এবারের কোরবানীর প্রস্তুতি যেমন ছিল
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৫৯:৪৯ সকাল
প্রস্তুত পশুর হাট; সীমান্তপথে আসছে গরু; চলছে চাঁদাবাজি; নির্ঘুম রাতে ব্যস্ত কামাররা
সিকদার মোহাম্মদঃ বাকি আর ৯ দিন এর পর ত্যাগের সাথে খুশির মিশ্রণে ঈদুল আজহা। ইতিমধ্যে কোরবানির পশু ঢুকতে শুরু করেছে রাজধানীতে। হাট প্রস্তুতির বেশিরভাগ কাজ শেষ। প্রতিটি হাটেই পশুবাহী গাড়ি থেকে নামছে কোরবানির পশু। তবে বেচা বিক্রি শুরুতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে । যখন এটা শুরু হবে তখন ক্রেতারা গরু সমেত রশি হাতে আর বিক্রেতারা চকচকে নোট নিয়ে বাড়ি ফিরবেন ।
গরূ হাটের পাশাপাশি কোরবানীর এই ঈদ সামনে রেখে সারা দেশের মত ব্যস্ত হয়ে উঠেছে কামারশালা। নির্ঘুম রাত পার করছেন কারিগররা। রাজধানীর কামারপাড়ার কারিগররা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তারা পশু জবাইয়ের ছুরিসহ প্রয়োজনীয় অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আরো কয়েকদিন পর বিক্রি জমবে বলে তারা আশা করেছেন।
অন্যান্যবারের ন্যায় এবারও গরু ছাগলের পাশাপাশি হাটে শোভা পাচ্ছে বড় আকারের উট। অন্যদিকে মাইকে চলছে ব্যাপক প্রচারণা। এরই মধ্যেই হাটের মূল চত্বরে প্যান্ডেল তৈরি করে পশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। তবে বাকি রয়েছে নিরাপত্তা চৌকি আর মূল তোরণ তৈরির কাজ। অন্যদিকে, মহাসড়কে পশুবাহীগাড়িতে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। অবশ্য হাট কর্তৃপক্ষের দাবি হাটের ভেতরে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা।
এবারও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ পাঁচ শতাংশ হারে হাসিল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি হাট চলাকালে ও হাট শেষে পশুবর্জ্য অপসারণে জনসাধারণের সহযোগিতাও কামনা করেছেন । রাজধানীতে মোট ২১টি হাটের ইজারা দিয়েছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
এদিকে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু চোরাচালান বেড়ে গেছে। এতে ক্ষতির আশঙ্কা করছে গরু খামারিরা। তারা বলছেন, এভাবে গরু আসতে থাকলে গরু পালন করে যে খরচ হয়েছে তা তোলাই দায় হয়ে যাবে। চোরাচালান রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে আমাদের সীমান্তজেলা গুলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেখা যায় বিভিন্ন সীমান্ত পথে আসছে বানের পানির ন্যায় ভারতীয় গরু । যশোর, লালমনিরহাট, সাতক্ষিরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর সীমান্ত পথে এসব গরু আসছে যার গন্তব্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাট ।অবৈধ পথে যে সব গরু নিয়ে আসছে তাতে সুযোগমত বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা।
লালমনিরহাট জেলার ২৯৫ কি.মি. সীমান্ত দিয়ে বানের পানির মত আসছে হাজার হাজার ভারতীয় গরু। গরু পার করতে প্রায় ৭ শতাধিক লোক সীমান্ত জুড়ে নিয়োজিত রয়েছেন। এদের স্থানীয় ভাষায় ডাংগোয়াল বলে।
কাটাঁতারের বেড়াবিহীন এলাকা দিয়ে কিংবা কাঁটাতারের উপর দিয়ে বাঁশের সাহায্যে গরু পার করতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় ডাংগোয়ালদের। বিনিময়ে তারা গরু প্রতি পেয়ে থাকেন ১ থেকে ২ হাজার টাকা।
ভারতের দহগ্রাম সীমান্তে কোন কাটা তারের বেড়া না থাকায় প্রতিদিন ডাংগোয়ালরা অবৈধ পথে যে সব গরু নিয়ে আসছে তাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। তবে ঘরে বসে থেকে সরকারদলীয় নেতারা, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর, গ্রাম পুলিশ, ভিডিপি কমান্ডারসহ স্থানীয় প্রশাসনের দালালরা গরু প্রতি ২/৩’শ টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। লাইনম্যানরা গরু প্রতি করিডোর ফি ৫’শ টাকা ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন।
আনীত গরু তিনবিঘা করিডোর দিয়ে পার করার সময় ২০ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ১৬০ টাকা। এছাড়া জেলার পশুর হাটগুলোতে দালালদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দালাল ছাড়া গরু ও ছাগল বিক্রি করা যাচ্ছে না। এগুলো বিক্রি হওয়ার পর দালালরা ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে জোর করে ১’শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করছে। দালালদের মাধ্যমে পশু বিক্রি না করলে বিক্রেতাদের হয়রানি করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পশুবাহী ট্রাক, নছিমন, ভটভটির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,পুলিশ বক্সের সদস্যরা, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা জেলার বাইরে থেকে আসা ট্রাক, নছিমন ও ভটভটি থেকে চাঁদা আদায় করছে। শুধু তাই নয় প্রশাসনের সহায়তায় সরকারদলীয় লোকেরা সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে করিডোর ও বিনা করিডোরে আনা গরু থেকে চাঁদা আদায় করছে।
একজন ট্রাক চালক বলেন, “তিনি ঢাকায় গরু নিয়ে যান। পাটগ্রাম হাট থেকে গরু নিয়ে বের হয়ে কলেজ মোড়ে আসলেই পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা গরুবাহী গাড়ী থামাতে বলে। গাড়ি থামালে কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র বের করে দিলে তা না দেখেই সেটি হাতে করে অন্য গাড়ির কাছে চলে যান। পরের গাড়িচালকেরা অবস্থা বুঝে কাগজপত্র আর বের না করে সোজা টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যান।”
রাজধানীর বিভিন্ন কামার স্পটে গিয়ে দেখা যায়, কারিগররা ছুরি, বটি, চাপাতি, দা তৈরিতে ব্যস্ত। এ ব্যস্ততা ঈদের দিন পর্যন্ত থাকবে বলে তারা জানান। মানুষেরা যাতে জিনিস কিনতে এসে ফিরে না যান সেজন্য আগের ভাগেই বেশি করে ছুরি, দা, বটি, চাপাতি বানিয়ে রাখছে কামাররা।
তবে ঈদের এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি থাকায় দোকানে ভিড় কম। সাধারণত গরু কেনা সমাপ্ত করে রাজধানিবাসী সাধারণত কামার পাড়ায় ভীড় জমান । দাম এখনও কিছুটা কম থাকলেও ঈদ যতটা ঘনিয়ে আসবে দাম ততই চড়া হয়ে ক্ষেত্র বিশেষে ১০০-১৫০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে ফলে একটু সচেতন নগরবাসী আগে ভাগেই কামার পাড়ার কর্ম চুকিয়ে নিচ্ছেন ।
বিষয়: বিবিধ
১০৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন