জনতার দ্রোহের আগুনে স্বৈর শাসনের সব অস্ত্র অকোজো হতে বাধ্য
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ২১ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:০১:৩১ বিকাল
বর্তমানে এক আজব সরকার ক্ষমতায়, এ আজব সরকারের যাত্রা কেউ কেউ মনে করেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনী তামাসার মাধ্যমে শুরু, কিন্তু তাদের যাত্রা শুরু মূলত ২০০৬ সালে লগি বৈঠার তান্ডব এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে রাজপথে রক্তাক্ত করার মাধ্যমে। ২০০৬ সালে একটি নির্বাচিত সরকার তার মেয়াদ শেষ করে সংবিধান অনুযায়ী কেয়ার টেকার সরকারের হাতে দায়িত্ব অর্পন করার পূর্ব মূহুর্তে কেয়ার টেকার সরকার যাতে ক্ষমতা গ্রহণ করতে না পারে, যেন গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় না থাকে, যেন আর কোন সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, বাংলাদেশে যেন কোন সুুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা অব্যহত না থাকে এ জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয় লগি বৈঠার তান্ডব। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এ তান্ডবে নিহত হয় অর্ধ শতাধিক ব্যাক্তি। তারা লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর প্রকাশ্য রাজপথে লাশের উপর উদ্দাম নৃত্য করেছে। এ পাশবিকতা, এ নির্মমতা, এ জঘণ্য প্রতিহিংসা জাতি অবাক নয়নে দেখেছে। পিটিয়ে হত্যার পর লাশের উপর নৃত্য করে তারা শুধু ব্যাক্তিকেই হত্যা করেনি, তারা সে দিন গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, বাক স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে মানুষের মৌলিক অধিকারকে হত্যা করেছে। এ সময় পার্শবর্তী একটি দেশসহ ইঙ্গো-মার্কিন ব্লকের বেশ কয়েকজন রাস্ট্রদুতের দুতিয়ালীতে ক্ষমতাসীন হয় আর্মী ব্যাক্ড ফখরুদ্দীনের সরকার। তাদের সাথে গোপন আতাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। অতএব আওয়ামীলীগ আজ যে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ শাসন করছে এর যাত্রা ৫ জানুয়ারী নয়, তারা যাত্রা করেছে ২৮ অক্টোবরে লগি বৈঠার তান্ডবের মাধ্যমে। ঐ তান্ডবের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র নয়, তারা সন্ত্রাস তন্ত্রে বিশ্বাসী। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সকল প্রকার মৌলিক মানবিক অধিকার হরণ করেছে। বিরোধী দলের মিছিল দেখা মাত্র গুলির মাধ্যমে বিরোধী দলের সহস্রাধিক নেতা কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। শুধুমাত্র সাঈদী সাহেবের রায়ের দিন এবং তার পরের দুই দিনে দুই শতাধিক মানুষকে প্রকাশ্য দিবালোকে আইন শৃংখলা বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের ক্ষমতার বিগত পাঁচ বছর চলেছে হত্যা, গুম খুনের মহোৎসব। গ্রেফতারের পর তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে বিরোধী দলের শত শত নেতা কর্মীকে হত্যা করেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। আইন শৃংখলা বাহিনীকে আওয়ামীলীগ ব্যবহার করছে দলীয় ক্যাডার বাহিনীর মতো। দেখা মাত্র গুলি, পাওয়া মাত্র গ্রেফতার, গ্রেফতারের পর মামলার পাহাড়। মামলায় রিমান্ডের নামে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। যা জাতি ইতিপূর্বে কখনো দেখেনি। ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইনকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আটানব্বইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিমান্ডে নির্যাতন করে তাকে চিরজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে রিমান্ডে ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগ জানে তারা যে অন্যায় অপকর্ম করেছে এবং এখনো করছে এর ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনে তারা কখনো বিজয় তো দূরে থাক সম্মানজনক পরাজয় ও তাদের ভাগ্যে জুটবে না। আর তাই আওয়ামীলীগের একান্ত অনুগত বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়ে কেয়ার টেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করিয়ে শেখ হাসিনার অধীনে একটি নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করেছে। যে নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, রাস্ট্রপতি, বিরোধী দলীয় নেত্রী কেউই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নি। ১৫৩ জন অনির্বাচিত সংসদ সদস্য দিয়ে গঠিত সরকার কোন আইনেই নিজেদেরকে বৈধ বলে দাবী করতে পারে না। ১৫৩টির পরে বাকী যে ১৪৭টিতে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল তাতেও তো কোন জনগণ ভোট দিতে যায়নি। ভোটারের পরিবর্তে সেখানে দেখা গেছে কুকুর, বেড়াল আর গরু। তাইতো সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান এটিকে ‘কুত্তা মার্কা নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছেন। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে কৈউই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে রাজী নয়। দেশী-বিদেশী কেউই এটাকে সমর্থন করেনি। সকল মহল শুরু থেকেই একটি অংশগ্রহণমূলক, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসছে কিন্তু অবৈধ সরকারের অবৈধ মন্ত্রীরা বলছেন ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন হবে না। জনগণ নাকি তাদের ম্যান্ডেট এবং সমর্থন দিয়েছে। প্রশ্ন জাগে সে জনগণ কারা? ১৫৩টি আসনে তো কেউ ভোটাধিকার প্রয়োগের সূযোগই পেল না। বাকী ১৪৭টিতেও জনগণ ভোট দিতে যায়নি। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ মতে সর্বোচ্চ ৫% লোক ভোট দিয়েছে। সে ভোট কিভাবে দিয়েছে তা দু একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে শোনার সূযোগ হয়েছে। অতএব যারা আজ নিজেদেরকে নির্বাচিত বলছেন, বৈধ বলছেন তারা কোনমতেই নির্বাচিতও নন, বৈধও নন। একটি অনির্বাচিত,অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার আজ দেশ শাসন করছে। আজব এক সংসদীয় সরকার তারা প্রতিষ্ঠা করেছে। যে সংসদে একই দল সরকারেও আছে আবার বিরোধী দলেও আছে। এমন আজব সরকার পৃথিবীর কোন দেশে না থাকলেও শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে আছে। ক্ষমতামদমত্ত সরকারের মন্ত্রীরা কে কখন কি বলেন, তাদের হুশ জ্ঞান আছে কিনা তা আসলে ভাববার বিষয়। এক এক মন্ত্রী এক এক দিন এক থিওরী হাজির করেন। আওয়ামীলীগের ডাকসাইটে নেতা মোহাম্মদ নাসিম কয়েকদিন ধরে বলে আসছেন ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন হবে না। এর দুদিন পর তিনি আর একটু আগ বাড়িয়ে বি এন পি-কে ৭১ ও ৭৫ এর পরাজিত শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বললেন ‘৭১ ও ৭৫ এর খুনীদের কোন গণতান্ত্রিক অধিকার থাকতে পারে না’। দেশে আজ দুটি রাজনৈতিক ধারা; একটি আওয়ামী বলয় তার সাথে আছে পতিত বাম, সুবিধাবাদী বাম, সসস্ত্র রাজনীতির ধারক জাসদ, বাসদসহ বেশ কিছু জনবিচ্ছিন্ন বামপন্থী দল। অপরদিকে বি এন পি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ধারা। এর মাঝে দু একটি ছোট খাটো দল থাকলেও তারা রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখার যোগ্যতা রাখে না। আওয়ামীলীগ এবং বামদের সমম্বয়ে যে সরকার তাদের জনপ্রিয়তা আজ তলানীতে। অপরদিকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের যে ধারা সে ধারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বি এন পি চেয়ার পারসন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া দাবী করেছেন, যে দেশের ৯৫% মানুষ তার সাথে আছেন। কারণ ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে মাত্র ৫% লোক ভোট দিয়েছে, তার মানে বাকী ৯৫% লোক ২০ দলীয় জোটের সাথে আছে। দেশের সিংহভাগ জনগণ যাদের সমর্থন করে তাদের বাদ দিয়ে একটি পাতানো নির্বাচনী তামাসার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া আওয়ামী মহল ভালভাবেই জানে জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে দিলে তাদের ক্ষমতার মসনদ টিকবে না। তাই তাদের পূরনো ভাঙ্গা রেকর্ড তারা বাজাচ্ছে- যে ব্যাক্তি বা দল আওয়ামীলীগের বিরোধীতা করবে তারাই ৭১ অথবা ৭৫ এর খুনী। আর নাসিম সাহেবের ভাষায় ৭১ ও ৭৫ এর খুনীদের কোন গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। এক সময় যিনি শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে খুব পছন্দ করতেন সেই মতিয়া চৌধুরী তো এখন সদা সর্বদা মুুজিব এবং মুজিব তনয়ার বন্দনায় ব্যস্ত। তিনি বলেছেন ‘বি এন পি একটি অশুভ শক্তি তাদের কে নিশ্চিহ্ন করতে হবে’। আওয়ামীলীগের এই নিশ্চিহ্ন এবং নির্মূল করার রাজনীতি মূলত তারা পেয়েছে বাম রাজনীতির ধারা থেকে। পতিত বামরা তো এখন সবাই-ই আওয়ামীলীগের নৌকার যাত্রী। এক সময় যারা সংসদকে বলতো শুকোরের খোয়ার, গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে বলতো বুর্জোয়া রাজনীতি। বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস- এ সব শ্লোগান যারা দিতো তারা আজ আওয়ামীলীগের নৌকার কেউ দাড় টানে, কেউ বৈঠা হাতে আবার কেউবা গুন টানে। সেই বামরা আজ আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে নির্মূল আর নিশ্চিহ্ন করার বক্তব্য দিচ্ছে। বিরোধীদের নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাদের যেমন আছে ক্যাডার বাহিনী, লগি বৈঠার বাহিনী, চা-পাতি বাহিনী আবার তাদের সহযোগিতার জন্য আইন শৃংখলা বাহিণীতে নিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার ছাত্রলীগ ক্যাডার। যারা রাস্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের চেয়ে আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং বিরোধী দল দমনে সবচেয়ে বেশী তৎপর। এ সব অতি উৎসাহী দলবাজ কর্মকর্তারা বিরোধী দল দমনের সময় তারা তাদের কর্তব্যবোধ এবং দায়িত্ববোধ ভুলে যায়। তাদের উগ্র আচরণে প্রকাশ পায় কেবল হিং¯্রতা এবং দলীয় ক্যাডারের মনেবৃত্তি। আওয়ামীলীগ এদেরকেই তাদের অবৈধ ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বিগত ৫ জানুয়ারীর তামাসা মঞ্চস্থ করতে এ সব অতি উৎসাহী দলবাজ কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করেছে। তাদের মনে রাখা উচিৎ তারা আওয়ামীলীগের নয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আজ তারা যে রাধা-রাণীর দাপট দেখছে সে রাধা-রানীর রথ উল্টে যেতে পারে যে কোন সময়। তখন তাদের কি অবস্থা হবে? তাদের এটাও মনে রাখা উচিৎ এটা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগ। কখন কে কোথায় কিভাবে তাদের কর্মকান্ড রেকর্ড করছে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তোবা এসব কর্মকর্তারা ভাবছে আওয়ামীলীগ আজীবনের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। এখানে আর কোন দিন গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কায়েম হবে না। এ ভাবনা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা ভাবতেই পারেন কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ভাবনা একটু ভিন্ন হওয়া উচিৎ।
দেশের অধিকাংশ জনগণ, দেশী-বিদেশী সংস্থা এবং বড় বড় রাস্ট্রগুলো (ভারত ব্যতীত) সবাই যখন বলছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য তখন আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন এবং আলোচনা হবে না। তারা এ কথার উপরও এখন প্রতিষ্ঠিত নেই আরো একধাপ এগিয়ে হাইব্রীড নেতা হিসেবে পরিচিত মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন ২০১৯ সালই শুধু নয়, এরপর আরো দশ বছর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি বলেছেন ‘গণতন্ত্র দিয়ে নাকি উন্নয়ন হয় না’’ তাই তার কথা দ্বারা তিনি আওয়ামীলীগের থলের বেড়াল বের করে দিয়েছেন। যে তারা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাসী নয়। তাই তারা আবার ৭৪ সালের মতো একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। একদলীয় শাসনে যাত্রার জন্য প্রশাসনকে তারা তাদের দলীয় প্রভাব বলয়ে নিয়ে নিয়েছেন। নিম্ম আদালত কার কথা শোনে তা জনগণ ভালভাবেই বোঝে। মন্ত্রীর টেলিফোনে বিচারপতি এজলাস থেকে নেমে যান- এখবর তো পত্রিকায়ই প্রকাশিত হয়েছে। শাহবাগী উম্মত্ততায় আইন পরিবর্তন হয়ে যায়। কতিপয় উচ্ছৃংখল তরুণের অবৈধ দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সব নিয়ম কানুন আইন বিধি বিধান পরিত্যাজ্জ ঘোষিত হয়। বিচারিক আদালতের শাস্তি আপীল আদালতে কমার পরিবর্তে আরো বৃদ্ধি পায়। আওয়ামীলীগ সব সময়ই মিডিয়া বৈরী, এরপরও অবৈধ টাকার মালিক আর একদল দলবাজ সাংবাদিকের কারণে আওয়ামীলীগ সব সময় মিডিয়ার আনুকুল্য পেয়ে আসছে। যে সকল মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করতো তার সবই বন্ধ। চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, আমার দেশ বন্ধ। এখন যা আছে সবই আওয়ামীলীগের প্রসংশায় ব্যস্ত। এরপরও পাঠক এবং দর্শক ধরে রাখার স্বার্থে তারা মাঝে মাঝে কিছু সত্য খবর প্রকাশ করে ফেলে এটুকুও আওয়ামীলীগের সহ্য হচ্ছে না। তাই মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য মিডিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য তারা নতুন কালাকানুন পাশ করেছে। উদ্দেশ্য একটাই অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার ক্ষেত্রে কেউ যেন প্রতিবন্ধক হতে না পারে। এর বাস্তব প্রতিফলন দেখতে আমাদের সময় লাগেনি। ইনকিলাবে একটি সংবাদ প্রকাশের সাথে সাথে সেখানে ডিবি পুলিশ হানা দিয়ে প্রথম দিনে বার্তা সম্পাদককে গ্রেফতার করে। দ্বিতীয় দিনে আবার সেখানে গিয়ে তাদের কম্পিউটার জব্দ করে নিয়ে যায়। পত্রিকা অফিস থেকে সম্পদককে গ্রেফতার, সাংবাদিক গ্রেফতার, বিনা নোটিশে টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ, পত্রিকার প্রেস সীলগালা সবই করছে সরকার। এরপরও তাদের তৃপ্তি মিটছে না। এ জন্য তারা মিডিয়া নিয়ন্ত্রন আইন করেছে। এ আইন গেজেট হিসেবে প্রকাশ হওয়ার তিন দিন পরে পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিটির ভাষা এবং দাবী দেখে বোঝা যায় যে তারাও আওয়ামীলীগের প্রতি অনুগত থাকার কারণে বেশী কিছু বলতে পারছেন না। তাই পাঠক ধরে রাখার স্বার্থে একটি দায়সারা বক্তব্য তারা দিয়েছেন। মিডিয়ার পর গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে যে প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রাখে,মানুষের শেষ আশা ভরসার স্থল বিচার বিভাগ- সে বিভাগকে দলীয় করণের ষোলকলা পূর্ণ করার জন্য বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে সংসদকে। যে সংসদে ব্রুট মেজরিটি আওয়ামীলীগের, যেখানে কার্যত কোন বিরোধী দল নেই। সেই সংসদ যদি বিচারপতিদের অভিসংশনের ক্ষমতা পায় তবে বিচার বলতে কিছু থাকবে কি না এটাতো আজ মোটা দাগের প্রশ্ন। মোট কথা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর এ অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামীলীগ তাদের পতনের সব ছিদ্র পথ বন্ধ করার চেস্টা করছে। তারা আজ যে অপচেস্টা চালাচ্ছে সব যুগে সব স্বৈর শাসকই এ কাজ করেছে। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী কোন স্বৈর শাসকের শেষ পরিণতি ভাল হয়নি। আওয়ামীলীগের বর্তমান শাসনকালকে স্বৈর শাসন বলায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে আর কোন পরিচয়ে পরিচিত করার সূযোগ তো দেখছি না। শুধুমাত্র উর্দি পরেই স্বৈর শাসন আসে না এখন শাড়ি পড়েও স্বৈর শাসন আসে, গণতন্ত্রের নামেও স্বৈর শাসন আসে। মিসরে আল ফাত্তাহ সিসি বন্দুকের নলের জোরে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে পরে নিজেকে গণতান্ত্রিক প্রমাণ করার জন্য একটি পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে যে নির্বাচনে বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারীর মতো একই অবস্থা হয়। কিন্তু সে পাতানো নির্বাচনে কাজী রকিবের মতোই নির্বাচন কমিশন কয়েকগুন বেশী কাস্টিং ভোট দেখিয়ে সিসিকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এখন তারা টিকে আছে শুধুমাত্র বন্দুকের নলের জোরে। বাংলাদেশে আজ যিনি প্রধান মন্ত্রীর চেয়ারে বসে আছেন তিনি যদিও গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে জড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছেন কিন্তু তার বর্তমান কর্মকান্ড এবং ক্ষমতা ধরে রাখার পদ্ধতি কোন বিচারেই গণতান্ত্রিক বলা যায় না। তাই তারা বন্দুকের নলের পাশাপাশি মিডিয়া এবং আদালত নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে আজীবন ক্ষমতায় থাকার রাস্তা পাকাপোক্ত করতে ব্যস্ত। তাদের স্মরণে রাখা উচিৎ জনগণের মনের ক্ষোভ, নির্যাতিতের ক্রন্দন, প্রতিবাদী জনতার দ্রোহ সবকিছু যখন এক কাতারে শামিল হয় তখন স্বৈর শাসকদের সব অস্ত্রই অকোজো হয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন