দুই ইস্যুতে দেশের পুঁজিবাজারের চলতি হাওয়া ইতিবাচক; সরকারের শুভবুদ্ধির উপর স্থিতিশীলতা নির্ভরশীল
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২২ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫৪:১১ রাত
সিকদার মোহাম্মদঃ
বর্তমানে দু’টি ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের পুঁজিবাজার কিছুটা হলে ও ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন । প্রথমতঃ সরকার বিরোধী পক্ষের নিরীহ গোছের কর্মসূচী ঘোষণা এবং দ্বিতীয়তঃ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে পুঁজিবাজারের জন্য প্রস্তাবিত পুন:অর্থায়ন তহবিল নীতিমালার অনুমোদন এবং অর্থ ছাড়ের সম্ভবনা ।দ্বিতীয় ইস্যুটাকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিনের গরু মেরে জুতা দানের বিষয় বলেই মনে করছেন ।
ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োকারীদের জন্য পুন:অর্থায়ন তহবিল ছাড়ের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবার কথা । চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অর্থ ছাড়ের কথা রয়েছে । জানা গেছে এ তহবিলে প্রথম কিস্তির ৩০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। চুক্তি সই হয়ে গেলে আইসিবির মাধ্যমে এ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।এই ইস্যুও বাজারে ইতিবাচক বাতাস বইতে সাহায্য করছে ।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব থেকে আপাতত শংকামুক্ত পুঁজিবাজার। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ও জোটকে সুসংগঠিত করতে দেড়মাসব্যাপি গণমুখী ও অত্যন্ত নিরীহ গোছের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে ।
ফলে আপাতত হরতাল বা সহিংস কর্মসূচি না দেওয়ার ঘোষণার কারণে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে শংকা যে একেবারে নেই তাও কিন্তু নয় ; যে কোন সময় রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হবার মতো উপাদান সরকারের হাতেই রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন ।
ঈদের আগে বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে এবং ঈদের পরের দিনই মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে সরকার পরিস্থিতি উস্কে দিলেও প্রধান বিরোধী পক্ষ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে, নিরীহ গোছের কর্মসূচি দেয়ার কারণে সকল পক্ষই বাজারমুখী হবার চেষ্টা করায় বাজার ইতিবাচক ধারায় ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই গত এক বছর বারবার বাজারের গতিশীলতা ব্যহত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যা তাদের জন্য মরার উপরে খারার ঘা হয়েই বার বার ফিরে এসেছে ।
ঈদের পরেও বিনিয়োগকারীদের আশংকা ছিল ফের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয় কিনা। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচনকে ঘিরে প্রধান দুই দলের মুখোমূখী অবস্থান এবং যুদ্ধাপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি পূর্ব থেকেই নাজুক ছিল, তার সাথে জামায়েতে ইসলামের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা এবং আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে নজীরবিহীন ভাবে স্বপ্রনোদিত হয়ে শুনানী করে জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল খারিজের কারণে ঈদের পর পরই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হবার আশংকা ছিল । আর এ আশংকার কারণেই দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব দৃষ্ট না হয়ে নেতিবাচক প্রভাব দৃষ্ট হয়েছে ।
এ সময়ে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরা চুপ করে বসে ছিলেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকিতে যেতে চাচ্ছিলেন না অনেক বিনিয়োগকারী, বিশেষকরে প্রাতিষ্ঠানিক এবং বড়পুঁজির বিনিয়োগকারীরা । তবে ধারণা করা হয় এ পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সক্রিয় ছিল, যার ফলে অনেক শেয়ার তার দাম হারায়নি, ভাল ফান্ডেমেন্টালের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেনে তারা।
কিছু সাধারণ বিনিয়োগকারী বাজারের গতি পর্যবেক্ষণ করলেও বাকি সবাইকে আশা ভঙ্গের যাতাকলে পৃষ্ঠ হতে হয় ।এখন বাজারের পরিবর্তন যদি ইতিবাচক হয় তাহলে তারা আবার বাজারের সাথে সম্পৃক্ত হবেন অনেক সাধারন বিনিয়োগকারীসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও । ফলে এখন পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে থাকায় বিনিয়োগকারীরা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠছেন। টানা ছয় কার্যদিবস বাজার ইতিবাচক ছিল। এর পরে দুই কার্যদিবসে স্বাভাবিক মূল্য সংশোধনের কারণে বাজার সামান্য পড়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরাই বলছেন বাজারের এ পতনে তারা ভীত নন।তারা একে একটি স্বাভাবিক বাজারের আচরণ বলছেন ।
এপ্রিল মাস থেকে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের সম্ভাবনা বাজারকে কিছুটা ইতিবাচক করে তোলে। বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যেতে শুরু করেছিল। বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছিলেন। পাশাপাশি কিছু বিদেশি বিনিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠিনিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণেও বাজারের গতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করেছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিদেশী বিয়োগকারীদের বেশি নেতি বাচক বার্তা দেয় ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের দেয়া রায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়। সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি, সিনহুয়া, পাকিস্তানের দ্য ডন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গধমাধ্যমে জামায়াতের নিউজটিকে আলাদা ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয় । এছাড়াও জামায়াতের নিবন্ধন বিষয় প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের শেয়ার বাজারমূখী হতে নিরুৎসাহিত করে ।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইতিমধ্যেই বাজারের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আগামী কোরবানী ঈদ পর্যন্ত আশা করা যায় তেমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে বাজার ভাল যেতে পারে । তবে পরিস্থিতির আলোকে অন্য যে কোন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে আগে থেকেই বিরোধী পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি ভাল রাখা বহুলাংশে সরকারের উপর নির্ভরশীল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন । আর সকল ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার জন্য সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন বলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরাসহ সকল পক্ষ আশা করছে ।
বিষয়: বিবিধ
১০১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন