'হঠাত বিভ্রান্তিকর সংলাপের ঝলকানি প্রস্তাবে ঝলমল করে চিত্ত'

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:১৮:১৬ সকাল



সিকদার মোহাম্মদঃ

বাংলাদেশ সব অসম্ভব সম্ভবের বিশাল এক দেশ, শত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝে হঠাত আলোর ঝলকানিতে সাধারণ মানুষসহ সবার চিত্ত ঝলমল করে উঠে ।সোমবার এরকমই চিত্ত ঝলমলের বাণী সুনিয়েছেন

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ।

রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবিরোধী সার্ক অঞ্চলের বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিধান আছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য ওই সরকারের রূপরেখা কী হবে তা ঠিক করতে আলোচনার বিকল্প নেই।

ব্যারিস্টার শফিক বলেন, সবাই সংলাপের কথা বলছেন; নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে আলোচনার মাধ্যমে তা নির্ধারিত হবে। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলে যেকোনো সরকারের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব।

তবে, বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের কঠিন অবস্থানের বরফ অক্টোবরে গলতে শুরু করবে।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় মওদুদ বলেন, কেবল দেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের জনমত উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ধুলিস্মাত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এমন উদ্যোগ নিলে বিএনপি অবশ্যই তাতে সাড়া দেবে।

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দেশের প্রধান সংকট হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমরা চাই সমঝোতা। সমঝোতা ছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

স্থায়ী কমিটির বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, যতই কৌশল ও অজুহাত দেখানো হোক না কেন, দেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষায় দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোট অংশ নেবে না।

এদিকে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সরকার চাইলে তিনি আলোচনায় বসতে রাজি আছেন।

আজ সকালে রাজধানীর মিরপুরের ইউনূস সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলো এরইমধ্যেই আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। এখন সরকার যদি চায়, তাহলে আলোচনা হতে পারে।

এ সময় তিনি দু'দলকে সমঝোতায় বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমঝোতায় যেতে যত দেরি হবে, দেশে ততই অশান্তি বাড়বে।

অন্য দিকে একই দিনে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ‌এরশাদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের যে পাঠ দিলেন তা আরো চিত্তাকর্ষক ।'সাবেক স্বৈরশাসক' 'সাবেক গণতন্ত্রের মানষকন্যা'কে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'সংবিধান থেকে একচুলও নড়া হবে না'-প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য অগণতান্ত্রিক ।গণতন্ত্র মানে সহনশীলতা ও নমনীয়তা।গণতন্ত্র মানে আলাপ-আলোচনা। এটাই গণতন্ত্রের ভাষা। ।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের পথ দুই নেত্রীকে বের করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান কে হবেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা সম্ভব। সংসদ বহল রেখে নির্বাচন করা হলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।

দেশের রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ড. ইউনূস এবং সাবেক রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে হঠাত আলোর ঝলকানি বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বাংলাদেশের হিতাকাঙ্ক্ষিরা পর্দার অন্তরালে থেকে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সেটা একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার সহায়ক হতে পারে।

তবে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদেক খান মনে করেন, এরা সবাই নিজ নিজ অবস্হান থেকে কথা বলেছেন। আর এর ভিত্তিতে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন একটা লক্ষণ ফুটে উঠছে না।

অবশ্য একথা অনস্বীকার্য যে, যখনই তারা চাপে পড়েছেন এ রকম প্রস্তাব আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তখন দেয়া হয়েছে এবং একাধীক মন্ত্রী একাধীকবার দিয়েছেন।ফলে এবারের আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকেও সরকার দলের কোন আন্তরিকতা প্রসূত প্রচেষ্টা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন না।

রেডিও তেহরানের কথা-বার্তা অনুষ্ঠানে বৈশাখী টিভির প্রধান নির্বাহী এবং প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন 'এক চুলও নড়ব না' তখন আইনমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাব বিভ্রান্তিকর।

তাছাড়া বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দুই প্রধান দলের মুখোমুখি অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার চাইলে সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত বলে জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনুসের এ বক্তব্য সম্পর্কে বিশিষ্ট এ সাংবাদিক বলেছেন, তার বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই গ্রহণযোগ্য কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার আহবান সফল হবে বলে মনে হয় না।

সংলাপের ক্ষেত্রে স্বংপ্রধানমন্ত্রীকেই সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিতে হবে তবেই বাংলাদেশের মানুষ এখনো আশাবাদী হতে পারবে। দেশবাসী আশা করেন- সঙ্কট কেটে যাবে; শান্তিপূর্ণ পন্থায় সরকার পরিবর্তনের জন্য সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।তা হলেই বাংলাদেশের মানুষের চিত্ত হঠাত

ঝলমল না করে, সব সময়েই ঝলমলিয়ে থাকবে ।

বিষয়: রাজনীতি

৯৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File