ভানু বাবুর ত্রিশূল তত্ত্ব
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১৫ জুন, ২০১৩, ০৪:৩৪:২২ বিকাল
বাঙালি অভিনেতা, নাট্যকার, পরিচালক ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। ৫০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী সব বাঙালি ভানু ব্যানার্জিকে চিনবেন খুব ভালো করে। নাটক-সিনেমার পাশাপাশি তার সামাজিক বৈসাদৃশ্য তথা শ্রেণিগত বৈষম্য সম্পর্কিত মজাদার কিন্তু অর্থপূর্ণ কৌতুকগুলো বাংলাদেশীদের কাছেও খুবই আলোচিত, মজাদার ও উপভোগ্য। উল্লেখযোগ্য তার অনেক সোস্যাল হিউমারের মধ্যে একটি হচ্ছে প্রচুর উপাদেয় খাবার দেখে ভূরিভোজের পর বিশ্রাম নেয়ার পূর্বপ্রস্তুতির পরিকল্পনার সংলাপÑ ‘অহন কি খাইয়া শুই নাকি শুইয়া খাই’।
এই সংলাপ সূত্রেই মনটা ক্রমাগত বিষণœ হচ্ছে। দেশে যা চলছে তাতে শাসকশ্রেণী যে এই ‘শুইয়া খাই নাকি খাইয়া শুই’Ñ এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন, সে বিষয়ে সচেতন নাগরিক কারো মনে সন্দেহ আছে বলে মনে হয় না। ভানু বাবুর ভাষায় একজন ছিনতাইকারীর মাকে প্রতিবেশী জিজ্ঞেস করছেনÑ ‘আপনার ছেলে কী করে?’ গর্বিত মা উত্তর দিচ্ছেনÑ সে তো আমদানি-রফতানির কাজ করে। প্রতিবেশী মহিলার পুনরায় জিজ্ঞাসাÑ ‘কী কী জিনিস আমদানি বা রফতানি করে?’ উত্তরে মা বললেনÑ ‘মানিব্যাগ, গলার স্বর্ণের চেন, সোনার চুড়ি, হাতঘড়ি, মোবাইল, দামি কলম, দামি ছাতা, জামার হাতার কাফলিং পর্যন্ত। মওসুম ভালো হলে যেমনÑ দুর্গাপূজা, দোলযাত্রা, দেওয়ালি, মঙ্গল শোভাযাত্রাÑ এমন সময়ে প্রচুর আমদানি হয়। আবার রফতানিও করে দেয় দ্রুত। তখন শুধু নগদ টাকা আর টাকা। আমার ছেলের দুই হাতে রোজগার। তাই তো ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, ভগবান যদি আমার ছেলেকে মা দুর্গার মতো দশটি হাত দিত তাহলে দশ হাতে রোজগার করতে পারত।’ বর্তমান শাসক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এমন বেশুমার রোজগার শুরু হয়েছে অনেকের ২০০৯ সালের প্রথম থেকেই। সেতুতে উপদেষ্টা-মন্ত্রী-সচিব-ব্রোকারদের কার কত পার্সেন্ট রোজগার তা কানাডার আদালতেই ফাঁস হয়ে গেছে। এর ওপর কুইক রেন্টাল, শেয়ার মার্কেট, রেলওয়ে কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপÑ অপ্রতিরোধ্য টেন্ডারবাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ভর্তিবাণিজ্য তো আছেই। এখন তাদের প্রাণান্তকর প্রত্যাশাÑ কী করে দশ হাতে রোজগার করা যায়। সেই প্রত্যাশায়ই পুনরায় যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে। প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার জোর আহ্বানÑ সরকারি লোক দেখলেই বলতে হবেÑ ‘তুই চোর’ কিংবা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ‘দেশ এখন বাজিকরদের কবলে’। জনগণের তীব্্র ঘৃণা কিংবা অসন্তোষকে মরহুম শেখ মুজিবের ‘চাটার দল’-এর যোগ্য উত্তরসূরিরা থোড়াই কেয়ার করছে।
এ সম্পর্কেও অনেক কৌতুকের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য মার্কিন কৌতুক এ রকমÑ এক বিশালদেহী কৃষ্ণাঙ্গ রাতের পার্টিতে যাওয়ার পোশাক বাছাই করতে গিয়ে অনেক পোশাক দেখল, কিন্তু কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে না। বিরক্ত ও কান্ত হয়ে সে থোড়াই কেয়ার মনোভাবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। অভিজাত সমাজপতিদের পার্টি। সবাই তাকে দেখে বিব্রত, অস্বস্তিকর পরিবেশ। পার্টি শেষে ফেরার সময় এক বিদগ্ধ শ্বেতাঙ্গ তরুণী কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিটিকে পর্যবেক্ষণের পর বিরসকণ্ঠে মন্তব্য করলÑ তোমার জন্মদিনের পোশাকটি আসলেই কেয়ারলেস, কিন্তু টাইয়ের নটটা বেশ লম্বা হয়ে গেছে। নির্বিকার কৃষ্ণদেহী থ্যাংকস বলে দৃপ্ত পদক্ষেপে গিয়ে গাড়িতে উঠল। সামান্য খ্যাতিসম্পন্ন সেই কৃষ্ণাঙ্গ পরদিন থেকেই বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছিল। সুতরাং প্রাপ্তি তো আছেই, অসভ্যতায়ও। বর্তমান সরকার প্রচারযন্ত্রেও একচেটিয়া দখলদারিত্বের কৌশলে ভালো এগিয়েছে। সুযোগ পেলেই বিটিভি ২০০৬ সালের বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অনিয়ম, ত্রুটিবিচ্যুতি, অসফলতা ইত্যাদি তুলে ধরে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সরকার ভালো করবে, এটাই এসব প্রচারণার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের বক্তব্য হচ্ছে, চালনি সুইকে বলতে পারে নাÑ তোর শরীরে ছিদ্র। এ প্রসঙ্গে একটি স্বদেশী কৌতুক আছেÑ বাবা পেটের পীড়ায় কিছু দিন ধরে শয্যাশায়ী। উদ্বিগ্ন প্রতিবেশী অসুস্থ ব্যক্তির নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। একদিন ওই প্রতিবেশী অসুস্থ ব্যক্তির ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেনÑ তোমার বাবার শরীর এখন কেমন? ছেলের ঝটপট উত্তরÑ আগের চেয়ে অনেক ভালো। এখন আর কষ্ট করে বারবার বাইরের পায়খানায় নিয়ে যেতে হয় না, বরং ঘরের মেঝেতে এবং মাঝে মধ্যে বিছানায়ই ওই কাজ সারেন।’ প্রতিবেশীর প্রতিক্রিয়া তখন সহজেই অনুমেয়। বিশ্বব্যাংক বাইরের প্রতিষ্ঠানÑ যাওয়া যাবে না, তাহলে আরও দুর্গন্ধ বেরোবে। চীনের অর্থনৈতিক সহযোগিতা নেয়া যাবে নাÑ প্রতিবেশী অখুশি হবে। এডিবি-জাইকা-আইডিবি না আসুক, বাইরে না যাওয়াই ভালো। সোনালী ব্যাংকের সোনালি চাষাবাদে কত লাভজনক পণ্য উৎপাদিত হচ্ছেÑ জেসমিন আরা (হলমার্ক), রফিকুল আমিন (ডেসটিনি), জেনারেল অব: হারুন, মোদাচ্ছের আলী আরো কত কী। শেয়ারমার্কেটের দরবেশ, আজিজ খান, লোটাস কামালসহ কত সমৃদ্ধ ঘরোয়া তহবিল। সুতরাং বাইরের চেয়ে তো সুস্থ ও নির্বিঘœ। সরকারি তহবিল তসরুপের ঘাটতি পোষাতে ‘ধর জনগণ, মেরে হবো ধনবান’। বাড়াও সাত-আটবার বিদ্যুতের দাম, জ্বালানি তেলের দাম, পরিবহন ভাড়া, গ্যাসের দাম, পানির দাম, ‘ট্যাক্সবাড়াও বহুমাত্রায়Ñ লাভ হবে অগ্রযাত্রায়’। পাছে লোকে কিছু বলেÑ একদম কানে নিয়ো না। কারণ জাতি জানে আমাদের ক্যাপটেনের কানের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ভাবটা এমন, দুর্নীতি, লুটপাট কেবল বর্তমান শাসকেরা করলেই দোষ। এর আগের সরকারগুলো যে করেছে! আমরা তো তবু ঘড়ির কাঁটা কয়েকবার আগপিছ করে দিনবদলের সেøাগান ঠিক রেখেছি।’ এমন যুক্তি শুনে আবার এখন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণ করতে হয়। দুই বন্ধু চিকিৎসক হিসেবে পূর্বপুরুষদের সুখ্যাতির প্রশংসা করছে। প্রথম বন্ধু : আমার কবিরাজ ঠাকুরদার কাছে (ফাদার সাইড) একজন খাদক এসে বললেনÑ কবরেজ মশাই, একটা আস্ত পাঁঠা খেয়ে ফেলেছি; এখন একটু হজমে সমস্যা হচ্ছে। ঠাকুরদা তাকে একটা হজমির বড়ি খাইয়ে দিলেন। ওমা, আধা ঘণ্টা পর ওই ব্যক্তি এসে বললেন, আমার ুধা পেয়েছে।
দ্বিতীয় বন্ধু : তাহলে শোনো, আমার ঠাকুরদা (মাদার সাইড) ছিলেন এলএম এক ডাক্তার। তো একদিন এক ব্যক্তি এসে হজমের ওষুধ চেয়ে বললেনÑ লোভে পড়ে দুটো আস্ত পাঁঠা খেয়ে ফেলেছি। ঠাকুরদা একটা হজমির বড়ির চার ভাগের এক ভাগ তাকে খেতে দিয়ে বললেন, এটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। এরপর সারা দিন গেল, রাত গেল, পরদিন সকাল গেল। হজমির বড়ি খাওয়া ব্যক্তির পরিবার দেখে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বন্ধ করা দরজা তো আর খুলছে না। সবাই ডাকাডাকি, চিৎকার-চেঁচামেচির পর পরিবার এবং প্রতিবেশীরা মিলে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে কোনো মানুষ নেই, শুধু নখ আর চুলগুলো পড়ে আছে। এক-চতুর্থাংশ হজমির বড়িতে খাবারসহ পুরো মানুষটিই হজম হয়ে গেছে, বুঝুন ঠেলা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সম্পদ বিভাগের (ইআরডি) বেশ কয়েক মাস আগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকা। তার মধ্যে বর্তমান সরকারের গত অর্থবছরের শেষ ছয় মাসেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের পরিমাণই পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। তাহলে বাকি সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা ৪১ বছর মিলিয়ে। পুঞ্জীভূত ঋণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ভিুক থেকে শুরু করে সমাজপতি পর্যন্ত মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার টাকা। তার পরও ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুধু জন্ম হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন খাত থেকে। এখন সেই দুর্গত দিনের আশঙ্কায় শুধু আতঙ্কিত প্রহর গোনাÑ কবে পুরো শরীর হজম হয়ে গিয়ে কেবল নখ আর চুল পড়ে থাকবে। দেশ আর পতাকা পড়ে থাকবেÑ গণতন্ত্র, অর্থনীতি, অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, সেবা খাত সব কিছুই হজম হয়ে যাবে? তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বের আইকন বিল গেটসের সম্পদের সর্বশেষ প্রকাশিত অঙ্কে দেখা যায়, তা ইকুয়েডরের বার্ষিক বাজেটের এবং কেনিয়ার দুটো বার্ষিক বাজেটের সমান। বিল গেটসের একটি অনুসরণীয় উক্তি হচ্ছেÑ ‘আমাকে সৃষ্টিশীল, উদ্যমী, সৎ মানুষ দাওÑ তোমাদেরকে নতুন পৃথিবী উপহার দেবো।’ আর বিশ্বনন্দিত কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিন্দিত নোবেল লরিয়েট, আমাদের জাতীয় সম্পদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তো বলেছেন, ‘দারিদ্র্যকে আমরা জাদুঘরে পাঠাব’। বর্তমান সরকার পরিচালিত স্বদেশ কি সে পথে এগোচ্ছে, নাকি ডিজিটাল থেকে ক্রমেই অ্যানালগে ফিরে যাচ্ছে, সেটা কিন্তু গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়। সরকারি পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তোষণমূলক তথ্য-উপাত্ত তো বরাবরই ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ দেশজ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রশংসায় বিবিএস শুধু চাল উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১২ সালের যে তথ্য দিয়েছে তার সাথে যে সরকারি সংস্থা বিআইডিএস তথ্যের বিস্তর ফারাক। বিআইডিএসের মোট চাল উৎপাদনের নিট পরিমাণের সাথে বিবিএস তথ্যের প্রায় পাঁচ লাখ টন ব্যবধান। ধরে নেয়া যায় সরকারকে খুশি করার জন্য বেশি উৎপাদন দেখিয়ে কৃষিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির মাত্রা বেশি বলে দেখাতে চেয়েছে। এটাই হচ্ছে শুভঙ্করের ডিজিটাল কারচুপি। আর সরকারপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের খুশি করে কিছু উচ্ছিষ্টপ্রাপ্তির কথিত বিদ্বানের সংখ্যা কম নয়। সুতরাং শাসকদের প্রশংসা এবং সমালোচকদের গালমন্দ করার একটা প্রতিযোগিতা স্তাবকদের মধ্যে সব সময়ই থাকে। সে ক্ষেত্রে সত্যি কথা বলে বিপদগ্রস্ত হওয়া আর কম প্রশংসা এবং সমালোচকদের কম গালমন্দ করে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যেতে আগ্রহী কোনো বোকা স্তাবক পাওয়া যাবে না। ‘রাজা যত বলে পরিষদ বলে শতগুণ’। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে ড. আবদুর রাজ্জাক, নুরুল ইসলাম নাহিদ কিংবা ওবায়দুল কাদেরের মতো সংযতভাবে কথা বলার লোক হাতেগোনা। আর আওয়ামী নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধী দলের সাথে কুস্তি ও খিস্তির প্রতিযোগিতায় কে যে চ্যাম্পিয়ন, তা নিরূপণ করা বড়ই দুরূহ। তবে যৌথভাবে কয়েকজন যে চ্যাম্পিয়ন হবেন সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ফিনিশিং লাইনের কাছাকাছি একই দূরত্বে দৌড়াচ্ছেন এমন উল্লেখযোগ্যরা হলেনÑ ম খা আলমগীর, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট কামরুল, মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ। ইউরোপের প্রখ্যাত প্যারাসাইকোলজিস্ট বিজ্ঞানী লিউবির মতে, ঘৃণা ও গালি এমন এক অস্ত্র যা প্রয়োগকারী ব্যক্তির অন্তরে জ্বলন্ত আগুন হয়ে অবস্থান করে।’ না হলে সব রুচিবান সংস্কৃতিকে পায়ে দলে সরকারপ্রধানসহ সাঙ্গোপাঙ্গরা যে ভাষায় এবং অঙ্গভঙ্গিতে বিরোধীদলীয় নেত্রী, তার পরিবার, শহীদ জিয়াউর রহমানকে ঘৃণা ও অশোভন বাক্যবাণ নিক্ষেপ করেন তার উদাহরণ নিকট বা দূর অতীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একজন মানুষের রুচি, শালীনতা, শিষ্টাচার, কথাবার্তা তথা আচার-আচরণে সেই মানুষটির পরিবার ও বংশস্তরের একটা ধারণা পাওয়া যায়। শ্যামলা কিংবা কালো কোনো মহিলা পরম যতেœ দীর্ঘ সময় পার্লারে রূপচর্চা করে সুন্দরী হতে পারে, কিন্তু কিছু সময় বৃষ্টিতে ভিজলেই বেরিয়ে আসবে আসল রূপ। যেমন ৩০ মার্চ বগুড়ায় ১৪ দলের জনসভায় বেগম মতিয়া চৌধুরী ইসলামপ্রিয় দলগুলোকে উদ্দেশ করে বললেনÑ ‘নারীনেতৃত্ব হারাম আর কাছে বসলে আরাম’। তার অঙ্গের ভঙ্গিমা করে চোখ বন্ধ করে কথাটা তিনি এমনভাবে বলেছেন যাতে দর্শক-শ্রোতার মনে হয়েছে, তিনি নিজেই যেন এক ধরনের অবাঞ্ছিত সুখানুভব করছেন। একই জনসভায় নাসিম উচ্চকণ্ঠে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী হচ্ছেন বেদের মেয়ে জোছনা। তিনি জামায়াত নামক সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে চলছেন। নাসিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন করে রাজাকারের তালিকা হলে সে তালিকায় এক নম্বরে থাকবে জিয়াউর রহমানের নাম। তিনি আরো বলেছেন, রোজ কিয়ামত হবেÑ কিন্তু কেয়ারটেকার সরকার আর হবে না। বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী তো বরাবরই একটু বড়গলা ও উঁচুগলার। এই তো সে দনও তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বললেনÑ আপনার পেয়ারে পাকিস্তানে চলে যান, আপনার দিল কা পেয়ার নিয়ে। স্পষ্টবাদী নির্ভীক সাংবাদিক নির্মল সেন বেঁচে থাকলে হয়তো লিখতেনÑ যে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দেয়ার জাতি আমরা, রক্তের আখরে বাংলা বর্ণমালা লিখে যে উর্দুকে আমরা ত্যাজ্য করলাম, আজ বাংলাভাষাভাষী মানুষের স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে সে ভাষার এই বারংবার উচ্চারণ ভাষা আন্দোলনের ন্যায় শিষ্টাচারী বাংলা ভাষার আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় প্রধানমন্ত্রী কথায় কথায় বলেন, আওয়ামী লীগ মতায় এলে বাংলাদেশের মানুষ কিছু পায়। এক দিক থেকে ইতিহাস কিন্তু তাই বলে। ১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগের সামনের সময় বাংলাদেশের মানুষ অনেক কিছু পেয়েছে। পেয়েছে দুর্ভি, লুটপাট, রীবাহিনী, লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেয়া, বাকশাল নামক স্বৈরশাসন, ৪০ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, তাদের বাড়িঘর, সহায়সম্পত্তি দখল, সিরাজ সিকদার হত্যার মাধ্যমে ক্রসফায়ারের সূচনাসহ কত কিছু। আবার ’৯৬-২০০১ সালে পেয়েছে ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর সন্ত্রাসী জনপদ, অর্ধশতাধিক দলীয় গডফাদার, সারা দেশে বিরোধী দল নির্যাতনের অসংখ্য টর্চার সেল, যশোরে উদীচী হত্যাকাণ্ড, রমনা বটমূলে বোমা হামলায় অসংখ্য নিহত, শেয়ারমার্কেট লুটপাটসহ কত কিছু। এবার আওয়ামী মতাকালে পেয়েছে অসংখ্য দলীয় বাজিকর (গলাবাজি, চাপাবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি), ইভটিজিংয়ে আত্মহনন, শিক পেটানো, সিভিল ও পুলিশ কর্মকর্তাদের পেটানো, একই ফাইওভার একাধিকবার ভেঙে পড়ে মানুষ নিহত, পদ্মা, রেলওয়ে দুর্নীতি, শেয়ারমার্কেট লুটপাটের মহোৎসব, কুইক রেন্টাল, হলমার্ক, ডেসটিনি কত কী। গুম, খুন, নির্যাতন, হামলা-মামলা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দলীয় খুনিদের ফাঁসির আগেই রাষ্ট্রপতি মা করে দেয়ার উদাহরণও আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অতএব, দেশবাসী তো পাচ্ছে। গুলি করে পাখির মতো নারী-পুরুষ-শিশু হত্যার ইতিহাসও মানুষ পেয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ৩০ মার্চ বগুড়ার জনসভায় বললেনÑ ‘রোজ কিয়ামত হবে, কিন্তু কেয়ারটেকার সরকার আর হবে না।’ এটার বিশ্লেষণ কী? দুটো ব্যাখ্যা থাকতে পারে, প্রথমটি হচ্ছেÑ ‘রোজ কিয়ামতের মহাদুর্যোগের চেয়েও কেয়ারটেকার সরকারকে আওয়ামী লীগ বেশি ভয় পায়’। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑ ‘রোজ কিয়ামতের পরও মহাজোট সরকার এবং আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে; মতায় থাকবে।’ তখনো কেয়ারটেকার সরকার দেয়া হবে না। চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বক্তৃতা। দেশ তো কোন ছার, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও তারা অটল। এবার আসি ভানু বাবুর ত্রিশূল তত্ত্বে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় রোগী দেখছেন তার চেম্বারে। এক রোগী এসে তার সারা জীবনের বিভিন্ন রোগের বর্ণনা শুরু করেছেন। তার প্রথম রোগ হয়েছিল কালাজ্বর, তারপর ন্যাবা, এরপর জন্ডিস, পরে টাইফয়েড, ক্রমেই যক্ষ্মা, লিভার জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, হার্টের সমস্যা, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব মনোযোগসহকারে সব শুনে ভানু বাবু তার স্ত্রী কাম-সহকারীকে ডাকলেনÑ সুনয়নী, মহিলা কণ্ঠে জবাব এলোÑ আজ্ঞে, কর্তা। ডাক্তার ভানু সুনয়নীকে উদ্দেশ করে বললেনÑ ‘আলমারির পেছন থেকে ত্রিশূল নিয়ে এসে বাবুর কোমর থেকে পিঠের ওপর শক্ত করে বেঁধে দাও। যাতে ত্রিশূলটা মাথার ওপর দিকে খাড়া হয়ে থাকে।’ রোগী তো মহা আতঙ্কিত, বললÑ সে কি মশাই, প্রেসক্রিপশন নেই, ওষুধ নেইÑ ত্রিশূল কেন? ভানু বাবুর অকপট সরল স্বীকারোক্তিÑ ‘এতণ ধরে আপনার সারা জীবনের বিভিন্ন রোগের যে আদ্যোপান্ত বর্ণনা শুনলামÑ তাতে আমি নিশ্চিত যে, কোনো অসুখ-বিসুখে আপনার মৃত্যু হবে না।’ জীবনহানির একমাত্র আশঙ্কা বাকি থাকল বজ্রপাতে। তো ওইটাও ‘আর্থিং’ করে দিতে বললাম। রোগী তো চেয়ার ছেড়ে উঠে ভোঁ-দৌড়।
তাই বলছিলাম, রোজ কিয়ামতেও যদি কেয়ারটেকার সরকার আর না হয় (নাসিম সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী) তবে কি ভানু বাবুর ত্রিশূল তত্ত্বে হবে? বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশটির একটি বেসরকারি টেলিভিশনের পরিচিতিমূলক বিজ্ঞাপনে বলা হয়Ñ ‘জীবন মানেই জি-বাংলা’ (ZEE)। কিন্তু আসলে জীবনের সংজ্ঞা ও মর্মার্থ কি এতই ুদ্র?
লেখক : আইনজীবী, জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি ও সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
সুত্র ঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত
বিষয়: বিবিধ
১২৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন