বেগম জিয়া ও শিবির আতঙ্কে সরকার

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৫ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:১৫:৫২ সকাল



সিকদার মোহাম্মদঃ

সরকার ও আওয়ামী লীগের হাল কর্মকান্ডে প্রতিয়মান হচ্ছে সরকারের প্রশাসন ও উচ্চ মহল বেগম জিয়া ও শিবির আতঙ্কে ভুগছে । যেখানেই বেগম খালেদা জিয়ার কর্মসূচি সেখানেই মরিয়া হয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে । আর অন্যদিকে জননিরাপত্তার অজুহাতে পথচারি ও সাধারণ মানুষকে তল্লাসির নামে চরমভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে বলে ভুক্তভূগিদের অভিযোগ । যদিও সরকার ও প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে সব কিছুর প্রধান লক্ষ হচ্ছে জামায়াত শিবিরের সম্ভাব্য হামলা বা ‌‌'নাশকতা' মোকাবেলা করা । আর ২৫ অক্টোবরের আতঙ্কতো রয়েছেই ।

এদিকে ২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা নিয়ে জনমনে রয়েছে চরম ভীতি, কেই প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বেড় হচ্ছে না । নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে শুরু হয়েছে যানবাহন তল্লাশি, ধরপাকড়। মোড়ে মোড়ে পথচারীদেরও তল্লাশি করা হচ্ছে ৷ আর এ ক্ষেত্রে দাড়ি সমেত লোকজন রয়েছেন চরম আতঙ্কে, কখন তারা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জামাত-শিবির হিসেবে চিত্রিত হন, আর এতে অযাচিত আটক ও গ্রেপ্তারের আশংকায় চরম বিব্রতকর সময় পাড় করছেন ।

২৫ অক্টোবরে ক্ষমতাশীনদল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপির পাল্টাপাল্টি শোডাউন ঘিরে রাজধানীতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। দিন যত যাচ্ছে এ উত্তাপ যেন তত বাড়ছে। এ নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক। সবার প্রশ্ন, কী হতে যাচ্ছে দেশে? তবে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমে অভিযোগ রয়েছে জন নিরাপত্তার স্বার্থে যেখানে উভয় দলের সম্ভাব্য অপতৎপরতা রোধকরা জরুরি, সেখানে তারা কেবল জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপরও নজরদারি বৃদ্ধি করার নামে অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে ।

আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর টেনশন অনেকগুনে বাড়িয়ে দিচ্ছে কতিপয় অনলাইন পোর্টাল, যারা কোন ধরনের তথ্য ছাড়াই আতংক ছড়াতে বিভিন্ন ধরণের সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে । আবাক হলেও সত্য ঐ ধরণের খবরের বিষয় কোন পুলিশি বা গোয়েন্দা তথ্য আছে কিনা তা যখন খোদ পুলিশের কাছে যানতে চাওয়া হয় তখন সে সকল বিষয় তারা না বলে দিচ্ছে । আর এই না করার বিষয়টিও আবার ঐ রিপোর্টেও উদ্ধৃত করা হচ্ছে । ফলে সচেতন পাঠকদের প্রশ্ন, যে খবরের গোয়েন্দা বা পুলিশি তথ্য নাই তা প্রকাশ করে কেন জনমনে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে । আর এই ধরণের রিপোর্টের কারণে অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনকেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে ।

বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে জামাত-শিবিরকে মোকাবেলার জন্য আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মিদের আগামীকাল শুক্রবার মসজিদে মসজিদে অবস্থান নেয়া কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, “আমাদের কাছে তথ্য আছে গুপ্ত হামলা হতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।" জামায়াত শিবিরের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ঢাকা ও তার আশপাশের মসজিদগুলোতে অবস্থান নিচ্ছে। যারা (বিএনপি-জামায়াত) বাংলাদেশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চায় তারা মসজিদগুলোকে অপবিত্র করতে পারে। কিন্তু তাদের সে সুযোগ দেওয়া যাবে না। এ জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের শুক্রবার মসজিদগুলোতে অবস্থান নিতে হবে। যাতে মসজিদ থেকে কেউ উস্কানি দিতে না পারে। তারা নামাজ পড়ার আড়ালে মসজিদে বসে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী অপপ্রচার চালাতে না পারে।' বিরোধী দলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে নানক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বলেন, “সন্ত্রাসের পথ থেকে সরে এসে আপনাকে শান্তির পথে আসতেই হবে। নইলে জন বিছিন্ন হয়ে যাবেন এবং বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবেন না।”

মূলত বেগম জিয়া গত ২০ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সমাবেশেকে কেন্দ করে পুলিশ ঢাকায় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে, এমন কি ইনডোর সভাও নিষিদ্ধ করে । এ নিয়ে নাটকীতার পর প্রাথমিকভাবে পুলিশ বাধা দিলেও পরে ১৪টি শর্তে অনুমতি দেয়। তার আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বেগম জিয়া নিজ বাস ভবনে পুলিশ কর্তৃক অবরুদ্ধ হবার খবর ছড়িয়ে পরেছিল । তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পেশাজীবি সমাবেশে যোগদান করেন । একই অবস্থা রাজধানীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সমাবেশকে নিয়ে। শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রেস ক্লাবের চার পাশে ১২ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করে পুলিশ প্রেস ক্লাবের চারপাশ ঘিরে রাখে । বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর থেকে প্রেস ক্লাবের চারপাশে পুলিশ এই অবস্থান নেয়।

সমাবেশ শুরুর আগে দুপুরে বেশ কিছুক্ষণ বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে দুই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রেস ক্লাবে বিদ্যুতের দুটি সংযোগ লাইন থাকলেও সমাবেশ চলাকালে কোনোটিতেই বিদুৎ পাওয়া যাচ্ছিল না। ত্রা বাইরে থেকে বিদু্ৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার অভিযোগ করেন। বাধ্য হয়ে জেনারেটর দিয়ে অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

এদিকে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া অভিযোগ করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “প্রেস ক্লাব চত্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ধরনের সমস্যা না করলেও রাজধানীর বিভিন্নস্থানে জেলা থেকে আগত শিক্ষকদের পুলিশ তল্লাশি ও হয়রানী করেছে।”

আগামী ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের একটি সংগঠনের আয়োজনে আইনজীবী সমাবেশে খালেদা জিয়ার যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তার আগে ২৫ তারিখের সমাবেশ নিয়েই বেশী উত্তেজনা চলছে । ফলে একদিকে জামাত-শিবির অন্য দিকে খালেদা সর্বোপরি ২৫ আতংকে প্রশাসনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ।

বিষয়: রাজনীতি

৯১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File