বিপন্ন গণতন্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন টম ক্রুজ ২৬ মে, ২০১৩, ১১:৫১:৪৩ রাত
পুলিশ প্রহরায় একদিকে শাসকদল সভা-সমাবেশ মিছিল করছে, অন্যদিকে বিরোধী দল রাস্তায় নামলেই লাঠি গুলি টিয়ারগ্যাসের শিকার হচ্ছেসাখাওয়াত হোসেন দেশে এখন গণতন্ত্রের একমুখী যাত্রা শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররা সভা-সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের পাহারা দেয়। অন্যদিকে বিরোধী দল রাজপথে নামলেই চলে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও নির্বিচারে গুলি। চলমান এ পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা 'গণতন্ত্রের একমুখী ভয়ঙ্কর যাত্রা' বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, এ ধারা অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। অগণতান্ত্রিক অপশক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধ কর্মকা-ও নজিরবিহীনভাবে বাড়বে। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী দলগুলোকে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়া হলে তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে 'জঙ্গি' হয়ে উঠবে। দেশজুড়ে চোরাগোপ্তা হামলা ও সহিংসতায় সাধারণ মানুষের লাশের মিছিল দীর্ঘ হবে। রাজনীতিকরা বলছেন, সরকার তার স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে সভা-সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। আবার কখনো কখনো অনুমতি দেয়ার পরও তা 'গ্রহণযোগ্য হয়নি' ধুয়া তুলে সমাবেশস্থল থেকে মাইক খুলে নিচ্ছে। পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। যানজটসহ বিভিন্ন অসুবিধার কথা বলে এসব করা হলেও একই স্থানে সরকারি দল নির্বিঘ্নে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এদিকে রাজনৈতিক সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অন্যদিকে 'রাজনৈতিক মামলা' বিবেচনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়েরকৃত খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতির মতো গুরুতর অপরাধের মামলাও প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ দাস খুনের মামলার চার্জশিট থেকে চিহ্নিত খুনি ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার নাম বাদ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বেপরোয়া চাঁদাবাজি, টেন্ডার ছিনতাই ও দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সরাসরি জড়িয়ে পড়লেও তাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্রের একপেশে যাত্রায় সরকার সরাসরি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। তাই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশকে টার্গেট করে জামায়াত-শিবিরের হামলার এর অন্যতম কারণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে সরকার পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। আর এ জন্য দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তারা সরাসরি মাঠে নেমে রাজনৈতিক সস্নোগান দিচ্ছে। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করলেও তারা তাদের কর্মীদের উদ্দেশে বলছেন, 'জামায়াত-শিবির যেখানে পাবেন, তাদের ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিন।' দেশের বৈধ একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গণধোলাই দেয়ার নির্দেশে তাদের সুস্পষ্টভাবে স্বৈরাচারী মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছে। বর্তমান সরকারের আগে গণতন্ত্রের এমন নাজুক পরিস্থিতি কখনোই দেখা যায়নি।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন