জনগণ যেহেতু আওয়ামীলীগের পক্ষে-কেয়ার টেকার সরকারের দাবী মানলে সমস্যা কোথায়?
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দরের আহবান ২৭ মে, ২০১৩, ১১:১৫:০০ রাত
একটি জাতীয় দৈনিকে কিছু বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করে তার ফলাফল প্রকাশ করেছে। ফলাফলে দেখা গেছে ৯০ ভাগ মানুষ কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে এবং ৫৪ ভাগ মানুষ শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণের বিপক্ষে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনমত এখন সরকারের পক্ষে এবং আরো বলেছেন যে পত্রিকাটি জনমত যাচাই করে রিপোর্ট দিয়েছে যে দেশের শতকরা ৯০% মানুষ কেয়ার টেকার সরকারের পক্ষে সে পত্রিকাটি হচ্ছে ইতর পত্রিকা। কট্টর আওয়ামী গবেষক গাফফার চৌঃ লিখেছেন, গাজার নৌকা পাহাড় ডিঙ্গায়। তার মানে বাংলাদেশের জনগণ কেয়ার টেকার সরকার চায় না। তারা আরো একবার আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনতে চায়। এ কথা কতটুকু সত্য তা একবার গণভোট দিয়ে দেখা যেতে পারে। কিন্তু সে সাহস কি বর্তমান আওয়ামী সরকারের আছে? তারা ক্ষমতায় আসার পর যে অঘটন ঘটিয়েছে তাতে তারাও ভালভাবে জানে যে জনগণ আর তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে না। এ জন্য তারা জারঅও পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে যে কেয়ার টেকার সরকারের দাবী আদায় করেছিল তাকে এখন অস্বীকার করছে। কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামীলীগ বিজয়ী হলো তখন তাদের পক্ষ থেকে বলা হলো কেয়ার টেকার সরকার আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্রেইন চাইল্ড। আজ সেই ব্রেইন চাইল্ডকে জারজ সন্তানের মতো অস্বীকার করা হচ্ছে। এখন বিরোধী দলকে তারা উপদেশ এবং নসিহত করছে আন্দোলনের নামে জালাও পোড়াও বন্ধ করুন । কিন্তু কেয়ার টেকার সরকারের দাবী আদায়ের জন্য ভাংচুর জালাও পোড়াও এমন কোন ধ্বংসাত্মক কাজ নেই যা আওয়ামীলীগ করে নাই। তারা বিরোধী দলে থাকলে বাসে আগুন, বাড়িতে আগুন, জালাও পোড়াও, পুলিশের ওপর হামলা এ সব কাজ করে আর ক্ষমতায় থাকলেও তাদের দলের ক্যাডাররা হামলা, দখল, খুন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু কওে এমন কোন অপরাধ নেই যা করে না। এরপরা যদি তাদেও শাসনামলের কথা বলি তাতো আরো ভয়ংকর। তাদের শাসনামলে বিডিআর হত্যা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরে সারা দেশে গণহত্যা, সাভারে গণহত্যা এবং সর্বশেষ মতিঝিলের গণহত্যা সংগঠিত হয়। তারা তাদের অপরাধ হত্যা খুনের সংবাদ যাতে প্রকাশিত না হয় এ জন্য দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। দিগন্ত টেলিভিশনের অপরাধ তারা যে কোন খবর বস্তুনিষ্টতা নিরুপণের পর তা প্রচার করে। সরকারের পক্ষের বিপক্ষের উভয়ের খবর প্রচার করে। শাহবাগীরা তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার এবং বিভিন্ন যায়গায় দিগন্তের সম্প্রচার বন্ধ করলেও দিগন্ত কর্তৃপক্ষ শাহবাগের সংবাদ ঠিকই প্রচার করেছে এ ব্যাপারে তারা হৃদয়ের উদারতা দেখিয়েছে। সংবাদের নীতিমালা, এথিক্স, সরকারের সব নিয়ম কানুন মেনেই তারা টেলিভিশন পরিচালনা করে। বিনা নোটিশে র্যাব পুলিশ পাঠিয়ে গণহত্যা পরিচালনা করার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে দুটি টেলিভিশন চ্যানেল কেন বন্ধ কওে দেয়া হয়েছে তা দেশবাসী ঠিক ভালোভাবেই বুঝে গেছে। কিন্তু সরকার গণহত্যার খবর গোপন রাখতে পারে নি। এই টেলিভিশন বন্ধ করে সরকার প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র ও মানবতা-মানবাধিকারের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তারা আবার দেশে অঘোষিতভাবে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে। সরকার এখন চাচ্ছে তাদেও অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। এতে বরং সংঘাতের রাস্তা আরো দীর্ঘায়িত হবে। সবচেয়ে সত্য কথা হচ্ছে-শেখ হাসিনার অধীনে কোন সুষ্ঠ’ নির্বাচন সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে ১০০% অস্বচ্ছ হবে এবং আওয়ামীলীগ ৩০০ আসনে বিজয়ী হবে নিশ্চিৎ। যারা বিরোধী দলকে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয় না, বিরোধী দলের অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। হাজার হাজার মামলায় বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতা কর্মী আসামী। যারা মতিঝিলে নিরস্ত্র জনতার উপর গুলি করে গণহত্যা চালায় তাদের অধীনে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, এটি অবাস্তব, বাস্তবতা বিবর্জিত বিষয়। মূলত আওয়ামীলীগ জানে তারা যে অন্যায় অপকর্ম,, অনাচার, দুর্নূীতি, হত্যা, লুটপাট করেছে তাতে জনগণ তাদের ভোট দিবে না। এ জন্যই তারা নিজেদের অধীনে ভোট করে আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। জলাতঙক রোগী যেমন পনি দেখলে জ্ঞান হাড়ায় ঠিক তেমনি সরকার বিরোধী দলের কোন আন্দোলনের নাম শুনলেই আই এস আই, যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী, জঙ্গী বলে চিৎকার শুরু করে। জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণ ও বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চায় আই,এস আই, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী দমনে আমরাই একমাত্র পারঙ্গম অতএব অমাদেরকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। এভাবে উল্টা পাল্টা কথা বলে তারা নিজেদের অধীনে একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সংঘাতমূখর পরিবেশ থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে, আগামী নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করতে হলে কেয়ার টেকার সরকারের বিকল্প নেই। সরকার বলছে হাসিনা সরকার প্রধান থাকবে আর সুষ্ঠ’ নির্বাচন হবে। এটা পাগলের প্রলাপ। আওয়ামীলীগের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যারা বিরোধী দলকে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয় না। হেফাজতে ইসলামের মতো একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশে গুলি কওে হাজার হাজার মানুুষ মেরে ফেলে। যাদের দলের নেতা কর্মীরা অস্ত্র হাতে বিরোধী দলের সভা সমাবেশ পন্ড করে দেয়। যারা শুধূ রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে বিরোধী দলের শত শত নেতা কর্মীকে হত্যা করতে দিধাবোধ করে না। জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি প্রাচীন ইসলামী দলের সব পর্যায়ের অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাদেও কোন সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয় না এমনকি ঘরোয়া কোন বৈঠক পর্যন্ত করতে দেয় না যেই সরকার তাদেও অধীনে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। দেশের জনগণের নব্বই ভাগ এ জন্যই কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এটাকে আওয়ামীলীগ যতই অস্বীকার করুক এটাই বাস্তবতা। আজ একদিকে আওয়ামীলীগ তাদের সভানেত্রীর ব্রেইন চাইল্ডকে জারজ সন্তানের মতো অস্বীকার করছে। অপরদিকে নিজেদের অধীনে এক দলীয় নির্বাচন করতে চাইছে যা কোনভাবেই গণতন্ত্র সম্মত পদ্ধতি নয়।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন