রোহিঙ্গা মুসলিমঃ নির্মম বাস্তবতা, মানবাধিকার ও রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন হাবীব ১০ জুন, ২০১৩, ০৯:৩৩:৩১ রাত
মোঃ হাবিবুর রাহমান হাবীব
জাতীয়তা বা উগ্র জাতীয়তার হিংস্রতায় একটি জাতিসত্তা বিপন্ন হওয়ার মুখোমুখি দাড়িয়ে নিজ দেশে রাষ্ট্রহীন হয়ে একটু সহানুভূতি ও সাহায্যের আশায় বিশ্ব বিবেগের দিকে চেয়ে আছে । তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। তাদের নির্মম বাস্তবতা ও ভয়াবহ মানবাধিকারের লঙ্ঘন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃশ্যপটে মলিন । যখন মানুষ সর্বশেষ আশ্রয়টুকু হারায় তখন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে স্বাভাবিক । এই সভ্য পৃথিবীতে একদল মানুষের কোন আশ্রয়, ভৌগলিক পরিচয়, নিরাপত্তা, জীবনের নিশ্চয়তা, কোনধরনের অধিকার থাকবে না একেবারে অগ্রহণীয় এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য বৈসাম্যের প্রকাশ ।
এ বছর ২৮ মে একজন রাখাইন নারীকে ধর্ষণ করাকে কেন্দ্র করে জুনের মাঝামাঝি সময়ে রাখাইন ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে । বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে সেখানে সামরিক, আধাসামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে গনহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ চলছে । পড়ে সরকারি বাহিনীও তাতে যোগ দেয় । গনগ্রেফতার, আটকে রেখে হত্যা ইত্যাদি থেকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ সহ কেউ রক্ষা পাচ্ছে না । এই নির্মম পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য কোন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও পর্যবেক্ষক কে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না । সেখানে ১ হাজার কোন কোন হিসাব মতে ২৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী, শিশু, পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যাযজ্ঞ, সম্ভ্রম হরণ, নির্যাতন এখনও চলছে । ১ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহ হারা হয়ে বনে জঙ্গলে আত্মগোপন করে আছে । কেউ কেউ সুযোগ পেলে একটু আশ্রয়ের আশায় অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে । তাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সকল পথ বন্ধ । যখন রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন সকল মানবাধিকার লুণ্ঠিত হতে বাধ্য ।
১৯৪২ সালে ২৮ মার্চ প্রায় ৫,০০০ রোহিঙ্গা নির্মমভাবে খুন হওয়ার মাধ্য দিয়ে নির্যাতন, ধর্ষণ, ও লাশের মিছিল আজও থামছে না । ১৯৬২ সালেও এরকম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় তারা । ২০০১ সালে রাখাইনরা ১১ টি মসজিদ পুড়িয়ে দেয় এবং ২০০-র ও বেশি মুসলিমকে পেগু অঞ্চলে হত্যা করে । মায়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে একটি নাগরিকত্ব আইন তৈরি করে ৮ থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের নাগরিকত্বের অধিকার অস্বীকার করে । রাষ্ট্রীয় ভাবে তারা রোহিঙ্গাদেরকে সে দেশে দেখতে চায়না । মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ইতোমধ্যে জাতিসংঘকে বলেছেন UNHCR এর মাধ্যমে শরণার্থী শিবির বা অন্য কোন দেশে তাদের পুনর্বাসন ছাড়া বিকল্প কোন সমাধান নেই ।
১৯৮২ –র নাগরিকত্ব আইনের ফলে রোহিঙ্গাদের চালাফেরা নিয়ন্ত্রিত, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি সকল মৌলিক মানবাধিকার থেকে তারা বঞ্চিত । এমনকি সংস্কৃতির লালন, বিয়ে, পরিবার গঠন, সন্তান ধারণের অধিকার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে । বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হয় তাদের । দশকের পর দশক প্রতিনিয়ত হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, খাদ্যের অভাব, আশ্রয় ও নিরাপত্তাহীনতা, অন্যায়ভাবে করারোপ সবকিছু ঠাণ্ডা মাথায় ধীর গতিতে গণ হত্যার চেয়ে জঘন্য । বিষয়গুলো the Convention on the Prevention and Punisment of the Crime of Genocide এর সাথে সম্পর্কিত । মায়ানমারের উগ্র আচরন, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা এবং বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি সব কিছুই গনহত্যার সহায়ক হিসেবে কাজ করছে ।
রোহিঙ্গাদের অতিত যদি দেখি, তারা আরাকান রাজ্যে ৭৮৫ থেকে ৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে বসবাস করছে । মায়ানমারের শাসক গোষ্ঠী আরাকান ১৭০০ সালের দিকে দখল করে এবং নাম রাখে রাখাইন রাজ্য । সরকারের বর্ণবাদনীতির কারনে এখন তারা নিজ দেশে পরবাসী । একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং মায়ানমারের রাজনৈতিক বাস্তবতার আলকে দেখা যাক । ১৯৬০ –র দশকে ভিয়েতনামের বুদ্ধ সন্ন্যাসি থিচ নাথ হান ‘Engaged Buddhism’ এর ধারনা দেন । যার ফলাফল আজকের ধারাবাহিক ভয়াবহতা । রোহিঙ্গারা মুসলিম এটা তাদের নির্যাতিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন । মায়ানমারের প্রধান গোষ্ঠীগুলো মনে করে সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐক্যের জন্য অন্য ধর্ম বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্থান সেখানে নেই । দেশটিকে স্বাধীনতার পর থেকেই জাতিগতভাবে বিভক্তির মধ্যের রেখেছে বিদেশি শক্তিগুলো । রাখাইনরা বিশ্বাস করে সকল ‘কালার’ বা কালো চামড়ার মুসলমানদের হত্যা করা উচিত ।
অং সাং সু চির বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তার নিজ দেশ থেকে বাস্তবায়ন করা উচিত কিন্তু তিনি ও তার দল সতর্কতার সাথে বিষয়টি এড়িয়ে চলছে । ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার সরকারি নীতিও এর সাথে অন্তর্ভুক্ত । সেক্ষেত্রে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন সঙ্ঘাতের সমাধান হতে পারে । রোহিঙ্গারা মায়ানমারের অধিবাসী নয় বলে তাদের উপর যে নির্যাতন হচ্ছে তা জায়েজ করার সুযোগ নেই । নিরিহ, অশিক্ষিত, বঞ্চিত রোহিঙ্গাদের সামান্য কোন প্রতিবাদকে কোথাও কোথাও তথাকথিত জিহাদ কানেকশন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে । কিন্তু কেউ প্রশ্ন করছে না নির্যাতনের মাত্রা কোন পর্যায়ে গেলে মানুষ প্রতিবাদ করে । স্বার্থ ও পক্ষপাত থেকে বেড়িয়ে ভিন্ন চোখে দেখার মত রাজনীতি বিশ্বে প্রচলিত নেই, সমস্যা সেখানে । দৃশ্যত মনে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সমস্যা মায়ানমারে গণতন্ত্র উত্থানের ধাঁধায় হারিয়ে গেছে ।
মায়ানমারের যে বুদ্ধ সন্ন্যাসিরা গত পাঁচ বছর আগেও সেখানে মানবতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিল তারা আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত । তাদেরে স্ববিরোধী অবস্থানের অন্যতম কারন হল রোহিঙ্গারা তাদের দলভুক্ত নয় । অন্য দিকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় । উগ্র জাতীয়তা আর ইসলাম বিদ্বেষী রুপ ভয়াবহ আকার ধারন করেছে সেখানে ।
মায়ানমারে সশস্ত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে যেমন – কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, সান স্টেট আর্মি । মায়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদেরকে তাদের মত হুমকি হিসেবে দেখে । তার সাথে যোগ হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট ইত্যাদি সংগঠনকে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করে সকল নিরিহ রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের দাবানল চালানো হচ্ছে সেখানে । একই সাথে মায়ানমার বৈশ্বিক পরিবেশের সুবিধা নিচ্ছে । শরণার্থীদের এখন মানবিক দৃষ্টির পরিবর্তে হুমকি হিসেবে দেখা হয় । নিজ দেশের জনগনের নিরাপত্তার বিধান করতে হবে আর অন্য দেশের বা বহিরাগত, অবৈধ, শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয় যা রাষ্ট্রীয় নীতির দ্বৈত রুপ ।
Burmanization বা Homogenization নীতির কারনে আজ রাখাইনরা নিজ দেশের মধ্যে শত্রু বানিয়ে নিয়েছে রোহিঙ্গাদেরকে । এই দৃষ্টিতে বিষয়টা যত না আন্তর্জাতিক তার থেকে অভ্যন্তরীণ বেশি । রাজনৈতিক বাস্তবতার কারনে সেখানে অনেক মানবাধিকার সংস্থা ইচ্ছা থাকার পরেও রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াতে পারছেনা । আসলে বিষয়টা মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভাবার কোন সুযোগ নেই । কারন এর সাথে শরণার্থী সমস্যা ও মানবাধিকারের প্রশ্ন জড়িত । তাই আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ গ্রহনের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে । ASEAN এর ২০০৫ সালের The Principle of Responsibility to Protect এর আওতায় কার্যকর ভুমিকা রাখা উচিত ।
জীবনের শেষ আশ্রয়টুকু পাওয়ার আশায় যখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চেষ্টা করছে, তাদেরকে আশ্রয় না দিয়ে জোর করে অসীম সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে । বাংলাদেশের পক্ষে বলা হচ্ছে এই বৃহৎ সংখ্যক মানুষের দায়ভার বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয় । বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ফ্রান্সের ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, অ্যাকশন আগেইনষ্ট হাঙ্গার এবং ব্রিটেন ভিত্তিক মুসলিম এইড সংস্থাগুলোর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে যারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিচ্ছিল । বলা হচ্ছে সাহায্য সংস্থাগুলোর সহায়তা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উৎসাহ দিচ্ছে । মায়ানমার থেকে বহিষ্কৃত এবং বাংলাদেশে অবাঞ্চিত হয়ে তারা আজ ধ্বংসের মুখে যা সকল অবস্থাতেই অগ্রহণীয় ।
বাংলাদেশ ও মায়ানমার রোহিঙ্গাদের যেভাবে নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখছে বাস্তবে তা সঠিক নয় । পরিকল্পিত ধ্বংসের মুখে কাউকে ফিরিয়ে দেয়া যদি খারাপ হয় তাহলে, সাহায্য সংস্থার কাজ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে জঘন্য কাজ । রাজনৈতিক কৌশলের কাছে মানবতাকে হত্যা করা হচ্ছে । সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ বেড়েই চলছে কিন্তু বিশ্ব দরবারে সামান্য খবর ছাড়া আর তেমন কোন সাড়াশব্দ নেই । যা মানবতার জন্য অশনিসংকেত । আন্তর্জাতিক বা বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে মায়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগের জন্য নুন্যতম চেষ্টাও চালাচ্ছে না । বড় বড় মিডিয়া কর্পোরেশনগুলোও অন্যমনস্ক ।
এ সবের প্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন সামনে আসাই স্বাভাবিক – কেন জাতিসংঘ গনহত্যার নিন্দা ও বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করছে না ? কোথায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ? বুদ্ধ গুরু, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দালাইলামা কেন নিরব ? গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন – ‘Teach this triple truth to all: A generous heart, kind speech and a life of service and compassion renew humanity.’ কোথায় সেই বানী ? বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উভয়ই কৌশলগত কারনে ভ্রান্ত ধারনার জন্ম দিচ্ছে । UNHCR কোন অজানা কারণে সেই ১৯৯১ সাল থেকে মিথ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আসছে । মানুষের জীবন বাঁচানোর নামে আরবের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে । অন্য দিকে মায়ানমারে গণহত্যা চললেও দেশটির সাথে নতুন নতুন বাণিজ্য চুক্তি এবং দেশটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে । সুযোগটা তৈরি করে ব্যাবহার করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ পশ্চিমা বিশ্ব চীনের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান তৈরির উদ্দেশ্যে ।
মায়ানমার ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় অনেক সম্ভাবনাময় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি কৌশল ও স্বার্থের দিকে, মানবাধিকারের দিকে নয় । এই বিবেচনায় স্বার্থের ক্ষেত্রে মানবাধিকার একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার মাত্র । কোন জাতির ভাগ্যে কী জুটল তা তাদের ভাবাড় বিষয় নয় । প্যালেস্টাইন, বসনিয়া, কাশ্মীর তার জ্বলন্ত উদাহরণ । আশ্চর্যের বিষয় রোহিঙ্গারা যদি ইহুদী, খ্রিস্টান বা অন্য কোন জাতি হতো তাহলে প্রতিক্রিয়া ভিন্নরূপ দেখত বিশ্ববাসী । পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত । আর মুসলিম বিশ্ব এই বাস্তবতার কবলে পড়ে দিশেহারা ।
জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশন ও the UN Resolution 96 (1) অনুযায়ী সকল রাষ্ট্র গনহত্যা বন্ধে সাহায্য করতে বাধ্য । এর পরেও The Universal Declaration on Human Rights ও আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী কাজ করছে মায়ানমার । অন্য দিকে যেহেতু বাংলাদেশ ১৯৫১ সালের The Convention on Refugee এবং ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী নয় তাই আইনের ফাঁক দেখিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে বাধ্য নয় । ১৯৯১-৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার ফলে যে আর্থসামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং বর্তমানে ‘সন্ত্রাস’! ত্রাসের কারনে বাংলাদেশ তাদের ব্যাপারে নারাজ । বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বাংলাদেশ নতুন করে চাপ বাড়াতে চায় না । তা ছাড়া আগে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনগনের সহানুভুতি সৃষ্টির যে চেষ্টা ছিল তা অনেক কমে গেছে । এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সাথে রোহিঙ্গা সমস্যা যোগ হলে সরকার বেকায়দায় পরার সুযোগ আছে । সব মিলিয়ে বাংলাদেশ নিজের হিসাব নিয়ে ব্যাস্ত । একই সাথে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী এবং ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অংশীদার । ঐ সব কনভেনশন ও বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক মানবাধিকারের বিধান অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ বাধ্য ।
অবস্থা বিবেচনায় জাতিসংঘের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে । মায়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে না দিলে বিভিন্ন দেশ বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে সংখ্যালঘু জাতিদের নির্যাতন করতে উৎসাহিত হবে । দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি জাতিকে রক্ষার করার দায়িত্ব বিশ্ব সম্প্রদায়ের । আর না পারলে এই ঘৃণ্য সংস্কৃতি বিশ্বকে অস্থিতিশীলতার পথ দেখাবে । মুসলিম বিশ্ব থেকে মায়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে এই সংকটের সমাধান খোঁজার পাশাপাশি বিপরীত ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনও অনেক বেশি । কারন এর সাথে মায়ানমারের জাতীয়তার প্রশ্ন জড়িত । সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রচেষ্টাই কার্যকর সমাধানের পথ দেখাতে পারে । যাইহোক এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতেই হবে । কারন রাষ্ট্রহীন মানবজাতি একটি অসম্ভব এবং অগ্রহণীয় ধারণা । রোহিঙ্গাদের জীবনধারন ও আশ্রয় কারো করুনার বিষয় নয় ! এটা তাদের অধিকার ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন