‘ফেলানী নামে কেউ খুন হয়নি, কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশ ফেলানীর ছিলনা।’

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:৪৮:০৬ সকাল



সিকদার মোহাম্মদঃ

মাঝে মাঝে দেশ ও জাতির সামনে কিছু ঘটনা, কিছু সময় আসে ,তখন দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি প্রকৃতপক্ষে কার কত টুকু দরদ, প্রেম, ভালবাসা আছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফেলানী হত্যাকান্ড এমনি একটি প্রতিকী ঘটনা যা বিবেকবান মানুষের বিবেকের দ্বারে কষাঘাত না করে পারে না। এটা কেবল একটি সাধারণ মানুষের কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশ ছিলনা এটা ছিল ভারতের কাঁটাতারে ঝুলন্ত এক বাংলাদেশ ।

ভারতের প্রহসনমূলক বিচারে খুনি বিএসএফ সদস্যকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ভারতের একটি আদালত। এই খবর সবার জানা ।

বিএসএফের বিশেষ আদালতে বিচারের নামে প্রহসনের পর বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষিত রায়ে অভিযুক্ত বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর অবিশ্বাস্য দ্র্রুততায় তাকে মুক্তিও দেয়া হয়েছে । বাংলাদেশীরা সারা বিশ্বের যে যেখানেই থাকুক তাদের জন্য ৬ সেপ্টেম্বর দিনটি নিঃসন্দেহে কালো দিন হয়ে থাকবে ।

এই রায়ের পর সাধারণ ভাবে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, তা হল ফেলানী কে কি মারা হয়নি? তিনি কি নিহত হননি ? কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশ কি ফেলানীর ছিলনা ? এই রায়ে মাধ্যমে বর্তমান সরকারের চির বন্ধু ভারত আমাদের কি বার্তা দিল? ভারত কি আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের বন্ধু না কি কেবল আওয়ামী লীগের বন্ধু? বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার ভারত স্বীকার করে বা তার প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ কি তাদের আদৌ আছে ? আমার দেশের সরকার কি ফেলানীর রায়ে সন্তুষ্ট?

দেশের সরকার বা মন্ত্রীরা কেন এখনও কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি অথচ যারা দেশে পান থেকে চুন খসলেই কোন কিছুর ধার না ধেরে সকলকে উদ্ধার করে ছেড়ে দেন । তাহলে কি তারা নিরবতাই শান্তির লক্ষণ মানেন?

অথচ পশ্চিমবঙ্গের একটি মানবাধিকার সংগঠনও রায়ের এ খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সেক্রেটারি কিরিটি রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিএফএফ সীমান্তে কেবল ত্রাসের রাজত্বই কয়েম করেনি, বিচারের নামে নাটকও সাজিয়েছে।’

ফেলানীর খুনিকে খালাস দেয়ার পর তাতৎক্ষণিকভাবে ভারতের প্রতি ‘নতজানু’ বলে সমালোচিত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও গতকালই এ খবরে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত চরম অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। ভারত কি আমাদের নৈতিক মনোবল ধ্বংস করার জন্যই প্রতিনিয়ত সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে ? এর মাধ্যমে ভারত সরকার কি বাংলাদেশীদের নৈতিক মনোবলহীন একটি জাতিতে পরিণত করতে চান? তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের নতজানুর সুযোগে সীমান্ত হত্যার আইনী বৈধতা দিল? অতীতেও ভারত -বাংলাদেশ সীমান্তে কোন হত্যাকান্ড ঘটেনি বলে বিশ্ববাসীকে কি এই বার্তা দিল ?

অথচ দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে, গত ১২ বছরে বিএসএফ প্রায় এক হাজার বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। তবে ফেলানী ছাড়া একটি হত্যাকাণ্ডেরও তদন্ত বা বিচার করেনি ভারত। আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে প্রথমবারের মতো ‘বিচারের’ উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত। তবে এটা ছিল চরম ভাঁওতাবাজি। এখানে বিচারের নামে যে প্রহসন চলবে—সে আশঙ্কা ছিল শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত সে আশঙ্কাই সত্য হলো। খালাস পেল ফেলানীর খুনি। প্রথম মামলাতেই ধোঁকাবাজি করল ভারত।

ফেলানীর বাবা-মা বলেছেন, এ রায়ের মাধ্যমে বিচারের নামে তামাশা করা হয়েছে। ভারত কি আদের সাথে তামাশা করতেই বিচারের নাটক সাজিয়েছিলেন?

ফেলানীর বাবা-মা আন্তর্জাতিক আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন, তাদের এই দাবি পূরণে আমাদের দেশপ্রেমিক সরকার কি কোন উদ্যোগী হবেন ?

এই মামলায় কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিঙ্কন ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেন । তিনি সাংবাদিকদের অনেক তথ্য জানান তাকি সরকারের নির্বাহী বিভাগের লোক জন জানতেন না? লিঙ্কন জানান, ‘অমিয় যদি দোষী প্রমাণিত হতো এবং তার শাস্তি হতো, তাহলে সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে ভারত আন্তর্জাতিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতো।’আন্তর্জাতিক প্রশ্ন ও চাপ এড়ানোর জন্যই ভারত প্রত্যক্ষভাবে এই রায় ‘বিকৃত’ করেছে ।’ বিএসএফ মহাপরিচালক এ রায়কে অনুমোদন দিলে একটি নৃশংস হত্যাকে ‘আইনি বৈধতা’ দেয়া হবে।

এই রায়ের মাধ্যমে ভারত সরকার তাদের বিএসএফকে সীমান্তে বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যার আইনি বৈধতা দিলেন ? এর ফলে কি বিএসএফ এর বেপরোয়া মনোভাব আরও উত্সাহিত হবে না?

আব্রাহাম লিঙ্কন জানিয়েছেন, ‘এ বিচার পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাদের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। সাক্ষ্য গ্রহণের পরদিনই আমাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ রায়ের মাধ্যমে ভারত আত্মস্বীকৃত খুনিকে বেআইনি হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনের নামে বৈধতা দিল।’ ‘এ রায়ের ফলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের জন্য আরও উত্সাহিত হবে।’

এ রায়ের বিরুদ্ধে ফেলানীর বাবা মায়ের আপিল করার সুযোগ নেই কারণ এটি ছিল এক বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের মামলা। বিএসএফ আইনে বিশেষ আদালতে এই বিচার কাজ চলে। কাজেই আপিল করতে হলে ভারতকেই করতে হবে। ফেলানীর বাবা-মায়ের পক্ষে আপিল করার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ সরকার বা ভারতের জনগণ আপিল করার জন্য ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আমদের সরকার কি তা করবেন?

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে ১৫ বছর বয়সী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ান অমিয় ঘোষ। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। তার প্রেক্ষিতে এই নাটকের মঞ্চায়ন হয় কিন্তু সরকারের নতজানু ও নিরবতার কারণে কেবল নাটকের দর্শক হয়েই জাতি হিসেবে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম । তবে আশংকায় আছি, বাংলাদেশ সরকারের কোন মন্ত্রী যেন না বলে বসে, ‘ফেলানী নামে কেউ খুন হয়নি, কাঁটাতারে ঝুলন্ত লাশ ফেলানীর ছিলনা।’

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File