সি গ্রেডের গভর্নর ও গ্রেডবিহীন অর্থমন্ত্রীর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৫৮:৫২ দুপুর
সিকদার মোহাম্মদঃ বাস্তবিক অর্থে দেশে বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শেয়ার বাজার,মুদ্রাবাজার সব স্থানে সংকট বিরাজ করছে। সি গ্রেডের গভর্নর, গ্রেডবিহীন অর্থমন্ত্রী আর চরম রাজনৈতিক সরকারের শাসনে দেশের সব সেক্টরে যখন অচল অবস্থা সে পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত সকল মহল পরিবর্তন প্রত্যাশা করছেন । এমনি পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ অনেক পূর্ব থেকেই আশা করছিল প্রধান বিরোধী দল তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে । সে প্রত্যাশা দেরিতে হলেও পূরণ হতে চলেছে । আজ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তিনি তার 'অভিনব' ৩০ দফা উপস্থাপন করবেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া এর আগে রাজনৈতিক অনেক বিষয়ে নানা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছেন। সরকারের সাড়ে তিন বছরের মাথায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে দলের মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন। কিন্তু এই প্রথম অরাজনৈতিক ফোরামে তিনি অর্থনৈতিক চুলচেরা বিশ্লেষণ তুলে ধরতে যাচ্ছেন। এটাকে তাই অনেক বিশ্লেষক 'অভিনব' আর ইতিবাচক উদ্যোগ বলে মনে করছেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে এই সেমিনার ও মত বিনিময় হচ্ছে যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা ঘাত প্রতিঘাতে স্থবিরতার মাঝে নিমজ্জিত ।
এই সময়ে উল্লেখযোগ্য আলোচিত বিষয় গুলোর মধ্যে আছে- দেশে বিদেশে আলোচনা সমালোচনার সত্বেও মন্ত্রিসভা কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে তদারকির দায়িত্ব দিয়ে ‘গ্রামীণ ব্যাংক আইন-২০১৩’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক গুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা পরিচালন ও ব্যবস্থাপনার মানে গতবারের ন্যায় এবারও নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতি বিষয়ক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্স কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সি গ্রেড প্রপ্তি, দেশের আর্থিক খাতের বৃহত্তম ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় রাজনৈতিক কারণে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বাদ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগপত্র দাখিল, প্রয়োজন না থাকা সত্বেও স্রেফ রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ৯ ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদান, উচ্চ সুদ হারের কারণে বিনিয়োগে স্থবিরতা, শেয়ার বাজারের অব্যাহত অস্থিতিশীলতা, তৈরি পোশাক খাতে সরকারের নতুন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নে মালিক শ্রমিকের মূখোমুখি অবস্থান সহ নানা কারণে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ।
নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতি বিষয়ক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্স দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা এবং সুদ হার ব্যবস্থাপনায় গভর্নরের গৃহীত পদক্ষেপ মূল্যায়ন করে রেটিং দেয়া হয়ে থাকে। বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আর্থিক সেবা প্রদানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের গৃহীত সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের ইতিবাচক মুদ্রানীতি প্রণয়নে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনের চ্যালেঞ্জের বিষয় বিবেচনা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারাবাহিক সাফল্য ও বাজার সম্প্রসারণে গভর্নরের ভূমিকা পর্যালোচনা করে দেখে সফল কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকের মাপকাঠিতে ‘সি’ গ্রেড পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিয়ার রহমান। গত বছরও তিনি একই গ্রেড পান। বস্তুত তার এই গ্রেড প্রাপ্তি এক অর্থে দেশের সামষ্ঠিক অর্থনীতির কোন ভাল চিত্র প্রমান করে না ।
বিদেশি পত্রিকার এই রেটিংয়ের প্রতিক্রিয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গভর্নর হিসেবে ড. আতিউর রহমান অতিমাত্রায় রাজনীতিক। আর্থিক নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণে তার ভূমিকা অতিশয় দুর্বল প্রকৃতির। আর ঠিক এ কারণেই নতুন করে ৯টি ব্যাংক অনুমোদন পেয়েছে। তিনি দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে না ধরে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারে অভ্যস্ত। তাছাড়া তার সময়ে ব্যাংকিং খাতে বড় বড় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দায়ও তিনি এড়াতে পারেন না। আর এসব ব্যর্থতার চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেতে শুরু করায় চলতি বছরেও তিনি সি গ্রেড পেয়েছেন।’
অন্যদিকে, গত রোববার জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হীরার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক যথাক্রমে ৩ হাজার ১৫৩ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা ও ১ হাজার ৮৬২ দশমিক ৬ কোটি টাকা লোকসান করে । এরকম পরিস্থিতি পুরো ব্যাংকিং খাতে ।ব্যাংক খাতের আয়ে শোচণীয় অবস্থার কারণে তালিকাভুক্ত ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের বাজার মূল্য কোম্পানিগুলোর সম্পদ মূল্যের (এনএভি) নিচে নেমে এসেছে। আয়ের দিক থেকে আগের বছরের তুলনায় প্রায় সব ব্যাংকের নেতিবাচক অবস্থার কারণে এই হতাশাজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত হলমার্ক কেলেংকারির পর ব্যাকিং খাতে এই দূর্যোগ নেমে আসে যার পুরো দায় বর্মান সরকারের ।
রাজস্ব আদায়েও রয়েছে চরম দূরবস্থা এনবিআর পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের প্রথম দুইমাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হাজার কোটি টাকা ।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এ সময়ে এনবিআরে আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক ও অন্য খাতে কাঙ্খিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত সরকারের ব্যর্থতায়েব্যবসা বাণিজ্যের করুণ হালের কারণে ঠিকমত রাজস্বও দিতে পারছেননা ব্যবসায়িরা
আর গত তিন বছরের ন্যায় এবারও নিরানন্দে কাটবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঈদ। সুদের উচ্চহার নিয়ে গতকালও ব্যবসায়ীরা সেমিনারে সরকারের ভূলনীতির সমালোচনা করেন ।তারা অভিযোগ করেণ দেশের ব্যাংকগুলোতে ৭০ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঋণ পান না ।
এমনি বাস্তব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী পরিষদ এ সেমিনারের আয়োজন করেছে । পরিষদের সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু। অরাজনৈতিক এ পরিষদে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকেই রয়েছেন। সেমিনারে এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমএই, বিটিএমএ, বিকেএমইএ, ফরেন চেম্বার, উইমেন চেম্বারসহ ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনের সব ফোরামের নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে অর্থনীতি কোন অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, সে নিয়ে আলোচনা হবে সেমিনারে। ব্যবসায়ী নেতারা সামগ্রিক অর্থনীতির খাতওয়ারী মূল্যায়ন করবেন। সেমিনারে বিরোধীদলীয় নেতা প্রায় ৩০টি পয়েন্টে অর্থনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, শেয়ার বাজার, টেলিযোগাযোগ, জিডিপি, রিজার্ভসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের আলোকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা ইতোমধ্যেই তার টকিং পয়েন্টস-এর খসড়া করেছেন।আর সোমবার রাতে বেগম জিয়া তার অনুমোদন করেছেন ।ব্যবসায়ীরা আশা করছে আজকের এই সেমিনারের মাধ্যমে সমস্যা উত্তরণের পথ নকশা মিলবে ।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন