সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের উপহার ঃ গ্রেফতার রিমান্ড খুন

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:০৩:১২ দুপুর



ঈদের পরের দিন রাতে সম্পূর্ণ কমান্ডো ষ্টাইলে খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মহাসচিব আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর রাতেই পুলিশ তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অবশ্য পরের দিন সেমাবার হাইকোর্টেও এক আদেশে রিমান্ড স্থগিত হয় এবং কেন রিমান্ড বাতিল হবে না এ জন্য রুল জারি কওে, সাথে সাথে আরো আদেশ দেয় যে তাকে আর কখনো রিমান্ডে নেয়া যাবে না। আদিলুর রহমান খান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার সংগঠক, শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রয়েছে তার পরিচিতি। আন্তর্জাতিক অনেক মানবাধিকার সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীর সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। এমন একজন ব্যক্তিকে ঈদের আনন্দঘন মূহুর্তে গ্রেফতার করা হয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী চল্লিশ বছরে এই সম্ভবত প্রথম কোন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার সংগঠককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের শ্লোগান এই সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের মুখে মুখে শোনা যায় কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলেই সবচেয়ে বেশী মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা সর্বাগ্রে। আইন শৃংখলা বাহিনী এবং সরকারী দলের ক্যাডারদের দ্বারা প্রতিনিয়ত প্রতি মূহুর্তে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। সরকার মূখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বিরোধী দলের জন্য সকল প্রকার গণতান্ত্রিক অধিকারের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঈদের দিনে এভাবে একজন মানবাধিকার সংগঠককে কমান্ডো স্টাইলে গ্রেফতার পুরো জাতিকে হতবাক করেছে। কোন প্রকার পূর্ব অভিযোগ ব্যতিত এবং ওয়ারেন্ট ব্যতিত এভাবে একজন সন্মানিত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার আইন ও মানবাধিকারের পিঠে শেষ কুঠারাঘাত করেছে। যিনি সব সময় সাধারণ নাগরিকদের মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেন আজ তিনিই সরকারের মানবাধিকার লংঘনের শিকার। এ যাত্রায় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা সকল প্রকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক চরিত্র ধ্বংস করেছে, বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে, নিজেদের স্বার্থে আদালতকে ব্যবহার করছে, আদালতের ঘারে বন্দুক রেখে একের পর এক নিজেদের মর্জিমত রায় নিয়ে নিচ্ছে, সরকারের সমালোচনা করতে পারে এমন সব প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রায় সকল মিডিয়া সরকারের পক্ষে হওয়ার পরেও যা দুএকটি মিডয়া সরকারের অন্যায় অপকর্ম দুর্নীতি জুলুম নির্যাতনের সমালোচনা করতো তাদের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনি মূহুর্তে একটি মাত্র মানবাধিকার সংগঠন আছে যারা অত্যন্ত সতর্কতা স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতার আলোকে মানবাধিকার লংঘনের যে কোন ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরছে তাদের মহাসচিবকে গেফতারের মাধ্যমে সরকার আরো একটি জঘন্য এবং খারাপ দৃস্টান্ত স্থাপন করলো। অবশ্য এ ধরনের খারাপ দৃস্টান্ত স্থাপনে আওয়ামীলীগ অত্যন্ত দক্ষ এবং যোগ্য। এ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা প্রকাশ করার কারণেই সরকার আদিলুর রহমান খানের উপর ক্ষুব্দ। বিশেষ করে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশে সরকারী বাহিনী এবং তার সহযোগীদের ক্র্যাকডাউন এবং তাতে অসংখ্য লোক হতাহতের ঘটনা দেশ বিদেশে আলোচিত বিষয়। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আইন শৃংখলা বাহিনীর দশ হাজার সদস্য এবং তাদের সহযোগী হিসেবে সরকারী দলের ক্যাডার বাহিনীর নারকীয় হামলায় আড়াই হাজার লোক নিহত হয়েছে বলে হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে। সরকার বলেছে হেফাজতের সমাবেশে কোন হামলা চালানো হয়নি এবং কোন মানুষ মারা যায়নি। তবে সরকারের এ বক্তব্য যে আদৌ সত্য নয় তা যে কোন বিবেকবান মানুষের বুঝতে সামান্য কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কয়েক লক্ষ লোক মাত্র দশ মিনিেিট রাতের আধারে মতিঝিল ছেড়ে চলে গেল। তবে দশ হাজার অস্ত্রধারী বাহিনী জরো করা হয়েছিল কি জন্য? তারা কি কাজ করেছে? যে লোকগুলো সারাদিন মতিঝিল ছেড়ে চলে গেল না, রাতের প্রথম প্রহরেও গেল না তারা হঠাৎ ভোর রাতে সূর্যোদয়ের আগে কেন সেখান থেকে দ্রুত চলে যেতে বাধ্য হলো? ্এ সব প্রশ্নের জবাব খুজতে গিয়ে অধিকার তথ্য পায় যে ৫ মে রাতে মতিঝিলে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অধিকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে ৬১ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিৎ করা হয়। তখন সরাস্ট্র মন্তনালয়ের পক্ষ থেকে অধিকারের কাছে চিঠি দিয়ে নিহতদের তালিকা চাওয়া হয়। নিহত পরিবারগুলোর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অধিকারের পক্ষ থেকে তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। বরং জানা গেছে এ তালিকার বাইরে আরো যত লোক ঐ দিন হেফাজতের সমাবেশে মারা গেছে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিল অধিকার। অধিকার শুধু হেফাজতের সমাবশের হত্যাকান্ডই নয় যে কোন প্রকার অন্যায়, জুলুম নির্যাতন, হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে তারা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বি ডি আর ম্যাসাকার, আইন শৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, সাভার ট্রাজেডিসহ যে কোন বিষয়ে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ এবং প্রচারের মাধ্যমে এ সকল বিষয়ে প্রতিকারের জন্য তারা নিয়মিত সভা, সেমিনার এবং জনসচেতনামূলক প্রোগ্রাম করে আসছে। কিন্তু অধিকারের এ সব কর্মকান্ড সরকারের আদৌ সহ্য হচ্ছে না। তাই সরকার তাকে ঈদের ছুটির মধ্যে গ্রেফতার করেছে। সরকারের দুর্নীতি দুঃশাসনে অতিষ্ঠ জনগণ তাদের দিক থেকে মূখ ফিরিয়ে নিয়েছে এ বিষয়টি বুঝতে পেরে সরকার একের পর এক নতুন নতুন ইস্যুও জন্ম দিচ্ছে। ব্যাপক প্রচার প্রচারণা এবং বহু আয়োজনের মাধ্যমে তারা চল্লিশ বছর আগের মিমাংশিত ইস্যুকে সামনে এনে এ দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী সংগঠনটিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে। এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমেও যখন জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করার তাদের পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না তখন তারা আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের পর সৃষ্টি করে শাহবাগী উম্মাদনা। শাহবাগীরা প্রথমে আবদুল কাদের মোল্লার ফাসি দাবী করলেও তারা তাদের অর্থ এবং সাহায্য দাতাদের মূল দাবী সকল ইসলামী ও দেশপ্রেমিক সংগঠন ও সংস্থাগুলোকে বন্ধের ফ্যাসিবাদী দাবী করতে থাকে। এরপর বের হয়ে আসে তাদের ইসলাম বিরোধী আসল রুপ। তাদের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ফুসে ওঠে সকল ইসলাম প্রেমিক জনগণ। সামনে চলে আসে হেফাজত। হেফাজতকে এক রাতের মধ্যে শেষ করে দেবার পরিকল্পনায়ই ঘটে মতিঝিলের হত্যাকান্ড। সরকার যদিও বলছে মতিঝিলে কোন হত্যাকান্ড ঘটেনি কিন্তু জনগণ সরকারের কথা আদৌ বিশ্বাস করছে না। বরং অধিকারের দেয়া তথ্য দেশ বিদেশে বহু আলোড়নের সৃষ্টি করে। তাই সরকার ক্ষিপ্ত হয় অধিকারের উপর। সরকার শুধু অধিকারের মহা সচিবেকেই গ্রেফতার করেনি। ১১ আগস্ট রোববার অধিকারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অফিসের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইলপত্র সব নিয়ে গেছে। কিন্তু একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে তাদের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে কি হত্যাকান্ডর ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যাবে? বর্তমান অবস্থা তো এমন যে জনগণ এবং সরকারের মাঝে বিরাট এক ব্যবধান তৈরী হয়েছে। বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনোমিস্ট রিপোর্ট করেছে আওয়ামীলীগের এম পিরা গণ ধোলাইয়ের ভয়ে নিজ এলাকায় যেতে চান না। পত্রিকাটি এমনকি সরকারের জনপ্রিয়তায় ধ্বস এবং জামায়াতের উপর সরকারের সব ধরনের জুলুম নির্যাতনের পরেও রাজনীতিতে তাদেও শক্ত অবস্থান, আগামী দিনের রাজনীতেতে তারেক রহমানের আগমন নিয়ে রিপোর্ট করে, পত্রিকাটি হিফাজতের সমাবেশে সরকারের ক্র্যাকডাউনের কারণে আওয়ামীলীগের জনসমর্থন ব্যাপক হাড়ে কমেছে বলেও উল্লেখ করে। লন্ডনে একটি দলীয় সভায় তারেক রহমান বক্তব্য দেয়ার পর আওয়ামীলীগ নেতারা তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। আওয়ামীলীগে শুরু হয় তারেককে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা। এরপর সরকার চমক সৃস্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে রাজনীতির মাঠে নামানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। প্রধান মন্ত্রী তার পুত্র এবং খৃস্টান পুত্রবধুকে নিয়ে ইফতার মাহফিলের মোনাজাত এবং কবর জিয়ারত পর্যন্ত করে। যা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করেনি। এরপরও যা-ই হোক জয়ের রাজনীতিতে আগমনের শুরুটা সূখকর হয়নি। তিনি রাজনীতিতে নেমেই এমন সব বক্তব্য দেয়া শুরু করেন যাতে সরকার এবং আওয়ামীলীগ উভয়ই বেকায়দায় পড়ে। আগামীতে আওয়ামীলীগ জিতবে এমন নিশ্চিৎ তথ্য তার কাছে আছে-এ বক্তব্যই তাকে বিতর্কিত করে। তার এ বক্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হয়। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পুত্রের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দেন। জয় রাজনীতিতে আসলেন, কিন্তু কোন কিছুই জয় করতে না পেরে বিদেশী বউ নিয়ে আবার আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। রাজনীতিতে তারেক রহমানের সমালোচনা থাকলেও দলের মধ্যে এবং তরুণ ভোটারদের মধ্যে তারেক রহমানের একটি ইমেজ তৈরী হয়েছে। এটাকে মোকাবেলা করার জন্য আওয়ামীলীগ জয়কে মাঠে নামিয়েছিল কিন্তু জয় কিছুই জয় করতে পারলেন না।

মূলত আগামীতে আবার যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় আসতে হবে এ চিন্তায় সরকার বেসামাল হয়ে গেছে। তাই তারা একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন। তবে আওয়ামীলীগ কোন ভাল কাজ করতে না পারলেও যে কোন অপকর্ম সৃস্টি করতে এবং নতুন নতুন ইস্যু সৃস্টি করতে তারা বেশ পারঙ্গম। রমযান মাসেই তারা অধ্যাপক গোলাম আযম এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায় ঘোষণা করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে রাখে। রমযান মাসেও চলে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান। এমনকি ঈদের ঠিক আগের দিন সরকারী দলের ক্যাডার বাহিনী চট্টগ্রামে দুজন জামায়াত কর্মীকে প্রথমে কুপিয়ে আহত করে এরপর পায়ের রগ কেটে তাদের হত্যা করে। ঠিক ঈদের দিন সতের জন জামিনপ্রাপ্ত জামায়াত কর্মীকে জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে যাদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোন মামলা ছিল না এবং কোন প্রকার ওয়ারেন্টও ছিল না। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মাওলানা আবু হানিফ। ঈদের দিন বিকেলে মাওলানা আবু হানিফকে জেল গেট থেকে গ্রেফতার করে, যিনি ইতিপূর্বে আরো চারবার আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর বাসায় আসতে পারেন নি, প্রতিবারই তাকে জেলগেটে গ্রেফতার করে নতুন মামলা দেয়া হয়েছে। মাওলানা আবু হানিফ ডগাইর দারুচ্ছুন্নাত ফাজিল মাদরাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেেছন প্রায় ১৫ বছর কিন্তু এই পনের বছরেও তার চাকুরী এম পিও ভুক্ত না হওয়ায় তিনি মাদরাসার চাকুরী ছেড়ে ডগাইর বাজারেই লাইব্রেরী কাম স্ট্রেশনারী দোকানের ব্যবসা করছেন। অবশ্য তিনি মাদরাসায় চাকুরী নেয়ার অনেক পূর্ব থেকেই ডগাইর বাজার এলাকায় অবস্থান করছেন। তার ছাত্র জীবন এখানেই কেটেছে। প্রায় পচিশ বছর যাবৎ এ এলাকায় আছেন। সদালাপী অমায়িক ব্যবহার সবার সাথে ভাল আচরণ লেন দেন সহ সকল বিষয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যাক্তি হিসেবে তিনি সবার কাছে সমাদৃত। এই ব্যক্তি দীর্ঘ ছয় মাস যাবৎ সরকারী বাহিনীর রোষানলে পড়ে কারাগারে মানবেতর জীবন যাবন করছেন। তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অন্যায় এবং গর্হিত কাজের অভিযোগ করার মতো কোন লোক অত্র এলাকায় খুজে পাওয়া যাবে না। একজন আলেম এবং ভাল মানুষ হিসেবে সবাই তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। এই ব্যাক্তিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারী জামায়াতে ইসলামী আহুত হরতালের দিন সকাল সারে সাতটায় তার ডগাইর বাজারের দোকান থেকে ডেমরা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। পরের দিন ৫ ফেব্রুয়ারী তার বিরুদ্ধে ডেমরা বাশের পুলে গাড়ী পোড়ানোর মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় । আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠায় এর পর প্রায় দীর্ঘ দুই মাস পর এপ্রিল মাসে আদালত থেকে জামিন দিলে কাশিমপুর কারাগারের গেট থেকে যাত্রবাাড়ী থানা পুলিশ তাকে আবার গ্রেফতার করে দুটি মামলা দেয়। এর এক মাস পর মে মাসে আবার জামিন লাভ করলে আবার কাশিমপুর কারাগার থেকে তাকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানার পেন্ডিং মামলায় আবার গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর জুন মাসে আবার জামিন লাভ করলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট থেকে আবার গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ আবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। রমজান মাসে দুইবার তিনি আদালত থেকে জামিন লাভ করলে দুইবারই তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ তিনি ৭ আগস্ট আদালত থেকে জামিন লাভ করলে তাকে ঈদের দিন বিকেল পাঁচটায় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করলে আবার যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। ঈদের দিন থেকে তাকে থানা হাজতেই আটক রেখেছে। বিশ্বস্ত সুত্র মতে আমরা জানতে পেরেছি তাকে ৯ আগস্ট মতিঝিল থানায় পাঠনো হয়েছিল তার নামে মামলা রুজু করার জন্য কিন্তু মতিঝিল থানা তাকে রিসিভ না করায় আবার যাত্রাবাড়ী থানায় ফেরত আনা হয়েছে গ্রেফতার করার পর আটচল্লিশ ঘন্টার বেশী পার হলেও তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। মাওলানা আবু হানিফ ডায়াবেটিক, বাতজর এবং ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন অনেক দিন থেকে। কারাগারের যাবার পর তার এ রোগগুলো আরো বেড়েছে, কানে পচন ধরে সব সময় তার কান থেকে পানি ঝড়ছে। এখন চিকিৎসার অভাবে তার শরীরে সব সময় জ্বর থাকে। তিনি যখন গ্রেফতার হন তখন তার স্ত্রী অন্তসত্বা ছিল। তার স্ত্রীও ডায়াবেটিক রোগী। মাওলানা আবু হানিফ কারাগারে থাকা অবস্থায়ই তার একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করেছে। ইতিপূর্বে যখন তাকে জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তখন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছিল যে তার স্ত্রী অন্তসত্বা, এবং একজন ডায়াবেটিক রোগী । তিনি একজন অসহায় মানুষ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, আর্থিক অনটনে পরিবার চলছে না, এমনকি তার অবর্তমানে ঋণ করে চিকিৎসা করা হচ্ছে। মাওলানা আবু হানিফ কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ১৫ রমাযান তার ছোট ছেলে (১০) রাস্তার পাশে দাড়ানো ছিল এই অবস্থায় তার উপর একটি মোটর সাইকেল উঠিয়ে দেয়া হয়, দুর্ঘটনায় ১০ বছরের ছোট ছেলের পায়ের হাড় দু যায়গা থেকে ভেঙ্গে যায়। এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা করানো হচ্ছে। সবকিছূ মিলিয়ে এক অমানবিক এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে মাওলানা আবু হানিফ এবং তার পরিবার। তার পরিবারের এ করুন অবস্থার কথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানো কিন্তু কোন কিছুতেই মন গলছে না যাত্রাবাড়ী থানার ওসি রফিকুল ইসলামের। এত সব জুলুম একটি সরকার তখনই করে যখন তারা ক্ষমতার মোহে বেসামাল হয়ে যায়। আজ সরকার ক্ষমতার মোহে বেসামাল। এরপর ঈদের ঠিক পূর্ব মুহর্তে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে তাদের নিবন্ধন অবৈধ বলে আদালতের মাধ্যমে রায় প্রদান করায়। যদিও অনেকেই বলবেন এটি আদালতের বিষয়, কিন্তু দেশের সকল জনগণ এ কথা অকপটে বলছে সরকারের ইচ্ছা এবং ইশারা ব্যতীত এ রায় দেয়া হয়নি। উদ্দেশ্য ঈদের পর আঠারো দলীয় জোট কেয়ার টেকার সরকারের দাবীতে যে এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে তা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ফেরানো। পাশাপাশি ১৮ দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরীক জামায়াতে ইসলামীকে চাপের মধ্যে রেখে তাদেরকে জোট থেকে আলাদা করা। জনগণ সরকারের এ সব কারসাজি বোঝার কারণে তারা আর সরকারের পক্ষে নেই। কিন্তু তাই বলে সরকারের এবং সরকারের উচ্ছিষ্ঠ ভোগীদের ইসলাম বিরোধী ও গণ বিরোধী কর্মকান্ড থেমে নেই ঈদের দিন সরকারের অন্ধ সমর্থক ৭১ টেলিভিশনে রাত ৮টার টকশোতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক বলেন ‘যারা মাথায় ঘোমটা দেয় তারা আর যাই হোক বাঙালী হতে পারেনা’ তার বক্তব্যের সমর্থনে আরো এক ডিগ্রি এগিয়ে ফাল্গনী দত্ত বললেন ‘হিজাব এ দেশের পোষাক নয় ওটা মরুভূমির পোষাক, পতিতারাই বোরকা পড়ে’ তাদের এ ধরণের কুৎসিত বক্তব্যের জবাব দেয়ার তেমন কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি না কারণ যারা বোরকা পড়ে না, বা হিজাব ব্যবহার করে না তারাও এ ধরণের বক্তব্য আদৌ সমর্থন করে না। ইসলামের চরম দুশমন অথবা অশ্লীলতার যারা ব্যাপক প্রসার চানা তারা ব্যতীত কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারে না। বিভিন্ন টক শোতে, নাটকে সিনেমায় এই যে ইসলাম বিরোধী বক্তব্য এর কারণ সরকার তাদের আস্কারা দেয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করে। আর তাই জনগণের প্রতি ক্ষুব্দ, বিক্ষুব্দ। জনগণের ক্ষোভ বিক্ষাভের সামান্য নজির তারা স্থাপন করেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরশন নির্বাচনে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার সমর্থক ব্যক্তিরা ভয়াবহ এবং শোচনীয় পরাজয়ের পর সরকার প্রধান বললেন যে পাঁচ সিটির জনগনের কাছে আওয়ামীলীগের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার হয় নাই তাই তারা হেড়েছে। সরকার প্রধানের এ ভুল বোধোদয়ের উক্তির কয়েকদিন পর হঠাৎ একদিন সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি সংবলিত বিলবোর্ডে সমগ্র ঢাকা শহর ছেয়ে যায়। এ বিল বোর্ড সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হয়। সরকারের যে কোন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচারের দায়িত্ব তথ্য মন্ত্রনালয়ের। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী বললেন এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। সরকারের অন্যতম মূখপাত্র যিনি হাইব্রীড নেতা হিসেবে বেশী পরিচিত মাহবুবুল আলম হানিফ বললেন বিরোধী দলকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর জন্য বিল বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। উজিরে খামাখা, রেলের কালো বিড়াল হিসেবে যার খ্যাতি রয়েছে- সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বললেন বিল বোর্ডের দেখেছেন কি? গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত বিল বোর্ড পৌছে যাবে। তবে এ বিলবোর্ড স্থাপনের পরবর্তী পরিস্থিতি সরকারের জন্য মোটেও সুখকর হয়নি। সরকারের সুখ্যাতির চেয়ে এর মাধ্যমে তাদের কুখ্যাতিই বেশী ছড়িয়েছে। সরকারের অন্যতম অংশীদার হু.মু. এরশাদ পর্যন্ত বিলবোর্ড স্থাপনের সমালোচনা করে বলেছেন এভাবে অন্যের বিলবোর্ড দখল করা ঠিক হয়নি। বি এন পি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, এ বিলবোর্ডই সরকারকে ডোবাবে। বি এন পির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি গেয়ে জনগণের মন জয় করা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন যারা রাতারাতি অন্যের বিলবোর্ড দখল করে তারা নির্বাচনের কেন্দ্র এবং ব্যালট বাক্স দখল করবে না এর নিশ্চয়তা কি? অর্থাৎ সরকার এ বিল বোর্ড স্থাপন করেও হাড়ানো জনসমর্থন ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে জনসমর্থনের শেষ তলানিটুকুও হাড়াতে বসেছেন। চতুর্দিকে সরকারের চরম সমালোচনা সরকারকে যখন ডোবাতে বসেছে তখন আদিলুর রহমান খানকে গ্রেফতার করে জনগণের দৃষ্টিকে একটু ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেস্টা করছেন। কিন্তু গ্রেফতার, গণ গ্রেফতার, রিমান্ড, তল্লাশি, মালামাল ক্রোক, টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া, বিরোধী দলের কর্মীদের খুন করা, পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া এমনকি দলের নিবন্ধন বাতিলের খড়গ ঝুলিয়ে কি সরকারের শেষ রক্ষা হবে?

courtecy : মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান

বিষয়: বিবিধ

১১৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File