বর্তমান ইয়াহুদী-খৃস্টানরা কি আহলে কিতাব? তাদের সাথে কি বিয়ে বৈধ?

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ০৩ আগস্ট, ২০১৪, ১১:৩৯:৫৪ সকাল



আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে আহলে কিতাবদের সাথে (যারা তাওরাত ও ইঞ্জিলের অনুসারী ) বিয়ে বৈধ বলে ঘোষাণা দিয়েছেন। এখানে আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বর্তমানে যারা ইয়াহুদী ও খৃস্টান তারা কি কুরআনে বর্ণিত আহলে কিতাবের অভিধায় পড়ে ? অথবা তারা কি ইঞ্জিল অথবা তাওরাতের প্রকৃত শিক্ষা ধারণ করে আছে? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঐ সব আহলে কিতাবের লোকের সাথে মুসলমানদের বিয়ে বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন যারা প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর নাযিলকৃত আসমানী কিতাব অনুসরণ করছিল। আজ যদি আমরা খৃস্টান অথবা ইয়াহুদীদের দিকে তাকাই তবে দেখা যাবে তারা আসমানী কিতাবের কোন একটি আদেশকেই পালন করে না । অথবা তারা বর্তমানে ওল্ড টেস্টামেন্ট-নিউ টেষ্টামেন্ট নামে যে বইগুলো অধ্যয়ন অনুসরণ করে বা পাঠ করে তার সাথে প্রকৃত তাওরাত ও ইঞ্জিলের কোন সম্পর্ক নেই। মূল আসমানী গ্রন্থগুলো তারা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করেছে। বর্তমানে ইয়াহুদী ও খৃস্টানরা যে সব কিতাব বহন,প্রচার,এবং পাঠ করে তার সবই তাদের নিজেদের রচিত। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মূর্তি পূজাকে স্পস্ট ভাষায় হারাম ঘোষণা করেছেন। মূর্তিপূজক অথবা মুশরিকদের কে আল্লাহ অপবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কোন মূর্তিপূজক/মুশরিকের সাথে কোন মুসলমানের বিয়ে আদৌ বৈধ নয়। অথচ খৃস্টানরা ঈসা আ.কে আল্লাহর পূত্র বলে ঘোষনা দিয়ে তার জাত ও সিফাতের সাথে শিরক করছে। প্রতিটি গীর্জায় তারা তাদের ভাষায় ‘মা-মেরী ও যীশু খৃস্টের মূর্তি’ সামনে রেখে প্রার্থনা করে। অতএব বর্তমানে যারা খৃস্টান হিসেবে পরিচিত তারা আর আহলে কিতাবের অংশ নয় তারা মূলত মুশরিক। ইঞ্জিলে আল্লাহ মদ, জুয়া, জেনা হারাম করেছেন কিন্তু বর্তমানে খৃস্টানদের কাছে যে ইঞ্জিল আছে তাতে এর কোন কথা নেই- আল্লাহর নাযিলকৃত সব বিধান তারা নিজেদের স্বার্থে পরিবর্তন করে নিয়েছে। অতএব তাদের কাছে যে কিতাব তা-আসমানী কিতবা নয় এবং তারা আহলে কিতাব হতে পারে না। একইভাবে ইয়াহুদীরাও তাওরাতের কোন শিক্ষা বর্তমান রাখেনি। তারা বর্তমান বিশ্বে একটি অসভ্য-বর্বর জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা ওজায়ের আ.কে আল্লাহর পূত্র বলে মানে এবং সে সূবাদে তারা সবাই আল্লাহর আত্মীয় বলে ঘোষনা দিয়েছে। ইয়াহুদীরাও তাওহীদের কোন শিক্ষা অক্ষুন্ন রাখেনি। যারা তাওহীদের (আল্লাহর একত্ববাদ) উপর প্রতিষ্ঠিত নেই। তাদের সাথে আত্মীয়তা তো দূরের কথা বন্ধুত্ব করাই জায়েজ নয়। আহলে কিতবাদের কি নির্দেশ ছিল, তার কিছু কিছু কুরআনে কোট করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ঘোষনা করেন ‘‘ হে মুহাম্মাদ- এদরকে বলো, এসো আমি তোমাদেরকে শোনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি কি বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন।

১. ‘‘তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না।

২. পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো।

৩. দারিদ্রের ভয়ে নিজেদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমি তোমাদের রিযিক দিচ্ছি তাদেরকেও দিবো।

৪. প্রকাশ্যে ও গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যেও না।

৫. আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায়সংগত কারণ ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না।

৬. আর তোমরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও যেওনা। তবে উত্তম পন্থায় যেতে পারো।

৭. ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো। প্রত্যেক ব্যাক্তির ওপর আমি ততটুকু বোঝা রাখি যতটুকু তার সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে।

৮. যখন কথা বলো ন্যায্য কথা বলো, ব্যাপারটি যদি তোমার আত্মীয় স্বজনের সাথেও হয়।

৯. আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। এ বিষয়গুলোর নসিহত আল্লাহ তোমাদের দিচ্ছেন-হয়তো তোমরা নসিহত গ্রহণ করবে।

১০. এ ছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এইঃ এটিই তোমাদেও জন্য সহজ সরল সোজা পথ। তোমরা এ পথেই চলো, অন্য পথে চলো না। কারণ তা তোমাদের তাঁর (আল্লাহর) পথ থেকে বিচ্যুত করে ছিন্ন ভিন্ন করে দিবে। এ হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদের দিয়েছেন, হয়তো তোমরা ভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাবে।

তারপর আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যা সৎ কর্মশীলদের প্রতি নিয়ামতের পূর্ণতা, প্রতিটি প্রয়োজনীয় বিষয়ের বিশদ বিবরণ এবং সরাসরি পথ নির্দেশনা ও রহমত ছিলো (এবং তা বনী ইসরাইলকে দেয়া হয়েছিল) হয়তো লোকেরা তাদের রবের সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান আনবে। ’’ ( সূরা আল আনআম: ১৫১-১৫৪)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মূসা আঃ এর প্রতি আল্লাহ কিতাব প্রেরণের মাধ্যমে যে অহী নাযিল করেছিলেন তার একটি শিক্ষাও কি বর্তমান যুগের ইয়াহুদীরা কার্যকর রেখেছে? আল্লাহর প্রথম নির্দেশনা ‘‘তোমরা শিরক করো না’’। এ বিধান ভঙ্গ করার মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে মুশরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কোন মুশরিকের সাথে কি কোন মুসলমানের বিয়ে বেধ হতে পারে?

আল্লাহ সূরা মায়েদায় বলেছেন-----

‘‘ আল্লাহ বণী ইসরাইল থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে বরোজন নকীব নিয়োজিত করেছিলেন। আর তিনি তাদের বলেছিলেন ‘আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম করো,যাকাত দাও,আমার রাসূলদের মানো ও তাদের সাহায্য করো এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাকো, তাহলে নিশ্চিৎ বিশ্বাস রাখো, আমি তোমাদের পাপগুলোকে মোচন করে দিবো এবং তোমাদের এমন সব জান্নাতে প্রবেশ করাবো যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি কুফরী আচরণ করবে সে আসলে সাওয়াসুস-সাবিল তথা সরল সঠিক পথ হাড়িয়ে ফেলেছে।’’ (সূরা মায়েদা-১২)

উপরোক্ত আয়াত থেকে বোঝা গেল আল্লাহ বনী ইসরাইলের কাছ থেকে যে ওয়াদা নিয়েছিলেন- তার কোন একটি ওয়াদার উপর তারা এখন নেই এবং কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা এখন কুফরী নীতি অবলম্বন করছে।

এ সূরারই অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন :

‘‘ যারা বলে মারয়াম পূত্র মসীহ-ই আল্লাহ তারা অবশ্যই কুফরী করছে। হে মুহাম্মাদ ওদেরকে বলে দিন, আল্লাহ যদি মারয়াম পুত্র মসীহকে, তার মাকে ও সারা দুনিয়াকে ধ্বংস করতে চানম তহালে তাঁকে তাঁর এ সংকল্প থেকে বিরত রাখার ক্ষমতা কার আছে? আল্লাহ তো আকাশ সমূহের এবং এ দুয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক।তিনি যা চান সৃস্টি করেন। তার শক্তি সব কিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত।’’ (সূরা আল মায়েদাহ-১৭)

বর্তমানে যারা নিজেদেরকে ইয়াহুদী ও খৃস্টান পরিচয় দিচ্ছে তারা মূলত শিরক ও কুফরীর ওপর প্রতিষ্ঠিত। কোন মুশরিক অথবা কাফিরের সাথে কোন মুসলমানের বিয়ে বৈধ হতে পারে না। যারা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদের সাথে আত্মীয়তা করার পর আল কুরআন থেকে যুক্তি দিয়ে বলেন আহলে কিতাবের সাথে আত্মীয়তা করা আল্লাহ বৈধ করেছেন তারা মূলত ভুলের মধ্যে বসবাস করছেন। হ্যা অবশ্যই আহলে কিতাবের লোকদের সাথে আত্মীয়তা বৈধ হবে যদি তারা--

১. মূল আসমানী কিতাবের অনুসারী হয়।

২. যদি তাওহীদ বিশ্বাসী (আল্লাহর একত্ববাদ) হয়।

৩. যদি তারা শিরক মুক্ত জীবন যাপন করে।

উপসংহার ঃ বর্তমান পৃথিবীতে কুরআন ব্যাতীত মূল আসমানী কিতাবের (তাওরাত ও ইঞ্জিল) শতভাগের একভাগও অবশিষ্ট নেই। ইয়াহুদী এবং খৃস্টানরা যে কিতাব বর্তমানে বহন করছে তা তাদের নিজেদের রচিত। নিজেদের রচিত কিতাব অনুসরণ করে কেউ নিজেকে আহলে কিতাব দাবী করতে পারে না।

বিষয়: বিবিধ

৩২৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250399
০৩ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : ১০০% একমত, অনেক ধন্যবাদ।
250442
০৩ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Marshallah nice explanation. Jajakallahu khair.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File