জাতি অভিশাপমুক্ত হলো- বি এন পি জামায়াতকে আর ভোট দিতে হবে না

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:২২:৫৬ দুপুর

আজ সকাল ১১ টার দিকে পুরান ঢাকা থেকে মগবজারে আসছিলাম। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে ট্রাফিক সিগনালের কারণে জ্যাম। আজ ১৮ দলীয় জোট আহুত অবরোধের তৃতীয় দিন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনের দৃশ্য দেখলে বোঝার উপায় নেই যে আবরোধ চলছে। সাধারণত হরতাল অবরোধে কোথাও ট্রাফিক সিগনাল দেখা যায় না। পরে অবশ্য ট্রাফিক সিগনালের কারণ জানতে পারলাম। সচিবালয়ের পূর্ব পার্শের রাস্তা অর্থাৎ মুক্তাঙ্গনের সামনের রাস্তা পুলিশ কাটা তারের বেরিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ দিক থেকে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অংগ সংগঠনের ব্যানারে ছোট ছোট মিছিল এসে আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে জমায়েত হচ্ছে। মিছিলে রাজনৈতিক কর্মীর চেয়ে টোকাই টাইপের লোকের সংখ্যাই বেশী। সিগন্যালে বসে আছি মিনিট ৫ মিনিট অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু সিগন্যাল ছাড়া হচ্ছে না। এরপর দেখলাম সামনে পিছনে ২০/২২টি মোটর সাইকেল হর্ণ দিয়ে মারদাঙ্গা গতিতে আওয়ামীলীগ আফিসের দিকে আসছে- মোটর সাইকেলের বহর একটি পাজেরো গাড়িকে স্কর্ট করে নিয়ে আসছে। গাড়ির ভিতরে দেখা গেল আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। এর একটু পরেই দেখালাম গুলিস্তানের দিক থেকে জিপিও ক্রস করে বিশাল গাড়ির বহর সচিবালয়ের দক্ষিণ দিকের রাস্তা ধরে সামনের দিকে যাচ্ছে- বোঝা গেল রাস্ট্রপতি কোথাও যাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রুপে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা শ্লোগান দিচ্ছে- ‘শেখ হাসিনার সরকার-আর একবার দরকার’ ‘নৌকা মার্কার সরকার –আর একবার দরকার’ ইত্যাদি। আমি যেখানে দাড়ানো সেখানে এক পিক আপ ড্রাইভার বললেন ‘ আওয়ামী আজাব থেকে কবে মুক্তি পাবো?” আমি বললাম কেন- ভালোই তো চলছে- নৌকা মার্কায় ভোট চাইছে কিন্তু আপনাদের যাতে কস্ট করে ভোট কেন্দ্রে যেতে না হয় এ জন্য তারা ভোট বিহীন নির্বাচনের আয়োজন করেছে- অন্য আর একজন বললেন ‘সব কিছুরই একটা শেষ আছে- তাদেরও একদিন ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেই একদিন কতদিনে আসবে? আজ পত্রিকায় দেখলাম প্রধানমন্ত্রী বলেছেন‘ ‘বি এন পি- জামায়াতকে ভোট দিতে না হওয়ায় জাতি অভিশাপ মুক্ত হলো’ তার মানে বিরোধী দলকে ভোট দিলে জাতি অভিশপ্ত হতোÑ হায়রে অভিশপ্তের নমুনা- এ আমরা কোন দেশে বাস করছি? এমন নির্বাচন কি বিশ্ববাসী কখনো দেখেছে? যে নির্বাচনে টেন্ডার ভাগাভাগির মতো আসন ভাগাভাগি হয়, কোন ভোটারেকে ভোট দিতে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছায় তার সিলেক্টেড লোকেরা সংসদ সদস্য হয়ে যায়। আজব এক দেশ, আজব এক নির্বাচন? এরপরও তিনি বললেন জাতি নাকি অভিশাপ মুক্ত হচ্ছে। গতকাল তিনি তার বক্তৃতায় আরো একটি কথা বলেছেন বিরোধী দলকে উল্লেখ করে ‘তাদেরও বাড়িঘর আছে, ব্যবসা বানিজ্য আছে, স্ত্রী সন্তান আছে’ এ দ্বার তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা একজন অক্ষর জ্ঞানহীন ব্যক্তিও ভালভাবে বুঝে। যখন যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের পাইকারী হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে, বাড়িঘর লুটপাট করা হচ্ছে, বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করা হচ্ছে, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সরকার দলীয় ক্যাডাররা বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বাড়ি ঘরে আগুন দিচ্ছে, পত্রিকায় দেখলাম দিনাজপুরে বাড়িঘরে পুরুষ না পেয়ে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে সরকারের পেটোয়া বাহিনী। মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, নীলফামারীতে বাড়িতে পুরুষ না পেয়ে নারীদের গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়েছে। এই যদি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিশাপ মুক্তির নমুনা – জাতি এমন অভিশাপ মুক্তি চায় না। জাতি বরং একটি স্বাভাবিক সুন্দর সমাজ চায়। সুন্দর করে বাঁচতে চায়। সকালের সূর্য যেমন ভোরের জানান দেয়, দিয়ে বলে হে মানুষ কর্ম চঞ্চল হও আমি তোমাদের এর একটি নতুন দিনের আহ্বান জানাচ্ছি। তেমনি একটি ক্লেদ কালিমা মুক্ত হিংসা বিদ্বেশ হানাহানিমুক্ত শান্তির সোনালী সমাজের প্রত্যাশা করে প্রতিটি মানুষ। রাত পোহালেই পুলিশের গুলি, রাতের আধারে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে মানুষ খুন। খালে, বিলের রাস্তার পাশে নাম না জানা মানুষের লাশ। প্রতিদিন হাড়িয়ে যাচ্ছে চেন জানা অনেক মানুষ- গুম নামক আজব তালিকায় নাম লিখিত অসংখ্য বণি আদমের; এভাবে আর কতদিন?

বিষয়: বিবিধ

১৬০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File