আর কতটা নির্লিপ্ত হলে জাবির ধ্বংস যজ্ঞ শেষ হবে
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:০৬:৫৮ সন্ধ্যা
সিকদার মোহাম্মদ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনে তার বিভিন্ন কর্ম কান্ডের কারণে আলোচনা সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছেন । সংসদ, আদালত পাড়া, নিজ কর্মস্থল কোথায় তিনি অপমানিত হননি । অথচ তিনি এখনও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদটি আকড়ে ধরে রেখে, বাংলাদেশের একমাত্র পূর্নাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন ।
প্রতিদিনই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এবং বর্তমান সরকার কর্তৃক এক অর্থে চাপিয়ে দেয়া অজনপ্রিয় ও স্বেচ্ছাচার ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। অথচ এ বিষয় সরকারের নির্লিপ্ততা শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক মহলসহ দেশবাসীকে মর্মপীড়া দিয়ে যাচ্ছে ।
২০১২ সালের ৯ জানুয়ারী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যার পর অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে ‘শিক্ষক সমাজ’। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে সরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষককে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। অধ্যাপক আনোয়ার বলে আসছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখার স্বার্থে ভিসি প্যনেল নির্বাচন করা হবে ।মনে করা হয়েছিল যে, এতে বোধহয় জাবি সমস্যা কেটে যাবে, কিন্তু সমস্যা আরো জটিল করে তোলেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভিসি পদে নিজেকে স্থায়ী করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি ছিল, উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের আগে ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট নির্বাচন দিতে হবে।
কারণ সিনেটের বিভিন্ন প্রতিনিধি নির্বাচন আগে না হলে শরীফ এনামুল কবিরের সময়ের ব্যক্তিরাই সিনেটে বিভিন্ন পদে বহাল থাকবে। ফলে যে কারণে জাবির শিক্ষক ছাত্ররা শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করল তা কোন ফলদায়ক হবেনা ।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল, নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নিয়ে জাকসু, ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট নির্বাচনের কথা বললেও হঠাৎ করে উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের তারিখ ঘোষণা করা এবং নির্বাচন ছিল দুরভিসন্ধিমূলক।
কিন্তু অধ্যাপক আনোয়ার স্বৈরাচারী কায়দায় ২০ জুলাই ২০১২ উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের দিন ঠিক করার পর বিভিন্ন দল-মতের শিক্ষকরা ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ ব্যানারে এই আন্দোলন শুরু করেন।
এই দাবিতে গতবছর ১৪ জুলাই থেকে প্রশাসনিক ভবনে অবরোধ ও কর্মবিরতি শুরুর পর গত ১৭ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। শিক্ষকদের কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অনুষদে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
মূলত সিনেটের ৯২ জন সদস্যের মধ্যে ৫২ জনের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের আগে ডিন, সিন্ডিকেট ও সিনেট নির্বাচন করা জরুরি ছিল। কিন্তু তা না করে গতবছর জুলাই মাসে তখন এক প্রকার পুলিশী প্রহরায় আদালতের আদেশের বলে নির্বfচন করে নেয়া হয় । শিক্ষকদের আন্দোলনের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । শিক্ষক নেতারা নির্বাচন প্রতিহতর ঘোষণা করলে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক আবুল খায়ের যিনি সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তিনি রিট আবেদন করেন। হাই কোর্টের আদেশে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও আশুলিয়া থানার ওসি আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিয়ে সামরিক কায়দায় ভিসি প্যনেলের নির্বfচন সম্পন্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
অন্যদিকে,আন্দোলনরত শিক্ষকদের ফোরাম ‘সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদ’ নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য অবরোধের কর্মসূচি দিলেও নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে হাই কোর্টের আদেশের পর তারা সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। তবে অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যায় ।
নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, ৯২ জন সিনেট সদস্যের মধ্যে ৬৫ জন তিনজনের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছেন। ৬৮ জন সিনেট সদস্যের ভোটের মধ্যে অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ৫০ পেয়ে প্রথম, অধ্যাপক ড. নূরুল আলম ৩৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় এবং অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ৩৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এছাড়া অধ্যাপক আফসার আহমেদ ১৮ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রার্থী সমপরিমাণ ভোট পাওয়ায় লটারির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনকে টিক্কা খান উপাধিতে তিরস্কৃত করলেও সরকার কর্তৃক ভিসি পদে অভিষিক্ত হন ২০১২ সালের ২৪ জুলাই ।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষাপটে নীতি-নৈতিকতার বুলি আওড়ালেও অধ্যাপক আনোয়ারের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হয় ।মেধা ও যোগ্যতার বিপরীতে তথাকথিত সুবিধাভোগী শ্রেণীর শিক্ষক গ্রুপ তৈরি করে নিজের অবস্থান সংহত করার নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে আবার শিক্ষকরা আন্দোলনে নামে।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত কর্মসূচী ছিল ভিসি ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে গত ২১ থেকে ২৪ আগস্ট টানা চার দিন তাকে প্রশাসনিক ভবনের ভিসি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা । এবারও শিক্ষকদের ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ পর্যন্ত ২৪ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন । বৈঠকের প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা আন্দোলন কর্মসূচি ১৫ দিনের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন ।
ফলে চলমান সংকট নিরসনে এ বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. এম মহিবুর রহমানকে আহ্বায়ক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কলেজ) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বারকে সদস্য করে তদন্ত কমিশন গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা থেকে উত্তরণ এবং শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য । কমিশনকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এক মাস পরে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছেন উল্লেখ করে শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান। প্রতিবেদন হাতে পেয়েও এখনো খুলে না দেখার খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের ফলে সরকারের অপকৈশলের বিষয়টিই শিক্ষকদের মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠে। তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠকে বসা মন্ত্রীর সঙ্গে বসে পর্যালোচনা করা ইত্যকার বিষয়গুলো সরকারের জাবির বিষয় নির্লিপ্ততাই সবার নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠে ।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষক ফোরাম তাদের আন্দোলনের এ পর্যায়ে ভিসি আনোয়ার হোসেনকে পদত্যাগের সময় বেধে দেয় । এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় মঙ্গলবার দুপুর দুইটা ভিসির বাড়ির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। একই সঙ্গে ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও তার পত্মীসহ বাস ভবনের সামনে প্রতিবাদী অবস্থান নেয়।
আর বর্তমান ক্যম্পাস এক ত্রিসঙ্কু অবস্থা বিরাজ করছে , সরকার তার শেষ সময়ে এসে এ সকল বিষয় নিয়ে মাথা ঘামচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না অথচ এই সমস্যা সরকারেরই সৃষ্ট।
শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ত্রিমুখী আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনকে ‘অন্যায় কর্মকাণ্ড ও দুর্বৃত্তায়ন’ বলে উল্লেখ করে গড়ে উঠেছে ‘শিক্ষক মঞ্চ’ নামে শিক্ষকদের অপর একটি গ্রুপ।
পাল্টা-পাল্টিকর্মসুচীতে অচল রয়েছে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে সম্মান শ্রেণীর ভর্তি প্রক্রিয়া। তীব্র আকার ধারণ করেছে সেশনজট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা (শনিবার পর্যন্ত) টানা পঞ্চম দিনের মতো ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন।
ভিসি’র বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন, স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ তুলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ৩৯৫ জন আজ একটি লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এছাড়া, ভিসি’র পদত্যাগ ত্বরান্বিত করতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার বাসভবনের সামনে শিক্ষক সমাবেশ শেষে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের কুশপুত্তলিকা পোড়ান।
অপর দিকে, টানা ষষ্ঠ দিনের মতো অবরুদ্ধ হয়ে আছেন রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (টিচিং) মো. আবু হাসান। ভিসি নতুন ডিন নিয়োগ দেয়ায় তার প্রজ্ঞাপন বন্ধ রাখার দাবিতে সোমবার দুপুর থেকে এখনো পর্যন্ত নিজ কার্যালয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
আবার, রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য ভিসির প্রতি দাবি জানিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স সমিতি।
ভিসি আনোয়ার হোসেনের সর্বশেষ অপতৎপরতা হল তিনি রাতের আধাঁরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে শিক্ষকদের আন্দোলন দমাতে বৈঠক করার খবর রীতিমত মিডিয়াতে ঝড় তোলে ।
ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জাবি ক্যাম্পাসে একজন মিথ্যাবাদী ও প্রতারক,ক্যাম্পাসের ভাবমর্যাদা নষ্টকারী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক বিনষ্টকারী হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের নিয়মিত কোনো বৈঠক ডাকেন না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ারও কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না বলেও অভিযোগ আছে । তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি সেশনজটের কবলে পড়েছে বলেও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি ।
ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনর পদত্যাগ দাবি করে শনিবার ভিসির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন, স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ তুলে আন্দোলনরত ৩৯৫ জন শিক্ষকের বিবৃতি, কালো পতাকা মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ কোন কিছুই সরকার ও আনোয়ার হোসেনের টনক নড়াতে পাছেনা ।তাদের অবিরাম নির্লিপ্ততায় ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন । এই ক্ষতির প্রতিকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কে? এটাই ভুক্তভূগীদের জিজ্ঞাসা ।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন