অগ্নিগর্ভা মিশরঃ মিশরজুড়ে কারফিউ ঘোষণা,বেলতাগির মেয়ে নিহত,বিশ্বব্যাপী গণহত্যার নিন্দা

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১৪ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৪৬:০৭ রাত

সিকদার মোহাম্মদঃ মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে- সেনাবাহিনীর গণহত্যার পর সেখানে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনী ও ইখওয়ানুল মুসলিমিনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকের মধ্যে এ সংঘর্ষ চলছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনী ব্যাপক মাত্রায় গুলি ও টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করছে।

এদিকে, ইখওয়ান নেতা মোহাম্মাদ বেলতাগির ১৭ বছর বয়সী মেয়ে নিহত হয়েছেন। কায়রোয় সেনাবাহিনীর উচ্ছেদ অভিযানের সময় তিনি নিহত হন। উচ্ছেদ অভিযানের পর কায়রো বিশ্বাবিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে, সেনাবাহিনী ও মুরসি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ব্রিটেনের স্কাই টেলিভিশন চানেলের এক ক্যামেরম্যান নিহত হয়েছেন। স্কাই কর্তৃপক্ষ এ খবর নিশ্চিত করেছে।

মিশরজুড়ে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী একমাস পর্যন্ত এ কারফিউ বলবত থাকবে।

সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসির হাজার হাজার সমর্থকের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর কারুফিউ ঘোষণা করেন। আজ (বুধবার) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে কারুফউ কার্যকর হয়েছে।

এর আগে, মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, রাবা আল-আদাভিয়া চত্বর থেকে বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ইখওয়ানুল মুসলিমিন দাবি করেছে- সেনা অভিযানে অন্তত ২,২০০ মানুষ নিহত ও ১০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে- উচ্ছেদ অভিযানের সময় মাত্র ৫৬ জন নিহত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কায়রোয় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে শক্তি ব্যবহারের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন ।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক হত্যার কঠোর সমালোচনা করেছে এবং মিশরীয় কর্তৃপক্ষ কে সংযম প্রদর্শন করার জন্য বলা হয় । নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা বিক্ষোভ দমনকে "অত্যন্ত উদ্বেগজনক" বলে আখ্যা দেয়া হয় ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান ক্যাথারিন অ্যাশ্টনের মুখপাত্র মাইকেল ম্যান বলেন, ‘আমরা পূনরায় বলছি যে, সহিংসতা সমাধানের কোন পথ নয়, আমরা মিশরীয় কর্তৃপক্ষকে চরম সংযম প্রদর্শনের জন্য বিশেষ ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি ।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল গণহত্যাকে "অগ্রহণযোগ্য" বলে কঠোরভাষায় মন্তব্য করেন । বিক্ষোভকারী নিরস্ত্র জনতার উপর একটি সসস্ত্র অভিযানের কোন গ্রহনযোগ্যতা থাকতে পারেনা বলে মম্তব্য করেন। প্রেসিডেন্ট গুলের প্রচারিত এক ভাষ্যে তিনি মিশরের বিষয় প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার পরিণতির আশংকা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, আরবলীগের প্রতি মিশরের গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান, তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিরবতাকে সামরিক কর্তৃপক্ষের রক্তক্ষয়ী গণহত্যার জন্য দায়ী করেন এবং বলেন,এটি পরিষ্কার যে, মিশরে সামরিক ক্যু’র প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের সমর্থন রয়েছে।

কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্হা QNA এ পরিবেশিত বৈদেশিক মন্ত্রনালয়ে দফতর এক বিবৃতিতে মিশর পরিস্থিতিকে 'গৃহযুদ্ধ সম্ভাবনা' বলে আখ্যা দেয়া হয় । এতে নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমনকে দোষারোপ করা হয়। মানুষের জীবন রক্ষায় যে কোন বাহিনী কর্তৃক শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন থেকে বিরত থাকার জন্য বিবৃতিতে বলা হয় ।

কাতার জোরালো ভাবে মুসলিম ব্রদারহুড নেতা, পদচ্যুত প্রেসিডেন্টের পূর্ণবহাল দাবী করে ।



রানও বিক্ষোভের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান কে গণহত্যা আখ্যাদিয়ে মিশরীয় সামরিক বাহিনীর কাজকে নিন্দা জানান এবং বিবৃতিতে এ ধরনের সহিংসতা গৃহযুদ্ধকেই উস্কে দিবে বলে আশংকা করা হয়, ইরানের বিদেশ মন্ত্রনালয়ের এক বিবৃতিতে এ রকম আশংকা ব্যক্ত করে ।

ফরাসি বৈদেশিক মন্ত্রনালয় থেকেও একটি বিবৃতি পরিবেশনকরা হয়, যাতে কায়রোর ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয় এবং সব পক্ষকে শক্তি প্রয়োগ অপেক্ষা সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয় ।

ব্রিটেনের ফরেন সেক্রেটারী উইলিয়াম হগ তার বিবৃতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহারের নিন্দা জানান এবং নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার কথা বলেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি গভীরভাবে মিশরের সহিংসতা এবং অস্থিরতার বিষয় অবগত, প্রতিবাদকারীদের উচ্ছেদে শক্তি ব্যবহারের নিন্দা জানাচ্ছি ।

জার্মান বিদেশ মন্ত্রি গুইডো ওয়েসটারওয়েলী তার বিবৃতিতে সামরিক সরকার ও মুরসি সমর্থকদের সহিংসতা ত্যাগ করার আহ্বান জানান । তিনি বলেন, আমরা সকল রাজনৈতিক শক্তিকে অতি সত্বর আলোচনার টেবিলে ফেরৎ যাবার এবং সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানাচ্ছি ।পুনরায় সকল রক্তপাত অবশ্যই পরিতাজ্য ।

বিষয়: বিবিধ

১২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File