আজব এক যুদ্ধ! বন্দুক যুদ্ধ!!
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ০৭ মে, ২০১৪, ০৮:৪৭:২০ রাত
আমি টেলিভিশনের পর্দায় কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী এবং বোনের কান্নার দৃশ্য দেখেছি। বিশ্বজিতের বাবা-মায়ের আহাজারির দৃশ্য দেখেছি। সৈয়দা রেজওয়ানার স্বামী অপহৃত হবার পর তার কান্নার দৃশ্য অবলোকন করেছি। এ নিয়ে মিডিয়ার খবর, আলোচনা, টক শো দেখেছি। কিন্তু যাদের নিয়ে কোন আলোচনা হয় না। যাদের পরিবারের কান্নার দৃশ্য টেলিভিশেনের পর্দায় দেখাবার মতো যোগ্য নয়- যাদের নিয়ে কোন আলোচনা এবং টক শো হয় না- তারা কি তবে মানুষ নয়? ওদের কি কোন মানবাধিকার নেই?। অথচ মানুষগুলো হারিয়ে যায়, আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে মারা যায়। তাদেরও পিতা মাতা আছে, তাদেরও স্ত্রী সন্তান আছে, তাদের পরিবারেও প্রিয়জন হারানোর কান্না এবং চিৎকার ধ্বনিত হয়। কিন্তু সে সব দৃশ্য দেখানোর কোন টি ভি চ্যানেল নেই। তাদের দুঃখ গাথা নিয়ে কথা বলার যেন কেউ নেই। আমরা এমন এক বাংলাদেশে বাস করছি যেখানে জন্ম-মৃত্যুর সার্টিফিকেট রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পরিচয়ের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশ শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ হলেও বর্তমান বাংলাদেশে মুসলমানের কোন মানবাধিকার নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিহত হওয়া যুবকটি বিশ্বজিৎ না হয়ে সে যদি কোন মুসলিম মায়ের সন্তান হতো তবে তার জন্য কোন মানবাধিকার সংগঠন এগিয়ে আসতো না। মিডিয়ায় কোন তোলপার হতো। যদি তার নাম সালাম, রফিক, আবদুর রহমান বা এমন কিছু তবে তার পরিচয় হতো সে ‘শিবির’ সে একজন তান্ডবকারী- অতএব ওদের কোন মানবাধিকার নেই। ওরা এভাবেই মরবে। আজকে সব পত্রিকা এবং টিভির টকশোর আলোচিত বিষয় নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা। এটা নিয়ে কেন এত আলোচনা? তারা আওয়ামীলীগের দলীয় লোক। যদি তারা আওয়ামীলীগের দলীয় লোক না হতেন, যদি হতেন কোন সাধারণ নাগরিক তবে দু একদিন হয়তো সামান্য আলোচনা হতো আর যদি হতো বি এন পি জামায়াতের কোন লোক তবে ওরা আলোচনায় স্থান পাওয়ার মতো কোন প্রাণীই নয়। নারায়ণঞ্জের সাত খুনের আড়ালে প্রতিদিন সাতক্ষীরায় হত্যাকান্ড চালাচ্ছে পুলিশ। সাতক্ষীরা পুলিশি নির্যাতনে আজ এক বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। গতকাল রাতে একজন মাদরাসা শিক্ষককে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার পর এক নির্জন মাঠে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য দালাল মিডিয়া তো সব সময় প্রস্তুত হয়েই আছে। পুলিশ নিউজ দিয়েছে বন্দুক যুদ্ধে জামায়াত নেতা নিহত হয়েছে। হায়রে আজব বন্দুক যুদ্ধ? একজন ব্যক্তিকে রাতের আধারে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হলো। এরপর রাতের আধারেই নির্জন মাঠে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হলো আর প্রচার করা হচ্ছে তিনি নাকি বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। বন্দী অবস্থায় তিনি বন্দুক পেলেন কোথায়? আর বন্দুক যুদ্ধ হলে প্রতিপক্ষের সে বন্দুকই বা গেল কই? আজ নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে- কিন্তু সাতক্ষীরা নিয়ে কোন আলোচনা নেই। সাতক্ষীরার মানুষেরা জামায়াত করে। জামায়াত মানে আজব কোন প্রাণী তাদের কোন মানবাধিকার থাকার প্রশ্নই আসে না। ওদের পিতা-মাতা নেই, ওদের স্ত্রী সন্তান নেই। তাদের হৃদয়ে কোন ভালবাসা নেই। প্রিয় জন হারানোর কারণে তাদের কোন দুঃখ নেই। ওদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা নিষেধ, ওদের জন্য চিৎকার করে কাঁদা নিষেধ। ওদের নিয়ে কোন আলোচনা করা নিষেধ। আজ যারা এভাবে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে তাদের বোবা কান্না আকাশে বাতাসে গুমরে মরছে। নির্যাতিত এ জনতার কান্নায় নিশ্চয়ই আল্লাহর আরশ কাঁপছে। যারা এ হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে আর একে বৈধতা দেয়ার জন্য বন্দুক যুদ্ধের গল্প প্রচার করছে সে সব পুলিশ অফিসার আর দালাল সাংবাদিকদের মনে রাখা দরকার। সময় বহমান- নদীর ¯্রােত বহমান। তবে সময় এবং নদীর ¯্রােত সব সময় একদিকে প্রবাহিত হয় না। প্রতিটি হত্যাকান্ড এবং গুম খুনের হিসাব একদিন সবাইকেই দিতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন