এবার মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধদের হামলার স্বীকার জাতিসংঘের প্রতিনিধি
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৯:৫৭:৪৭ সকাল
মিয়ানমারে অব্যাহতভাবে উগ্র বৌদ্ধদের দ্বারা মুসলমানদের গণহত্যায় বিশ্ব বিবেক যখন নিরব ভুমিকা পালন করে আসছিল ঠিক তখন মিয়ানমারে উগ্র বৌদ্ধদের হামলার শিকার হয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওজেয়া কুইন্টানা।
দেরিতে পাওয়া রেডিও তেহরান পরিবেশিত এক খবরে জানা গেছে, গত বুধবার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল বৌদ্ধ। কুইন্টানা গত বুধবার ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিয়ানমারের মেইকটিলা শহরে মুসলমান বিরোধী দাঙ্গার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গেলে প্রায় ২০০ ক্ষুব্ধ বৌদ্ধের একটি দল তার গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবে গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার কারণে এ হামলায় তার কোনো ক্ষতি হয়নি।
গত মার্চ মাসে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় মেইকটিলা শহরে উগ্র বৌদ্ধদের মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় অন্তত ৪০ জন মুসলমান নিহত হন। বৌদ্ধরা মুসলমানদের শত শত ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং হাজার হাজার মুসলমান সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসেন।
গত বছর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন (সাবেক আরাকান) প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানরা উগ্র বৌদ্ধদের বর্বরতার শিকার হলেও এ বছর মেইকটিলা শহরে অ-রোহিঙ্গা মুসলমানরাও আক্রান্ত হন।
কুইন্টানা তার ১০ দিনব্যাপী মিয়ানমার সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সেদিনের হামলার সময় আমি যে বিষয়টি অনুভব করেছি তা হলো স্থানীয় পুলিশ আমার সাহায্যে মোটেও এগিয়ে আসেনি। আমি এটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি, গত মার্চ মাসে এই বৌদ্ধরা যখন নিরস্ত্র মুসলমানদের ওপর হামলা চালিয়েছে তখন তাদের অবস্থাটা কেমন হয়েছিল।”
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইয়ে হাতুত অবশ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এ বিশেষ প্রতিনিধির অভিযোগের ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, কুইন্টানার জীবন এক মুহূর্তের জন্যও বিপদের মুখে পড়েনি। হাতুত বলেন, বৌদ্ধদের ওই দলটি জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে একটি চিঠি ও একটি টি-শার্ট দিতে চেয়েছিল। “কাজেই কুইন্টানা যা বলেছেন বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।”-দাবি করেন তিনি।
২০১২ সালের জুন মাসে মিয়ানমারের নিরপরাধ মুসলমানরা উগ্র বৌদ্ধদের নৃশংস হামলার শিকার হন। তখন থেকে টানা প্রায় এক বছর ধরে সমগ্র মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধদের বর্বরতা চলতে থাকে। গত এক বছরের দাঙ্গায় কয়েক হাজার মুসলমান নিহত ও লাখ লাখ মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হন।
মিয়ানমারের সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী মুসলমানদের জান-মাল রক্ষার পরিবর্তে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় বৌদ্ধদের সহযোগিতা করে। কোথাও কোথাও মুসলমানদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য সরকারি সেনারা কেরোসিন ও পেট্রোল সরবরাহ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একাধিকবার বিবৃতি প্রকাশ করে উগ্রবাদীদের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৯৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন