দুই ইস্যুতে আসতে পারে আন্দোলন বিরতি!

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:২৯:২৬ সকাল



সিকদার মোহাম্মদঃ

দুই ইস্যুতে চলমান নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে আগামী সপ্তাহে আসতে পারে বিরতি আর চলতি সপ্তাহের চলমান আন্দোলন অবরোধ বর্ধিত হয়ে ১৩২ ঘন্টা হতে যাচ্ছে । একই সাথে চলমান আন্দোলনের কৌশল হিসেবে বিরতি পর তা অসহযোগ আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়ে যাবে বলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সূত্রে জানা গেছে ।

১৮ দলের পূর্বের কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত অবরোধ রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় বাড়ানো হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নামে অব্যাহত মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিরতিহীন এ কর্মসূচি টানতে চাইছে দলটি। এক্ষত্রে সরকারকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে আটক এবং কার্যালয় তছনছ করার প্রতিবাদে পুরোনো কর্মসূচির সঙ্গে নতুন করে আরো ৬০ ঘন্টা যোগ হতে পারে। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জোটের একাধিক সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহ জুড়ে অবরোধ থাকলেও আগামী সপ্তাহের অবরোধ কর্মসূচিতে শিথিল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের রাজনীতি বিষয়ক বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। মূলত তার সম্মানে এবং সফরকে কেন্দ্রকরে আন্দোলনে বিরতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছে বিরোধী জোট। তবে আরেকটি সূত্রমতে তৃণমূলের নেতা কর্মিরা আন্দোলন করে দাবি আদায়ে যে মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে আন্দোলন বিরতি কেবল ঢাকার মধ্যেই সীমিত থাকতে পারে, দেশের বাকি অংশে সেক্ষেত্রে চলমান কর্মসূচী অব্যাহত থাকতে পারে । মূলত, ফয়সালার শেষ উপায় বা সুযোগ হিসেবে তারানকো সফরকেও আন্দোলনের পাশাপাশি প্রধান্য দিতে চান বেগম খালেদা জিয়া। সূত্রমতে, তারানকোর সাথে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধানকেও বিরোধী জোট আন্দোলনের অংশ মনে করছেন।

এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা আটকে থাকার বিষয় বিরোধী জোট আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে , যাতে করে এই বিরতির সময় স্কুলগুলো তাদের পরীক্ষা গুটিয়ে আনতে পারে তার জন্যও আন্দোলনের বিরতি টানা হতে পারে । তাই দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পরও বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন।

আর এ কারণেই শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতেও বিএনপি চেয়ারপারসন আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানাতেও ভুল করেননি। সরকারকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘স্বৈরশাসকের পথ বেছে নেবেন না। তাহলে পরিণতি স্বৈরশাসকদের মতোই হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে সংলাপের মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পথ খুলে দিন। একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার উদ্যোগ বাসনায় সরকার দেশকে এক চরম অনিশ্চয়তার পথে ঠেলেছে। সংলাপ ও সমঝোতার আহবান তারা বরাবর উপেক্ষা কিংবা চাতুর্যের মাধ্যমে এড়িয়ে যাচ্ছে।’ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেণ ।এছাড়াও তিনি শান্তি, স্থিতি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র অব্যাহত রাখারও আহবান জানান।

জোটের একাধিক সূত্র জানায়, তারানকোর আসন্ন ঢাকা সফরের পরপরই চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নামবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে অসহযোগ আন্দোলনে চলে যাবেন তিনি। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সংলাপ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ আগ্রহের কথাও তুলে ধরবেন বেগম জিয়া। এজন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূতের বাংলাদেশ সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন তিনি।

মূলত সরকার বিরোধী দল দমনে হার্ডলাইনে চলে যাওয়া, সংলাপ নিয়ে , সরকারের অনিহা এবং বিরোধী জোটছাড়াই এক তরফা নির্বাচনের পথে হাটা বিরোধীজোটকে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বরাবর সরকারপক্ষ বাধ্য করছে বলে জোট নেতারা মনে করছেন ।

সংলাপ ইস্যুতে বিএনপি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ খোলা নেই। এজন্য চলতি সপ্তাহ জুড়েই আন্দোলনে থাকছে দলটি।

শুক্রবার রাতে সাড়ে ৯টায় দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ শনিবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

দলটির নেতারা বলছেন, গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার আন্দোলন মোকাবেলায় হার্ডলাইনে যাওয়ায় বিএনপি আর নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে না। দাবিতে বিএনপি অনড় রয়েছে এবং দমন নিপীড়ন গৌন করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না। এজন্য দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রচন্ড চাপ রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

এদিকে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীকে তার অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছে সুপ্রীম কোর্ট বার কাউন্সিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

বিএনপি অপর একটি সূত্র জানায়, সংলাপ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের চিঠির কোনো উত্তর না দেওয়ায় সরকারের নেতিবাচক মনোভাব স্পষ্ট বলে ধরে নিয়েছে দলটি। তাছাড়া মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক নিয়ে সরকারের অবস্থানেও অসন্তোষ বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। চূড়ান্ত সংলাপের আগে গণমাধ্যমে নানা তথ্য চলে আসায় ক্ষুব্ধ তারা।

এ ছাড়া অবরোধে সরকারের কঠোর অবস্থান ও দলের সিনিয়র পাঁচ নেতাকে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনা, কার্যালয় ভাংচুর করে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে গ্রেফতার করায় সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এছাড়াও আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণার কৌশল হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগ এলাকায় বাসে বোমা মেরে হতাহতের এবং শনিবার মালিবাগে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনার বিষয়টাকেও বিরোধী জোট ভালভাবে দেখছেনা । নাম প্রকাশ না করার শর্তে এওয়ান নিউজকে জোটের এক শীর্ষনেতা জানান, সংহিসতা ঘটার এলাকাগুলো থেকে কোন দুর্বৃত্তকে আটক না করে উক্ত ঘটনায় জোটনেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মাধ্যমে সরকারের হীনউদ্দেশ্যই জনমনে প্রকাশ পাচ্ছে । সরকার একঢিলে দুই পাখি শিকারে ব্যস্ত, প্রথমতঃ জনমনে আন্দোলনের প্রতি ঘৃণা তৈরি, দ্বিতীয়তঃ সহিংস ঘটনার দায় জোটনেতাদের প্রতি চাপিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্বকে চাপের মধ্যে ফেলা । তিনি জানান, এর দ্বারা সরকারের কোনটাই বাস্তবায়ন হবেনা ।

এ অবস্থায় ১৮ দলকে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলেই মানে করছে সংশ্লিষ্ট বিরোধী জোটটি। এজন্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কর্মসূচি পালনে কড়া নির্দেশ রয়েছে জোটের শরিকসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাদের ওপর। আর আন্দোলন-কর্মসূচির পুরো বিষয়টি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

০১ ডিসেম্বর ২০১৩, রবিবার এওয়ান নিউজ২৪.কম এ প্রকাশিত

বিষয়: রাজনীতি

১০৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File