এরশাদের গাছের তলারটা কুঁড়ানো শেষ, এবার খাওয়ার পালা গাছেরটা
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২১ নভেম্বর, ২০১৩, ০২:৫৯:১৯ দুপুর
সিকদার মোহাম্মদঃ
জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মহা-উৎসাহে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিয়েছে। এ নিয়ে অনলাইন পোর্টাল ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার সহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আলোচনার চাইতে সমালোচনার ঝড়ই বেশী বইছে । নতুন করে উঠে আসছে তার পুরনো খেতাব ' বিশ্ববেহায়া' এবং আরও অনেক নিত্য-নতুন অভিধা। অনেকে আবার এরশাদকে নিয়ে তৈরি করছেন নানারকম গল্প। এরশাদের দু'দিন আগের বক্তব্য অনুযায়ী তার মুখে থুথু মারার জন্যও আহবান জানাচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ।বস্তুত গত শনিবারে এরশাদের দলের নেতারা সরকার বিরোধী যে সব বক্তব্য প্রদান করেন, তার ফলে মনে হচ্ছিল এবার বুঝি সত্যিই এরশাদ মহাজোট ছেড়ে আসছেন কিন্তু বাস্তবতা হলো এরশাদ এতোদিন তলারটা কুঁড়িয়ে সন্তুুষ্ট ছিলেননা এবার যেহেতু গাছেরটা খাবার সময় এসেছে তা তিনি হাত ছাড়া করবেনইবা কেন ?
মজার বিষয় হলো,শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার,দুর্নীতিবাজ, শতশত হেফাজত কর্মি হত্যাকারী দাবী করে বলেছিলেন, হাসিনা আমাকে দুর্নীতিবাজ বলেন। অথচ তিনিই দুর্নীতিবাজ। তার আমলেই দুর্নীতি হয়েছে। পদ্মসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনিতে দুর্নীতি হয়েছে। আপনি (প্রধামনন্ত্রী) এখন দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন।’ ‘দেশে এখন গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চলছে। আমাকে দুই নেত্রী স্বৈরাচার বলেন। অথচ এই দুই নেত্রীই গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। জাতি এ থেকে মুক্তি চায়।’
এমনকি জাতীয় পার্টির শাসনামলে মানুষ হত্যা করা হয়নি দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘তারা আমাকে অভিযোগ করে ড. মিলন ও নূর হোসেনকে হত্যা করেছি। তারা নিজেদের স্বার্থেই তাদের হত্যা করেছে।’বলে খোদ হাসিনা খালেদাকে অভিযুক্ত করেন ।
আর হেফাজতের হত্যার জন্যতো শেখ হাসিনাকে আবার অভিযুক্ত করে বলেন,গত ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতের সমাবেশে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে হত্যা করে রাস্তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়েছে, মানুষের মন থেকে রক্তের দাগ ধুয়ে ফেলা যাবে না বলেও সাবেক এই স্বৈরশাসক অভিযোগ করেন । অথচ সব কিছু কয়েকঘন্টায় ভুলে গিয়ে বঙ্গভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন ।
মূলত,কয়েকদিন আগে এরশাদ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিএনপি ছাড়া তিনি নির্বাচনে যাবেন না। তিনি ‘বেঈমান’ হয়ে মরতে চান না। বিএনপি ছাড়া নির্বাচনে গেলে তাকে জনগণ থুথু দেবে বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ। এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেহেশতে যেতেও রাজি নন বলে জানিয়েছিলেন আলোচিত-সমালোচিত সাবেক এই সেনাশাসক। এককভাবে নির্বাচন করব। সব দল না এলে নির্বাচনে যাব না। কোনো জোটে থাকব না। নতুন জোট গঠন করব। নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনে যাব। বিএনপিরও যাওয়া উচিত। -এগুলো সোমবার পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্য। সবশেষ তিনি এও বলেছেন, নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তার দল নির্বাচন বর্জন করবে। শপথের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। বিএনপিকে বলব, তারাও যেন দাবি-দাওয়া নিয়ে আসে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।’ বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য নির্বাচন করছেন কি না, জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘সরকার গঠনের জন্য নির্বাচন করছি। প্রধান বিরোধী দল হওয়ার জন্য নয়। আমরা চাই সব দল নির্বাচনে অংশ নিক।’ এরশাদের বক্তব্য এখন ‘টক অব দা কান্ট্রি’। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তার দেয়া বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক গণ্ডি পেরিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটে নানা মন্তব্য তুলে ধরছেন প্রবাসী বাঙালিরাও।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেছিলেন, দেশে কোন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র শুরু হয়েছে। বর্তমানে যে সংকট চলেছে তা সংকট নয়। এটা সংকটের উপসর্গ মাত্র। সংকট সামনে অপেক্ষা করছে। জণগণের মুখে একটাই বুলি, এই দুই দলের হাত থেকে আমরা রক্ষা চাই। মানুষ তৃতীয় শক্তি চায়। পরিবর্তন চায়।
সদ্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ট বনে যাওয়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু জাতীয় পার্টিতে আওয়ামীপন্থী নেতা হিসাবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের সাথে জোট করার পিছনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এ কারণে মহাজোট ক্ষমতায় আসলে তিনি সরকারের কাছে বিভিন্ন ব্যবসা বাগিয়ে নিয়ে বিপুল বিত্তের মালিক হন। তিনিই রীতিমত চোখ উল্টালেন এবং শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা আওয়ামী দু:শাসনের অবসান চাই। আওয়ামী দু:শাসনের অবসান ঘটিয়ে আগামীতে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতেই হবে। মাঝখানে একটি দিনের ব্যবধানে কি ভাবে দুঃশাসন সুশাসনে রুপান্তর ঘটল তা জাতির নিকট প্রশ্নই থেকে যাবে ।
সোমবারের শপথ অনুষ্ঠান শেষে নব নিযুক্ত জাতীয় পার্টির প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এইচ এম এরশাদের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আলাদা কক্ষে আলোচনাও করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফটকের সামনে নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলামকে দেখে কাছে ডেকে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেন, ‘এবার খুশি...’। অথচ জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক এ্যাড: সালমা ইসলাম এমপি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে বলেছিলেন , বিদেশিদের সমর্থন নিয়ে আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না হাসিনা। কাঁদো হাসিনা কাঁদো।
মূলত এরশাদসহ তার দলের সারথীদের এহেন বক্তব্যের সাথে কাজের অমিল হেতু বোদ্ধা মহলে এই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আর তা হল এরশাদকে গতপাঁচ বছরে গাছের তলারটা কুঁড়ি্য়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে, ক্ষমতার পাঁচ বছর শেষে আওয়ামীলীগের এহেন দশায় এখন গাছেরটা খাবারের সুযোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা আর কেনইবা সে সুযোগ তারা হাতছাড়া করবেন ?
১৯ নভেম্বর ২০১৩, মঙ্গলবার
বিষয়: রাজনীতি
১৪৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন