বেজে উঠছে তৃতীয় মহাযুদ্ধের দামামা

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:২৬:১৭ রাত

সিকদার মোহাম্মদঃ

আমেরিকার পূর্ব উপকূলে গোপনে মার্কিন পরমাণু ওয়ারহেডের স্হানান্তর।ভূমধ্যসাগরে মার্কিন ও রুশ রণতরীগুলোর অব্যাহত উপস্থিতি জোরদার করণ।সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সিরিয়ার মোকাবেলার হুমকি ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহদের মার্কিন হামলা প্রতিরোধের অঙ্গীকার ।ইনফোওয়ার্স ওয়েবসাইটের প্রকাশিত খবর -সব মিলিয়ে বিশ্ব কি আরো একটি মহাযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করবে কিনা সে আশংকা ক্রমশই জোরদার হচ্ছে ।

মিশরের প্রখ্যাত বর্ষীয়ান সাংবাদিক হাসনাইন হাইকাল মধ্যপ্রাচ্যে মহাযুদ্ধ বাধার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সিরিয়াকে শিক্ষা দেয়ার জন্য সীমিত মার্কিন হামলার কথা প্রচার করা হলেও ঘটনাপ্রবাহের গতি-প্রকৃতি থেকে বোঝা যায়- আমেরিকার লক্ষ্য আরো বড় ও ব্যাপক।

তার মতে আমেরিকায় গণতন্ত্রের নামে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলে অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সামরিক হামলা বিলম্বিত করেছেন যাতে মার্কিন কংগ্রেসও এই যুদ্ধ পরিচালনায় প্রেসিডেন্টের সহযোগী হতে পারে।

সিরিয়ায় হস্তক্ষেপকামী ততপরতায় সৌদি আরব, তুরস্ক ও ইসরাইলের ব্যাপক কর্মকাণ্ড ও তোড়জোড় এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরোধিতার কথা তুলে ধরে হাইকাল বলেন, সিরিয়া ছাড়াও গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য ওবামা ও তার মিত্ররা এক মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এটাই ইসরাইলের নিরাপত্তা রক্ষার ভিত্তিতে আমেরিকার কথিত বৃহত মধ্যপ্রাচ্য সৃষ্টির মহাপরিকল্পনার অংশ যে ষড়যন্ত্র অনুযায়ী এ অঞ্চলে প্রতিরোধকামী কোনো শক্তির অস্তিত্ব রাখা হবে না।

২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে বিপর্যয়ের কারণে আমেরিকার ওই পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও সেই একই লক্ষ্য নিয়ে ওয়াশিংটন সিরিয়ায় হামলার পরিকল্পনা করছে বলে হাইকাল মত প্রকাশ করেছেন।

এদিকে আমেরিকার পূর্ব উপকূলে গোপনে নেয়া হচ্ছে মার্কিন পরমাণু ওয়ারহেড। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যাবিলেনের ডায়েস বিমান বাহিনীর ঘাঁটি থেকে এসব ওয়ারহেড নেয়া হচ্ছে। তবে এ নিয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ রাখা হয়নি।

ইনফোওয়ার্স ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে ভয়েস অব রাশিয়া এবং রেডিও তেহরান। সংবাদ মাধ্যমটি বলেছে- তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের লক্ষ্য নিয়েই এ প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন বাহিনী। ইনফোওয়ার্সে ফাঁস হওয়া খবরের শিরোনাম করা হয়েছে- রেড অ্যালার্ট ওভার সিক্রেট নিউক্লিয়ার উইপন ট্রান্সফার।

ডায়েস বিমানঘাঁটির কমান্ডার অজ্ঞাত একটি গোষ্ঠীকে এসব পরমাণু ওয়ারহেড নেয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। কোথায় নেয়া হচ্ছে এসব পরমাণু ওয়ারহেড তা জানা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে সাউথ ক্যারোলাইনার উপকূলে নেয়া হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে এসব পরমাণু ওয়ারহেড ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে নেয়া হবে।

অন্যদিকে সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল আল-মিকদাদ বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলার কারণে যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যায় তাহলেও দামেস্ক মাথানত করবে না।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি-কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি বুধবার এ কথা বলেছেন। মিকদাদ বলেন, সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দেশ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

সিরিয়ার মন্ত্রী বলেন, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার সরকারের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সিরিয়ার কোনো নাগরিক স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে পারে না বলে জোরালো ভাষায় উল্লেখ করেন তিনি।

মিকদাদ বলেন, সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে সিরিয়া তার মিত্রদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্যোগী করে তুলছে।

সিরিয়ার বিরুদ্ধে হামলার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে যখন জোর প্রাচেষ্টা চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তখন মিকদাদ আল-ফয়সাল এ কথা বললেন। ফ্রান্সের সংসদেও সম্ভাব্য যুদ্ধের বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে

আর সার্বিক বিবেচনায় সিরিয়ায় একতরফা হামলার বিরুদ্ধে বুধবার আমেরিকা ও তার মিত্রদেরকে হুঁশিয়ার করেছেন সিরিয়ার আসাদ সরকারের প্রধান মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া সিরিয়ায় সামরিক হামলাকে আগ্রাসন বলে বিবেচনা করা হবে।

পুতিন রুশ প্রেসিডেন্সিয়াল হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের বৈঠকে এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সিরিয়া সরকারের সঙ্গে সামরিক চুক্তি রক্ষার বিষয়ে রাশিয়া প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জানান, "এরইমধ্যে আমরা এস-৩০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু যন্ত্রাংশ দামেস্কের কাছে হস্তান্তর করেছি এবং বর্তমানে তা বন্ধ আছে। তবে যদি দেখি যে, আন্তর্জাতিক প্রথা ভেঙে সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তাহলে ভবিষ্যতে আমরা কি ধরনের ব্যবস্থা নেব বিশেষ করে এই সংবেদনশীল অস্ত্র বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় সরররাহ করার বিষয়টি ভেবে দেখব।"

সিরিয়া ইস্যু নিয়ে ভূমধ্যসাগরে মার্কিন ও রুশ রণতরীগুলোর উপস্থিতি জোরদারের প্রেক্ষাপটে ইরানের নৌবাহিনীর উপপ্রধান অ্যাডমিরাল গোলাম রেজা খাদেম বিগাম বলেছেন, তার দেশের সশস্ত্র বাহিনীর চিফস অফ স্টাফের প্রধান নির্দেশ দিলে ইরানি নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগরসহ অন্য সব সাগরে ও প্রণালীতে উপস্থিত হবে।

গাজা ভূ-খণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম এবং সেখানকার হামাস নেতৃত্বাধীন সরকারকে উতখাতে মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ মিশরীয় অবসরপ্রাপ্ত এক জেনারেল ফাঁস করে দেয়াতে মিশেরর মুরসি সরকারের উতখাত থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের সকল প্রতিরোধ আন্দোলনকে নির্মূলের মহাপরিকল্পনাকে হাতে নিয়ে মার্কিন প্রশাসন সুচিন্তিতভাবে আগাচ্ছেন বলেই ক্রমশ প্রতিভাত হচ্ছে । আর এ সকল দেশ এবং প্রতিরোধ গ্রুপগুলো আগ্রাসন মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে যদি মার্কিন মিত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তবে তৃতীয় মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠা এখন সময়ের ব্যাপার ।

এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান সাংবাদিক হাসনাইন হাইকালের মতামত হল, আমি যুদ্ধের সম্ভাব্য দৃশ্যগুলো ও সম্ভাবনাগুলো নিয়ে কখনও কিছু বলব না, তবে যে দৃশ্যটি অনিবার্য বলে মনে করছি তা হল সিরিয়ায় মার্কিন আগ্রাসন এবং তা কখনও সীমিত যুদ্ধ হবে না, কিংবা ব্যাপক বিস্তৃত যুদ্ধ হবে না। বরং কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই যুদ্ধ এবং পুরো বিশ্বকে পরিবর্তন না করলেও গোটা মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনের চেয়ে কম মাত্রার কিছু না ঘটিয়ে তা থামবে না।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৪৩৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File