এরশাদ গাছেরটাও খাবে তলারটাও কুঁড়াবে

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:১৬:৫৭ সন্ধ্যা



সিকদার মোহাম্মদঃ হাল আমলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কদর বেড়েছে । আর এই সুযোগে তারা ‘গাছেরটাও খাওয়া তলারটাও কুঁড়ানোর‘ নীতিগ্রহণ করেছেন ।অর্থ্যাৎ তারা সরকারের শেষ মূহুর্তের সুযোগ সুবিধা ও আওয়ামী লীগের সঙ্গও ত্যাগ করছেননা আবার ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে মহাজোট ছাড়ার চিন্তা করছেন, অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে না আসলে নির্বাচনে যোগ দিয়ে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে আর্বিভূত হবার খায়েশও বজায় রেখেছেন ।এই নানাবিধ সম্ভাবনার বিষয় উৎসাহিত হয়ে এরশাদের পুরাতন স্বৈরাচারী চরিত্রও মাথাচারা দিয়ে উঠায় দলের মধ্যে প্রবল উত্তেজানা ও ক্ষোভ তৈরি করছে ।

সহসাই মহাজোট 'ছেড়ে' এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলটির সূত্র জানায়, সমঝোতার অংশ হিসেবেই নির্বাচন করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন এরশাদ আবার প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারেও যোগ দেবে জাপা।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দুই পালিত কন্যা নিয়ে এখন সরব আলোচনা তাঁর দলে। ওই দুই কন্যা এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। এরশাদ গাইবান্ধা ও নারায়ণগঞ্জে দলের দুই ত্যাগী ও প্রেসিডিয়াম সদস্যকে বাদ দিয়ে এই দুই কন্যাকে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আকস্মিকভাবে এরশাদের দুই পালিত কন্যার বিষয় তার এই সিধান্তকে স্বৈরাচারী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা । এসব ঘটনায় এরশাদের ওপর ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, এরশাদ একজন 'রহস্যপুরুষ' হওয়ায় তাঁর পক্ষে রওশনের অজান্তেও পালিত কন্যা থাকা স্বাভাবিক। তবে এসব পালিত কন্যাদের রাজনীতিতে আনার বিষয়ে নেতা-কর্মীদের অন্তত একবারের জন্য হলেও মতামত নেওয়া উচিত ছিল। অনেকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, দীর্ঘ দুই যুগ পর্যন্ত দল করেও যদি কেউ মনোনয়ন না পেয়ে পালিত কন্যারা মনোনয়ন পেয়ে যান তবে আগামীতে এরশাদকে পালিত কন্যা ও পালিত পুত্রদের দিয়েই দল চালাতে হবে। পালিত কন্যাকে এরশাদের প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ায় এরই মধ্যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসিহ।

সংবাদ পত্রে প্রকাশিত খবর অনুসারে জানা যায়, পাঁচ দিনের সিঙ্গাপুর সফর শেষে মঙ্গলবার রাতে দেশে ফিরেছেন এরশাদ। সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তার ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। দলটির সূত্র জানায়, চলতি মাসের মাঝামাঝি অথবা ১৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলংকা সফর থেকে ফিরে সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এরশাদ মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন। দলটির তিনজন এমপি সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী হতে পারেন।

মঙ্গলবার দলের চার প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে এরশাদের সিঙ্গাপুর সফর ও জাপার ভবিষ্যৎ গন্তব্য প্রসঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকরা জানতে পারেন যে, জাপার সাবেক এক মহাসচিব ও সাবেক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। তারা এরশাদকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার পরামর্শ দেন।

গত ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে বৈঠক করেন এরশাদ। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান, 'জাতীয় পার্টি মহাজোটেই থাকছে। বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ ও জাপা আলাদা নির্বাচন করবে।' পরদিন জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে একে অসত্য, ভিত্তিহীন ও দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দেন এরশাদ। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এমন আলোচনা হয়নি।

গত ২১ অক্টোবর থেকে নীরব রয়েছেন এরশাদ। দলীয় কোনো কর্মসূচিতে যোগ দেননি তিনি। আগামী ৮ নভেম্বর গাজীপুরে ও ৯ নভেম্বর রাজধানীর বাসাবো মাঠে জাপার জনসভা স্থগিত করেছেন তিনি। গাজীপুর সভাপতি ব্রিগেডিয়ার (অব.) কাজী মাহমুদ হাসান জনসভা স্থগিতের কথা জানিয়ে বলেন, 'মাইকের সামনে দাঁড়ালে ওনাকে কিছু না কিছু বলতেই হবে। মহাজোটে থাকবেন, কি থাকবেন না তার ঘোষণা দিতে হবে। দলের সিদ্ধান্তের কথা, ভবিষ্যৎ গন্তব্যের কথা বলতে হবে। মনে হয় এখনই তিনি চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা দিতে চান না। এ কারণেই নীরব আছেন।'

বিষয়: রাজনীতি

৮৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File