জনমনে ২৫ অক্টোবরের ভীতির দায় কার?

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:২৫:১৫ বিকাল



সিকদার মোহাম্মদঃ বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল কতটা গণতান্ত্রিক জনমনের এ প্রশ্ন অনেক পুরোনো । কিন্ত আসছে ২৫ অক্টোবর নিয়ে যেভাবে জনমনে ভীতি সঞ্চারিত হচ্ছে তার দায় সরকার বা বিরোধী পক্ষ কেউ এড়াতে পারেন না ।

উভয় শিবির থেকে দলের নেতারা একের পর এক ভীতি ছড়ানোর বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন । বাস্তবে দেখা যাবে খুব বেশি কিছুই ঘটছেনা কিন্তু জনমনের যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে তাতে মানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি যে টুকু আস্থা অবশিষ্ট রয়েছে তাও নিঃশেষ হতে চলেছে ।

সাধারণত অক্টেবর মাসটি সারা পৃথিবীতে চিন্তার মাস বলে বিবেচিত । এ মাসেই ঘোষণা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদার নোবেল পুরস্কার । এই কারণে বিশ্ববাসীর নজর থাকে কোন বিষয় কোন দেশ বা কারা নোবেলে ভূষিত হচ্ছে । আমাদের দেশবাসীকে কিন্ত এবার কার্যত সরকার ও বিরোধীদল বেশ চিন্তার মধ্যেই রেখেছেন । পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, চিন্তাটা সু নয় দু মানে দুশ্চিন্তা ।

যদিও বাংলাদেশের মতো দেশে আমাদের প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তার মাঝে কাটাতে হয়। কোন সরকারই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে পারেননি, নেই কোন সামাজিক নিরাপত্তা । মোট কথা রাষ্ট্র এখানে প্রজাহিতৈষি নয় । এহেন পরিস্থিতিতে বাড়তি আতংক হিসেবে যুুক্ত হয়েছে ক্ষমতার পালাবদলের পূর্ব সময়টি ।

সমস্যার সূত্রপাত হয় সাংবিধানিক মৌলবাদের চরম আছরে আক্রান্ত সরকারের তরফ থেকে । জনগনের জন্য যেখানে সরকার, সংবিধান কিংবা আইন, সেখানে সংবিধানের দোহাই দিয়ে সরকার জনগণকে চরম আতংকের মাঝে রেখেছেন । বাংলাদেশের পূর্বেকার সকল সরকারের ন্যায় দ্বিতীয় দফার শেখ হাসিনার সরকারও সংবিধানের দোহাই দিয়ে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাচ্ছেন ।

এক ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থের কথার সাথে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা না বললেই নয় । আগামী কয়েকদিনের মাধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রি ভাষণ প্রদান করবেন । খুব সম্ভবত তাঁর ভাষণের একটা বড় অংশজুড়ে বর্ণনা থাকবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফজিলত সম্পর্কে । আর এই সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রী তার ছোটবোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীর মারফত । সূত্র মতে, মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যসব গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতায় থেকে কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা হয় সেইসব তথ্য সংগ্রহের জন্য টিউলিপকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। টিউলিপ প্রতিনিয়ত ওইসব দেশের নির্বাচন পদ্ধতির তথ্য সরবরাহ করছেন। সব তথ্য বিচার বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে শিগগিরই দেশের নির্বাচন পদ্ধতির রূপরেখা ঘোষণা করা হবে বলে একনেক বৈঠকে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টা শাসনকার্যে বা নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে জনমতের প্রতি ফলন নয় বরং জনগণকে গেলানোর মত পরিস্থিতি । সংবিধানের কোন মৌলিক পরিবর্তন হলে সভ্য দেশের চর্চা যেখানে গণভোটের বিধান করে জনগণের মতামত নেয়া, সেখানে এতো বড় সাংবিধানিক পরিবর্তন করে জনমতকে উপেক্ষা করে জনগণকে প্রধানমন্ত্রির ব্যক্তিগত ইচ্ছা ভক্ষণ করানোর আয়োজন চলছে । আসছে ২৫ তারিখের আতংকের শুরুটাও এখানেই ।আর এই আতংকের অনুসঙ্গ হল বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবে । আর বিরোধী পক্ষ কেনইবা তা মানবে ?

অপর পক্ষে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতেও ব্যক্তির ইচ্ছাই সবার উপরে । তার সবশেষ নজির হল সংগ্রাম কমিটি । গত শনিবার বিকেলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সিলেটে সমাবেশে বিএনপিকে বাদ দিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচন করলে তা প্রতিহত করতে সারাদেশে ভোট কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। ঘোষণার তিন দিন পরই ‘একদলীয়’ নির্বাচন প্রতিহত করতে সারাদেশে কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়ে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি পাঠিয়েছে বিএনপি। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে পাঠানো এই চিঠিতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। সংগ্রাম কমিটি গঠনের বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়নি আর সিদ্ধান্ত গ্রহণতো অনেক দূরের বিষয় । আর এ বিষয়ে ১৮ দলের সঙ্গেও বৈঠক বা আলোচনার তো আরো দূরের বিষয় ।

যেখানে দলের প্রধান দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সাথে আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত দেন সেখানে বিএনপির কিছুনেতা কেবলই যে ২৫ অক্টেবর নিয়ে হুকার ছড়াচ্ছেন তা বিশ্লেষক মহল ও তার বিরোধী পক্ষ বুঝলেও জনগণের আতংক কিন্তুু বেড়েই চলছে । কারণ জনগণ কিন্তু এখনও রাজনৈতিক দলের নিকট জিম্মী ।

জনমনের আতংকের চরমের কারণ সরকারের বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যেকার বিরোধও তীর্যক ও গভীরতর হচ্ছে। এর মধ্যে সমঝোতার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা। ২৫শে অক্টোবরের আগে সমাধান প্রক্রিয়া ফলবতী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সরকার সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে। সঙ্কট সুরাহার কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় মানুষের মধ্যে সংশয়-উদ্বেগ গভীরতর হচ্ছে- নির্বাচন কবে হবে, বিরোধী দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে? শেষ পর্যন্ত সরকার একতরফা নির্বাচন করিয়ে নেবে, না বিরোধী দলের লাগাতার প্রশাসন অচল করে দেয়ার মতো আন্দোলনের মুখে সরকার জরুরি অবস্থা জারির শেষ অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মরক্ষার পথ করে নেবে- এমনি সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে।

একদিকে গঠিত সংগ্রাম কমিটি ‘একতরফা’ নির্বাচন প্রতিহত করার পাশাপাশি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জনমত গঠনেও কাজ করবে।অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে ৮ শতাধিক কমিটি করা হয়েছে। বিরোধী দলের নৈরাজ্যকর আন্দোলন মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশাপাশি তাদের মাঠে রাখার জন্য। আর বিরোধী দলের চীফ হুইফের 'কতধানে কত চাল দেখিয়ে দেবার হুমকি'। আওয়ামীলেগের নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি ম.খা. আলমগীর, হানিফ সকলের কাউন্টার ধমকিতে জনগণ যে ভীত তার দায় কার?

পরিশেষে দেশের প্রবীন সাংবাদিক এ বি এম মুসার একটি মজার কথা অবতারণার লোভ সংবরণ করতে পারছিনা তার মতে ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বা জনগণের উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই । তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারে। কারণ নির্বাচন হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে । রিমোট কন্ট্রোলের এ নির্বাচন সংগ্রাম কমিটি করে ঠেকাতে পারবেনা বিএনপি । তাদের বরং উচিৎ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বারের সাথে যোগাযোগ করা, তিনি যদি রিমোটকন্ট্রোল এ নির্বাচন ঠেকানোর কোন উপায় বাতলাতে পারেন।’ ফলে অতীতে বেগম খালেদা জিয়ার অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানোর মতো সংবিধানের দোহাই দিয়ে হাসিনাও একটি নির্বাচন করে নিলে জনগণের আতংক ও ভীতি আরো দীর্ঘায়িত হবে বৈকি ।

বিষয়: রাজনীতি

৭৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File