আশা আর প্রত্যাশার স্বপ্নগুলো
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:২১:৪৬ সন্ধ্যা
হে মহান খলিফা, নতুন শতাব্দীর স্বপ্ন জাগানিয়া কারিশম্যাটিক নেতৃত্বের অধিকারী এরোদোগান: আপনাকে আবার আমরা অটোমান সম্রাজ্যের কুরসীতে দেখতে পাচ্ছি - আপনাকে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী করে তুর্কী জনতা এটাই বোঝাতে চেয়েছে যে, শুধু তুরস্ক নয়, ইতহাসের পাতায় আশ্রয় নেওয়া ওসামনীয় সাম্রাজ্য আবার জেগে উঠবে, বিশ্বে নতুন ধারা সৃস্টি করবে। এক সময়ের তুর্কী সম্রাজ্যের অধীনে ছিল গোটা আরবসহ এশিয়ার অনেক অঞ্চল। সেই অটোমান সম্রাজ্যের স্মৃতি এবং ইতিহাস যারা হৃদয়ে ধারণ করে তাদের প্রত্যাশা আপনি শুধু তুরস্কের নয়, বিশ্ববাসীর মহান নেতা হিসেবে আবির্র্ভূত হবেন। আপনি তো সেই ব্যাক্তি যিনি ছাত্র জীবনে সকল সময় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ফুটবল মাঠেও ছিলেন আপনি অনবদ্য। যুব আন্দোলনে আপনার ভূমিকা অবিসংবাদিত। নানা ষড়যন্ত্র, ঘাত প্রতিঘাত, কারাগার, দল নিষিদ্ধ হওয়া সব কিছু মাড়িয়ে আপনি আজ তুর্কী খিলাফাতের সিংহাসনে আসীন। যারা হৃদয়ে বিশ্বাসের বীজ রোপন করেছে, বিশ্বাসের ভিত্তিতে আদর্শিক শক্তিকে সবচেয়ে বড় অস্ত্র মনে করে সেই জনতা আপনার সাথে আছে। দুর্গম গিড়ি, পিচ্ছিল পথ, কণ্টকাকীর্ণ রাস্তা সব মাড়িয়েই তো আপনি আজ সিংহাসনে আসীন।
দুই মহাদেশের সংযোগস্থলের গুরুত্বপূর্ণ দেশটির রাজধানীতে মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনতাকে আপনি দেখিয়েছেন কিভাবে সততা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে জনগণের সেবা করা যায়। জনগণ আপনার সেবার যথাযথ সন্মান দেখিয়ে আপনাকে পর পর দু বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে। নতুন তুরস্ক গড়ার দৃপ্ত প্রত্যয় ঘোষণা করার পর আপনি হলেন তুরস্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। বিশ্ববাসী আপনাকে শুধু টার্কী প্রেসিডেন্ট নয়, দেখতে চায় অটোমান সম্রাজ্যের মহান খলিফা হিসেবে। পূর্ব-পশ্চিম সবই আপনার জানা, তারপরও বলছি ফিলিস্তিনী জনতার গগণ বিদারী চিৎকার আর কারো হৃদয়কে আঘাত না করলেও আপনার কান্নার আওয়াজ বিশ্ববাসী শুনেছে। যেখানে রক্তাক্ত বিছানায় নিদ্রা যায় ফিলিস্তিনী মায়েরা, গোলা আর বোমার আঘাতে যাদের ঘুম ভাঙ্গে। এই আমাদের বাংলাদেশে একটি ছোট স্কুল ভেঙ্গে মার্কেট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়ায় উচ্চ আদালত তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
অথচ ফিলিস্তিনী শিশুদের ঘড় নেই, বাড়ি নেই, স্কুল সে তো আনেক আগেই মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বোমার আঘাতে আহত অথবা নিহত হবার পর যে হাসপাতালে তাদের নেয়া হতো সে হাসপাতালে হামলা করে তা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। উদ্ধাস্তু শিবিরে জন্ম নেয়া শিশুরা অস্ত্র আর যুদ্ধ খেলাকে তাদের প্রিয় খেলা মনে করে। অথচ এই ফিলিস্তিন মুসলমানদের প্রথম কিবলা- এটাতো তুর্কী সালতানাতের অধীনে থাকা অবস্থায়ই ব্রিটিশদের পরামর্শ এবং ষড়যন্ত্রে ইহুদীরা এখানে জমি কেনা শুরু করে। কেন তখনকার তুর্কী সালতানাতের অধিপতীরা তখন বাঁধা দেয়নি আমাদের জানা নেই। অথচ আমাদের এই বাংলাদেশে পাহাড়ে বসবাসকারী সন্ত্রাসীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে আমাদেরই দেশে আমাদের দেশের নাগরিকদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি কেনা নিষিদ্ধ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার। আপনার দেশের সংবিধান ধর্ম নিরপেক্ষতার আদলে নাগরিকদের সকল ধর্মীয় অধিকার খর্ব করছিল আপনি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সংবিধান পরিবর্তন করতে পারেন নি, কিন্তু জনগণের অনেকগুলো ধর্মীয় অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
শিশুদের জন্য কুরআন পাঠ করা নিষিদ্ধ ছিল,আপনি তা শিথিল করেছেন, সরকারী চাকুরীজীবী মহিলাদের স্কার্ফ পড়া নিষিদ্ধ ছিল, আপনি তা শিথিল করেছেন, আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া নিষিদ্ধ ছিল, আপনি তা শিথিল করেছেন। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অর্থ ব্যবস্থার মাঝে দাড়িয়ে দুর্নীতি হ্রাস করে অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপর দাড় করিয়েছেন।
আপনার কারিশম্যাটিক নেতৃত্ব তুরস্ককে এক নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে। আপনি তো সেই ব্যাক্তি যিনি আযান এবং মসজিদ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করার কারণে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু ধর্ম নিরপেক্ষতার কাছে হার মানেননি। বিশ্ব মোড়ল দাবীদাররা পৃথিবীর দেশে দেশে সন্ত্রাস দমনের নামে মূলত সন্ত্রাসের বীজ বপন করছে। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রকে নির্যাতন এবং গণহত্যার মাধ্যম মুসলিম শূন্য করা হয়েছে। চীনে প্রতিনিয়ত মুসলমানদের গোপন নিধনের আওতায় হত্যা করা হচ্ছে। আরাকানের মুসলমানদের কোন দেশের নাগরিকত্ব নেই। তারা প্রতিনিয়ত বর্মী সামরিক জান্তার হামলা, জুলুম, নির্যাতন এবং নিধনের শিকার হচ্ছে। আরাকান সফরে এসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল এবং তার স্ত্রী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন-যার সবই আপনার জানা। জাতিসংঘ শক্তিমানের ভয়ে কম্পমান-তারা দূর্বলের প্রতি খড়গহস্ত আর শক্তিমানের প্রতি অতি ভদ্রলোকের ভাষায় সদুপদেশ বর্ষণ করে, ওআইসি নামে কোন সংস্থা আছে কি না তা এখন আর বোঝা যায় না, আরবপতিরা রজকীয় মসনদ বাঁচাতে ইসরাইল- আমেরিকার এজেন্ডা বস্তবায়ণ করছে। মুসলিম বিশ্বে কার্যকর কোন নেতৃত্ব নেই।
মুসলিম নামধারী নেতাদের অনেকেই আজ নতুন শতাব্দীর ক্রুসেডারদের সহযোদ্ধা। এই যেমন আমাদের বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষ প্রধানমন্ত্রী একদিকে ওমরাহ করেন অপরদিকে ইসলামপন্থীদের নিধনে রাস্ট্রীয় গোটা ব্যবস্থাপনাকে ব্যস্ত রাখেন। এ দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামী সংগঠনটির প্রথম সাড়ির সব নেতারা কারাগারে, দ্বিতীয় সাড়ির নেতারা আত্মগোপনে, মাঠ পর্যায়ের নেতারা পলায়ণপর। এরপরও তারা গাযায় হামলার প্রতিবাদে মিছিলের ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নেয়ার সময় সে দলের তৃতীয় সাড়ির এক সাবেক ছাত্র নেতা,
যিনি ছাত্র জীবনে প্রতিটি স্তরে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ স্বর্ণপদক পর্যন্ত পেয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সহিত্যে মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার তেজোদীপ্ত বক্তব্য সর্বমহলে প্রশংসনীয় হওয়ার কারণে সরকার তার উপর খড়গহস্ত হয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চরম নির্যাতন চালাচেছ। আপনিইতো বিশাল জনসমুদ্রে আবদুল কাদের মোল্লার ফাসির প্রতিবাদে জালাময়ী বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু এ সরকার তাদের ভুল বিচারে আবদুল কাদের মোল্লাকে নির্মম এবং নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করলে নির্ধিধায় বলা যায় বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ইসরাইলী হানাদারদের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সৌদী আরব এবং মিশর আজ মহাজোট, তারা গোপনে সহযোগিতা করছে ইসরাইলকে। পরমাণু শক্তির অধীকারী পাকিস্তান নিজ ঘর সামলাতে ব্যস্ত।
হে মহান খলিফা একটি আপনি আপনার জনগণকে একটি নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন। যে স্বপ্নের বীজ আপনার রক্ত কণিকায় প্রবাহিত। আমরাও সে স্বপ্ন বোনা থেকে বিচ্ছিন্ন নই। একটি নতুন পৃথিবী, একটি নতুন আশা, একটি শান্তি সোনালী ধারা সৃস্টি হোক নতুন শতাব্দীতে; অটোমানের খলিফার কাছে এটাই প্রত্যাশা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব সুন্দর লেখা!
আশায় রইলাম!
অাপনাকে ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন