আ.লীগ জনগণকে খেলনা বানিয়ে কেন ফাউল খেললো?
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৫০:৩৩ সন্ধ্যা
সিকদার মোহাম্মদঃ
১.আওয়ামীলীগের পাঁচ বছরের শাসনকাল শেষ হতে চলল নিজেদের করা সংবিধান সংশোধনের আলোকে তাদের ক্ষমতা বড়জোড় এক সপ্তাহবাকী । এরই মাঝে আওয়ামীলীগের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেছেন । তাতে তিনি সর্বদলীয় সরকার গঠন করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন। তার অর্থ দাড়ায় তিনি আরো তিন মাস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে চান । বিষয়টা ৯০ সাল পরবর্তী বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের প্রথম খায়েস ।অবশ্য এর জন্য তারা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করেছেন ।
২.প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর বিভিন্ন মহল থেকে ‘বল এখন বিএনপির কোর্টে’ বলে বিএনপি কে মনস্ত্বাতিক চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে । কিন্তু এই সকল লোকজন এই একথাটি বলছেননা যে, বল তাহলে এতদিন কার কোর্টে ছিল? এর ফলে দেশের মানুষের যে ক্ষতি হলো এই দায়ভারের বিষয়েও তাদের স্বরব হতে খুব যে দেশের সাধারণ মানুষ আগে দেখেছে তাও কিন্তু না । যার কারণে তাদেরকে জিজ্ঞাসা আসলে তারা স্বপ্রনোদিত হয়ে হউক বা মিডিয়ার চাপাচাপিতেই হউক, আগে ভাগে তারা যে তাদের মতামত দিয়ে দিচ্ছেন তাতে কোন বিশেষ মিশন সফল করার লক্ষ রয়েছে কিনা? এ বিষয়টি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে ভাবিয়ে তুলতে পারে বৈকি।
৩.প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর দেশের অতি পরিচিত বুদ্ধিজীবীগণ গণমাধ্যমে যে মতামত, বিবৃতি তুলে ধরেছেন তাতে দেশবাসী বেশ আশান্বিত হয়েছেন বলে কোন কোন সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। বুদ্ধিজীবীগণ বলেছেন, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে নাকি ৯৫ ভাগ এগিয়ে গেছে। এমনকি এটাও বলা হয়েছে,“বাকি পাঁচ ভাগ সমাধানের দায়িত্ব বিরোধী দল তথা বিএনপি’র উপর বর্তেছে।” কিন্তু কিভাবে ৯৫ ভাগ অগ্রগতি হলো তার কোন যুথসই ব্যাখ্যা কিন্তু দৃশ্যমান হচ্ছেনা ।
৪.খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যে ব্যারিস্টার রফিকুল হককে বিএনপি ঘরানার মন্তব্য করে “মুই কার খালুরে” বলে অপদস্ত করেছিলেন তিনি নিজেও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সমস্যার ৯৫ ভাগ সমাধান হয়ে গেছে। এখন বিএনপির উচিত তা গ্রহণ করে আলোচনায় বসা।” আবার মাঝে মাঝে তাকে বিএনপির বিভিন্ন সংবর্ধনা সভায়ও হাজির হতে দেখা যায় । আসলে একটি বিষয় বোধগম্য হচ্ছেনা, আর সেটা হলো কোন মানুষকে কেউ অপমান করলে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো তার প্রতিকার না করতে পারলেও অপমানকারীর কোন কথা বা কাজে কখনই অনুগামী হয়না অথচ স্বয়ং শেখ হাসিনা দ্বারা অপমানিত হয়েও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে দেশের প্রধানমন্ত্রী মেনে নেবার ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মানষিকতা কে অতি মানবিকতা না বলে উপায় নেই । তাবে খটকা বাধে যখন একই ব্যক্তি যখন অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে অনুরোধ উপেক্ষা করে তেত্রিশ লক্ষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে গিয়ে কতিপয় অসৎ লোকদের সাহায্যকারী হন এবং তার সাহায্য প্রাপ্তরা পরবর্তীতে অসৎ বলে প্রতিভাতও হন ।
একই অবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান, যাকে ক’দিন আগেও প্রতিনিয়ত ব্যর্থদের কাতারে ফেলে নিজের সারা জীবনের কৃতত্বিকে ম্লান করে দিয়েছেন। শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা, তিনি বলছেন, “নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব গ্রহণ করে বিএনপির উচিত তাদের প্রস্তাবনা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা ।
তিনি গণমাধ্যমকে আরো বলেছেন, “চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন হবে কি-না সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারবো না। তবে এ বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা বিএনপির কর্তব্য বলে আমি মনে করি।”
আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী। যিনি ছিলেন এরশাদ সরকারের তথ্যমন্ত্রী।“প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আপাতদৃষ্টিতে মেঘের আড়ালে সূর্যের উঁকি।”
তিনি বলেন, “সর্বদলীয় সরকার গঠনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব রাখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এর আগেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় রয়েছে। তাই বিরোধী দলে এ অবস্থান থেকে সরে না এলে সমস্যার সমাধান হবে না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বুদ্ধিজীবীদের এসব বক্তব্য বা মতামত এটাই প্রমাণ করে রাজনীতির বল ঠেলে দেয়া হয়েছে বিএনপি বা বিরোধী দলের কোর্টে। তারা এখন কীভাবে গোল করবেন সেটা তাদের ব্যাপার।
তবে এটা ঠিক, কেবল বল যদি বিএনপির কোর্টে এসে থাকে তবে এতদিন নিশ্চই আওয়ামীলীগের কোর্টে ছিল । আর কেন তারা এতটা সময় বল তাদের কোর্টে ধরে রাখল । আর জনগণের ভাগ্যকে কেন আওয়ামী লীগ খেলনা বানাল ? আর খেলাই যখন বানাল তখন বল এতটা সময় ধরে রেখে কেন ফাউল খেলল? জনগণের জীবনকে খেলনা বানিয়ে ফাউল খেলার দায় তাই আওয়ামীলীগের নয় কি?
৫.বিশেষজ্ঞরা তাদের মাতামত দিতেই পারেন, কিন্তু এতোদিনে দৃশ্যমান অপদস্তরা যাদের হাতে অপমানিত হলেন তাদের উভয়ের বক্তব্য যখন মিলে যায় তখন আবারও খটকা বেধে যায় । এই যেমন-আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর পুরো জাতি এখন বিএনপির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। বল এখন বিএনপির কোর্টে। তারা যদি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আলোচনার জন্য শিগগিরই চিঠি চালাচালি শুরু হবে।আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর জাতি স্বস্তির আমেজ পেয়েছে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম এতোদিনের তুলোধুনো করা সুশীলদের রেফারেন্স টেনে বলেন, ‘সুশীল সমাজের অনেক প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে বিএনপিকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন বিএনপি শান্তির পথে আসবে, না অশান্তির পথে যাবে, এটা নির্ভর করছে তাদের ওপর। আশা করি, বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশ নেবে।’
৬.এক দিকে রাজনৈতিক দলের অফিস বন্ধ করে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মিদের গ্রেফতার, মামলা হয়রানি করে, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে, অন্যদিকে সর্বদলীয় সরকারে নামজমা দানের কথা বলে আওয়ামীলীগ আর যাই চাকনা কেন তাদের সে চাওয়ার সাথে বিএনপির প্রত্যাশার যে দূরতম সম্পর্ক থাকার কথা নয়, তা সুশীল সমাজ এমনকি বিএনপির অনেক নেতাদের নিকট বোধগম্য না হলেও সাধারণ নেতাকর্মি ও শুভাকাংখিদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছেনা ।
৭.বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্বকে চরম প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে । এসময়টি হচ্ছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের চরম দোলাচালের সময়, একটু ভুল সিদ্ধান্ত জাতির জন্য চরম আমানিষা নামিয়ে আনতে পারে । শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বিএনপির মধ্যে নিশ্চিত দু’টি ধারার সৃষ্টি হওয়া বিচিত্র কিছুনা এক ধারা আন্দোলনের পক্ষে, অন্যধারা হয়তো সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের পক্ষে কথা বলবে । তবে একটা বিষয় সবার কাছেই হয়ত পরিস্কার হয়ে গেছে বিএনপি অনেক ইস্যূ পেয়ে কেন সরকারকে পাকরাও করেনি । একটি ইস্যূর মাঝে শত ইস্যূ কেন কিভাবে মারা পরল, হারিয়ে গেল ? আর এখন সর্বশেষ ইস্যূটিকে আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবার চূড়ান্ত সময় এসে কেন আওয়ামী লীগ এই রকম প্রস্তাব দিল, তা হলে অন্য সব ইস্যূকে তারা যেভাবে মোকাবেলা করেছে তারই অংশ কি সর্বদলীয় সরকারের টোপ? হারাধনের শেষ ইসূতে আন্দোলন কার্যকর ভাবে না জমিয়ে কেন মাঠ গরম করার বক্তব্য দিয়ে ইদুঁর পুলিশ খেলা ? আর এই সুযোগও হাতছাড়া কেনই বা আওয়ামীলীগ করবে? ২৫ অক্টোবরের ভীতি তৈরি করল আওয়ামী লীগ আর ভীতি ছড়ানোর দায় দিলো বিএনপিকে । তাইতো আজ আইন প্রতিমন্ত্রী জানালেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আকার, দায়িত্ব, নির্বাহী ক্ষমতা কতটুকু হবে, সেটা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবসম্মত প্রস্তাবের পর এটা নিয়ে আর কোনো ধোঁয়াশা নেই। ২৫ অক্টোবরের দোহাই দিয়ে বিএনপি আর কোনো আতঙ্ক ও ভয়ভীতির সৃষ্টি করবে না।’‘একই সময় দুই দলের সমাবেশ হতে পারে। ২৫ অক্টোবর যদি বিএনপি রাজনৈতিক সমাবেশই করে, তাহলে এ সমাবেশ করতে তাদের কোনো বাধা নেই। আর যদি কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয়, তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
আবার, কেনইবা কাকতালীয় ভাবে অসুস্থ হয়ে যায় নেতারা ? বিএনপির নীতি নির্ধারনী বিষয় কি কেবলই নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সীমবিদ্ধ থাকে? যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিতে বিএনপি কি কোন লাভবান হয়েছে নাকি আওয়ামী লীগকে তাদের মিশন বাস্তবায়নে সহায়তা করা করেছে? নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি যখন চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক এ মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রস্তাবে ‘নতুন রাজনৈতিক খেলা’ কিনা তাও ভাবতে হবে ।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন