মিশরের গণহত্যায় উভয় সংকটে ওবামা প্রশাসন ?

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৫৯:১১ দুপুর



সিকদার মোহাম্মদঃ

মিশরের চলমান অবস্থায় ওবামা প্রশাসনের মার্কিন নীতি নিজ দেশে ও সারা বিশ্বে কঠোর সমালোচনার মুখে পতিত হয়েছে ।আমেরিকা প্রাথমিক অবস্থায় মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখলকে সামরিক অভ্যুত্থান বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল । ফলে মিশরের সেনা সরকারের প্রতি ‘মার্কিন সমর্থনের কারণেই’ গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে ।এই ধারণা থেকে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা গণহত্যার নিন্দা জানাতে বিলম্ব করলেও নিন্দা জানানোর ফলে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে মিশরের সামরিক সমর্থিত সরকার দ্বারা ।

সারা বিশ্ব থেকে যখন গণহত্যা নিন্দা করা হল এবং বিশেষ করে তুরস্কের এরদোগানের দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল- “এটি পরিষ্কার যে, মিশরে সামরিক ক্যু’র প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন রয়েছে এবং তাদের নীরবতার কারণেই মিশরের সামরিক বাহিনী আজকের হত্যাকাণ্ড চালানোর উৎসাহ পেয়েছে।” তুরস্কের সরকারের কড়া ভাষায় প্রতিবাদ মূলত আমেরিকাকেই লক্ষ্য করে করা, তা বুঝাতে বিশ্লেষকদের বেগ পেতে হয়নি । ফলে বিশ্বব্যাপী জনমনের আলোচনা সমালোচনা, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মিশর ও মিশরের বাইরে গণরোষ ও গণপ্রতিরোধ দেখে আমেরিকার অবস্থানও পাল্টে যেতে শুরু করে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।

ফলে অবকাশ থেকে ফিরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিশরের গণহত্যার নিন্দা জানান এবং বিবৃতিতে বলেন, “আমরা মিশরের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে চালানো সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। আমি বলতে চাই মিশরের জনগণের সঙ্গে গত কয়েকদিন যে ব্যবহার করা হয়েছে তারা তার চেয়ে অনেক ভালো ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রাখে।”

ফলে কার্যত মার্কিন সিদ্ধান্ত কিছুটা থমকে গেছে এবং ওবামার সাম্প্রতিক বক্তব্যকেও নরম সুর হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা এবং তারই ধারাবাহিকতায় মিশরের সঙ্গে সামরিক মহড়া বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মিশরে বুধবার সেনাবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যায় শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর ওবামা এ ঘোষণা দিলেন। তবে, মিশরকে দেয়া বার্ষিক ১৫০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা স্থগিত কিংবা বাতিলের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে ওবামা বলেন, “যদিও আমরা মিশরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই কিন্তু যখন রাস্তায় বেসামরিক নাগরিক মারা যায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় তখন প্রথাগত সহযোগিতা স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। ফলে আগামী মাসে যে দ্বিপক্ষীয় যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল আমরা আজ সকালে তা বতিলের ঘোষণা দিচ্ছি।”

আগামী মাসে ‘অপারেশন ব্রাইট স্টার’ নামে সিনাই উপত্যকায় এ মহড়া অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

এদিকে, মার্কিন ফরেন রিশেন্স কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ইসোবেল কোলম্যান সামরিক মহড়া বাতিলের ঘটনাকে খুবই সামান্য পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ পর্যায়ে যা কিছু ঘটছে তার তুলনায় এ পদক্ষেপ নিতান্তই অপ্রতুল এবং তা নিতে দেরিও হয়েছে অনেক ।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ও সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জন ম্যাককেইন শুরু থেকেই মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করাটাকে সামরিক ক্যু বলে আখ্যয়িত করলেও ওবামা প্রশাসন থেকে তার মতের পক্ষে কোন সমর্থন পাননি, ফলে তাকে মিশরের সামরিক সরকারের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি আবার মুখ খুললেন, তিনি আবার বললেন, মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করাটা ছিল ক্যু বা সেনা অভ্যুত্থান। তাই যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ মিশরে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ি যথাযথভাবে নির্বাচিত কোনো দেশের সরকার প্রধানকে সেনা অভ্যুত্থানে উৎখাত করা হলে অথবা সেনাদের সহায়তায় ডিক্রি জারি করে সরকার প্রধানকে উৎখাত করা হলে সেই দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ সাহায্য বন্ধ রাখতে হয়।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির সদস্য ম্যাককেইন বলেন, ‘আইনটি খুব পরিস্কার যে কোনো দেশে ক্যু হলে সাহায্য বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু বড় ধরণের ট্রাজেডি হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে।’

এদিকে, বুধবারের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই বলেছেন, মিশরের নিরাপত্তা বাহিনীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, কার্যকরী ও বিশ্বাসযোগ্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাতে হবে এবং দোষীদেরকে তার দায় নিতে হবে। এছাড়া, দেশটিতে নতুন করে যেকোনো সহিংসতা এড়ানোর জন্য তিনি দু’পক্ষের মাঝে সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অপর পক্ষে, দেরিতে হলেও প্রেসিডেন্ট ওবামা মিশরের সামরিক সরকারের গণহত্যার নিন্দা করায় নাখোশ হয়েছে মিশরের সেনা সমর্থিত অন্তবর্তী সরকার । প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেছেন। তিনি আজ (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওবামার বক্তব্য উদ্বেগজনক। এর ফলে সহিংসতাকামী গোষ্ঠীগুলো উৎসাহিত হবে।

তিনি আরো বলেন, বারাক ওবামা মিশরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর নিন্দা জানানোর কারণে তার ভাষায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশকে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

শুরু থেকেই গণহত্যার বিরুদ্ধে স্বরব তুরস্ক মিশরে সামরিক বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে কায়রোয় নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছে তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় জানিয়েছেন, “মিশর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূত ডেকে পাঠিয়েছি।”

এর আগে, গতকাল তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যেব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিশরের জনগণ শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিল কিন্তু তাদের ওপর খুবই ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হয়েছে।

অবস্থার দৃষ্টে বিশ্লেষকরা বলছেন, মিশর পরিস্থিতি নিয়ে ওবামা প্রশাসন উভয় সংকটে পড়েছে ।বুধবারের গণহত্যায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে । শুরু থেকে সামরিক ক্যু’র প্রতি মৌন সমর্থন পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে দিয়েছে ।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১১৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File