গণহত্যার পর মিশরের ভাইস প্রেসিডেন্টের ভীতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দম্ভোক্তি

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৫৩:৩৫ দুপুর

তৃতীয় দফায় গণহত্যার পর খোদ সেনাসমর্থিত ভাইস প্রেসিডেন্ট রক্তপাতে একদিকে ভীত হয়েছেন, অন্যদিকে একই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দম্ভ প্রকাশ করেছেন ।

সামরিক বাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সমর্থকদের দেশটিতে আর অবস্থান ধর্মঘট করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বর্তমান মিশরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইব্রাহিম।মূলত টেলিভিশনে প্রচারিত এক সসংবাদ সম্মেলনে ইব্রাহিম বলেন, মিশরের কোনো চত্বরেই আর কোনো অবস্থান ধর্মঘট করতে দেয়া হবে না।

মিশরের দাঙ্গা পুলিশ সাঁজোয়া যান, বুলডোজার এবং হেলিকপ্টারের সহায়তায় নজিরবিহীন রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে রাজধানী কায়রোতে মুরসি সমর্থকদের দু’টি অবস্থান ভেঙ্গে দেয়ার পর এ দম্ভোক্তি করলেন ইব্রাহিম।

অন্যদিকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সংঘটিত রক্তপাতের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে পদত্যাগ করেছেন মিশরের অন্তর্বর্তী সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আল বারাদি।

বুধবার সেনা অভিযানে শতাধিক মুরসি-সমর্থক নিহত হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন তিনি।

মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে বিবিসি ও সিএনএন এই তথ্য জানায়।

মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, পদত্যাগের আগে এলবারাদি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, মিশরে ঘটে যাওয়া রক্তপাতের দায়িত্ব নিতে পারবেন না তিনি।

আল বারাদি গত নির্বাচনে ব্রাদারহুড-সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসির বিরোধিতা করেন। মুরসিবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা কট্টর সেক্যুলারদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।

সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আদলি মানসুরকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও এলবারাদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়।

গত ৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে উৎখাতের পর থেকে নাহ্দা চত্বর এবং নাসের সিটির রাব্বা আদাভিয়ায় অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু হয়। মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে আবার ক্ষমতায় বহালের দাবিতে এ দুই অবস্থান থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল।

এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের আমলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন মিশরের সেনা সমর্থিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে উঠলে মিশরে ২৫ জানুয়ারির আগের মতো বা তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে।

এদিকে, ইখওয়ানুল মুসলেমিনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কায়রোয় নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ অভিযানে হতাহতের বিষয়ে নানামুখী খবর পাওয়া গেছে। কোনো কোনো মাধ্যমে বলা হয়েছে নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো মাধ্যম জানিয়েছে নিহত হয়েছে অন্তত আটশ’ মানুষ। অবশ্য, মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছে মাত্র ২৩৫ জন। এ ছাড়া সংঘর্ষে ৪৩ জন পুলিশ নিহতের দাবিও করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া, অভিযানে ১০,০০০ মানুষ হয় বলে বেসরকারি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, মিশরের নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং টেলিভিশন জানিয়েছে, ইখওয়ানের শীর্ষস্থানীয় নেতা, মোহাম্মদ আল-বেলতাগি, ইসাম আল-এরিয়ান, ইখওয়ানের মুখপাত্র আহমেদ আরেফ এবং প্রধান তাত্ত্বিক আবদেল রহমান আল-বারকে আটক করা হয়েছে।

অবশ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আল-বেতাগি এবং আল-এরিয়ানকে আটকের কথা অস্বীকার করেছে।

আল-বেলতাগির ১৭ বছরের মেয়ে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আল-বেলতাগি মিশরের জনগণের প্রতি জানানো আহ্বানে বলেন, হে জনগণ আপনাদের ভাইয়েরা ময়দানে রয়েছে-গণহত্যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কি আপনারা নীরব দর্শক হয়ে থাকবেন?

বুধবার মুরসি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চালিয়ে তৃতীয় দফঅ গণহত্যার পর দেশটিতে মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

৯০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File