জামায়াত বিরোধীতা বনাম ইসলাম কায়েম
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ০৯ জুন, ২০১৪, ০৬:৩৯:১৩ সন্ধ্যা
মরহুম মাওলানা আতাউর রহমান ফারুকী ডেমরা থানার সারুলিয়া ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ছিলেন কমপক্ষে বিশ বছর। একজন সাদামাটা মানুষ, সব সময় হাসিখুশী, সদালাপী এ মানুষটি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন ২০১০ সালে। তিনি ডেমরার বাওয়ানী জুট মিলস আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন কিন্তু ইসলামের দুশমন আওয়ামী অপশক্তি তার উপর বার বার নির্যাতন করেছে শেষ জীবনে তিনি সেখানে থাকতে পারেন নি, ১৯৯৯ সালে তাকে আদমজী জুট মিলস স্কুলে বদলী করা হয়। আদমজী মিল বন্ধ হওয়ার পূর্ব তিনি সেখানেই ছিলেন। তাঁর জীবনের একটি ঘটনা। তাঁর কর্ম জীবনের শুরুতে তিনি থাকতেন ঢাকার আজিমপুরে। একটি মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। অর্থাৎ ১৯৮১ সালের দিকে; ওনার পাশেই আর একটি মসজিদের একজন ইমাম সাহেব ওনাকে লালবাগে একটি বড় মাদরাসায় একটি সমাবেশের দাওয়াত দিলেন, সেখানে নাকি বাংলাদেশের সব বড় বড় মাওলানারা আসবেন একটি নতুন ইসলামী দল কায়েম হবে। ফারুকী সাহেব দাওয়াত গ্রহণ করলেন। বাংলাদেশের অনেক জাদরেল কাওমী আলেম সেখানে উপস্থিত। বিশাল সমাবেশ। সমাবেশে নতুন দলের নাম ঘোষণা করা হলো। তবে সব বক্তার বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘‘জামায়াত বিরোধীতা’’। কিভাবে ইসলাম কায়েম হবে, কোন ধরনের কর্ম পদ্ধতি, কর্মপন্থা গ্রহণ করা হবে, কি কি কর্মসূচী থাকবে, সে দলের আদর্শ উদ্দেশ্য লক্ষ্য কি হবে, ইসলামী বিপ্লব ও রাস্ট্রের জন্য কোন ধরনের গুণাবলী সম্পন্ন কর্মী বাহিনী ও নেতৃত্ব দরকার সে ধরনের কোন আলোচনা এ সমাবেশে স্থান পায়নি। সব বক্তার একই কথা জামায়াত ঠেকাও। যা হোক সমাবেশ শেষ হলো। ফারুকী সাহেবকে দাওয়াত দানকারী মাওলানা সাহেব এবং উনি একই রিক্সায় ফিরছেন। পথিমধ্যে দাওয়াত দানকারী ইমাম সাহেব ফারুকী সাহেবকে জিজ্ঞেস বললেন, এত বড় বড় আলেমরা একত্রিত হয়েছে, এত বড় সমাবেশ; এবার দেশে ইসলাম কায়েম হবেই কি বলেন, হুজুর? ফারুকী সাহেব চুপচাপ থাকলেন, কোন জবাব দিলেন না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন কোন জবাব দিচ্ছেন না যে, কি বুঝলেন? ফারুকী সাহেব বললেন, বুঝেছি কিছুই হবে না। প্রশ্নকারী আশ্চর্য্য হয়ে বললেন, কিছুই হবে না মানে? ফারুকী সাহেব আবার বললেন কিছুই হবে না মানে কোন কিছু হবে না। তিনি বললেন ওনারা তো সবাই জামায়াত ঠেকানোর কথা বলেছেন, জামায়াতকে প্রতিরোধের কথা বলেছেন, ইসলাম কিভাবে কায়েম হবে তাতো বলেন নাই, তাই ওনাদের দ্বারা ইসলামের মতো কিছুই হবে না। সেই ঘটনার পর আজ ৩৪ বছর পার হয়েছে কিছু কিছু লোকের এখনো জামায়াত ঠেকানোর বাতিক বন্ধ হয় নাই। অপরদিকে ১৯৮১ সালের জামায়াতে ইসলামী ২০১৪ সালে রুকন, কর্মী, সমর্থক কমপক্ষে দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সবচেয়ে খুশীর খবর হচ্ছে দেশের বিরাট সংখ্যাক কওমী আলেম এখন জামায়াতের কর্মী, সমর্থক এবং শুভাকাংখী। যারা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সরাসরি জামায়াতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে পারছেন না, তারা বলছেন ‘আপনারা আন্দোলন করে যান আমরা আপনাদের সাথে আছি’। জামায়াতে ইসলামী সকল অপপ্রচার, প্রপাগান্ডা আর ষড়যন্ত্র মোকবেলা করে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর নির্যাতন সহ্য করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা সত্যিকারে একটি ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন তাদের উচিৎ ছিল যতোই রাজনৈতিক, আদর্শিক আর ফিরকাগত মতপার্থক্য থাকুক; অন্তত মানবতা এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে এ সব জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ করা। যারা এতসব জুলুম নির্যাতন দেখে বোবা শয়তানের ভূমিকা পালন করছেন তারা আর যাই হোক সত্যিকার অর্থে নিজেরা ইসলামী বিপ্লব তো দুরের কথা ইসলামী আদর্শ লালন করছেন কি না, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করা উচিৎ। জাামায়াতে ইসলামী সকল মত পার্থক্য ভুলে যে কোন প্রকার জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছে। সে জুলুম নির্যাতন যে কোন ব্যক্তি দলের উপরই হোক না কেন। অথচ বর্তমানে আওয়ামী জালিম শাহীর সব জুলুম নির্যাতন মোকাবেলায় জামায়াত একাই মাঠে আছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তিনারা এই কাজটিই করেন। এটা করতে পারেন ভাল। তারা এই কাজকেই ইসলামের কাজ মনে করেন। আপনার সাথে একমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন