বেকার রায়হনের সততার মূল্য আছ কিন্তু চাকুরী দেয়া যাবে না
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ১২ জুন, ২০১৩, ১০:৫৬:৪২ রাত
রায়হান (পরিচয় গোপন করার স্বার্থে ছদ্মনাম) ছোট বেলা থেকে ভাল ছাত্র, সাহসী, জেদী এক কিশোর, স্কুল আঙ্গিনা পেড়িয়ে কলেজ অতপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণী অর্জন। রায়হান মাস্টার্স পাস করার পর বহু যায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে। ইন্টারভিউতে টিকলেও কোন এক অজানা কারণে তার আর চাকুরী হয় না। পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে সেই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছে। অন্য ভাইয়েরা ব্যবসা করে যার যার ক্ষেত্রে সফল। কিন্তু পরিবারের সর্বোচ্চ শিক্ষিত তরুণটি বেকার। সবাই কেমন যেন তার দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকায়। ইতিমধ্যে পিতা মাতা বেকার রায়হানকে এক উচ্চ বংশের ধনী পরিবারের মাস্টার্স পাশ মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে বৌ ঘরে আনা হয়েছে। এতদিন তবু একা ছিল, কোন সমস্যা ছিল না। এখন দুজন মানুষ-ঢাকা শহরের পাশেই রুপগঞ্জের এক গ্রামে তার বসবাস। নিজের গ্রাম থেকেই রায়হান প্রতিদিন ঢাকা শহরে যাতায়াত করে। নিজের বাড়িতে থেকেই লেখা পড়া করেছে। থাকা খাওয়ার তার কোন খরচ না থাকলেও বিয়ের পর নিজের হাত খরচ নতুন বৌয়ের কোন আবদার না থাকার পর কিছু খরচ আছে যা হিসেব ছারাই হয়ে যায়। রায়হান হণ্যে হয়ে ঘুরছে একটি চাকুরীর জন্য। প্রথমে কেউ কিছু না বললেও এখন রায়হান টের পায় অনেকেই অনেক কথা বলতে চায়। তার মা- বাবা, ভাই-বোন, ভাইয়ের বৌ, স্ত্রী, শশুর বাড়ীর লোকজন--- সবার প্রশ্ন বোধক দৃষিট দেখে রায়হান বুঝতে পারে সবাই কি বলতে চায়। রায়হান ইন্টারভিউতে ফার্ষ্ট হয় কিন্ত তার চাকুরী হয় না। রায়হানের স্বপ্ন ছিল বি সি এস দিয়ে বড় অফিসার হবে। একবার লিখিত পরীক্ষায় পাশও করেছিল কিন্তু ভাইবার পর তার আর ডাক পড়েনি। সবাই বলছে তুমি তো সরকারী দলের লোক নও তুমি টিকলেও তোমার চাকুরী হবে না। এরপরও রায়হান চেষ্টা চালিয়ে যায়-- সরকারী বেসরকারী বহু যায়গায় সে ইন্টারভিউ দিতে থাকে। ২০১৩ সালের জুন মাসে একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে আইন কর্মকর্তা হিসেবে তার চাকুরী হয়। তিন দিন অফিস করার পর রায়হান বুঝতে পারে যে এখানে যারা চাকুরী করে তাদের বেতনের চেয়ে এক্সট্রা আয় অনেক বেশী। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা যার বেতন ত্রিশ হাজার টাকা- কিন্তু তিনি গুলশানে চল্লিশ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকেন। চতুর্থ দিন কোম্পানীর একটি মামলার শুনানী ফিল আট'শ কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে। এ মামলায় তার কোম্পানী বিবাদী- বাদী পক্ষ কোম্পানীর কর্মকর্তাদের হাত করে ফেলেছে। তারা প্রতিটি হাজিরা এবং শুনানীর দিন রায়হানের কোম্পানীর কর্মকর্তাদের বড় অংকের সম্মানী দিয়ে আসছে। চাকুরীতে নতুন যোগদান করা রায়হানের জন্যও বড় অংকের একটি খাম প্রস্তুত ছিল। কিন্ত রায়হান তা গ্রহণ করেনি। রায়হান তা গ্রহণ না করায় তার শত্রুর সংখ্যা এখন অনেক। পরদিন থেকে তার আর অফিসে যাওয়া হয় না। তবে শততার কোন মূল্য এ দেশে থাকবে না্। সৎ ব্যক্তিরা কোথাও টিকতে পারবে না??? এ প্রশ্ন আজ রায়হানসহ অনেকের।
বিষয়: বিবিধ
১০৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন