মিরাজের শিক্ষা - চৌদ্দ দফা মূলনীতি অনুসরণ করার মধ্যেই সমাজ ও রাস্ট্রীয় জীবনে সূখ শান্তি,কল্যাণ ও নিরাপত্যা ফিরে পাওয়া সম্ভব
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ০৬ জুন, ২০১৩, ০৪:৫২:১৫ বিকাল
শব ই মিরাজ বিশ্বাসী হৃদয়ের অনুভূতিতে জাগরুক একটি বাস্তব বিষয়। শব ই মিরাজ কতটুকু বাস্তবে কতটুকু কল্পনায় তার পক্ষে বহু যুক্তি উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু যুক্তির চেয়ে বিশ্বাস ই বড় বিষয়। যুক্তির পথ যেখানে রুদ্ধ হয় বিশ্বাসের যাত্রা সেখানে শুরু হয়। মানুষের চেষ্টা যেখানে শেষ হয় আল্লাহর রহমত সেখানে শুরু হয়। আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকে আল্লাহ ডেকে নিয়ে গেছেন তার সৃষ্টির নিদর্শন দেখানোর জন্য। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃএর জীবনে যে সময়ে মিরাজ সংগঠিত হয়েছে তখন আজকের আধুনিক যুগের মতো স্পেস শিপ, বিমান, রকেট টর্পেডো আবিস্কৃত হয়নি। কোন দ্রুতগামী যানে কোথাও যাওয়া যায় এ ধারণা ছিল তখন কল্পনারও অতীত। সেই সময়ে নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন ঘোষণা করলেন তিনি এক রাতের মধ্যে বায়তুল মাকদাস, সিদারাতুল মুনতাহা, সপ্ত আকাশ, জান্নাত জাহান্নাম সব কছু দেখে এসেছেন তখন মক্কার অবিশ্বাসী মানুষগুলো এ বিষয়টি নিয়ে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এবং তার প্রচারিত আদর্শ আল ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন করে অপপ্রচার শুরু করলো। কিন্তু বিশ্বাসী মানুষগুলো যখন শুনলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ সত্যিই এ কথা বলেছেন তখন তারা বিনা বাক্যব্যয়ে এ কথা মেনে নিলেন। আর আল্লাহ যখন ওহী নাজিল করলেন “ পরম পবিত্র মহিমাময় সেই মহান সত্বা যিনি তাঁর স্বীয় বান্দাকে এক রাত্রে পরিভ্রমণ করালেন যার চতুর্দিকে আমার রহমত ঘিরে রেখেছিল - যেন আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। তিনি সব কিছু শোনেন এবং দেখেন।” ( আল কুরআন:সূরা বনী ইসরাইল) এ ওহী নাজিলের পর মুসলমানদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো। শব ই মিরাজ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নবুয়াতী জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শব ই মিরাজের মাধ্যমে তিনি যেমন দেখে এসছেন আল্লাহর সব নিদর্শন ঠিক তেমনি তার পরবর্তী নবুয়াতী জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে মদিনা গমনের পর যে রাসট্র পরিচালনার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হচ্ছে তার প্রশিক্ষণ আল্লাহ তার নবীকে দিয়েছেন। মিরাজ সংগঠিত হওয়ার পর আল্লাহ যে ওহী নাজিল করেন তাতে মুসলমানদের সামগ্রিক জীবন পরিচালনার জন্য চৌদ্দটি মুলনীতি নির্ধারণ করে দেন। যা বর্ণিত হয়েছে সূরা বণী ইসরাইলে। আল্লাহ বলেন। “ তোমার প্রভুর সিদ্ধান্ত যে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো দাসত্ব, আনুগত্য, উপসনা করবে না। আর পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করবে। যদি তাদের একজন অথবা দুইজন বৃদ্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকেন তবে তাঁদের সাথে উঁহ শব্দটা পর্যন্ত করবে না। তাদের তুচ্ছ জ্ঞান করে ধমক দিয়ে কথা বলবে না। তাদের সাথে মিষ্টি ভাষায় কথা বলবে। তাদের সামনে যাবে অত্যন্ত বিন¤্রভাবে ও দয়ার্দ্র চিত্তে আর বলবে হে প্রভূ! তাদেরকে সেইরুপ প্রতিপালন করো যে রুপে তারা আমাদেরকে ছোট বেলায় লালন পালন করেছিলেন। তোমার প্রভূ তোমার অন্তরের খবর রাখেন। তোমরা যদি সৎ হয়ে যাও তবে জেনে রাখো আল্লাহ প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। আপন আত্মীয় স্বজনের হক ( পাওনা) বুঝিয়ে দাও এবং মিসকিন ও পথিকদেরও হক বুঝিয়ে দাও। আর অন্যায় ভাবে অর্থ ব্যয় করো না। তোমরা হাতকে না একেবারে ঘারের সঙ্গে বেঁধে ফেলবে আর না একেবারে খুলে দিবে। (বখিল হয়োনা এবং অমিত্যব্যয়ী হয়ো না) জানবে যারা অমিত্যব্যয়ী তাদেরকে একদিন অনুতপ্ত হতে হবে। অবশ্য রিযিক বন্টনের ব্যাপারে কাউকে কিছু বেশী ও কাউকে কিছু কম দিয়েছেন। কারণ এর মধ্যে বান্দার জন্যে এমন কিছু কল্যাণ রয়েছে যা সুক্ষ্মদর্শী আল্লাহ ই তার কবর রাখেন। গরীব হয়ে যাওয়ার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমি তারেকেও রিজিক দেবো এবং তোমাদেরকেও রিজিক দেবো। নিশ্চয়ই সন্তান হত্যার কাজ খুবই গুরুতর অপরাধের কাজ। এবং তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। অবশ্যই তা অশ্লীল কাজ এবং ধ্বংসের পথ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তোমরা এই আদেশ মেনে চলবে যে কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে না। কারণ মানুষের জীবন আল্লাহর নিকট অতি পবিত্র। তাই লোক হত্যা তিনি হারাম করেছেন। কিন্তু কেউ বিচারে মৃতদন্ডের উপযোগী হলে তাকে হত্যা করায় কোন দোষ নেই। নিহত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন যেন তাকে হত্যাকে অবলম্বন করে বাড়াবাড়ি না করে, কারণ বিচার তার স্বপক্ষে রয়েছে। কখনও এতিমের মাল স্পর্শ করবে না কিন্তু এতিম যতক্ষণ পর্যন্ত জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার মতো বয়সে না পৌছে ততদিন পর্যন্ত তার দেখাশোনা করা উত্তম। ওয়াদা চুক্তি ও অঙ্গীকার পূরণ করবে। অবশ্যই মানুষ তার চুক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। যখন পাত্র দ্বারা মাপবে তখন পুরা মাপবে এবং সঠিক ও ত্রুটিহীন পাল্লায় উচিৎভাবে ওজন করবে এবং বন্টনের ক্ষেত্রে ন্যায় ভিত্তিকভাবে কাজ করবে। এটাই সঠিক পদ্ধতি। আর এ ব্যবস্থা অত্যন্ত ভাল ব্যবস্থা। যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার উপর অমূলক ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করবে না। নিশ্চয়ই তোমার দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও চিন্তাশক্তি ব্যবহারের ব্যাপাওে তুমি জিজ্ঞাসিত হবে। যমীনের উপর দিয়ে কখনো গর্ব করে চলাফেরা করো না। তোমরা তোমাদের পদভারে যমীন ফাড়তে পারবে না। এবং পাহাড়ের সমান উচুও হতে পারবে না। ” ( আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাইল) এখানে যে চৌদ্দটি মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে-
১. আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে প্রভূ,মালিক,রিজিক দানকারী, আইন দাতা বিধান দাতা মানা যাবে না। তার জাত ও সীফাতের সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না। কাউকে অল্লাহর সমান, সমকক্ষ, অথবা তার দেয়া বিধানের বিপরীত কোন বিধানকে এর সমকক্ষ অথবা এর চেয়ে ভাল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
২. পিতা মাতার সাথে সর্বোত্তম আচরণ করতে হবে। সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সব প্রয়োজন পূরণ করতে হবে। তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। তাদের জন্য আল্লাহর শেখানো ভাষায় তার দরবারে দোয়া করতে হবে।
৩. আত্মীয় স্বজনের অধিকার ও হক আদায় করতে হবে।
৪. দরিদ্র,মুসাফির, মিসকিনদের অধিকার আদায় করতে হবে।
৫. অসহায় মানুষের অধিকার আদায় করতে হবে। মানবতার সেবা করতে হবে।
৬. অপব্যয় অপচয় থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহর রাহে অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃপণতা করা যাবে না।
৭. রিযিক পাওয়া যাবে না অথবা অর্থ সংকটে পড়বো এই ভয়ে সন্তান হত্যা ভ্রুণ হত্যা করা যাবে না ( আধুনিক যুগে ঔষধ প্রয়োগ করে ভ্রুণ হত্যা করা হয়- যাকে বলা হয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি)
৮. সকল প্রকার অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। যিনা ব্যভিচার প্রসার লাভ করে অথবা এ ধরণের কোন আশংকা দেখা দিতে পারে এমন যে কোন কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।যেমন অশ্লীল গান বাজনা, সিনেমা নাটক, ছবি, উপন্যাস গল্প, ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে।
৯. অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না।
১০. এতিমের মাল স্পর্শ করা যাবে না। তবে কোন নাবালেগ এতিমের মাল কারো দায়িত্বে থাকলে ঐ এতিম সাবালেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তার সম্পদ হেফাজত করতে হবে।
১১. ওয়াদা এবং চুক্তি পূর্ণ মাত্রায় পূরণ করতে হবে। ওয়াদা চুক্তি ভঙ্গ করা যাবে না।
১২. অনুমান এবং ধারণার বশবর্তী হয়ে কোন বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করা যাবে না।
১৩. ওজনে এবং মাপে কম দেয়া যাবে না। জাতীয় সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে পূর্ন ইনসাফ করতে হবে। দল গোষ্ঠী অথবা আত্মীয়তার কারণে কারো পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।
১৪. গর্ব অহংকার করা যাবে না। যমীনরে উপর দম্ভভরে চলাফেরা করা যাবে না।
মানবতার মহান মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ মিরাজ থেকে আসার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ওহী নাযিল কওে উপরোক্ত যে নীতিমালা দিয়েছেন তা যদি আমরা আমাদেও জীবনে, সমাজে এবং রাস্ট্রে মেনে চলি তবে ই মিরাজের প্রকৃত শিক্ষা কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এবং আমদেও সমাজ ও রাস্ট্র হবে একটি আদর্শ সমাজ ও আদর্শ রাস্ট্র।
বিষয়: বিবিধ
১৮০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন