বাংলাদেশ ব্যবসায় সক্ষমতায় ২০১১‘র অবস্থানে আর দুর্নীতি প্রথম অবস্থানে
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৫২:২৪ সকাল
সিকদার মোহাম্মদঃ
ব্যবসায় প্রতিযোগিতার সক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের ১৪৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১১০। আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়েছে আট ধাপ তবে মজার বিষয় হলো সক্ষমতার সূচকে যতটুকু এর আগে পিছিয়েছিল এ বছরের রিপোর্টে কেবল ততটুকু এগিয়েছে, সে হিসেবে বাংলাদেশ কেবল ২০১১ এর অবস্থান উদ্ধার করল । তবে দূর্ণীতি উপসর্গ বেড়ে পাঁচ বছর আগের অবস্থানে চলে গিয়েছে । অর্থ্যাৎ ব্যবসার ক্ষেত্রে ১৬টি বড় সমস্যার মধ্যে দুর্নীতি প্রধানতম যা পাঁচ বছর পর আবার প্রথম অবস্থানে ফিরে এসেছে।
ব্যবসায় প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় ২০১২ সালে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮তম।বাংলাদেশ গত এক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সূচকে ২১ এবং অবকাঠামো ও বাজারের আকার সূচকে দুই ধাপ উন্নতি করেছে।
তবে যে বিষয় গুলো দ্বারা সাধারণ জনগণ বেশী প্রভাবিত সে সকল বিষয়ে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে আর সে সকল বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আর্থিক বাজারের সংবেদনশীলতা, প্রাতিষ্ঠানিক ও শ্রমবাজারের দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির সূচক ।
বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সকল দেশ আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হিসেবে পরিচিত সে সকল দেশের কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। এতে দেখা যায়, ব্যবসায় প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় ভিয়েতনাম পাঁচ ধাপ অগ্রগতি করে অবস্থান করছে ৭০ এ, ফিলিপিনস ৬ ধাপ এগিয়ে ৫৯ এ এবং ইন্দোনেশিয়া ১২ ধাপ এগিয়ে ৩৮ এ অবস্থান করছে ।
সক্ষমতার ক্রমিকে খোদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমরা ভুটানের চেয়ে একধাপ নীচে অবস্থান করছি, ভারত আমাদের চেয়ে ৫০ ধাপ উপরে, শ্রীলংকা ৪৫ ধাপ উপরে অবস্থান করছে । আত্মতুষ্টি বিষয় এতটুকুই যে, পাকিস্তান আমাদের থেকে ২৩ ধাপ নীচে রয়েছে । সেখানে নেপাল আমাদের থেকে ৭ ধাপ নীচে অবস্থান করছে।
তবে নতুন ভাবে সক্ষমতার তালিকায় উঠে এসেছে মায়ানমার এবং এ্যাংগোলা যাদের অবস্থান যথাক্রমে ১৩৯ এবং ১৪২ ।
প্রতিবেদনের বিশ্ব প্রতিযোগিতার সূচক ক্রমধারায় দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত এক ও পাকিস্তান নয় ধাপ পিছিয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা এগিয়েছে তিন ও নেপাল আট ধাপ এবং দেশ দু‘টির অবস্থান যথাক্রমে ৬৫ এবং ১১৭। আর গত বছরের মতো এবারও শীর্ষ তিন অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ফিনল্যান্ড। এর পরের তিনটি স্থান জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনের। তবে ইউরোপের অধিকাংশ দেশের অবস্থানের অবনতি লক্ষ করা যায় ।
সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে ইকুয়েডর এই দেশটি ১৫ ধাপ, ১৪ ধাপ আগায় লেসথো, ইন্দোনেশিয়া ১২ ধাপ । সবচেয়ে বেশি পিছানোর তালিকায় রয়েছে হুন্ডুরাস ২১ ধাপ, লাইবেরিয়া ১৭ ধাপ এবং দ্যা গাম্বিয়া ১৪ ধাপ।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম নিয়মিতভাবে বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ।এবছর গত ৩ সেপ্টেম্বর ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইডে প্রতিবদেনটি প্রকাশ করে । আর গতকাল সোমবার ২০১৩-এর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ফোরামের বাংলাদেশের পার্টনার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে সিপিডি বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ১৪৮টি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের ৭১ জন ব্যবসায়ী এ-সংক্রান্ত জরিপে অংশ নেন। জরিপের জন্য ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর জরিপটি করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে প্রতিবেদনটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সঙ্গে ছিলেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে চলতি অর্থবছরে আট ধাপ এগিয়ে যাওয়াকে ‘অবশ্যই অগ্রগমন’ উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে গত বছর আমরা যেটুকু পিছিয়ে গিয়েছিলাম, এ বছর সেটুকুই পূরণ করেছি মাত্র। স্কোরেও খুব একটা উন্নতি হয়নি। এমনকি আমরা যেভাবে এগোচ্ছিলাম, তাতে ১০০ তম দেশের মধ্যে প্রবেশ করতে পারিনি।’
তবে সক্ষমতায় এগিয়ে গেলেও গত এক বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিতে ব্যবসার ক্ষেত্রে ১৬টি বড় সমস্যার মধ্যে দুর্নীতি পাঁচ বছর পর আবার প্রথম অবস্থানে ফিরে এসেছে। অন্য সমস্যাগুলো হচ্ছে: দুর্বল অবকাঠামো, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
বিষয়: বিবিধ
১১৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন