আর কত জন আত্মহত্যা করলে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ হবে?
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:২৯:৫৪ সকাল
আমি একজন সেকেলে, আনকালচার্ড, আনস্মার্ট আধুনিকতার ছোয়াহীন যুবক। কারণ আমার ঘরে টেলিভিশন নেই। কেন নেই এর কোন জবাব আমি দিতে পারবো না। আমার ঘরে টেলিভিশন নেই এ কথা শোনার পর অনেকেই আমাকে সেকেলে, কেউবা আনকালচার্ড আর যারা একটু ইসলামপন্থী তারা সময়ের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া ব্যাক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে আমি টেলিভিশন ব্যবহার না করলেও আধুনিক দুনিয়ার সব খবরই অন্য আর দশজনের আগে পেয়ে যাই। সকালে অফিসে এসে সবার আগে পত্রিকা পাঠ শেষ করি, গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি। অফিসে মোট তিনটি পত্রিকা রাখা হয়, যে পত্রিকার যে কলামগুলো ভাল লাগে সবার আগে পড়ে নেই। মাঝে মাঝে এন্ডরয়েড ফোনে চলমান ঘটনার সংবাদে নজর বুলাই। বাসায় কম্পিউটার/ল্যাপটপে সার্বক্ষণিক অনলাইন চালু থাকে। তবে, তা আমি ব্যতীত আর কেউ ব্যবহার করে না। এরপরও অনেকে অবাক হয় কেন আমার বাসায় টেলিভিশন নেই। কেমন যেন সবার কাছে একটু সেকেলে, অসামাজিক মনে হয়। এরপরও আমার দিন চলছে। আমি আধুনিক দুনিয়ার সব খবরই পাচ্ছি। যাদের ঘরে টেলিভিশন আছে হতে পারে তারা আমার চেয়ে আরো বেশী সচেতন এবং আধুনিক দুনিয়ার খবর আরো বেশী রাখতে পারেন- কিন্তু আমার জন্য এতটুকুই যথেস্ট। আমার পাশের ফ্ল্যাটে একটি ঘটনা নিয়মিত দেখতে দেখতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তা হচ্ছে শশুর এবং পুত্রবধূর ঝগড়া। শাশুরী এবং বউয়ের ঝগড়া সর্বজনবিদিত কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে শশুর এবং পুত্রবধূর ঝগড়া,এটা তাদের প্রতিদিনের কর্ম তালিকার অন্তর্ভূক্ত। তাদের এ ঝগড়ার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে যা আমার জানা নেই, তবে একটি কারণ প্রতিদিন তাদের ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে যাতায়াতের সময় খেয়াল করি যে তাদের দড়জা সব সময় খোলা থাকে আর হাই ভলিউমে সব সময় টেলিভিশনে ভারতীয় স্টার জলসা, অথবা জি বাংলার বউ শাশুরী, দেবর, ননদের ঝগড়ার নাটক চলতে থাকে।
তাদের পরিবার সম্পর্কে আমার এ ধারণার জন্ম হওয়ার কারণ, ঐ ঝগড়াটে বউয়ের শাশুরী আবার ঠান্ডা প্রকৃতির, তিনিই পরিবারের অধিকাংশ কাজ সামাল দেন আর দুই বউ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে; বলা যায় বউয়েরা তেমন কোন কাজ করে না, তিনি একদিন আমার স্ত্রীকে কথাচ্ছলে বললেন ‘আমার বড় বউ আগে খুব ভাল ছিল এখন কেন যে এমন করে ঘরের কোন কাজ করে না, সারাদিন তার শশুরের সাথে ঝগড়া করে’- তারা বুঝতে পারছেন না তাদের ঘরে কোন দৈত্য এ সব কারসাজী সৃস্টি করছে। এটা স্টার জলসা, স্টার প্লাস এবং জি বাংলার উপহার। তাদের ঝগড়ার পিছনে এ নাটকগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাতে কোন সন্দেহ নেই।
তাদের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে আসি অন্য প্রসঙ্গে। রাজধানীতে মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের এক য্বুক যাদের ঢাকাতেই পাঁচ তলা বাড়ি আছে, কথা প্রসঙ্গে বললেন যে ভাই আমাদের সংসারে কোন সমস্যা নেই কিন্ত কিছু অশান্তি মাঝে মাঝে যুদ্ধের দাবানল ছড়ায়। কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘‘ আমার মা সব সময় স্টার জলসা আর স্টার প্লাস দেখে ওখান থেকে বউদের সন্দেহ করার রোগ সৃস্টি হয়েছে আর এ কারণেই মাঝে মাঝে মনে হয় যেন শান্তির সংসারে কুরুক্ষেত্র শুরু হয়েছে’’।
একটি পেপার মিলে উচ্চ পদে চাকুরী করেন এক হিন্দু ভদ্রলোক- তার এক অফিস কলিগ আমাকে একদিন বললেন, আমাদের আফিসের আমাদের এক হিন্দু কলিগ অফিসে এসে বললেন ‘‘ আপনার কেউ স্টার জলসা, স্টার প্লাস এবং জি বাংলা দেখবেন না- এটা দেখলে সংসারে শান্তি থাকবে না। কারণ জানতে চাইলে তিনি তার সংসারের অবস্থা বললেন। তিনি বললেন, গ্রামে থাকতে আমার মা এবং স্ত্রীর মধ্যে খুব সুসম্পর্ক ছিল। বছর দুই হলো মাকে এবং স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে আসলাম, তারা ঢাকায় আসার এক বছর পর দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু । অনেক গবেষণার পর আমি আবিস্কার করলাম এ ঝগড়ার ইন্ধনদাতা স্টার জলসা, স্টার প্লাস এবং জি বাংলা। তার ভাষায় ‘একদিন আমার মা এবং স্ত্রীর অজান্তে ইলেট্রিক লাইনে ফায়ার করিয়ে টেলিভিশন নস্ট করে দিলাম।’ তা সাড়াতে ছয় মাস লাগালাম। এর পর টেলিভিশন আনার পর স্টার জলসা, স্টার প্লাস এবং জি বাংলা- এই চ্যানেলগুলো ক্যাবল লাইনের লোকদের বলে বন্ধ করে দিলাম। এই তো এক বছর হলো আমার বাসায় এখন ঝগড়া বন্ধ”। কিন্তু এভাবে কতজন সমস্যার সমাধান করবে? এটা হলো গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেয়ার মতো। যে বিষয়টি দরকার তা হচ্ছে এই চ্যানেলগুলো প্রদর্শন বন্ধ করা। স্টার জলসা, স্টার প্লাস এবং জি বাংলার বদৌলতে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসবে আমদানী হয়েছে ‘‘পাখি জামার’’। পাখি জামা না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে এ যাবৎ সাতজন। এই চ্যানেলগুলো বন্ধের জন্য মানব বন্ধন, স্মারকলিপি পেশ, পত্রিকায় কলাম লেখা, সরকারকে উকিল নোটিশ দেয়া সব কিছুই হয়েছে। কিন্তু সরকার এবং তথ্য মন্ত্রনালয় দাদাবাবুদের প্রেমে এতই মগ্ন তা বন্ধ করা যাবে না। অথচ কোন নোটিশ ছাড়াই মতিঝিলের গণহত্যার খবর যাতে প্রকাশ না পায় এ জন্য এক মিনিটের অর্ডারে দুটি জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর কত সংসার ভাঙলে, আর কত পরিবারে অগুন লাগলে আর কতজন আত্মহত্যা করলে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ হবে আজ সে প্রশ্ন সচেতন মহল সকলের।
বিষয়: বিবিধ
১১২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যদি তারা সত্যিই সব ইন্ডিয়ান চ্যানেল বন্ধ করে, তবে তাদের দেশপ্রেম সম্বন্ধে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন