মতিঝিলের গণহত্যা ঃ সরকারের গণবিরোধী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ০৫ জুন, ২০১৩, ০৮:৫৮:৪৭ রাত



উদ্ধত হায়েনার বিষাক্ত ছোবলে ক্ষত বিক্ষত আজ বাংলাদেশ। মানবতা, মনুষত্ব, মানবাধিকার এখানে এখন কিতাবী ভাষা, বাস্তবে যার কোন মূল্য নেই। জীবন এখন মূল্যহীন এক বস্তু। সর্বত্র বিভিষীকা, আতংক, ভয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক গণহত্যা চলছে। যে গণহত্যার যাত্রা শুরু হয়েছে বি.ডি.আর. হত্যাকান্ডের মাধ্যমে এরপর তাজরীন গার্মেন্টেসে হত্যাকান্ড, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর গণহত্যা, সাভারের গণহত্যা এবং ৬মে দেশবাসী অনুভব করলো মতিঝিলের গণহত্যা। ৬মে রক্ত চোষা ড্রাকুলা যেন ঝাপিয়ে পড়েছিল মতিঝিলের ঘুমন্ত মানুষগুলির উপর। গভীর রাতে মতিঝিলে হাজার রাউন্ড গুলি, টিয়ার সেল, গ্রেনেড, রাবার বুলেটে আকাশ বাতাস বারুদের গন্ধে ঝাঝালো হয়ে গিয়েছিল। মানুষের চিৎকার, আহাজারি, আর্তনাদ কোন কিছুই দমাতে পারেনি হামলাকারীদের। যখন একের পর এক লাশ পড়ছে তখন হায়েনার অট্টহাসি হাসছে শাসক মহল। ঘাম দিয়ে জর ছাড়া রোগীর মত তাদের অট্টহাসি আর দন্ত বিকশিত চেহারা দেখেছে দেশবাসী। মানুষের ঘরে ঘরে কান্না। অসংখ্য মানুষ নিখোজ। লাশগুলোর কোন খোজ নেই, কিন্তু সরকার বিজয়ের হাসি হাসছে। শাসক মহলের এ বিজয় কোন শত্রু সৈন্যের বিরুদ্ধে নয়। তারা যে দেশের শাসক সেই দেশের নিরাপরাধ, নিরস্ত্র, ঘুমন্ত জনতার উপর পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়ে মানুষ খুনের নেশায় আজ তারা মদমত্ত। তারা ভাবছে খুনের যে রাস্তা তারা উম্মোচন করেছে এ পথ ধরেই চিরস্থায়ী ক্ষমতার বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। হেফাজতে ইসলামের অবরোধকে প্রতিহত করার জন্য সরকার গণহত্যার এই নরাকীয় পথ বেছে নেয়। সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুণঃস্থাপনসহ ১৩টি দাবীতে হেফাজতে ইসলাম ৫ মে ঢাকা অবরোধর ডাক দেয়। বাংলাদেশের মানুষ এ ধরনের সর্বাত্মক অবরোধ আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। আবরোধে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঢাকা। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশদ্বারে লাখ লাখ মানুষ শামিল হয়েছিল সে দিন। সরকার যখন বললো হেফাজতের কোন দাবী মানা হবে না, সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা ছাড়তে হবে। অপরদিকে দুপুর থেকেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে পুলিশ, র‌্যাব ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের অব্যাহত হামলা চলছিল যার কারণে হেফাজতের আমীর সমাবেশে আসতে পারেননি। সমাবেশে হামলা এবং সরকারের পক্ষ থেকে সকল দাবী প্রত্যাখ্যান করায় হেফাজতের পক্ষ থেকে টানা অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থান কর্মসূচীতেই চলে ইতিহাসের ভয়াবহ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। এ হত্যাযজ্ঞ ছড়িয়ে পরে কাাঁচপুর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং বাগেরহাট পর্যন্ত। হেফাতের দাবী অনুযায়ী তিন হাজার আলেম ওলামা এবং সাধারণ মানুষ সেদিন মতিঝিলে শহীদ হয়েছে। যাদের লাশ সরকার রাতের আধারে ময়লার ট্রাকে করে নিয়ে গুম করে ফেলেছে। বিরোধী মত দলন এবং বিরোধী মানুষকে হত্যা আওয়ামীলীগের চিরন্তন অভ্যেস। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সময়ের শাসনকালে তাদের গড়া রক্ষী বাহিনী ও লাল বাহিনীর হাতে চল্লিশ হাজার বিরোধী নেতা কর্মী নিহত হয়েছে। জাসদ নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার পর মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে বলেছিলেন, কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? আজো সরকার সে পথেই হাটছে। একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের অবরোধকে সরকার যে ঘৃণ্য এবং পৈশাচিক কায়দায় দমন করলো, যেভাবে গণহত্যা চালালো তাতে শুধু দেশে নয় আজ বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ গণহত্যার জনপদ হিসেবে চিত্রিত হচ্ছে। হেফাজতের শান্তিপূর্ণ অবস্থান এবং অবরোধের সংবাদ আজ সকল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে বিকৃতভাবে। দুটি টিভি চ্যানেলে হামলা চালিয়ে তা বন্ধ করে দেয়ার পর আর কার বুকের পাটা আছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করে? এখন সরকারের বাধা ছকেই সবাই সংবাদ প্রচার করছে। এরপরও আমাদের দেখা চোখে, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় এবং দু’একটি সংবাদ মাধ্যমে যতটুকু সংবাদ পৌছেছে তা সংক্ষিপ্ত আকারে পর্যালোচনার দাবী রাখে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাত্মক অবরোধ ঃ ফজরের নামাজের পর পরই ঢকার সব ক’টি প্রবেশদ্বার লাখ লাখ ঈমানদার তৌহিদী জনতার পদভার আর শ্লোগানে মূখরিত হয়ে ওঠে। ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার কাঁচপুর এবং ডেমরা চৌরাস্তায় সকাল ৬ টার মধ্যে কয়েক লাখ নবী প্রেমিক মানুষ সমবেত হয়। কাঁচপুর থেকে শুরু করে কাঁচপুর ব্রীজ, শিমরাইল, চিটাগাং রোড, সানারপাড়, সাইনবোর্ড হয়ে এ জন¯্রােত পৌছে যায় শনির আখড়া পর্যন্ত। ডেমরা চৌরাস্তার অবরোধ মূলত শুরু হয়েছে তারাবো বিশ্ব রোড থেকে, তা ডেমরা ব্রীজ হয়ে ডেমরা চৌরাস্তা, ষ্টাফ কোয়ার্টার, বামৈল পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে বুড়িগঙ্গা ব্রীজ হয়ে অবরোধ চলে যায় ধলেশ্বরী ব্রীজ পর্যন্ত।

টঙ্গী থেকে অবরোধের সীমানা ছড়িয়ে পরে মহাখালী পর্যন্ত। গাবতলী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত। অবরোধে শুধু ঢাকা নয় মূলত সারা দেশ অচল হয়ে পরে। ঢাকার সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অভিজ্ঞজনেরা সকলেই বলছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সর্বাত্মক অবরোধ আর কখনো হয়নি। এরপরও সরকার কেন এই লাখ লাখ জনতাকে অবজ্ঞা করছে, তাদের উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। সরকারের বোঝা উচিৎ জনতার শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি। যেই জনগণের উপর তারা গুলি চালাচ্ছে তাদের দোহাই দিয়েই তারা ক্ষমতায় এসেছে। গণহত্যা চালিয়ে জনতার এই ¯্রােতকে রোখা যাবে না।



অবরোধ প্রতিহত করতে প্রস্তুত ছিল আওয়ামীলীগ ঃ অবরোধ প্রতিহত করতে প্রস্তুত ছিল আওয়ামীলীগ। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অবরোধর ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তারা অবরোধকারীদের ঢাকায় প্রবেশ করতে দিবে না। অবরোধকারীদের প্রতিহত করার জন্য তাদের দলীয় ক্যাডাররা অস্ত্র-সস্ত্রের মজুদও গড়ে তুলেছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকার সব কয়টি প্রবেশদ্বারে আইন শৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বাঁধা দিবে। কিন্তু জনতার যে বাধভাঙ্গা ¯্রােত, এবং স্মরণকালের সর্বাধিক উপস্থিতিতে যে অবরোধ সংঘটিত হয়েছে তাতে সরকার দলীয় ক্যাডারদের প্রতিহত করার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপর তারা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাদের দলীয় অফিসের সামনে। এখান থেকে যিনি এসছেন তিনিই আওয়ামী ক্যাডারদের হামলার শিকার হয়েছেন। সারাদিন এভাবে গুপ্ত হামলার পর রাতের আধারে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির সাথে হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয় দুর্ধর্ষ আওয়ামী ক্যাডাররা।

আওয়ামীলীগ আফিসে টর্চার সেল ঃ অবরোধ চলাকালে আওয়ামীলীগের অফিসটি পরিণত হয় একটি টর্চার সেলে। যারা একাকী বা তিন চারজন করে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়ার দিক থেকে হেফাজতের সমাবেশে এসেছেন তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আওয়ামীলীগ অফিসে। সেখানে নেয়ার পর বেশ কয়েকজনকে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন অনকেই। যারা আহত অবস্থায় ফেরত আসতে পেরেছেন তাদের ঘড়ি, মোবাইল, টাকা পয়সা সবই রেখে দিয়েছে আওয়ামী লুটেরা বাহিনী। এখানে নির্যাতন থেকে বেঁচে আসা বেশ কয়েকজন বলেছেন যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের হাত, পা, মাথা চোখ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অনেককে চরম নির্যাতন করার পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আহত লোকগুলিকে কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেছে আবার কাউকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে।



বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে হামলা ঃ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে দিনভর পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। গুলি, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেডের হামলা চলে দিনভর। হামলার জন্য পুলিশ এবং আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী বায়তুল মোকাররম মসজিদকে বেছে নেয়। তারা মসজিদের ভিতর থেকে কিছুক্ষণ পর পর গুলি করেছে এবং টিয়ার সেল চার্জ করেছে। তাদের হামলায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত এক বিভিষিকাময় পরিবেশ বিরাজ করে সারাটি দিন। দুপুর ১২ টা থেকেই সরকারী বাহিনী এবং আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর এ হামলা চলে। তাদের হামলায় ৫মে রাত আটটার মধ্যে ৬ জন হেফজত কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। কেন কি জন্য হামলা তার কোন জবাব সরকার দেয়নি।

ফুটপাতে আগুন লুটপাট-নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ঃ হেফাজতের নেতা কর্মীদের উপর হামলার পাশাপাশি আওয়ামী ক্যাাডাররা ফুটপাতে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রাখে। ‘দেবাশীষ’ নামে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিভিন্ন দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। বিভিন্ন মিডিয়ায় দেবাশীষের কুরআন শরীফে আগুন দেয়ার ছবি প্রচার করেছে। অনুরূপভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ব্যাংকের বুথে ভাংচুর, লুটপাট করে হেফাজতের নামে কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের টার্গেট ছিল স্বর্ণের দোকান লুটপাট করা এ জন্য স্বর্ণের দোকান গুলোর সামনে তারা বেশ কয়েকবার আগুন দেয়। কিন্তু মিডিয়ার ক্যামেরা থাকার কারণে তারা তাদের জঘণ্য মনোবৃত্তির শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারে নি। যদিও সরকারের চাপে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী হয়ে সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলো প্রচার করছে হেফাজতের কর্মীরা আগুন দিয়েছে। কিন্তু পত্রিকায় যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ফেইসবুক ও ব্লগে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাদের গুলিরত ছবি, আগুন দেয়ার ছবি, লুটপাটের ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। যারা প্রচার করছে হেফাজতের কর্মীরা আগুন দিয়েছে ও লুটপাট করেছে তারা এর কোন প্রমাণ দেখাতে পারে নি।

আরো একটি বিষয় হচ্ছে হেফাজতের কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে উত্তর গেটে। পুলিশ, র‌্যাব এবং আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী উত্তর গেটে গুলি করেছে, টিয়ার সেল চার্জ করেছে, গ্রেণেড মেরেছে । এ হামলা থেকে আত্মরক্ষার জন্য হেফাজতের নেতাকর্মীরা সামান্য ইটের টুকার দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তাদের হামলার মুখে হেফাজতের কোন নেতা কর্মীর দক্ষিণ গেটে অথবা পশ্চিম গেটে যাওয়া সম্ভব ছিল না। যাও দু’চারজন দক্ষিণ দিক থেকে সমাবেশে আসার চেষ্টা করেছে তারা আওয়ামী ক্যাডারদের হামলায় আহত হয়েছে। আওয়ামী ক্যাডারদের গুলিরত ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আগুন লাগানো এবং কুরআন পোড়ানোর সব ঘটনাই ঘটেছে দক্ষিণ গেটে এবং পশ্চিম গেটে। যার প্রতিটি ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী ক্যাডাররা। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর সবগুলো টিভি চ্যানেল এক যোগে প্রচার চালাচ্ছে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা লুটপাট করেছে। দেশবাসী ভালভাবে জানে যে, কারা অগ্নি সংযোগ, হামলা, লুটপাট এবং কুরআন শরীফে আগুন দেয়ার ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগ এই সরকারের আমলেও দেশের বহু যায়গায় হামলা, লুটপাট, আগুন দেয়া এবং কুরআন হাদীসে আগুন দেয়ার মত জঘণ্য কাজ করেছে। এটা তাদের চিরন্তন অভ্যেস। যারা নিয়মিত কুরআন পড়েন, কুরআনের প্রশিক্ষন দেন, কুরআন অনুযায়ী নিজেরা জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করেন, অপরকে কুরআনের পথে আহ্বান করেন তারা কুরআনে অগ্নি সংযোগ করেছে এটা সম্ভবত পাগলেও বিশ্বাস করবে না। ইসলামের চির দুশমন ইবলিশ শয়তান ও সম্ভবত তাদের এ অপপ্রচার দেখে লজ্জায় মূখ লুকাচ্ছে।

আওয়ামীলীগের রণ প্রস্তুুতি ঃ ক্ষমতা হাড়ানোর ভয় এবং গণঅভূত্থানের আতংকে দিশেহাড়া আওয়ামীলীগ নেতারা সারাদিন তাদের দলের পেশাদার সন্ত্রাসী, খুনী, মাস্তান ও ক্যাডারদের মতিঝিলের চারদিকে জড়ো করে। তাদের জন্য সরবরাহ করা হয় ভারী অস্ত্র। যারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না তাদের দেয়া হয় বোমা, পিস্তল, রামদা। তারা সারা দিন পরিকলপনা করে কিভাবে হামলা করা যায় মতিজিলের মূল সমাবেশে এবং এরপর রাতে ভয়াবহ হামলায় অংশগ্রহণ করে।

আওয়ামী নেতাদের হুশিয়ারী ঃ আওয়মীলীগের নেতারা অবরোধ শুরুর আগেই যেমন একদিকে রণহুংকার ছাড়েন হেফাজতের কর্মীদের ঢাকায় প্রবেশ করতে দিবেন না। অপরদিকে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণাও দেন। সবশেষে যখন হেফাজতের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসে অবস্থান নিলেন তখন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঘোষনা দিলেন সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা না ছাড়লে ব্যবস্থা। সে ব্যবস্থা যে এত ভয়ংকর, এত নারকীয়, এত পৈশাচিক হবে তা কেউ ভাবতেই পারে নি।



রাত বাড়ার সাথে সাথে শুরু গণহত্যার ভয়ংকর প্রস্তুুতি ঃ হেফাজতের নেতা কর্মীরা যখন তাদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে মতিঝিলে অবস্থান নিলেন তখন গণহত্যার নায়ক স্বরাস্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বললেন আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তার এই প্রস্তুতি যে এত পৈশাচিক এবং নারকীয় তা বোঝা গেল মতিঝিলে হামলার পর। রাত বাড়ার সাথে সাথে প্রস্তুতি নেয়া হয় ভয়ংকর হামলার। ঢাকা শহরে অবস্থানরত আইন শৃংখলা বাহিনীর সব সদস্যকে এনে জড়ো করা হয় মতিঝিলের চার পাশে। তাদের সজ্জিত করা হয় ভারী অস্ত্র সস্ত্রে।

অপারেশন মিডনাইট ঃ রাত দুইটা থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ও নরাকীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করা হয় মতিঝিলে। হামলার পূর্বে বিদ্যুত লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়। এসময় যৌথ বাহিনীর সাথে যোগ দেয় সাড়ে তিন হাজার সরকারদলীয় ক্যাডার। সর্বমোট ১৫ হাজারের অধিক ফোর্স এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞে অংশ নেয়। যৌথ বাহিনীর অভিযানের এক ঘণ্টা অর্থাৎ রাত সাড়ে তিনটায় নিরস্ত্র হেফাজতের নেতা-কর্মীরা শাপলা চত্বর থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। যৌথ বাহিনীর সদস্যদের গুলী, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট থেকে বাঁচতে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত হাজার হাজার হেফাজতের নেতা-কর্মী অলি-গলিতে ঢুকে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনী দৈনিক বাংলা, আরামবাগ ও দৈনিক ইত্তেফাক মোড় দিয়ে অভিযান শুরু করে। যৌথ বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের পর হেফাজতের নেতা-কর্মীরা শাপলা চত্বরের আশপাশে বিভিন্ন ব্যাংক ও অফিসের ভেতরে লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। শাপলা চত্বর যৌথ বাহিনী দখলে নেয়ার পর সেখানে বিজিবির সদস্যরা সশস্ত্র পাহারা দেয়। অন্যদিকে পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা বিভিন্ন অলি-গলিতে অভিযান শুরু করে। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি ও আওয়ামী ক্যাডার সমন্নয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর হামলা, গুলি রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে হেফাজতের তিন হাজার নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। গুলি আর গুলি, টিয়ার সেলের ঝাঝালো গন্ধ, রাবার বুলেট সব মিলিয়ে একটি বড় ধরণের যুদ্ধক্ষেত্র তৈরী হয় মতিঝিলে,যেখানে একপক্ষ ভারী অস্ত্রে সজ্জিত অপর পক্ষ নিরস্ত্র-নিরুপায়। আহত এবং নিহত হওয়া ব্যতীত তাদের আর কিছু করার নেই।

আহতদের শরীরের উপর দিয়ে চালানো হয়েছে ভারী যারবাহন এতেও নিহত হয়েছেন অসংখ্য বণি আদম। শাপলা চত্বর ও এর আশপাশে তখন টিয়ারশেলের ঝাঁঝে কেউ টিকতে পারেনি। এছাড়া সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শাপলা চত্বরের আশপাশের বিভিন্ন ভবনে যেসব নেতা-কর্মী অবস্থান করেছেন তাদের অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। যাদের কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ারও ব্যবস্থা ছিল না। রাত সোয়া তিনটা পর্যন্ত এ এলাকার বিভিন্ন গলিতে লুকিয়ে থাকা হেফাজতের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে হামলা চালায় তথাকথিত যৌথ বাহিনী যার অংশীদার আওয়ামী ক্যাডাররাও। গুলী, টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা। অভিযান শুরুর পরই মুহূর্মুহূ গুলী, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের আতঙ্কে হুড়োাহুড়ি শুরু হলে নেতাকর্মীরা সব শাপলা চত্বরের আশপাশে, মঞ্চের চারদিকে অবস্থান নেয়। পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি মেহেদী হাসান এ সময় হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দেয় হেফাজত কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য। তারা কিছুটা পিছু হটলে কয়েকটি সাঁজোয়া যান নিয়ে পুলিশ শাপলা চত্বরের কাছে চলে যায়। তাদের পেছনে ছিল র‌্যাব ও বিজিবি। এ সময় আশপাশের উঁচু ভবনের উপর থেকে সাউন্ড গ্রেনেড চার্জ করা হয়। গোটা এলাকা প্রকম্পিত ও আলোকিত হয়ে পড়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের মনোবলে আঘাত হানে হামলাকারীরা। এ সুযোগে যৌথ বাহিনী ঢুকে পড়ে মূল সমাবেশস্থলে। তারা গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগুতে থাকে। এ সময় অসংখ্য নেতাকর্মী গুলীবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয় কালো পিচ ঢালা রাজপথ। অসংখ্য গুলীবিদ্ধ নেতাকর্মীকে যৌথবাহিনী সিটি কর্পোরেশনের গার্ভেজ ট্রাকে করে নিয়ে যেতে দেখেছে প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা। জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের আনা হয় এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহণ করার জন্য। তারা হেফাজতের সমাবেশ ঘিরে গুলী চালায় পাইকারী হারে। রাত তিনটা ১০ মিনিটের দিকেই স্থল হামলা চালানো হয়। এ সময়ই অনেকে মারা যান বলে জানা গেছে। হেফাজত কর্মীদের দাঁড়ানোর সুযোগই দেয়া হয়নি তখন থেকে। নির্বিচারে গুলী চালায় যুবলীগ ছাত্রলীগ সহ সরকারের পেটুয়া বাহিনী। অনেককেই কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে মতিঝিলে। ৬মে সূর্য ওঠার আগেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সব লাশ সরিয়ে নেয় গোপনে।



গণহত্যার পূর্ব মূহুর্তে মিডিয়া কর্মীদের সরিয়ে দেয়া হয় ঃ গণহত্যার কোন ছবি এবং কোন সংবাদ যাতে কেউ প্রচার করতে না পারে এ জন্য হামলার পূর্বে সড়িয়ে দেয়া হয় মিডিয়া কর্মীদের। সারাসি অভিযান চালানো হয় দিগন্ত টেলিভিশন এবং ইসলিামিক টিভির কার্যালয়ে। বন্ধ করে দেয়া হয় তাদের সম্প্রচার। এ কর্মকান্ড জার্মানীর হিটলার এবং ইটালীর মুসোলিনিকেও হার মানিয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়মীলীগ তাদের গণবিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী এবং খুনী চরিত্র উম্মোচন করেছে।

গণহত্যায় নিহত তিন হাজার ঃ হেফাজতের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয় মতিঝিলে সরকারের পরিচালিত গণহত্যায় তিন হাজার নেতা কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন। তারা বলেন, রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় ৫ মে রোববার দিবাগত রাতে ঘুমন্ত, জিকিররত নিরীহ নিরস্ত্র লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ আলেম-ওলামার ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের মুসলমান নামধারী সরকার রাতের আঁধারে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিশেষ অভিযানের নামে নৃশংস নির্মম, বর্বর, অমানবিক হত্যাকান্ড চালিয়েছে। সেখানে কত লোককে শহীদ করেছে সেই পরিসংখ্যান যাতে না পাওয়া যায়, সেজন্য সাথে সাথেই লাশ গুম করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, ট্রাক ভর্তি করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই লাশের সংখ্যা আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সেখান থেকে আলামত দ্রুত সরিয়ে নেয়া বিনা উস্কানিতে পুলিশ ও সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা শাপলা চত্বরগামী মিছিলের ওপর হামলা ও সরাসরি খুঁজে খুঁজে গুলীবর্ষণ করে অসংখ্য লোককে হত্যা ও আহত করেছে। যা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের মানুষ সরাসরি দেখেছে। তারা সেখানে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পরে তা হেফাজতে ইসলামের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালায়। হেফাজত নেতৃবৃন্দ বলেন,যার সামান্যতম ঈমান আছে, পরকালে বিশ্বাস আছে, আল্লাহর দরবারে জবাদিহি করার ভয় আছে, বিবেক ও মানবিক বোধ আছে, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস আছে- আলেমদের ওপর এমন নিষ্ঠুর নির্মম হত্যাকান্ডের মতো কাজ সে করতে পারে না। আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষকে বিনা কারণে বিনা উস্কানীতে এভাবে ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই। ক্ষমতাসীনদের যারা এই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারা অতি উৎসাহী হয়ে এই কাজটি করেছেন, যারা সমর্থন দিয়েছেন, আলেমদের বুককে ঝাঁঝরা করতে যাদের বুক একটুও কাঁপেনি, তাদের জন্য কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছেই। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমান শাসকের হাতে অরাজনৈতিক ঈমানী আন্দোলনরত সংগঠনের একটি শান্তিপূর্ণ অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচিতে এভাবে পাখির মতো মানুষ হত্যার ঘটনা ইতিহাসে এক নজিরবিহীন কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়েই শুধু থাকবে না,

বিনা কারণে এই গণহত্যা বিশ্ব রেকর্ড হিসেবেও ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় কয়েক ঘণ্টা ধরে পরিকল্পনা নিয়ে ভারি অস্ত্র নিয়ে রাস্তার আলো নিভিয়ে বর্বরতম এই কাজটি করেছে।

গাছ কাটার অভিযোগ ঃ যেখানে হাজার হাজার অলেমকে শহীদ করে লাশ গুম করা হলো সে সংবাদ সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলো আদৌ প্রচার করছে না বরং ভিকটিমদের বিরুদ্ধে কতভাবে ঘৃণা এবং বিদ্বেশ ছড়ানো যায় এ জন্য তারা নানা কল্প কাহিনী ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে হেফাজতের নেতা কর্র্মীরা সরকারী গাছ কেটেছে। যারা ছিল ঘুমন্ত অবস্থায় এমনি মূহুর্তে গুলি করা হলো হাজার হাজার লাশ পড়লো, প্রায় দশ হাজার লোক আহত হলো। বারুদের গন্ধে খোনে টেকা যায় না। সেখানে হেফাজতের কর্মীদের গাছ কাটার সময় কোথায়? আওয়ামী ওলামা লীগের লোকজন পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে ইলেক্ট্রিক কার্টার দিয়ে অল্প সময়েই শত শত গাছ কেটে ধ্বংসকযজ্ঞ চালিয়ে হেফাজতের উপর দায়ভার চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শোনা গেছে কাটা গাছগুলো আওয়ামী নেতারা নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। এতেই বোঝা যায় কারা গাছ কেটেছে।এর চেয়েও বড় কথা আওয়ামী বাম মিডিয়াগুলোর কাছে হাজার হাজার মানুষের জীবনের চেয়ে গাছের মূল্য অনেক বেশী। গাছের জন্য তাদের কত মায়াকান্না। কিন্তু হাজার হাজার আলেমের জন্য তাদের কোন সহানুভুতি নেই। যেন গাছের মানবাধিকার আছে কিন্তু মুসলমানের কোন মানবাধিকার নেই।

কুরআন পোড়ানোর অভিযোগ ঃ যারা কুরআনের সৈনিক। যারা পুরো ত্রিশ পাড়া কুরআন বুকে ধারণ করেন। যারা রমযান মাসে তারাবীর নামাজে দাড়িয়ে পুরো কুরআন শরীফ পাঠ করেন। যারা কুরআনের মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলন করছেন। যারা কুরআনের মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না। তারা কুরআন পুড়িয়েছেন এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। কুরআন শরীফে আগুন লাগানোর কাজটি করেছে দেবাশীষের নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী। যাতে সাধারণ জনগণকে আলেমদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা যায়।

হেফাজতের নেতাদের সিদ্ধান্ত ছিল সকালে সমাবেশ শেষ করা ঃ এ ব্যাপারে হেফাজতের নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করি এবং ঢাকা অবরুদ্ধ হয়। ঢাকার ৬টি প্রবেশদ্বারে আমাদের লাখ লাখ নেতা-কর্মী সাধারণ মানুষকে নিয়ে ঢাকা অবরোধ করে। আমরা সরকারের কাছে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি চাই। সরকার বায়তুল মোকাররমের অনুমতি না দিয়ে শাপলা চত্বরে অনুমতি দেয়। আমাদের নেতা কর্মীরা দুপুর থেকে শাপলা চত্বরে আসতে শুরু করে। কিন্তু আমরা দেখলাম, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ঢাকায় প্রবেশের পথে সর্বপ্রথম সকালে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চের কাছে আমাদের নেতা-কর্মীদের মিছিল নিয়ে আসতে বাধা দিয়ে তাদের ওপর গুলী চালায়। পরে দৈনিক বাংলার মোড় থেকে শুরু করে পল্টন, তোপখানা রোড, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত মিছিলে আক্রমণ করতে থাকে। তারা বলেন, রহস্যজনক ব্যাপার হচ্ছে- একদিকে শাপলা চত্বরে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে সমাবেশে আসতে থাকা হেফাজত কর্মীদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখে এবং দুপুর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত পুরো এলাকায় পুলিশ পাখির মতো গুলী করে হত্যা করতে থাকে। অন্যদিকে সরকারী দলের সন্ত্রাসী কখনো স্বরূপে, কখনো হেফাজত কর্মী সেজে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। তাদের হামলায় রাস্তায় সাধারণ মুসল্লিদের লাশ পড়ে থাকে। স্বাভাবিক কারণে সমাবেশে অংশ নেয়া লাখ লাখ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সমাবেশস্থলে কর্মসূচি ঘোষণা করে সন্ধ্যার মধ্যেই সমাবেশ শেষ করার সুযোগ দেয়া হয়নি। তারা বলেন, ফলে বাধ্য হয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে সরকারকে অন্যপ্রান্তে হত্যাকান্ড বন্ধের আহ্বান জানাই। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি বাহিনী সন্ধ্যার পর আরো ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শুরু করে। হেফাজত নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত ছিল, যে করেই হোক সকালে সমাবেশস্থলে গিয়ে দোয়ার মাধ্যমে সমাবেশ শেষ করে দেয়া। তাদের এই ইচ্ছের কথা প্রশাসনের লোকজনকেও বার বার অবহিত করা হয়। কিন্তু তাদের কোন কথায় কর্ণপাত না করে নজিরবিহীনভাবে আগ্রাসী তৎপরতা চালায় সরকার। যেন গণহত্যাতেই আনন্দ। গণহত্যাতেই সমাধান।



সরকার আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ঃ হেফাজতের প্রথম ও প্রধান দাবী সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করা। এই দাবির বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে সরকার প্রকারন্তরে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা ব্যতীত কেউ নিজেকে মুসলমান দাবী করতে পারে না, মুসলমান হতে হলে তাকে আগে এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যে বিষয়টি ইতিপূর্বে আমাদের সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কতিপয় বাম কমিউনিষ্ট এবং নাস্তিককে খুশী করার জন্য সরকার সেই ধারাটি বাদ দিয়ে একদিকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঈমান আকীদায় আঘাত হেনেছে অপর দিকে তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

আহতদের ধরতে হাসপাতালে ছাত্রলীগ যুবলীগের হামলা ঃ মানুষ কতটা পৈশাচিক হলে কতটা অমানবিক হলে কতটা মানবতা বিরোধী হলে আহত লোকদের উপর আবার হামলা করার জন্য হাসপতালে যেতে পারে? অবশ্য পৃথিবীর এমন কোন জঘণ্য কাজ নেই যা আওয়ামীলীগ করতে পারে না। ছাত্রলীগ যুবলীগের ক্যাডাররা রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, আল বারাকা হাসপতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহত হেফাজত কর্মীদের উপর আবারো হামলা চালায়।

নিরপেক্ষ মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া ঃ সরকারের জঘণ্য গণহত্যার প্রচার বন্ধে সরকার জনপ্রিয় দুটি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। ভিন্নমতের মিডিয়া দৈনিক আমার দেশ ও বেসরকারি চ্যানেল দিগন্ত এবং ইসলামিক টিভি বন্ধ। ছাপাখানায় তালা দিয়ে আমার দেশ প্রকাশনা বন্ধের প্রায় এক মাস পর এ দুটি টিভি চ্যানেলকেও রোববার দিবাগত রাতে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ভিন্নমতের এই তিনটি মিডিয়া বন্ধ করে দেয়ার কারণে সরকার আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোববার গভীর রাতে যে নৃশংস তান্ডব চালায়, তার ছিটেফোঁটাও কোনো মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়নি। তারা মনে করেন, এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দিগন্ত টেলিভিশনকে কীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় তার বর্ণনা দিয়ে এর প্রধান বার্তা সম্পাদক জিয়াউল কবির সুমন জানান, ভোরে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কর্মকর্তারা এসে সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দেন এবং কিছু যন্ত্রপাতি জব্দ করে নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশও ছিল। সোমবার ভোর ৪টা ২৪ মিনিট থেকে সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। দিগন্ত টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার (ব্রডকাস্টিং) আবুল হাসান বলেন, ভোর সোয়া চারটায় র‌্যাব-পুলিশের একটি বাহিনী এসে বলে আমরা দিগন্তের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করতে চাই। আমরা সারা দিন-রাত দায়িত্ব পালন করে ক্লান্ত। আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। তিনি জানান, সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধের কোনো লিখিত নির্দেশ আছে কিনা জানতে চাইলে ওই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, উপরের নির্দেশে এসেছি। সময়মত লিখিত নির্দেশ পেয়ে যাবেন। তারপর তারা সম্প্রচারের মডেমটি নিয়ে চলে যান।এর আগে রাত ২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইসলামিক টিভি কার্যালয়ে গিয়ে সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শামস এস্কেন্দার। রাত আড়াইটা থেকে তাদের সমপ্রচার বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। শামস অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তার কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাংচুরও চালিয়েছে।

বামপন্থী মিডিয়ার কুরআনের প্রতি দরদ এবং গণহত্যার সংবাদ প্রচার না করা ঃ হেফাজতের নেতা কর্মীদের উপর পুলিশ আওয়ামীলীগ যুবলীগের হামলার এক পর্যায়ে আওয়ামী ক্যাডররা ফুটপাতের দোকানগুলোতে আগুন দেয়। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর মতো তারা এটাকে হেফাজতের কাজ বলে প্রচার করছে। এখন তাদের কুরআনের প্রতি দরদ উথলে উঠেছে। কিন্ত শাহবাগীরা যখন আল্লাহ, রাসুল, কুরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে বিণেষাদগার করেছে তখন তাদের এ দরদ এবং ভালবাসা কোথায় ছিল ? মূলত ইসলামপন্থী ব্যক্তি ও আলেমদের চরিত্র হণন এদের মূল কাজ। তারা আওয়ামী ধ্বংসযজ্ঞকে হেফাজতের কাজ বলে প্রচার করছে অপর দিকে সরকারী বাহিনী যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলালো তার কোন সংবাদই তারা প্রচার করছে না। এর মাধ্যমে তারা তাদের ইসলাম বিরোধী এবং দালাল চরিত্র উম্মোচন করেছে।

গণহত্যা জায়েজ করতে ব্যাংক লুটের কল্পকাহিনী প্রচার ঃ সরকার তার গণহত্যাকে জায়েজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুটের কাহিনী প্রচারের জন্য ডি.এম.পি কমিশনারকে দিয়ে প্রেস কনফরেন্স করিয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয় যেন তিনি আর ডি.এম.পি. কমিশনার নন সরকারী দলের কোন নেতা। কিন্তু দেশের জনগণ এ দেশের আলেমদের চরিত্র সম্পর্কে জানেন। ব্যাংক লুটের ইতিহাস কার আছে আর কার নেই তাও জনগণ জানে। কোন সরকারের আমলে ব্যাংক লুট হলে তার পিতা আগে নিজের ছেলের খোজ নিতেন তাও দেশবাসী জানে। অতএব সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের বিরুদ্ধে ব্যাংক লুটের কল্পকাহিনী প্রচার করে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গণহত্যার সংবাদ ঃ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রোববার গভীর রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির অভিযানের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। পুলিশি অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়েও বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। সিএনএন জানিয়েছে, এতে ঠিক কতজন নিহত হয়েছে, তা সম্ভবত কখনো জানা যাবে না। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, চার দশক আগে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। এএফপির খবরটি হিন্দুস্তান টাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে পাঁচ লক্ষাধিক লোক উপস্থিত ছিল বলে সিএনএনসহ কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করে।এ এফ পি বলেছে-স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। এএফপি বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মতিঝিলে পুলিশ ও ইসলামপন্থীদের যুদ্ধে অন্তত ২৮ জন মারা গেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে শত শত লোক। চার দশক আগে স্বাধীনতার পর এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। সি এন এন বলেছে-ঢাকায় ভুতুড়ে নীরবতা। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যে কোনো সোমবার ঢাকার বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিলে উপচে পড়া ভিড় আর রিকশা আর গাড়ির জটে প্রাণ যায় যায় অবস্থা থাকে। কিন্তু এই সোমবার ছিল ভিন্ন। মতিঝিল মনে হচ্ছিল যুদ্ধক্ষেত্র, জনমানবশূন্য ও বিধ্বস্ত।এতে বলা হয়, রোববার সারা দিন এবং রাতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সাথে ইসলামপন্থীদের সংঘর্ষ হয়। মতিঝিল এলাকায় পাঁচ লাখের বেশি লোক উপস্থিত ছিল বলে অনেক হিসাবে দেখা গেছে। এতে বলা হয়, রোববার গভীর রাতে এসব লোককে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য অংশ নেয়।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) মৃতের সংখ্যা ১৪ বলে জানিয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন পুলিশ, একজন বিজিবি ও একটি ১২ বছরের বালক।আল জাজিরা বলেছে-অভিযানে অংশ নিয়েছে ১০ হাজারের বেশি সদস্য । মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, রোববার মতিঝিলে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, রোববার রাতে মতিঝিল এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ১০ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেয়।এপির সংবাদে বলা হয়-মোট নিহত ১৫ : বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে রোববার রাত ও সোমবার ইসলামপন্থী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, মতিঝিল এলাকায় রোববার রাতে সাতজন নিহত হয়েছে। আর সোমবার কাঁচপুরে নিহত হয়েছে অন্তত আটজন। টেলিগ্রাফের নিউজ-ঢাকায় নিহত ২২ ।যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় মতিঝিলের ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১১টি লাশ আনা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন। এ ছাড়া আল বারাকা হাসপাতলে চারজন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আরো সাতজন নেয়া হয়। যদিও বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলো নিহতের সঠিক পরিসংখ্যান জানতে এবং জানাতে পারে নি তবে তাদের কাছে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।



গণহত্যা চলে পরের দিনও ঃ রোববার দিবাগত রাতে মতিঝিলে গণহত্যা চালানোর পরও সরকারের খুনের নেশা মেটেনি। তারা হত্যাযজ্ঞ চালায় নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং বাগেরহাটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় ও শিমরাইল এলাকায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং বাগেরহাটে র‌্যাব, পুলিশ এবং বিজিবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে না.গঞ্জে ২০ জন হাটহাজারীতে ৭ ও বাগেরহাটে ২ জন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দাবি করছেন হেফাজতে ইসলাম ও স্থানীয়রা। আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ, বিজিবি ও পথচারীসহ দুই শতাধিক। এরমধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রোববার মধ্যরাতে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পর হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সোমবার ভোরে যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়, শিমরাইল, কাঁচপুর এলাকার বেশ কয়েকটি মাদরাসায় আশ্রয় নেয়। পরে সকাল পাঁচটার দিকে হেফাজতের কর্মীরা মাদরাসার ভেতরে সংগঠিত হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় হেফাজতের কর্মীরা মাদরাসার মাইকে ঘোষণা দিয়ে অন্যান্য মাদরাসা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালে ধর্মপ্রাণ স্থানীয় লোকজন সংগঠিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল সোয়া ৮টায় নারায়ণঞ্জ জেলা পুলিশ তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মাদানীনগর মাদরাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে। ওই সময় ঢাকা থেকে আনা হয় একটি সাজোয়া যান। ডেমরা রোড দিয়ে আসা সাজোয়া যানের পেছনে ছিল বিপুলসংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ। সাজোয়া যান নিয়ে আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত কয়েক দফা মাদানীনগর মাদরাসায় যাওয়ার চেষ্টা করে। এ হামলায় ১৬ জন ধর্মপ্রান মানুষ প্রাণ হাড়ান। হাটহাজারীতে র‌্যাব পুলিশ বিজিবির গুলিতে নিহত হয়েছে সাতজন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেপরোয়া গুলিতে হেফাজতে ইসলামের সাত কর্মী নিহত ও অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। বাগেরহাটে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ২ জন, আহত হয়েছেন ২০ জন। বাগেরহাটে সোমবার দুপুরে কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে হেফাজত কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে একজন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও একজন নিহত হয়েছেন।

পথে পথে আক্রমণ ঃ মতিঝিলে সরকারী বাহিনীর হামলা এবং গণহত্যার হাত থেকে বঁেচে যাওয়া মানুষেরা পথে পথে আাওয়ামী ক্যাডরাদের হামলার শিকার হয়েছেন। আওয়ামী ক্যাডাররা যাত্রাবাড়ি, মানিকনগর, ডেমরার কোনপাড়া, শনির আখড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন যায়গায় হামলা করেছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাটে হামলার শিকার হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর রণহুংকার ঃ হেফাজতকে আর কোনো ছাড় দেবে না সরকার। যেখানে যেখানে হেফাজতের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে, সেখানেই অভিযান চালাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সরকার এদের ব্যাপারে কোনো নমনীয়তা দেখাবে না বলে জানা গেছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরকারের এ অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বলে সভা শেষে একাধিক মন্ত্রীর এ ধরণের কথা বলেন। তার মানে এখন থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলােেদশর সব বড় বড় কওমী মাদরাসাগুলোতে হামলা চলানো হবে। এতে বোঝা যায় রক্তের নেশায় উম্মাদ সরকার । স্বভাবতই প্রশ্ন আসে আর কত লাশ চাই প্রধানমন্ত্রীর?

গণহত্যা, গণগ্রেফতার, গণমামলা সরকারের একমাত্র হাতিয়ার ঃ সরকারের এখন প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে গণহত্যা, গণগ্রেফতার এবং গণমামলা। হেফাজতের উপর ভয়াবহ হামলার পর সরকার এখন বেছে নিয়েছে গণমামলা এবং

গণগ্রেফতারের পথ। রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের সাথে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাঁচ থানায় ১৬টি মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাসহ লক্ষাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। হত্যাকান্ড, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন, সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হেফাজতে ইসলামের সদস্য ছাড়াও জামায়াত-বিএনপির নেতকর্মীদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন ও শ্যামপুর থানায় মামলাগুলো করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় বাদি হয়েছে পুলিশ। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে ৯ দিন ও অপর ৪০ সদস্যকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। রমনা থানায় গ্রেফতারকৃত ২০ নেতাকর্মীকে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্য দিকে শাহবাগ থানায় গ্রেফতার হওয়া অপর ২০ জনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত সেই আবেদন আমলে না নিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে কত লোক হতাহত হয়েছেন, সে সম্পর্কে সরকারিভাবে কোনো তথ্য নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো থেকে বলা হচ্ছে, এ সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। হেফাজতে ইসলামের যেসব সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কোনো থানায় মামলাও নেয়া হচ্ছে না। বরং যাদের লোক মারা গেছে, যারা আহত হয়েছে তাদেরকেই আসামী করে গণমামলা দেয়া হচ্ছে।

ভিনদেশী কিলিং স্কোয়াড ঃ মতিঝিলের নারকীয় হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে ভিনদেশী কিলিং স্কোয়াড এমন সংবাদ বেশ কয়েকটি দৈনিকে যেমন প্রকাশিত হয়েছে তেমনি বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ সাইটেও বিভিন্ন ছবি দেয়া হয়েছে, যাদের সাথে বাংলাদেশী কোন বাহিনীর পোষাকের মিল নেই। কারণ হিসেবে অনেকেই বলেছেন বাংলাদেশের কোন বাহিনীর লোকই এভাবে গণহত্যায় মেতে উঠতে পারে না, তারা আলেমদের গণহারে হত্যা করতে রাজী না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই অনেকেই বলছেন পার্শবর্তী দেশ থেকে কিলিং স্কোয়াড এনে ইতিহাসের এ ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হয়েছে।

সরকার এবং পুলিশের মিথ্যাচার ঃ সরকারের মূখপাত্র মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেব বলেছেন মতিঝিলে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। স্বরাস্ট্র মন্ত্রী বলেছেন মতিঝিলে কোন ধাতব বুলেট ব্যবহার করা হয়নি। পুলিশের আইজিপি বলেছেন আমরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অভিযান সফল করেছি যাতে কোন প্রাণহানি হয়নি। সর্বশেষ বুধবার পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমদ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন মতিঝিলে কোন মানুষ মারা যায়নি। তাদের এ সকল কথার প্রেক্ষিতে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে রোববার বেলা ১২ টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট এবং দৈনিক বাংলার মোড়ে গুলি, টিয়ার সেল, সাউন্ড গেণেড এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে যাদের সরানো গেল না। রাত দুইটার পরে কোন যাদু বলে মাত্র দশ মিনিটে লাখ লাখ ঘুমন্ত মানুষকে পুলিশ এলাকা ছাড়া করলো। যদি অস্ত্রই ব্যবহার না করা হয় তবে কেন ১৫ হাজারের বিশাল বাহিনীকে অভিযানে নামানো হলো? কেন অভিযানের পূর্ব মূহুর্তে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হলো? কেন হাজার হাজার মানুষ আজ নিখোজ? তুমুল বৃষ্টির পরেও কেন পরের দিন মতিঝিলের রাস্তা রক্তে লাল হয়েছিল? এর জবাব একটাই সরকার তাদের জঘণ্য হামলা এবং গণহত্যাকে আড়াল করার জন্য একের পর এক গল্প তৈরী করছে। সরকার যা-ই বলুক, তাদের সমর্থক মিডিয়াগুলো যা-ই প্রচার করুক জনগণের বুঝতে বাকী নেই সরকার রাতের আধারে কি করেছে।

২৫ মার্চের কালো রাতকে হার মানিয়েছে ঃ ক্ষমতসীন আওয়ামী সরকার কর্তৃক পরিচালিত সোমবারের গণহত্যাকে অভিজ্ঞমহলসহ দেশের চিন্তাশীল মানুষেরা একদিকে যেমন শতাব্দীর ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অপরদিকে তারা বলেছেন এ হামলা ৭১ এর কালো পঁচিশের পাকিস্তানী বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। সোমবারের শহীদদের গায়েবানা জানাযায় শরীক হতে এসে সাবেক রাস্ট্রপতি প্রফেসর ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, এ ধরণের গণহত্যা জীবনে আর একবারই দেখেছি তা হচ্ছে- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। একই ভাষায় কথা বলেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। ১৮ দলীয় জোটের বিবৃতি এবং জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতিতেও একই কথা বলা হয়েছে।

গণহত্যার ফল শুভ হয় না ঃ সরকারের খুব ভালভাবে উপলব্ধি করা উচিৎ গণহত্যার ফল কখনো শুভ হয় না। বিরোধী মতকে দমন করে, বিরোধী আদর্শের লোকজনকে হত্যা করে সমায়িক বিজয়ের তৃপ্তি অনুভব করা যায়। কিন্ত এর সুদুর প্রসারী ফলাফল কখনোই শাসক গোষ্ঠীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। সরকার আজ গায়ের জোরে মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে মিডিয়াকে হুমকি ধমকি দিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গণহত্যা, জুলুম-নির্যাতনের সংবাদ গোপন করছে। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে বিরোধী মতের লোকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেশ ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু সত্য একদিন উদ্ভাসিত হবেই এবং গণহত্যার বিচার একদিন হবে-ই । কারণ ক্ষমতা কারো জন্যই স্থায়ী সম্পদ নয়। ক্ষমতার পাদাবদলে আজকে যারা আসামীর কাঠগড়ায় তারাই হবে বাদী আর বর্তমানের শাসকরা হবেন আসামী।

ওমর মোখতার থেকে আহমদ শফী ঃ ইটালীর মুসোলিনী যখন লিবিয়ার ত্রিপোলী বন্দরে তার যুদ্ধ জাহাজ ভিড়ান তখন আশি বছর বয়স্ক ওমর মোখতার গ্রামের একটি মক্তবের শিক্ষক। ইটালীয় সৈন্যরা যখন লিবিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বাড়ি-ঘর দখল করতে শুরু করলো। অস্ত্রের জোরে, অর্থের জোরে মুসলমানদের ঈমানহীন বানানোর অভিযান শুরু করলো, তাদের যুবকদের পাইকারীভাবে হত্যা করা শুরু করলো তখন আশি বছর বয়সের ওমর মোখতার ইটালীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিলেন। আরামের জীবন ছেড়ে বনে জঙ্গলে কঠিন এবং কষ্টকর জীবন বেছে নিলেন। তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুললেন। ইটালীয় বাহিনী বিপ্লবী বীর ওমর মোখতারকে গ্রেফতারের ফাঁসি দিল।

ফাঁসির মঞ্চেও ওমর মোখতারের মূখে ছিল হাসি। কিন্তু ওমর মোখতারকে ফাঁসি দিয়ে ইটালীর আগ্রাসী বাহিনী লিবিয়ায় টিকতে পারে নি। তার মৃত্যুর পর এ আন্দোলন দাবানলের মত জ্বলে উঠলো পরিণতিতে মুসোলীনীর বাহিনী লিবিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়। আজ একইভাবে আশি বছর বয়সে আহমদ শাফি ইসলামের দুশমন সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তা বিজয়ী হবেই।



বালাকোট থেকে মতিঝিল ঃ সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভীর নেতৃত্বে ভারতের একটি প্রদেশে যে ছোট একটি ইসলামী রাস্ট্র কায়েম হয়েছিল তাকে ধ্বংস করার জন্য ইংরেজ এবং শিখ সৈন্যরা যে সাড়াসি আক্রমণ করে সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভীর সকল কর্মী বাহিনীসহ তাকে শহীদ করেছিল ৬মে। তিনশত বছর পরে আবার সেই ৬মে বাংলার মুসলমানদের উপর ভয়াবহ পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করলো ধর্মনিরপেক্ষ ইসলাম বিদ্বেশী সরকার। সেখানে ছিল ভিনদেশী ইংরেজরা আর এখন দেশীয় ইসলামের দুশমন ক্ষমতাসীন মহল এবং তাদের সহযোগীরা।

জনতার আন্দোলন বিজয়ী হবে ঃ জনতা ঈমানের দাবীতে যে আন্দোলনে নেমেছে সে আন্দোলন বিজয়ী হবেই। শাসকগোষ্ঠী আজ অস্ত্রের জোরে, ক্ষমতার জোরে তাদেরকে দমন করার যতই চেষ্টা করুক না কেন এই শক্তি এক সময় নিস্ক্রিয় হবে। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তা কখনো বৃথা যায় না। আল্লামা আহমদ শফী যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তাও বৃথা যাবে না। যে আন্দোলনে নিঃস্বার্থপ্রাণ লাখো জনতার অংশগ্রহন, সমর্থন এবং ভালবাসা রয়েছে সে আন্দোলন বিজয়ী হবেই।



বিষয়: বিবিধ

৩৩৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File