মিরাজের শিক্ষা ঃ আদর্শ সমাজ গঠনের অনুপম নির্দেশিকা
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ২৭ মে, ২০১৪, ০১:২৭:০৯ দুপুর
বিশ্ব মানবতার মুক্তির কান্ডারী, রাহমাতুল্লিল আলামীন, সকল নবীর সেরা নবী, সাইয়্যেদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সা. এর মিরাজ তার জীবনের এক অনন্য মুজিজা। মিরাজ সম্পর্কে কুরআন হাদীসে যেমন অকাট্য বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে তেমনি কুরআন হাদীসের আলোকে যুগে যুগে বহু মনীষী অনেক যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। মিরাজ কিভাবে সংঘঠিত হয়েছে? রাসুলে কারীম সা. কিভাবে উর্ধ্বলোকে গিয়েছেন? আসলে এভাবে যাওয়া সম্ভব কি না? এ প্রশ্ন অবান্তর-এ সম্পর্কে যুক্তি উপস্থাপনও অবান্তর। যিনি বিশ্বাস করেন আল্লাহ কুন-ফায়াকুনের মালিক, যিনি বিশ্বাস করেন আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ (সা.) সত্যিই আল্লাহর রাসুল; তার কাছে কোন যুক্তি নয়- তিনি তো হযরত আবু বকর রা. এর মতো বলবেন ‘‘ আমার প্রিয় নবী যদি বলে থাকেন তার জীবনে মিরাজ সংগঠিত হয়েছে- তবে, আমি বিশ্বাস করলাম’’ । এটাই একজন বিশ্বাসীর ঈমানের মূল ভিত্তি। আল্লাহ বলেছেন, রাসুল সা. বলেছেন, এটাই সবচেয়ে বড় যুক্তি - এখানে আর কোন যুক্তি নয়। তিনি কিভাবে গিয়েছেন, কোন বাহনে চড়ে গিয়েছেন- সে আলোচনার চেয়ে বেশী দরকার রাসুল মুহাম্মাদ সা. মিরাজের মাধ্যমে আমাদের জন্য কি নিয়ে এসেছেন? তা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। আমরা সব সময় দেখি অধিকাংশ (সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া) ওয়ায়েজীন, বক্তা, খতীব এবং আলেম সাহেব শুধু রাসুলে কারীম সা. এর সফর নিয়ে গল্পের আকারে কিছু ওয়াজ করেন; কিন্তু মিরাজের মূল শিক্ষা নিয়ে খুব কমই আলোচনা করেন। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. মিরাজের মাধ্যমে প্রথম যে বিষয়টি আমাদের জন্য নিয়ে এসেছেন তা হচ্ছে ‘নামায’। ‘নামায’ একজন ব্যাক্তিকে সকল প্রকার অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। ব্যাক্তি, পরিবার ও সমাজকে সুন্দর ও সুষ্ঠু পথে পরিচালনার জন্য ‘নামায’-ই হচ্ছে প্রথম এবং প্রধান হাতিয়ার। সমাজ ভিত্তিক নামায নয়- নামায ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে হবে। তবেই সকল প্রকার অন্যায়, দুর্নীতি, অপরাধ দুরীভূত হবে ইনশায়াল্লাহ।
রাসুলে কারীম সা. এর জীবনে মিরাজ সংগঠিত হওয়ার পরে সূরা বনী ইসরাইল নাযিল হয়- এ সূরার ৩য়-৪র্থ রুকুতে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাস্ট্রের অনেক গুলো নীতিমালা নির্দেশ আকারে নাযিল করা হয়। এ নির্দেশনামাগুলোই মিরাজের শিক্ষা। রাসুলে কারীম সা. যে জান্নাত-জাহান্নাম দেখে এসেছেন। সে জান্নাতের পুরস্কার কোন কাজে আর জাহান্নামের শাস্তি কোন কাজে তা এখানে বিবৃত হয়েছে। এটা একদিকে যেমন মিরাজের শিক্ষা অপর দিকে এটাকে বলা হয় ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের মূলনীতি। সূরা বনী ইসরাইলের আলোকে এ মূলনীতিগুলো হচ্ছে:
১. আল্লাহর সাথে দ্বিতীয় কাউকে শরীক না করা । অন্য কারো ইবাদাত না করা, একমাত্র তারই ইবাদাত করা।
২. পিতামাতার সাথে সাদাচারণ করা। তাদের সাথে কোমল ও নরম আচরণ করা। তাদের খেদমত করা। তাদের মনে কস্ট না দেয়া এবং তাদের জন্য আল্লাহর শেখানো ভাষায় দোয়া করা।
৩. আত্মীয়-ম্বজন, অভাবী মিসকিন ও মুসাফিরদের অধিকার আদায় ও তাদের অগ্রাধিকার প্রদান।
৪. অপচয়-অপব্যয় এবং অসৎ পথে ব্যয় না করা।
৫. আত্মীয়-ম্বজন, অভাবী মিসকিন ও মুসাফিরদের অভাব মোচনে সামর্থ্য না হলে উত্তম ভাষায় ও নরম ভাষায় জবাব দেয়া।
৬. কৃপণতা এবং বখিলী পরিহার করা।
৭. দারিদ্রের আশংকায় নিজের সন্তান হত্যা না করা। (বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই হত্যা করা হয়- যা জাহেলী যুগের চেয়েও মারাত্মক)
৮. যিনার কাছেও না যাওয়া। যিনার কাজের উদ্রেক হয় এমন সকল কাজ পরিহার করা।
৯. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা না করা। কিসাস আদায় করা।
১০.এতিমের সম্পদের ধারে কাছেও না যাওয়া। তবে না- তাদের না-বালেগ অবস্থায় তাদের সম্পদ হেফাজত করা দায়িত্ব।
১১. প্রুতিশ্রতি এবং ওয়াদা পূরণ করা।
১২.সঠিকভাবে ওজন করা। মাপে কম না দেয়া। দ্রব্যে ভেজাল না দেয়া।
১৩. যে সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পিছনে না ছোটা। আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে কারো দোষ অনুসন্ধান না করা।
১৪. বিনয় ও ন¤্রতার সাথে চলাফেরা করা। যমীনে দম্ভভরে না চলা।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে প্রতটিি কথাই প্রতিবার পাঠ করার সময় নতুন মনে হয়।
কুরআনের কোন কোন আয়াত পাঠ করলে মনে হয়- এই মাত্র নাযিল হয়েছে
এই জন্যই আল কুরআন সার্বজনীন
লাইলাতুল মিরাজ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তির নিরসনঃ
১। মিরাজের রাত্রিতে বিশেষ নফল নামাজের ফযীলত বিষয়ক সকল হাদীস মাউদূ বা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
২। মিরাজ নিয়ে প্রচলিত আছে, মুহুর্তের মধ্যে মিরাজ সংঘটিত হয়েছে। রাসূল(স) মিরাজ হতে ফিরে এসে দেখেন- পানি পড়ছে, শেকল নড়ছে, বিছানা তখনো গরম রয়েছে ইত্যাদি। এসব মূলত অতিরঞ্জিত গল্পকার ও ওয়ায়েযীনদের মনগড়া বর্ণনা। কোন সহীহ হাদীস এমনকি যয়ীফ হাদীসও নেই এরকম। এসব বিকৃত বর্ণনা বরং মিরাজ এর মত অলৌকিক ঘটনাকে ইসলামবিদ্বেষীদের কাছে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দেয়। কোন সহীহ হাদীসে মিরাজ এর সময় সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
তাবারানী সংকলিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ(স) বলেনঃ “অতঃপর প্রভাতের পূর্বে আমি মক্কায় আমার সাহাবীদের নিকট ফিরে আসলাম। তখন আবূ বকর আমার নিকট আগমন করে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি গত রাতে কোথায় ছিলেন? আমি আপনার স্থানে আপনাকে খুঁজেছিলাম, কিন্তু আপনাকে পাইনি। ........তখন তিনি মিরাজের ঘটনা খুলে বলেন।”(হাইসামী, মাজমাউয যাওদাইদ ১/৭৩-৭৪)।
এ হাদীস হতে বুঝা যায়, রাসূল(স) প্রথম রাতে মিরাজে গমন করেন এবং শেষ রাতে ফিরে আসেন। সারারাত তিনি মক্কায় অনুপস্থিত ছিলেন অর্থাৎ রাতের বেশ একটা সময় লেগেছিল মিরাজে।
আল্লাহ সব পারেন। আল্লাহ চাইলে সময় ছাড়া বা খুব কম সময়ে এমন অলৌকিক ঘটনা সম্পাদন করতে পারতেন। আমাদের মুসলমান হিসেবে এ বিশ্বাস রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের উচিত নয়, যে কথা হাদীসে বর্ণিত হয়নি তার রাসূল(স) এর নামে বলা। এটা মহাপাপ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন