার বলতে হতো না। অনেক সময় বলতেই হতো না তিনি বুঝে নিতেন মুখ দেখে। তারপর ছিল তার অপরিসীম জ্ঞান আর আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা। এই জ্ঞানটাই তিনি ব্যবহার করেছেন হামাসকে সংগঠিত করার সময়। মানুষের কোন প্রয়োজনটি আগে? শরণার্থী শিবিরের শিশুরা যেন মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে, সেটা তিনি দেখান তার মূল লক্ষ্য হিসেবে। স্কুল, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, আর সেগুলোকে সবার সমান নাগালে রাখা হয়ে ওঠে হামাসের মূল কাজ। মানুষ কাছে টেনে নেয় হামাসকে। ততদিনে ইয়াসির আরাফাতের আল-ফাতাহ আর সব সংগঠনকে নিয়ে গড়ে তোলা পিএলও মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পরে পি এল ও সরকারের মন্ত্রীরা। অসলো চুক্তির পর পিএলও পশ্চিম তীরে ফিরে আসার সুযোগ পায়, সঙ্গে আসতে থাকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সৌদি, কুয়েতি, কাতারি ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরওয়ে, সুইডেন থেকে টাকা আসে পুনর্গঠনের জন্য। সেসব টাকা শেষ পর্যন্ত মানুষের কাজে লাগেনি; দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে যাওয়াা পিএলও আর তার অঙ্গ-সংগঠনগুলোর হোমরাচোমরারা সব লোপাট করে। এ সব দুর্নীতি আর ব্যর্থতার বেলাভূমিতে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবীত হয়ে শেখ আহমদ ইয়াসিন গঠন করেন হামাস।

রাস্ট্র যা পারে নি একটি সংগঠন তা করে দেখিয়েছে ঃ পি ওল ওকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়ার পর মানুষ ভেবেছিল তা ফিলিস্তিন পূণর্গঠনে ভূমিকা রাখবে কিন্তু এ কাজে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থতা, অযোগ্যতা ও এবং অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। ইসলামী সংগঠন হামাস মানুষের ব্যাক্তিগত আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করে গড়ে তোলে পূণর্গঠন তহবিল। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিরা এবার তাদের খুচরা দান পাঠাতে থাকে হামাসের ঠিকানায়। হামাস প্রতিটা পাই পয়সাার হিসাব রাখে সর্বাধিক স্বচ্ছতা আর দক্ষতার সঙ্গে। শক্ত সামাজিক সংগঠন হওয়ায় আর ইসলামী আদর্শকে ধারণ করে নৈতিকতার সর্বোচ্চ ইসলামী মান তারা রক্ষা করে-এটাই আমানতদারীতা, তাক্বওয়া ও ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব নমুনা। ইসরাইলের অবরোধ কাটিয়ে গাজার লোকদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেসব গোপন সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করা হয়েছিল, তার সবগুলোতেই ছিল হামাসের বুদ্ধি, জ্ঞান আর অর্থে। অবরুদ্ধ আর যুদ্ধবিধ্বস্ত এক টুকরা বসতিকে সস্তায় বিনোদনের সুযোগ তৈরির জন্য হামাসের তৈরি পার্ক, বাগান, খেলার মাঠ, ফুটবল ময়দান, চিড়িয়াখানা, রেস্তোরাঁ বিনোদনের পাশাপাশি অনেক মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করেছে।

হামাসের উত্থান মানতে পারছেনা মুসলিম নামধারী পশ্চাত্যের সেবকরা ঃ গাজার উপকূলে পাওয়া গ্যাস হামাসের কব্জায় চলে গেলে এবং হামাসের ‘ন্যায়নীতির প্রশাসন চালু রাখলে’ মিসরের বিধ্বস্ত অর্থনীতি আর সামরিক শাসন বেশীদিন টিকতে পারবে না।মিশরের জনগণ আবার রাবা স্কয়ারে জমা হবে আবার গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হবে। অতএব মিসরের সামরিক জান্তার টিকবে না। সিসিকে জনগণ ক্ষমতায় রাখতে চাইবে না। এটা আর কেউ না বুঝলেও অবৈধ শাসক সিসি ভাল করেই বোঝে। সৌদি রাজ পরিবার কোনো অবস্থাতেই কোন আরব দেশে গণতন্ত্র আর আইনের শাসন দেখতে চায় না। অতএব তারাও হামাসকে পছন্দ করে না। শুধু সৌদী আরব আর মিশরই নয়, কোন আরব রাস্ট্রই সত্যিকার আন্তরিকতা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার জন্য এগিয়ে আসেনি। শিয়া হওয়ার পরেও ইরান যেভাবে ফিলিস্তিনী জনতার পক্ষে কথা বলে তা অন্য কেউ করে না। ইসরাইলের সাথে রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা সত্বেও তুরস্ক বরাবর ইসরাইলী বর্বরতার বিরোধীতা এবং গাযার জনগণের জন্য সাহায্য সরবরাহ করে আসছে। অন্যান্য আরব রাস্ট্রগুলো সে তুলনায় খুব কমই ভূমিকা রাখছে। হামাসকে ইতোমধ্যেই সিরিয়া থেকে তারিয়ে দেয়া হয়েছে। হামাস নেতারা এখন থাকেন কাতারে। সবাই ভাবছেন, হামাসকে খতম করে আবার ফাতাহ ইত্যাদির মাধ্যমে গাজাকে গড়ে তুলবে। ইসরাইলের বশংবদদের নেতৃত্ব থাকবে সেখানে। কিন্ত যাদের সম্পর্ক মাটি ও মানুষের সাথে। যাদের শিকর মাটির গভীরে গ্রোথিত। যারা আরশের মালিকের সাহায্য ছাড়া আর কারো সাহায্যের উপর ভরসা করে না তাদের এভাবে ধ্বংস করা যাবে না। বিমান থেকে গোলা ছুরে ফজরের নামাজ পড়াা অবস্থায় হামাসের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ ইয়াসিনকে তার হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় তাকে হত্যা করে ইসরাইল হামাসকে দমাতে পারেনি, বরং এ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে হামাসের গণভিত্তি আরো মজবুত হয়েছে। দু’লাখ লোকের ঢল নেমেছিল তার জানাযা পরবর্তী দোয়া অনুষ্ঠানে। গাজার কোনো পরিবার ছিল না যাদের কেউ না কেউ ছিল সে মিছিলে। খ্রিষ্টান-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই তার শোক মিছিলে অংশ নিয়েছিল।

মুসলিম বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পশ্চিমারা কখনো সমর্থন করে না ঃ মুসলিম বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পশ্চিমারা সমর্থন করে না। তারা প্রতিনিয়ত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে কিন্তু মধ্যপ্রাচের দেশগুলোতে রাজতন্ত্র জিইয়ে রাখার জন্য তারাই সহযোগিতা করে। আর এ সব রাজতান্ত্রিক পরিবারগুলোর সাথে পশ্চিমাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক। মিশরে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ইখওয়ানুল মুসলিমুনকে সামরিক ক্যুর মাধ্যমে অপসারণ করতে সৌদী আরব প্রকাশ্য সহযোগিতা করেছে আর পশ্চিমারা নিরব সমর্থন করেছে। একই অবস্থা আমরা দেখেছি আলজেরিয়ায়। ১৯৯২ সালে ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর সামরিক জান্তা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সে সামরিক শাসন আজো বহাল আছে। মাঝখানে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। ইসলাম ও মুসলমানদের নির্মূলে পশ্চিমারা সব সময়ই এ ডাবল স্টান্ডার্ড নীতি অবলম্বন করে, মুসলমানদের মধ্যে কার্যকর কোন ঐক্য না থাকার কারণে তারা এ সুযোগ কাজে লাগায়। ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে ২০০৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হামাস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় এবং নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এ নির্বাচনে পশ্চিমারা পর্যবেক্ষক ছিলেন। পশ্চিমারা বলেছিল তারা নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে নেবেন কিন্তু হামাস জয়ী হবে তারা তা কল্পনা করতে পারে নি। এর কারণ হচ্ছে, বছরের পর বছর ফাতাহকে প্রচুর ডলার সাহায্য দিত পশ্চিমারা। সে সময় প্রশ্ন ওঠে-এ সাহায্য গেল কোথায়? পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইয়াসির আরাফাতের দল ফাতাহ জড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি এবং পশ্চিমা ও ইসরাইল প্রীতিতে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব হামাসকে মেনে নিতে অস্বীকার করল। পশ্চিমাদের গণতন্ত্রের এ হলো স্বরুপ! যারা গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা তাদের অধীনেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হামাসকে মেনে নিতে অস্বীকার করল! যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমাবিশ্ব একযোগে ঘোষণা করল, হামাস যতদিন সরকার হিসাবে থাকবে ততদিন তারা ফিলিস্তিনিদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা করবে না অন্যদিকে, ইসরাইলকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে যাবে।

মানবতা বিরোধী কাজ করাই ইসরাইরলীদের আদর্শ ঃ হামাস গাজার শাসনভার কাঁধে তুলে নেয়ার পর থেকেই ইসরাইল অবরোধের মাধ্যমে এ ক্ষুদ্র জনপদের ১৫ লাখ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ফলে অসহায় গাজাবাসী বিনা দোষে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছে। গাজায় যাতে কোন পণ্য সামগ্রী এমনকি খাদ্য পর্যন্ত ঢুকতে না পারে ইসরাইল কড়াকড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর এ কাজে সহযোগিতা করে আসছে মিসর। বহির্বিশ্বের সাথে গাজার একমাত্র সংযোগ পথটি হলো রাফা ক্রসিং যা গাজাবাসীকে মিসর দিয়ে বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগে সাহায্য করে তা হুসনি মুবারকের আমল থেকেই বন্ধ আর বাকি দিক ইসরাইল দ্বারা পরিবেষ্টিত ও অন্যদিকে সাগর! গাজার প্রতি এ অসহনীয় অবরোধ সহ্য করতে না পেরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু বিবেকবান মানুষ একত্রিত হয়। আর্তমানবতা ডাকে সাড়া দিতে তারা সবাই ১০ হাজার টন সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ৩১ মে ২০১০, ৬টি জাহাজের একটি ফ্লোটিলা বহর সাইপ্রাসের একটি বন্দর থেকে যাত্রা করে। তাদের লক্ষ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজা। বহরের যাত্রীদের সবাই ছিলেন শান্তিবাদী ত্রাণকর্মী। ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যসহ ১৫টি দেশের নাগরিক। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা,গ্রীস, বেলজিয়াম, নরওয়ে, সার্বিয়া, সুইডেন,আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, তুরুস্ক,কুয়েত, মালয়েশিয়া ও ফিলিস্তিন। ভোরের আলো আঁধারীতে জাহাজগুলো যখন আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ইসরাইল উপকূল থেকে ৪০ মাইল দূরে তখনি ইসরাইলী কমান্ডো হেলিকপ্টার থেকে নেমে হামলা চালায়। তারা নেমেই নির্বিচারে গুলি ছুড়ে। এতে ২০ জন নিহত ও ৬৬ জন আহত হন। নিহতদের প্রায় অর্ধেকই তুরুস্কের নাগরিক। ইসরাইলী সেনারা হতাহত ও অন্যসব যাত্রীবাহী জাহাজগুলো আটক করে নিয়ে যায় তাদের বন্দরে। এর চাইতে পাশবিকতা আর নির্মমতা আর কি হতে পারে। এরপরও বিশ্ব বিবেক জাগে না। সামান্য একটি মূর্তি ধ্বংসের অপরাধে আফগানিস্তানকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো অথচ ইসরাইলী বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তো নেয়ই না, বরং সাহায্য করে।

মহাসূযোগের আশায় অনেকেই পাড়ি দেয় ইসরাইল ঃ ইসরাইলের প্রচুর জমি দরকার কারণ ইসরাইল বিশ্বের সমগ্র ইহুদীদের নিজ নাগরিক মনে করে। তারা মনে করে একদিন বিশ্বের সমগ্র ইহুদী সম্প্রদায় একত্রিত হবে আর প্রতিষ্ঠা করবে বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র। এরকম ভাবনা বিশ্বের আর দ্বিতীয় কোন নজীর নেই। যে ব্যাক্তি ইহুদী এবং ইসরাইল যেতে আগ্রহী তার সমস্ত খরচ ইসরাইল রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করে। সেখানে তাকে তারা নিয়ে যাবে এবং সে পাবে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা কোনো এক বাড়ি আর থাকা, খাওয়া ও জীবিকা অর্জনের সব ব্যবস্থা তো আছেই! যেই ইসরাইলী সেনাবাহিনীতে নাম লেখায় তাকে প্রচুর অর্থ সম্পদ দেয়া হয়। সম্পদের লোভেই মুলত সারা বিশ্ব থেকে ইয়াহুদীরা ইসরাইলে পাড়ি জমায়। এ জন্য দেখা যায় যুদ্ধে তাদের একজন সৈন্য মারা গেলে পুরো বাহিনীতে কান্নার রোল ওঠে এবং তারা হতোদ্দম হয়ে পড়ে। কারণ তারা মরার জন্য ইসলাইল আসেনি তারা এসেছে সূখ সম্ভোগ আর সম্পদের লোভে। অপর দিকে হামাসের অসংখ্য সৈন্য শাহাদাত বরণ করার পরও তাদের সাহসে ভাটা পরে না। কারণ ইসরাইলীরা দখলদার ওরা এসছে সম্পদের লোভে আর হামাস সৈন্যরা নিজস্ব আজাদীর জন্য লড়াই করছে তারা জানে হয় শাহাদাত নয়তো বিজয়। অতএব তাদের হতাশার কিছু নেই।

কারাগার আর যুদ্ধে যাদের জীবন গড়া ঃ ইসরাইলের কারাগারে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এখনো মানবেতর জীবন যাপন করতেছে। এমন অনেকেই আছেন যাদের শিশুকালে ইসরাইল ধরে নিয়ে গেছে আর কারাগারেই বাকি জীবনটা পার করে দিয়েছেন। আর হামাস বা ফাতাহ’র তো হাজার হাজার নেতা কর্মী সমর্থক ইসরাইলী কারাগারে বন্দী আছেন আর গুপ্তহত্যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত কতজন যে মারা গেছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ইসরাইলের এত দহরম-মহরম সম্পর্ক থাকার পরেও মাঝে মাঝে ইসরাইলীরা মাহমুদ আব্বাসকেও হত্যার হুমকি দেয়! এজন্যই হামাস মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে ইসরাইলী সেনাকে অপহরণ করে যাতে বন্দী বিনিময় চুক্তি করে ইসরাইলী কারাগার থেকে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা যায়। এরকমই গিলাদ শালিত নামে এক ইসরাইলী সেনার বিপরীতে গত ২০১১ সালে হামাস ১০৫০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করেছে! আর চলমান যুদ্ধেও ৪২ ইসরাইলী সেনা নিহত ১ ইসরাইলী সেনাকে বন্দী করেছে হামাস !

সংসার সূখ প্রিয়ারও মূখ সব ছেড়ে চলে অজানার পথে মূখে যোদ্ধার হাসি ঃ এবারের যুদ্ধে ইসরাইলকে সবেচেয় বেশী নাকাল করেছে যে যোদ্ধার রণ কৌশল। তিনি হচ্ছেন মোহাম্মদ দেইফ। ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিমান হামলায় দেইফের ২৭ বছর বয়সী স্ত্রী উইদা ও সাত মাসের শিশু ছেলে আলী দেইফ শহীদ হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে কমান্ডার দেইফের বেঁচে থাকা নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল। এ সম্পর্কে হামাসের কাসসাম ব্রিগেড স্পষ্ট করে বলেছে, আমাদের কমান্ডার দেইফ বেঁচে আছেন এবং তিনি ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মুহাম্মাদ দেইফের পরিবার যে ভবনে বাস করত সে ভবন ইসরাইলের বিমান হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কিন্তু স্ত্রী, সন্তান সব কিছু হাড়িয়েও শাহাদাতের ময়দানে লড়াই করছেন এ কমান্ডার। এর আগে, ইসরাইলের পাঁচ দফা হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন মুহাম্মাদ দেইফ। বার বার হামলা থেকে বেঁচে গিয়েও তিনি শক্ত হাতে হামাসের সামরিক শাখার নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এবং তিনি ইসরাইল সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার অকুতোভয় যোদ্ধার দল হামাস। হামাস শক্ত হাতে কমান্ড করে অমানবিকতার দুই ভিলেইনকে এতটায় কোণঠাসা করেছে যে, তারা এখন কায়রোয় হামাসের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের দৃঢ়-সংকল্পের কমান্ডার মুহাম্মাদ দেইফ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গাজা উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন আদায়ের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় বিজয় অর্জনেরও দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু কে এই দৃঢ়-সংকল্পের মুহাম্মাদ দেইফ? এবারের গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের এত সেনা-ক্ষয়ের নায়ক মুহাম্মাদ দেইফকে ইসরাইলের জনগণের কাছে অনেকটা আড়াল রেখেছে তেল আবিবের কঠোর শাসনে থাকা গণমাধ্যমগুলো। হামাসের এই কমান্ডারের ওপর পাঁচবার বোমা হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি প্রতিবারই বেঁচে গেছেন। যতবার জীবন ফেরত পেয়েছেন ততবারই যেন ঈমান আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে আর মধ্যপ্রাচ্যের দাম্ভিক সামরিক শক্তি ইসরাইলকে উপেক্ষা করেছেন প্রবল পরাক্রমে। এবারের যুদ্ধে ইসরাইল যতই শক্তি নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য হামাসকে সতর্ক করেছে, যতই বলেছে রকেট ও টানেল ধ্বংস করা হবে ততই বর্বর শক্তির হুঁশিয়ারিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন মুহাম্মাদ দেইফ। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকার ওপর থেকে আট বছরের অবরোধ তুলে না নিলে যুদ্ধবিরতি হবে না। ১৯৬৫ সালে গাজার খান ইউনুস শহরের উদ্বাস্তু শিবিরের একটি কারাগারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বীর কমান্ডার। গত ২০ বছর ধরে এ বীর যোদ্ধা হামাসের সামরিক অভিযানের সঙ্গে জড়িত। তার নেতৃত্বে বহু হামলা হয়েছে ইসরাইলের ওপর। বহু হামলার পরিকল্পনা তিনিই করেছেন। ইসরাইলের সেনা অপহরণের নেতৃত্ব কিংবা পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন, হাতে নিয়েছেন গাজার অভ্যন্তরে টানেল নির্মাণের এক কঠিন প্রকল্প যাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানো যায় সহজেই। সময়ের ব্যবধানে ২০০২ সালে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় দেইফকে। ইসরাইলের হাতে পূর্বসুরি সালাহ শেহাদের’র শাহাদাতের পর তিনি এ দায়িত্ব পান। তার পুরো নাম মুহাম্মাদ দিয়াব আল-মাসরি এবং তিনি পরে গেরিলা নাম ধারণ করেন দিয়েফ যার আরবি অর্থ হচ্ছে মেহমান বা অতিথি। এ দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই দীর্ঘদিন ধরে মুহাম্মাদ দেইফ গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। তারও আগে ১৯৮০’র দশকে তিনি ইসলামি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বায়োলজির এ ছাত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ভাল মানের দায়িত্বশীল ছিলেন এবং গাজার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসরাইলের হাতে বন্দি হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে এবং ১৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল ইসরাইলের কথিত আদালত। বলা হয়ে থাকে, ২০০০ সালে যখন দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয় তখন তিনি ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে পরিচালিত কারাগার থেকে মুক্তি পান অথবা কারা ভেঙে বের হতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় অনেক বেশি ক্ষুব্ধ হয় মানবতার শত্রু ইসরাইল। অথচ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মুহাম্মাদ দেইফের ওপর শকুনের মতো তীক্ষ্ম নজর ছিল ইসরাইলের। হামাসের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই ইসরাইল পঞ্চমবারের মতো হামলা চালিয়েছিল দেইফের ওপর। ওই গুপ্ত হামলার লক্ষ্য ছিল চিরদিনের মতো দেইফকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া। কিন্তু এবারের হামলাও ব্যর্থ হলো। অবশ্য, পঞ্চমবারের হামলায় মুহাম্মাদ দেইফ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। হামলার পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে তার পা ও দেহের নীচের অংশ প্যারলাইজড হয়ে গেছে যদিও তা কখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এরপর তিনি একদমই গোপন কোথাও চলে গেছেন; জনসমক্ষে আর দেখা যায় নি। তার জীবন সম্পর্কেও তেমন বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। ২০০২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইহুদিবাদী ইসরাইল অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে দেইফের গাড়ি লক্ষ্য করে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। সে সময় তিনি এক শোকানুষ্ঠান থেকে ঘরে ফিরছিলেন। আহত হয়ে এ যাত্রাও বেঁচে যান কমান্ডার দেইফ। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসের আরেক হামলা থেকে বেঁচে যান তিনি। সেদিন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, আল-আউয়াল এবং আধ্যাত্মিক নেতা শেখ ইয়াসিনের সঙ্গে মুহাম্মাদ দেইফ বৈঠক করছিলেন একটি ভবনের নিচ তলায়। ইহুদিবাদী ইসরাইল ওই ভবনের ওপরের তলায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় সবাই বেঁচে যান তবে সামান্য আহত হন। মুহাম্মাদ দেইফ ছদ্মবেশ ধারণ করার বিষয়ে এতটাই পারদর্শী যে, মুহূর্তেই জনতার মধ্যে মিশে যেতে পারেন। রহস্যময় এ কমান্ডার কোনো প্রযুক্তির সঙ্গে থাকেন না; ব্যবহার করেন না কোনো মোবাইল ফোন বা অন্য কিছু। কারণ একটাই; শত্রু ইসরাইলের যেকোনো ধরনের ফাঁদ এড়িয়ে চলা যাতে কোনোভাবেই তার চিহ্ন না পায়। সম্ভবত তিনি এ কৌশল ও সতর্কতা অবলম্বন করেন তারই বিজ্ঞ পরামর্শদাতা ইয়াহহিয়া আইয়াশের শাহাদাতের কারণে। আইয়াশ শহীদ হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে। মোবাইল ফোন ট্রাক করে ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা ফাঁদে ফেলে তাকে শহীদ করে। শহীদ আইয়াশ একান্ত তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে মুহাম্মাদ দেইফকে গড়ে তোলেন বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে; সেই সঙ্গে গড়ে ওঠে হামাসের সামরিক শাখার কমান্ড কাঠামো । ১৯৯৬ সালে ইয়াহহিয়া আইয়াশ শাহাদাতবরণ করার পর মুহাম্মাদ দেইফ নিজেই ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। আইয়াশ নিজেও ছিলেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। ইসরাইল মনে করে- মুহাম্মাদ দেইফের কারণেই হামাস বহু হামলায় সফলতা পেয়েছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ইসরাইলের অভ্যন্তরে যেসব হামলা হয়েছে তার মূল পরিকল্পনাকোরী ছিলেন হামাসের এই কমান্ডার।

ভয়ংকর এক সন্ত্রাসী সংগঠন মোসাদ ঃ ইসরাইল রাস্ট্রটির প্রতিষ্ঠার আগে ইহুদীদের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল ইরগুনজাইলিউমি। যার প্রধান ছিল ডেভিড বেলগুরিয়ান। ইসরাইল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আর বড় পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে তোল হয় মোসাদকে। পৃথিবীতে অনেক বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, গুপ্ত হত্যা, গণহত্যায়, রাজনৈতিক ক্যুর পিছেনে মোসাদের হাত রয়েছে। তারা টার্গেট কিলিং এর কাজেও অভ্যস্ত। টার্গেট কিলিং এর আওতায় হত্যা করা হয় শেখ আহমদ ইয়াসিন, আবদুল আজিজ রানাতিসি, মোহাম্মদ দেইফের পরিবার, তিন জন মীর্ষ হামাস কমান্ডারসহ হাজার হাজার যোদ্ধাকে। ইসরায়েল তার সর্বশেষ ‘টার্গেটেড কিলিং’ অভিযান সফলভাবে চালায় আরব আমীরাতের দুবাইয়ে, হামাসের এক সামরিক কমান্ডারকে হত্যা করে মোসাদ। এ বছরের ২০ জানুয়ারির ওই হত্যাকাণ্ডটির জন্য এখন মোসাদকে সপ্রমান দায়ী করা হচ্ছে। দুবাই কর্তৃপক্ষ আততায়ীদের ছবি প্রকাশ করেছে, যাদের ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার বলে চিহ্নিত করেছেন তারা। আততায়ীরা দুবাইতে আসে ফ্রান্স, জর্মানি ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের পাসপোর্ট নিয়ে। যার মানে হচ্ছে ওই দেশগুলোর নাগরিক তথ্যভান্ডার (ন্যাশনাল আইডেন্টিটি ডাটাবেজ) জালিয়াতি করে পাসপোর্ট হাতিয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা। স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েলের সাথে অন্যরকম এক টানাপোড়েনে জড়িয়েছে এখন ওই দেশগুলো। জর্মানি ও ফ্রান্সের গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে মোসাদের মতো দক্ষ সংস্থাগুলোর পক্ষেই কেবল ওই ধরনের অভিযান চালানো সম্ভব। জর্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার পরপরই ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। ফরাসী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে ইসরায়েলের কাছে। ব্রিটেন সরকারিভাবেই জানিয়েছে যে, হামাস কমান্ডার মাহবুদ আল মাবু’র হত্যাকারী যে মোসাদ এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। আয়ারল্যান্ড জানিয়েছে ‘আইরিশ পাসপোর্টের সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ করে এমনসব কর্মকান্ডকে তারা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা’ করবে। ফ্রান্স, জর্মানি, ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বর্তমান প্রতিক্রিয়া থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, দুবাই হত্যাকাণ্ডের বেলায় ওসব দেশের কোনো নিরাপত্তা সংস্থার সাথে ইসরায়েলের যোগাযোগ ছিল না। তাহলে জোরদার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর স্পর্শকাতর তথ্যভান্ডারে জালিয়াতির কাজে মোসাদ সিদ্ধহস্ত। জালিয়াতি, গুপ্ত হত্যা, টার্গেট কিলিং সব কাজেই তারা পৃথিবীর অন্য যে কোন গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এগিয়ে। মোসাদের এ অন্যায় কার্যক্রমকে জায়োনিস্টরা বৈধ মনে করে। অবৈধ ও সন্ত্রাসী এ রাস্ট্রটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেল গুরিয়ন সেসময় মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘প্রতিরক্ষায় সম্মুখ বুহ্য’ হিসাবে মোসাদ কাজ করবে। সে কথামতোই কাজ করছে তারা। ঝুঁকি না বাড়িয়ে আগেভাগেই নিরাপত্তার প্রতি সম্ভাব্য হুমকি দূর করতে সচেষ্ট সংস্থাটি। একাজে কোনো আন্তর্জাতিক আইন, কূটনীতিক রীতি প্রথার তোয়াক্কা করেনা এ রাস্ট্রটি। অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে হলে দেশটি তার ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে সক্রিয়, এমনকি বন্ধু দেশ হলেও। জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষণ ও নীতি নির্ধারনেও সম্মুখ সারির ভূমিকা রাখে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। দেশের বাইরে অভিযান চালানোর জন্য গঠিত শাখা ছাড়া আরো দুটি শাখা আছে এর- অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখা ও সামরিক গোয়েন্দা শাখা। দখলকৃত ফিলিস্তিনে, মিসর-সিরিয়া-জর্দান থেকে শুরু করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে এবং ইওরোপেও নানা গুপ্ত হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ আছে দেশটির বিরুদ্ধে। এসব মরিয়া অভিযানে সাফল্যের পাশাপাশি আছে ব্যর্থতাও। দু’ ধরনের ব্যর্থতা; এক. অভিযান সফল করতে না পারা, দুই. সফল অভিযানের পর মোসাদের সম্পৃক্ততা প্রকাশ হয়ে যাওয়া।

মোসাদের ভয়ংকর মিশন-কিল হিম সাইলেন্টলি ঃ ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়। একে একে ছ’জন বিদেশী যাত্রীবাহী বিমানে করে এসে নামল জর্ডানের রাজধানী আম্মানে। সেখানকার রানী আলিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মকর্তারা দেখলেন পাসপোর্ট মোতাবেক তারা কানাডার নাগরিক। আসলে এসব পাসপোর্ট ভুয়া। তারা ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে অভিন্ন মিশনে এসেছিল। এই গ্রুপের সবাই ইসরাইলে কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট। ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগ্রামের একজন নেতাকে বিষপ্রয়োগে হত্যাই এদের আগমনের উদ্দেশ্য। সেই নেতার নাম খালিদ মিশাল। তখন তার বয়স মাত্র ৪১ বছর। তিনি ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তবে হত্যার সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল। ইহুদিবাদীরা এর কয়েক বছর পর আবারো তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্তে ব্যর্থ হয়। তিনি হামাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান। ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি গুপ্তচররা খালিদ মিশালকে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে ওরা ব্যর্থ হয়েছিল সেই সিক্রেট মিশনে। আল্লাহর রহমতে মিশাল বেঁচে যান। সেদিন তিনি শিশুসন্তানদের স্কুলে নামিয়ে নিজের কাজে যাচ্ছিলেন। এক সময় লক্ষ করলেন, আরেকটি গাড়ি তার গাড়িটিকে অনুসরণ করছে। এটি ছিল ইহুদিবাদী গোয়েন্দাদের, যারা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে জর্ডানে অনুপ্রবেশ করেছিল। তারা মিশালের কানে ¯েপ্র করে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করার সাথে সাথে মিশালের একজন দেহরক্ষী ঘাতক দু’জনকে ধাওয়া করেন। এই রক্ষীর নাম মুহাম্মাদ আবু সাঈফ। সৌভাগ্যক্রমে, তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ফিলিস্তিন মুক্তিবাহিনীর একজন অফিসার। তার সাহায্যে আবু সাঈফ মোসাদের এজেন্ট দু’জনকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হামাস জেরুসালেম এবং ইসরাইলের তদানীন্তন রাজধানী তেলআবিবে সিরিজ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল। এসব হামলায় ২০ জন ইসরাইলি নিহত এবং শত শত আহত হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে উদ্যোগ নেয়া হয় হামাস নেতা খালিদ মিশালকে হত্যার। তারা সিদ্ধান্ত নিলো, খালিদ মিশালকে গুলি বা বোমা কিংবা ছোরা দিয়েও হত্যা করা হবে না। এ জন্য এমন এক বিষ প্রয়োগ করা হবে, যার অ্যাকশনের গতি মন্থর হলেও পরিণতি মারাত্মক। বিষক্রিয়া ধীরে ধীরে মেশালের মস্তিষ্ক ও শ্বাসতন্ত্র অচল করে দিয়ে তাকে ঠেলে দেবে মৃত্যুর দিকে। পরিকল্পনা করা হয়েছিল, মিশালের একেবারে কাছে গিয়ে তার কানে বিষ দ্রুত স্পে করা হবে। ফলে কোনো অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ থাকবে না। অথচ বিষের প্রভাবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই মিশাল মৃত্যুবরণ করবেন। এভাবে ইহুদিবাদের এক দুর্ধর্ষ দুশমন দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেবেন। ২৫ তারিখে মোসাদের হামলার পর থেকে খালিদ মিশাল ছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। পাল্টা ওষুধ যথাসময়ে প্রয়োগ করায় দু’দিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ‘কমা’ অবস্থা থেকে সুস্থ হতে থাকেন। এভাবেই ক্রমশ সুস্থ হয়ে এক সময়ে স্বাভাবিক জীবনধারায় প্রত্যাবর্তন করেন। মিশালের সুস্থ হওয়ার মতো আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তার ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যে মারাত্মক টানাপোড়ের সৃস্টি হয়। বাদশাহ হোসেন ইসরাইলকে বলেছিলেন, ‘তোমরা বিষ দিয়েছ, বিষয়ক্ষয়ও করতে হবে তোমাদেরকেই’। জর্ডানের বাদশাহর প্রচন্ড চাপে অবশেষে ইসরাইলী গোয়েন্দা প্রধান নিজে বিষ নাশক নিয়ে জর্ডান গিয়েছিলেন। ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া’ ইসরাইল হামাস নেতাকে বিষ দিয়ে মারতে গিয়ে চড়া মাশুল দিয়েছিল। হামাসের গোয়েন্দা ও গুপ্তঘাতক বাহিনী মোসাদ বিশ্বে মার্কিন সিআইএ এবং (সাবেক) সোভিয়েত কেজিবির মতোই ভয়ঙ্কর, দুর্ধর্ষ ও নৃশংস হিসেবে কুখ্যাত। তাদের এ ভয়ংকর মিশন চলছে বিশ্বব্যাপী

মোসাদের ষড়যন্ত্রের বাইরে নয় মুসলিম বিশ্বের কোন দেশ ঃ পৃথিবীর দেশে দেশে যে যুদ্ধ বিগ্রহ, হানাাহানি এর অধিকাংশই মোসাদের ষড়যন্ত্রের ফসল। তারা গোটা পৃথিবীতে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে রেখেছে । দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালে আমরা যে বিপদের দিকটা আচ করতে পারি তা হলো, গত একদশকে ভারতের সাথে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের বেড়ে ওঠা ঘনিষ্ট সম্পর্ক ও যোগাযোগ। নানান কারণে এটা বেশ পাকাপোক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে গেছে। বিশেষত, ভারতের র'এর সাথে তাদের কৌশলগত সহযোগিতার সম্পর্ক ও পরস্পরের নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি অভিন্ন দর্শনকে আশ্রয় করে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর আওতায় মোসাদের তত্তাবধানে সরাসরি প্রশিক্ষত করে তোলার কাজও চালিয়ে যাচ্ছে বেশ আগে থেকেই। লক্ষণীয় দিক হলো, মোসাদ তথা ইসরায়েলের মতো ভারতেরও সামনের সারির সামরিক কৌশলের অংশ হিশেবে গুপ্তহত্যা কিংবা টার্গেটেড কিলিং মিশনের কৌশল গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের স্বক্ষমতা তৈরি এবং ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার কথা। বাংলাদেশের নিরাপত্তার হুমকি মোকাবেলা এই দিকটি আশু বিবেচনায় আনা উচিত। অন্যদিকে বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয় ও নিকট অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহের দিকে নজর ফেরানোও যেতে পারে এই আলোকে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন তার পরবর্তী অবস্থা সবকিছু তাই ঠান্ডা মাথায় বিবেচনা করা দরকার।

যুদ্ধ বিরতি লংঘন করে বার বার হামলা ঃ ইসরাইল বিগত ষাট বছরে প্রতিবারই নিজেদের পক্ষ থেকে অজুহাত সৃস্টি করে ফিলিস্তিনী নিরস্ত্র জনতার উপর হামলা করেছে। এটাকে যদিও অনেকে যুদ্ধ বলছে কিন্তু এটা যুদ্ধ নয়, এক তরফা আক্রমণ। তারপরও যদি আমরা এটাকে যুদ্ধ বলে মেনে নেই তবে তাতেও দেখা যায় তারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধের সকল আইন কানুন প্রতিটি ক্ষেত্রে ভঙ্গ করছে। যুদ্ধ বিরতির মধ্যেই তারা হামলা করে হামাসের তিন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছে। এ হত্যার পর তুরস্কের আন্দালু বার্তা সংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে খালেদ মিশাল বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে প্রস্তুত রয়েছে যেমনটি করেছে বিগত প্রায় একশ বছর ধরে। হামাস নেতা বলেন, “আমরা আমাদের দাবি বিশেষ করে গাজার ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার ও ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ব্যক্তিদের মুক্তির গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ।” খালেদ মেশাল বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল শুধু শিশু হত্যা এবং আবাসিক এলাকা, মসজিদ, হাসপাতাল ও জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল ধ্বংস করছে। এ সময় তিনি ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে শিশু হত্যাকারী বলে উল্লেখ করেন। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে ইসরাইল যে দোষ দিচ্ছে তা নাকচ করে খালেদ মেশাল বলেন, হামাসের নেতাদের হত্যা করার জন্যই তেল আবিবের দখলদার সরকারই এ কাজ করেছে। তবে তাদের সে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। যে তিনজন কামান্ডার শাহাদাত বরণ করেছেন তারা হচ্ছেন কমান্ডার মুহাম্মাদ আবু শামালা, মুহাম্মাদ আবু বারহুম এবং রায়েদ আল-আত্তার । তারা গাজার রাফাহ শহরের তেল আল-সুলতান উদ্বাস্তু শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হন। তিন কমান্ডার শহীদ হওয়ার পর হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড বলেছে, এতে তাদের মনোবলে কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না। একইসঙ্গে হামাস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ তিন কমান্ডারকে হত্যার মূল্য দিতে হবে ইসরাইলকে।

নাভি পিল্লাইয়ের ক্ষোভ কিন্তু ফলাফল কি? ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যার বিষয়ে নিস্ক্রিয় থাকায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তীব্র সমালোচনা করেছেন একই সংস্থার মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের প্রধান নাভি পিল্লাই। তিনি বলেছেন, সামগ্রীক স্বার্থের চেয়ে গাজা ইস্যুকে ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় দেখা হচ্ছে। গাজায় অসম যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে নিশ্চিত এবং নৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তিনি ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে তিরস্কার করেন। নাভি পিল্লাই বলেন, গাজায় বৃহত্তর স্বার্থের চেয়ে ক্ষুদ্র ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এবং এ কারণে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে গেছে। এতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে।

এক বিবৃতিতে নাভি পিল্লাই বলেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে যদি প্রস্তাব আনা হয় তাহলে যেন কেউ ভেটো ক্ষমতার অপব্যবহার না করে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ যদি তার বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করতে পারে তাহলে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের জীবন বেঁচে যাবে। কিন্তু নাভি পিল্লাইয়ের এ বিবৃতির ফলাফল কি? ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘ ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করছে বরাবরই। তারা ফিলিস্তিনী জনগণের জীবন, সম্পদ ও মানবাধিকারের চেয়ে ইসরাইলী রাস্ট্রের নিরাপত্তাকেই বেশী প্রাধ্যান্য দেয়।

মুমিনের কোন পরাজয় নেই ঃ ইসরাইলী আগ্রাসন এবং জুলুম নির্যাতনে ফিলিস্তিনী জনগণের জন্য আলোক বর্তিকা হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ‘হামাস’। হামাস বুঝতে এবং বুঝাতে পেরেছে ইসারইলী নরপশুদের কাছ থেকে কখনো ভাল আচরণ পাওয়া যাবে না, বরং লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। এবারের ইসরাইলী হামলা, ধ্বংসযজ্ঞে হামাস প্রমাণ করেছে ‘‘অসত্যের কাছে কভূ নত নাহি শির ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’’ হামাসের কর্মীরা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবীত-অপর দিকে ইসরাইলী হানাদার বাহিণীতে আছে সূখ স্বপ্নে বিভোর হওয়া বিভিন্ন দেশ থেকে ইসরাইলে পাড়ি জমানো উচ্চ বেতনভোগী ইহুদী গোষ্ঠী। তাইতো বিশ্বের অস্টম সামরিক শক্তির অধীকারী একটি শক্তি একটি ক্ষুদ্র শক্তির কাছে চরমভাবে হেরে গেছে। এর কারণ ইসরাইলীরা একটি অবৈধ রাস্ট্রের নাগরিক। যে রাস্ট্রের কোন সীমানা নেই, দখলদারী এবং আগ্রসানের মাধ্যমে তারা তাদের রাস্ট্রীয় সীমানা বৃদ্ধি করছে অপরদিকে দিকে ফিলিস্তিনীরা দিনে দিনে তাদের আবাস ভূমি হাড়াচ্ছে। এ ধরনের একটি দখলদার বাহিনী একটি মুক্তি সংগ্রামের কাফেলার কাছে পদানত হবে এটাই স্বাভাবিক। এভাবে ফিলিস্তিনী জনগণ নারী শিশু হত্যার মাধ্যমে ইসরাইল বার বার প্রমাণ করেছে তারা একটি সন্ত্রাসী রাস্ট্র। অপরদিকে হামাস শুধু ইসরাইলী সেনা খতমের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা একটি বৈধ রাস্ট্রীয় শক্তি। এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসকে একটি বৈধ ‘রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গাজার ওপর থেকে ইসরাইলের সর্বাত্মক অবরোধ তুলে নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন। সরাইলি হামলায় গাজায় প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেসামরিক লোক ৭৯ ভাগ। আর হামাস যোদ্ধা ২৯৯ জন, শিশু ৪২৬ জন এবং নারী ২৫৫ জন। আহত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। বাস্তচ্যুত হয়েছে পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি। কিন্তু হামাস কোন বেসামরিক লোকের উপর আক্রমণ করেনি, তাদের হামলায় শুধুমাত্র তিনজন বেসামরিক ইসরাইলী নিহত হয়েছে। হামাসের লক্ষ্য ছিল দখলদার ইসরাইলী সেনা, অপরদিকে ইসরাইলীরা টার্গেট করেছে নারী, শিশু সহ সব শ্রেণির নিরাপরাধ নাগরিককে। টানেল ধ্বংস, আধিপত্য ধরে রাখা এবং হামাসকে কাবু করার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ঘোষণা কতটুকু অর্জিত হয়েছে এমন প্রশ্নে ৫৬ ভাগ ইসরাইলি মনে করে, আংশিক অর্জিত হয়েছে। ২৬ ভাগ মনে করে পরোপুরি অর্জিত হয়েছে আর ১৩ ভাগ মনে করে কোন লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি। ইসরাইলের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গাজা আগ্রাসনে ইসরাইলি বাহিনীর দৈনিক খরচ হয়েছে ২০ কোটি শেকেল (৪৫৫ কোটি টাকা)। এ তুলনায় হামাসের ব্যয় সামান্য। তবে গাজা ভূখন্ডের আর্থিক ক্ষতি অনেক। বিশ্ব মোড়লদের ভ্রুকুটি, আরব রাজাদের অসহযোগিতা আর বিশ্বের অস্টম সামরিক শক্তির মূখোমূখি দাড়িয়ে হামাস প্রমাণ করেছে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান একটি বাহিনী যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন তাদের পরাজিত করা যায় না। এ কথাটি বিশ্বের প্রতিটি জনপদের জন্য সত্য। আজ যারা বাংলাদেশে অস্ত্র, পেশি শক্তি আর রাস্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে ঈমানদের দমন এবং নিশ্চিহ্ন করতে চান- তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

শেকড়কে উপড়ে ফেলা যায় না ঃ ফিলিস্তিনকে নিয়ে লিখলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বাদ দেয়া যায় না। বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের এক আজব দেশ। যে দেশের পাশে আর কোন মুসলিম রাস্ট্র নেই। আমাদের পাশ্ববর্তী রাস্ট্রটির গোয়েন্দাদের সাথে ইসরাইলের ভয়ংকর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গোপন চুক্তি এবং যৌথ প্রশিক্ষণের খবর প্রায়ই বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র থেকে পাওয়া যায়। অসমর্থিত এ জন্য যে এ সব খবর কেউ স্বীকার করে না। আর যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে এ খবর সংগ্রহ করেন তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেন না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গুম, খুন মোসাদের কাজের কাছাকাছি বলেই অনকে মনে করেন। পার্শ্ববর্তী রাস্ট্রটির পরামর্শেই বাংলাদেশে ইসলাম নির্মূলের লক্ষ্যে ইসলামপন্তী রাজনীতির মূলোৎপাটনে সরকার নানা কায়দা কানুন বাস্তবায়ন করে চলছে, কিন্তু মাটির গভীরে যাদের শেকড়-তাদের কি উপড়ে ফেলা যায়? জুলুম, নির্যাতন, হামলা, মামলা তাড়িয়ে বেড়ানো এত কিছুর পরেও বিগত উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে একটি ম্যসেজ দিয়েছে। ম্যাসেজটি বুঝতে পারলে তাদের জন্য কল্যাণকর হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৯২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File