রক্তাক্ত জনপদে নিপীড়িত মানবতা;ভুলুন্ঠিত মানবাধিকার --মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৫ মার্চ, ২০১৪, ০৯:০৫:২১ রাত



সবুজ ব-দ্বীপ জনপদ বাংলাদেশ। বন বনানী, নদী খাল অপরুপ সেন্দৈর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। সাম্য, শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আর ভালবাসার দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু এত সুন্দর দেশটি আজ জিঘাংসা, প্রতিহিংসা, গোষ্ঠী নির্মূল, গুম, খুনে মৃত্যু উপত্যাকায় পরিণত হয়েছে। আজানা আতংক সর্বত্র;ভীত সন্ত্রস্থ প্রতিটি মানুষ। কোথাও যেন জীবনের নিরাপত্তা নেই। কখন কে লাশ হয়ে বাড়ী ফিরে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। খাল, বিল, নদী নালা বন বাদাড়ে পরে থাকছে মানুষের লাশ। সুস্থ সবল মানুষ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হবার পর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। বন্ধুক যুদ্ধ নামক সরকারী নাটকের বলি হচ্ছে প্রতনিয়ত অসংখ্য বণি আদম। নিরাপরাধ, নীরিহ মানুষ আর প্রতিবাদী জনতা কেইউ বাদ যাচ্ছে না। সরকারী বাহিনী যাকে মনে চাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে- এরপর তার লাশ পরে থাকছে রাস্তার ধারে অথবা খালে বিলে। টেকানফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া গোটা বাংলাদেশ আজ রক্তে রঞ্জিত। রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে জনসমর্থনহীন অনির্বাচিত অবৈধ সরকার, সরকারের তল্পীবাহক প্রশাসন আর তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে যৌথ বাহিনী। যৌথ বাহীনীর এ জুলুম-নির্যাতন, গুম, খুন জাতিকে নতুন করে রক্ষী বাহিনীর ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তখন বলা হয়েছিল লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেব। সংসদে দাড়িয়ে বলা হয়েছিল কোথায় আজ সিরাজ সিকদার। সিরাজ সিকদারকেও গ্রেফতার করার পর বন্ধুক যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছিল। গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতনে মায়ের বুক খালি হচ্ছে, পিতার কান্না, সন্তানের আর্তনাদ বিধবা নারীর রোনাজারী আর নিপীড়িত জনতার আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। কিন্ত দলবাজ মিডিয়া নিশ্চুপ, মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারার মুক বোবা বধির। যেন দেশে কোন কিছুই ঘটছে না। এরাই আবার বিরোধী দল কোথাও মিছিল বের করলে সেখানে আইন শৃংখলা বাহিনী বাধা দেয়ার পর বিরোধী নেতা কর্মীদের সাথে কোন সংঘর্ষ হলে তখন মানবাধিকার আর সন্ত্রাসের জিগির তোলে। মানুষের লাশের উপর দিয়ে ৫ জানুয়ারীর প্রহসন আর নাটকের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে উদ্ধেশ্য করে বলেছেন বিরোধী দল নাকি গণহত্যায় মেতে উঠেছে । তিনি প্রশ্ন করেছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী আর কত রক্ত চান? তথ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেছেন কোথাও কোন গুম খুন অথবা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটছে না কিন্তু ১০ জানুয়ারী পুলিশের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন এটা গুম নয়, আইন শৃংখলা বাহিনী বি এন পি জামায়াতের সন্ত্রাস মোকাবেলা করছে- তার মানে সরকার গুম খুনের লাইসেসন্স দিয়ে দিচ্ছে। শহাজাহান খান বলেছেন সন্ত্রাস বন্ধের জন্য কিছু ক্রসফায়ারের দরকার আছে। তথ্যমন্ত্রী আর একদিন বলেছেন যারা মারা যাচ্ছে তারা সবাই চোর বাটপার। স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন পুলিশ বাহিনী শেখ হাসিনার নৌকা তীরে ভেরার কাজে সহায়তা করেছে। মাহফুজ আনাম বলেছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী গুম খুনের তালিকা দিয়েছেন কিন্তু তথ্য দেন নি। দলবাজ মিডিয়া আর সরকারের চাপাবাজ মন্ত্রীদের চিৎকার গোয়েবলসের থিওরীকেও হার মানায়। প্রতিদিন লাশ পড়ছে তারা দেখেও না দেখার ভান করছে- সরকারের মেয়াদ ছিল ২৫ অক্টোবর; এরপর থেকে এ সরকার অবৈধ। এক সমীক্ষা মতে ২৫ অক্টোবরের পর থেকে এ যাবৎ আইন শৃংখলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে ছয় শতাধিক মানুষ নিহত ও গুম হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এ নিবন্ধে আমি একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরার চেস্টা করবো।

২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর সরকারের মেয়াদ পূর্তির দিন পুলিশ, বিজিবি আওয়ামীলীগের হামলায় সারাদেশে আটজন নিহত হয়েছে। চকরিয়ায় বিএনপি মিছিল বের করলে পুলিশ-বিজিবি কমপক্ষে অর্ধশত রাউন্ড গুলী বর্ষণ করে। বিজিবি ও পুলিশের গুলীতে ২ বিএনপি কর্মী নিহত হয়। নিহতরা হলেন উপজেলার ২নং ওয়ার্ড হালকাকারার বাদশা (২৬) এবং কাকারা এলাকার মিজানুর রহমান (১৮)। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আওয়ামী লীগের হামলায় এক শফিকুল ইসলাম নামে জামায়াত কর্মী নিহত হয় । নীলফামারীর জলঢাকায় জামায়াতের মিছিলের ওপর পুলিশের গুলিতে মোসলেম উদ্দন নামে(৩২) এক জামায়াত কর্মী নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আওয়ামীলীগের হামলায় তিনজন বি এন পি কর্মী নিহত হয়;নিহত নেতাকর্মীরা হলেনÑ ফরিদগঞ্জে পূর্ব গাজীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে ও ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর প্রধান (২৬), বড়ালী গ্রামের যুবদল কর্মী শরিফ হোসেন (৩০) এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার বারপাইকা আবদুল আলীর ছেলে আরিফ (২৪)। ২৬ অক্টোবর শনিবার বিকালে রাজশাহী নগরীর কাজলায় হরতালের সমর্থনে আয়োজিত ১৮ দলীয় জোটের এক সমাবেশে গুলী চালায় পুলিশ। এতে রাশেদুল ইসলাম রান্টু (২৩) নামে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতা নিহত হন।

২৭ অক্টোবর রবিবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে গতকাল রোববার পুলিশ বিজিবি ও আওয়ামীলীগের হামলায় বিরোধী দলের তিনজন নিহত হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র্যাব, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা, গুলীবর্ষণ, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। নিহতরা হলেন ১. পাবনার ঈশ্বরদীতে জামায়াত কর্মী জুলহাস উদ্দিন মুন্নাফ (৩৫), ২. ফরিদপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের মারুফ হোসেন (১৬), ৩. বগুড়ায় বিএনপি কর্মী শাজাহান আলী (৩৮)। ২৮ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীরা হরতাল সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ৬ জন নিহত। চাঁদপুরে পুলিশ ও আ’লীগের সশস্ত্র হামলায় যুবদলের ১ কর্মী নিহত হয়েছে। গুলীবিদ্ধ হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপি কর্মী হাসান (৩৭) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলীবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে (৫৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ আব্দুল আলিমকে (৩৭)। ২৯ অক্টোবর কুতুবদিয়ায় পুলিশের বেপরোয়া গুলীতে ৪ জামায়াত কর্মীসহ সারা দেশে নিহত হয়েছে ৬ জন।কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উত্তর দুরোং-এ জামায়াত-শিবিরের হরতালপরবর্তী সমাবেশে পুলিশের গুলীতে ৪ জন নিহত হয়েছেন।২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেনÑ পারভেজ (২৪), আবু আহমেদ (৫৫), আজিজুর রহমান (২৮), তাজুল ইসলাম (২৯)। হরতাল চলাকালে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ধোয়াইলে পুলিশের গুলীতে মারুফ হোসেন (১৮) নামে স্থানীয় এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছে। ৪ নভেম্বর সোমবার সকালে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গুলীতে নাসির উদ্দিন নামে এক ছাত্রদলকর্মী নিহত হন। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাটকেল ঘাটায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩ নবেম্বর আহত হয়ে ৫ নভেম্বর ভোরে জামায়াতের কর্মী আব্দুস সবুর নিহত হয়। ১২ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে পুলিশের ধাওয়ায় নিহত হয়েছে যুবদল কর্মী আসাদুল ইসলাম। ২৩ নভেম্বর মিরসরাইয়ে হাফেজ জসীম উদ্দিন (২৯) নামে এক জামায়াত কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২৭ নভেম্বর-২০১৩ অবরোধ চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সাতজন, আহত হয় ২৩০০ জন। ২৭ নভেম্বর বুধবার সকালে উপজেলা ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের একটি বিশাল মিছিল সিরাজগঞ্জের মুকন্দগাঁতী আসা মাত্রই পুলিশ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে গুলী, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল জলিল, পিতাঃ রিয়াজ উদ্দীন ফকির, ধুকুরিয়া বেড়া, ও ছাত্রদলের ৩নং ওয়ার্ডের যুগ্ম-সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ (২৫) ও এক পথচারী ছাকমান হোসেন নিহত হয়। একই দিন পুলিশ ও র‌্যাবের গুলিতে জামায়াতের কর্মী শামছুর রহমান (৩৫) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার তার বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা তাকে গুলি করে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়।নিহত শামছুর রহমান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আবদুল মাজেদের ছেলে । পুলিশের গুলিতে কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিহত হয় যুবদল নেতা আবদুল হালিম। ২৯ নভেম্বর পুলিশী হামলায় নিহত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার যুবদল নেতা আব্দুল হালিমের লাশের কফিন নিয়ে জানাযা শেষে ফেরার পথে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথায় পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। হামলায় পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা কমপক্ষে ৫০ রাউন্ড গুলীবর্ষণ করেছে। এতে ২ বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। নিহত বিএনপি নেতা জাগির হোসেন চকরিয়া পৌরসভা ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। ২ডিসেম্বর ২০১৩ চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের হামলা এবং গুলিতে বিএনপির কর্মী রুবেল, নাটোরে ছাত্রদল কর্মী সাইফুজ্জামান সুজন, দাউদকান্দিতে যুবদল কর্মী জাহাঙ্গীর আলম এবং বগুড়ায় যুবদল কর্মী ইমরান শেখ নিহত হয়েছে।

৩ডিসেম্বর-২০১৩ বিরোধী দলের আন্দোলন দমনের জন্য খুলনা ও যশোর থেকে শতশত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সাতক্ষীরায় গিয়ে ব্যাপক অভিযান চালায়। তারা গুলি করতে করতে জনপদে প্রবেশ করে। সাতক্ষীরায় দুই শিবির কর্মীসহ সারাদেশে নিহত হয়েছে ৮ জন। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় গুলিতে শিবির কর্মী হোসেন আলী ও আরিজুল ইসলাম, চাদপুরে গুলিতে শিবির কর্মী সিয়াম ও ছাত্রদল কর্মী তাজুল ইসলাম রতন, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী মো: রাসেল, হালিশহরে চালক মাহবুব, রাঙ্গুনিয়ায় ইসমাঈল এবং নোয়াখালীতে পুলিশের ধাওয়ায় নিহত হয় বিএনপি কর্মী আবদুস সালাম। এ দিন আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে সারাদেশে আহত হয় তিন শতাধিক।

৪ ডিসেম্বর ফেনীতে পুলিশ-বিজিবির হামলায় গুলীবিদ্ধ হয়ে হারুন অর-রশিদ (৩০) নামের স্থানীয় এক যুবদল নেতা নিহত হন। ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ - কুমিল্লায় পুলিশ মিছিলে গুলী চালালে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবু বেপারী গুলীবিদ্ধ হয় হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সিরাজগঞ্জে আওয়ামী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে ১৮ দলের মিছিলে শতাধিক রাউন্ড গুলীবর্ষণ করে। পুলিশ গুলী করে জামায়াত কর্মীর শিশু সন্তান চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আলমগীর হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ ছাড়া যশোরে গুলীতে ছাত্রদল নেতা কবির হোসেন পলাশ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে আহত হয়েছে ৭৩৩ জন, গুলীবিদ্ধ ২৭৬ জন । ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ বিভিন্ন স্থানে বেপরোয়া গুলী চালিয়েছে পুলিশ। ফেনী ও নওগাঁয় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ২ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে মারা গেছে ১ জন। এ দিন গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে ৭০ জনকে। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ লক্ষ্মীপুরে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে পুলিশ-র‌্যাব ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এতে ৫ জন নিহত ও ৩০ জনের অধিক গুলীবিদ্ধ হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন সাবুর জেলা শহরের উত্তর তেমুহনীস্থ বাসভবনে র‌্যাব-১১ গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় অভিযান পরিচালনা করে। র‌্যাবের এ হামলার প্রতিবাদ জানায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষুব্ধ জনগণের উপর র‌্যাব সদস্যরা বেপড়োয়া গুলি বর্ষণ করে; এতে ৫ জন নিহত এবং অন্ত ৫০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। নিহতরা হচ্ছে বিএনপি কর্মী মাহবুবুবুর রহমান, শিবির কর্মী শিহাব হোসেন, যুবদল কর্মী সুমন এবং ইসলাম মার্কেট এলাকার রইস । পুলিশ ও র‌্যাব বলেছে এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছে তবে বিএনপি এ সংখ্যা ৯ জন বলে জানিয়েছে। এছাড়া কুমিল্লায় পুলিশের গুলীতে শিবির কর্মী আনোয়ার হোসেন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩৮ জন। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, নড়াইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ সারাদেশে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৭৭৫ জনের অধিক জন। ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে ঢাকায় এক শিশু নিহত হয় । সারাদেশে আহত হয় বিরোধী দলের পাঁচ শতাধিক নেতা কর্মী। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস- এ দিবসে রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে সরকার; এ দিন র‌্যাব পরিচয়ে সরকারের পেটোয়া বহিনী লক্ষীপুরের অত্যন্ত জনপ্রিয় জননেতা বিশিষ্ট চিকিৎসক জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডাঃ ফয়েজ আহমদের বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। কোম্পানীগঞ্জের নোয়াখালীতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ যৌথভাবে হামলা চালায় শিবিরের মিছিলে তারা গুলি করে আটজন তরুণকে হত্যা করে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শিবিরকর্মী মতিউর রহমান সাজিদ (২৪), রাসেল (২২), রায়হান (২৪), সাইফুল ইসলাম (২৩), আব্দুস সাত্তার (২২), সজীব (২৪) ও অজ্ঞাতনামা আরো ১ জন। ১৫ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগের দিন সরকার গণহত্যা এবং রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে এ যেন নিজ দেশে ভীনদেশী বর্বরদের পৈশাচিকত। এক দিনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় ৯ জন। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ হরতাল চলাকালে পুলিশ ও সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের গুলীতে সারাদেশে নিহত হয়েছেন ৯ জন। সরকারি বাহিনী গুলী চালিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রামকে এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত করে। পাটগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ছাত্রশিবির কর্মী সাজু মিয়া, আশরাফুল ইসলাম এবং জামায়াত কর্মী আব্দুর রহীমকে গুলী করে হত্যা করা হয়। । একই দিনে জয়পুরহাটে সরকারি বাহিনীর গুলীতে নিহত হয়েছেন জামায়াত কর্মী ফিরোজ ও ছাত্রশিবির কর্মী শামীম ও ইনছান আলী। গুলীবিদ্ধ হয়েছেন অর্ধশত। সাতক্ষীরা সদরের কুচপুকুর এলাকার হাবিবুর রহমান হবিকে (৩৫) গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের আকবর আলীর ছেলে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জমিরতলি এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে দিঘলী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল ও খোরশেদ আলম সুমন নামে দু’জন নিহত হয়। বাবুলকে ঘরে বসে ভাত খাওয়ার সময় র‌্যাব পোশাকধারী সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে গুলী করে হত্যা করে বলে স্ত্রী দাবি করেন। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে ছয় জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন,সদরের সাতানি গ্রামের আহাদ মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোড়ল (২৫), শিয়ালডাঙ্গা গ্রমের ইলিয়াস সরদারের ছেলে সায়েব বাবু, সদর উপজেলার পদ্মশাঁখরা এলাকায় ২ জন ও দেবহাটার সখিপুরে নিহত হয়েছে আরো ২ জন। ২৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে পুলিশ গুলিতে যুবদলের জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েল নিহত হয়। এছাড়া যশোরের মনিরামপুরে হাফিজুর রহমান নামে এক যুবদল কর্মীকে ভাত খাওয়া অবস্থায় খুন করা হন। ২৪ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী সাতক্ষীরায় গুলি করে হত্যা করে হাফিজুল ইসলাম নামে এক নিরীহ পথচারীকে । ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় শিবির নেতা মনসুর আহমদকে। ৩০ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সাতক্ষীরার আগরদারী ইউেিনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামকে- গ্রেফতারের পর তাকে হত্যা করে তার লাশ ফেলে রাখে রাস্তার পাশে। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয় শিবির নেতা মনসুর আহমদ--নিহত মনসুরের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার বাবুরহাট এলাকায়। তার বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক। তিনি উত্তরা সিটি ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ৩১ জানুয়ারী ২০১৪ যৌথবাহিনীর গুলীতে নিহত হয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউপি সদস্য হিজুলি গ্রামের জামায়াত নেতা আব্দুল জব্বার মালিথা ওরফে জব্বার মেম্বর (৫৫)। পুলিশ বলেছে তিনি বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি, যার বয়স ৫৫ বছর; তিনি কি করে পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় ছিলেন, তিনি কিভাবে বন্দুক যুদ্ধ করলেন? ৪ জানুয়ারী ২০১৪ লালমনিরহাটের পাটগ্রামে যৌথবাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোবারক হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা এবং ৩০ জন নেতা-কর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ৫ জানুয়ারী শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনী প্রহসনের দিন নিহত হয়েছে ২৪ জন- ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের গুলী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া তীর ও বলালমবিদ্ধ হয়ে ৪ জন নিহত হয়েছে। পুলিশের গুলীতে জয়াল আবেদীন (৩৫) ও হারুন (২৮) নামে ২ ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বল্লম ও তীরের আঘাতে মোঃ হানিফ (২৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ দিন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মন্মথপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলীতে পার্বতীপুর যুব জাগপার সাধারণ সম্পাদক রায়হান মাসুদ (৩৫) নিহত হয়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই পারুল ইউনিয়ন জামায়াতের কর্মী আরাজী চালুনিয়া এলাকার কৃষক মিরাজুল ইসলাম (৪২) মারা যান। দেউতি বাজার ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি মেকুড়া দ্বিমুখি ফাজিল মাদরাসার মেধাবী ছাত্র হাদিউজ্জামান হাদি মারা যায়-যৌথ বাহিনীর গুলীতে আরো ২ জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত জামায়াত কর্মীরা হলেন, জেলার ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও জলঢাকা উপজেলার কৈমারী বালাপাড়া গ্রামের মমতাজ উদ্দিন (৫০)। ফেনীতে পুলিশ - বিজিবির গুলিতে মারা গেছে ২জন। নিহতরা হলেন জামসেদ আলম (২৫), পিতা-জামাল উদ্দিন, চরচান্দিয়া, যুবদল কর্মী, শহিদ উল্লাহ (২২), পিং-মোঃ ইউসুফ, চরচান্দিয়া, ছাত্রদল কর্মী। ভোটের পূর্ব রাতে ফেনীর মাওলানা ফখরুদ্দীন (৫০), শিবির কর্মী ইমাম উদ্দিন (২০), স্থানীয় পশু চিকিৎসক আবু মুছা ও চা দোকানদার নুরুল আবছার গুলীবিদ্ধ হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতালে মারা যান। টঙ্গীবাড়ীতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা কঙ্কন মিয়া (২৩)। কঙ্কন মিয়া পূর্ব আলদি গ্রামের আব্দুল হক মাস্টারের পুত্র।৫ জানুয়ারী লক্ষীপুরে র‌্যাবের গুলিতে রুবেল নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন । ১১ জানুয়ারী ২০১৪ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে শনিবার সকালে নাজমুল হাসান সাকিব (২৫) নামে এক জামায়াত নেতার গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে পলাশবাড়ীর বাঁশকাটা এলাকায় তার লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। আগের দিন সাদা পোষাকধারী কতিপয় লোক তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরের দিন তার লাশ পাওয়া যায়। ১২ জানুয়ারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হয়েছে এক ছাত্রশিবির নেতা। এ সময় আরো ৫০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। প্রায় ২ শতাধিক ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডার শাহ আমানত হলে রোববার বিকালে সশস্ত্র হামরা ও ভয়াবহ তান্ডবলীলা চালানোর সময় পুলিশ হামলাকারীদেও বাধা দান করার পরিবর্তে সহায়তা করে এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার করার পরিবর্তে নীরীহ সাধারণ ছাত্রসহ প্রায় ২৫ জনকে আটক করে। ১৫ জানুয়ারী ২০১৪ সাতক্ষীরায় গ্রেফতার করে নিয়ে যাবার পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জামায়াত নেতা আনোয়ারুল ইসলামকে-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা বাজারের পাশে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও ওয়ার্ড সভাপতি মোঃ আনারুল ইসলামের বাড়ি। গত ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সে বাড়ি থেকে নাংলা-জগন্নাথপুর সড়কের পাশের স্বেতপুর মৎস্য ঘেরে কর্মচারিদের নিয়ে মাছ ধরতে যায়। সকাল ৯টার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন পুলিশ সদস্য উক্ত ঘেরে যায়। তাকে দেখতে পেয়ে তাদের মধ্যে কয়েকজন ওখানে থাকে আর কয়েকজন ঘেরের অন্য পাশে ব্রিজের পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলী ছুঁড়লে সে দৌড়ে রাস্তায় ওঠে। এ সময় কাদামাটি মাখা অবস্থায় দেবহাটা থানার ওসি তারকনাথ বিশ্বাস তাকে ধরে ঠান্ডা মাথায় বাম পায়ের হাঁটুতে গুলী করে। এতে আনারুলের হাঁটু চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। প্রচন্ড- রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

১৮ জানুয়ারী আবার আবু হানিফ ছোটন নামে এক শিবির কর্মীকে চিংড়ী ঘের থেকে ধরে নিয়ে যাবার পর নির্মমভাবে হত্যা করেছে যৌথ বাহিনী। আবু হানিফ ছোটন অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল। অস্টম শ্রেণী পড়–য়া একজন কিশোরও যৌথবাহিনীর নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে সাদা পোষাকধারী ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার দু দিনপর ১৯ জানুয়ারী শিবির নেতা মোশাররফ হোসেনের (২২) গুলিবিদ্ধ লাশ ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করেছে । মোশাররফ এর মাথায় ও বুকে বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। ২১ জানুয়ারী ২০১৪ পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করে মেহেরপুরের জামায়াত নেতা তারিককে--মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৩৫) যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর গুলীতে নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে মেহেরপুর ইসলামী ব্যাংক এলাকা থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। রাত দেড়টার দিকে হত্যার পর পুলিশ বন্ধুক যুদ্ধেও গল্প সাজায়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪টি গ্রামে যৌথ বাহিনীর ১৯ জানুয়ারি রাতে গ্রেফতার অভিযানকালে অবিরাম ৯ ঘণ্টা বৃষ্টির মত গুলীবর্ষণের ফলে এলাকাটি এখন বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। উক্ত ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হয়। এদের মধ্যে গুলীবিদ্ধ শিবির কর্মী সোহাগ (১৫) পিতা-শফিক কাজী ২০ জানুয়ারি রাত ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২৬ জানুয়ারী যৌথ বাহিনী সাতক্ষীরার দেবহাটা এবং ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে তিনজনকে হত্যা করে--সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনীর গুলীতে নিহত দেবহাটা উপজেলা (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোঃ আবুল কালাম ও জামায়াত কর্মী মারুফ হোসেন ছোটন এবং কোটচাঁদপুরে পুলিশের গুলীতে নিহত শহীদ এনামুল হক -আব্দুর রাজ্জাক রানা। ২৭ জানুয়ারী ২০১৪ যৌথবাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তান্ডবে জীবন দিতে হয়েছে তালা উপজেলার ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও ইসলামকাঠি ইউনিয়নের সভাপতি আজহারুল ইসলামকে। ২৮ জানুয়ারী অভয়নগর ও খুলনায় যৌথবাহিনী ও পুলিশের গুলীতে এক বিএনপিসহ ২ জন নিহত হয়েছে। অভয়নগরে নিহত হয়েছে বিএনপিকর্মী চা দোকানদার রবিউল ইসলাম। ৩০ জানুয়ারী ২০১৪ নোয়াখালী ও ফেনীতে বিএনপির দু’ নেতা যৌথবাহিনীর গুলীতে নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম ও ফেনীতে যুবদল নেতা গোলাম সরোয়ার (৩০)। ৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকার পল্লবীতে জামায়াতের মিছিলে নির্বিচার গুলি বর্ষণে হত্যা করা হয় পল্লবী জামায়াতের আমীর হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসাইনকে। ৬ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর কদমতলীতে দু যুবককে গ্রেফতারের পর তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। র‌্যাব দাবী করেছে তারা বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবার দাবী করেছে তারা কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত নয় এবং কোন প্রকার বন্ধুক যুদ্ধ হয়নি- গ্রেফতারের পর তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারী ঢাকার পল্লবীতে জনি নামক এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করার পর পুলিশে নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়। ১২ ফেব্রুয়ারী সাতকানিয়া উপজেলার কেরাণীরহাটের পূর্ব পার্শ্বে ছদহা কেউচিয়া স্কুল সড়কে একটি জানাযা নামায পড়ে বাড়ি ফেরার পথে জামায়াতকর্মী জসীমউদ্দিন (২৫) ও মো: রফিক (৩০)কে গ্রেফতারের চেষ্টাকালে পুলিশের গুলীতে তারা গুরুতর আহত হয়। তাদের বুকে ও পায়ে গুলী লাগে বলে জানা গেছে। পুলিশ আহত অবস্থায় রফিক ও জসীমকে আটক করে প্রথমে সাতকানিয়া সদর স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনে। সেখানে জসীমউদ্দিনকে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করে। রফিককে ২৬ নং ওযার্ডে ভর্তি করা হয়। নিহত জসিম আফজল নগর মুহুরীপাড়া এলাকার মৃত ফজল করিমের পুত্র। ২৭ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ভোট কেন্দ্র দখলে বাধা দিলে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে শিবির কর্মী সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করে। এ গুম ও খুনের তালিকা আরো দীর্ঘ। আমি শুধু কিঞ্চিৎ তথ্য উল্লেখ করলাম। আওয়ামী দুঃশাসনে আজ প্রতিটি মানুষের জীবন দুর্বিসহ। আপাদ মস্তক ভদ্রলোক দাবীদার আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারীর জনগণের কাছে এখন এক মূর্তিমান আতংকের নাম। তার গাড়িবহরে হামলার মামলায় যে কয়জনকে আসামী করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ছয়জনকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার পাশে। এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিবির নেতাকে বগুড়া থেকে অপহরণের পর হত্যা করে অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফনের দুই মাস পর তাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। আইন শৃংখলা বাহিনীকে সরকার দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করে গোষ্ঠী নির্মূলের যে অভিযান শুরু করেছে তা কবে বন্ধ হবে কেউই বলতে পারছে না। বন্দুকের নল ব্যবহার করেই সরকার বর্তমানে ক্ষমতায় আছে। যা সরকারের মন্ত্রীদের কথায় প্রকাশ পেয়েছে। সরকারের মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন কিছুটা ক্রসফায়ার প্রয়োজন আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন কোন গুম হচ্ছে না, পুলিশ বি এন পি জামায়াতের সন্ত্রাস দমন করছে। স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কোন রাখঢাক ব্যতীত আসল তথ্য প্রকাশ করেছেন, তিনি বলেছেন, পুলিশের সহায়তায়ই শেখ হাসিনার নৌকা তীওে ভিড়তে পেড়েছে। স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথার অর্থ বোঝার জন্য রাস্ট্র আইন বিশেষজ্ঞ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তার কথার মানে খুবই সহজ এবং সরল। অর্থাৎ অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা সরকারের সকল অন্যায় আদেশই পালন করছে। ৫ মার্চ দৈনিক সংগ্রামে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতে বলা হয় দের মাসে বন্ধুক যদ্ধের নামে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে ৪৬ জন। ১৯ ফেব্রুযারী বি এন পির পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংএর মাধ্যমে জানানো হয় যে ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে পরে দুই মাসের ব্যবধানে ২৬১ জন নেতা খুন ও ৬০ জন গুম হয়েছে। ১৬ ফেব্রুয়ারী বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বিচার বহির্ভুত হত্যা গুম খুনের প্রতিবাদ এবং এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কারো কথায় সরকার কর্ণপাত করছে না। এক দলীয় দুঃশাসন আর জুলুম নির্যাতনের যে পথে সরকার হাটা শুরু করেছে। তা যে তাদের জন্য মোটেও কলাণকর নয় এটা । সরকার হয়তো ভাবছে এভাবে জুলুম নির্যাতন করে তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু না ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। কোন জালেম শাসকেরই শেষ পরিণতি ভাল হয় না। সরকার যতো তারাতারি বুঝবে ততোই তাদের জন্য কল্যাণকর এবং জনগণের জন্যও কল্যাণকর।

courtecy- Md.hafizur Rahman

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

192696
১৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:১২
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
192723
১৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
ফেরারী মন লিখেছেন : এরাম কৈরে যে কয়দিন থাকা যায় তাতে কম কিসে? আবার সামনের বারে যদি বিএনপি আসে তাদেরকেও তো একদিন ক্ষমতা ছাড়তে হৈবে তখন তারা ঠ্যালা বুঝবে।
192744
১৫ মার্চ ২০১৪ রাত ১০:৫৬
সালাহ খান লিখেছেন : মানবতা আজ একটি শুধু মাত্র একটি বগলের তলে বন্দি । আজ মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঘুমাতে হয় আবার সেই একই পরোয়ানা নিয়ে জাগতে হয় । তবুও আছি একটু শুভ পরিনতির আশায় - লিখার জন্য রইল ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File