ঈদ পরবর্তিতে কি ঘটতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতিতে?

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ১০ আগস্ট, ২০১৩, ১২:১১:৫৫ দুপুর



সিকদার মোহাম্মদঃ ঈদ পরবর্তি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তার প্রতি যেমন বিশ্লেষক মহল গভীর পর্যবেক্ষণে আছেন, তেমনি সাধারণ মানুষ রয়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়, এরকম পরিস্থিতিতে অবশ্য খবরের শিরোনাম রগরগে হয়, পত্রিকার কাটতি বেড়ে যায়, কিন্ত দেশ হয়ে পড়ে স্থবির । আর এ স্থবিরতা তৈরি করছে বারবার আমাদের ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব । ফলে নিরুপায় দেশবাসীর প্রশ্ন, এই জন্যই কি দেশ স্বাধীন হয়েছে? এই কি আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দেশ প্রেমের নমুনা? কেন বার বার দেশমাতা কে একই অনিশ্চয়তায় অন্ধকারে নিমজ্জিত করা হচ্ছে? সে কি কেবল ক্ষমতায় থাকা বা ‍যাওয়া নয়?

বর্তমান সরকারের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেতে হবে সরকারকে। যদিও সংসদের মেয়াদ থেকে যাবে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত। এই নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়েছে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীতে।আর এই প্রথমবারের মত সংসদ বহাল রেখে আদৌ কি নির্বাচন কেউ মেনে নিবে কিনা বা এর গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা সে বিষয় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ।ফলে অনিবার্য ভাবে সংবিধানের এই অংশের সংশোধনী সরকারকে অবশ্যই করতে হবে ।

বিএনপির তরফে ঈদের ছুটির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদায়ে এক দফার আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা । সরকারের জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্তের প্রতিবাদে ১৩ ও ১৪ আগস্ট ডাকা হরতাল। অন্যদিকে ঈদের পর যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় তথা ফাঁসির রায় কার্যকর করার আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিদের সমস্বরে হুংকার । রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের অস্তিত্বের সংকট । হেফাজতের ভাষায়, নাস্তিক-মুরতাদ ও ধর্মবিদ্বেষী শক্তির বিরুদ্ধে তাদের ঈমানী ও ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে আমৃত্যু আন্দোলন চালানোর ঘোষণা । রমযানে শক্তি সঞ্চয় পূর্বক ঈদের পর দেশ কাঁপানো আন্দোলনের ডাক ইত্যাদি বিষয় গুলো জনমনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

অন্যদিকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় এক ধরণের সমঝোতার সুরও ধ্বনিত হয়েছে, যার কারণে এক শ্রেনির বিশ্লেষক মহল আশাবাদী হয়ে উঠছেন ।তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু মনে করার কারণ নেই ।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষে সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করলে বিএনপি আন্দোলনে যাবে না বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকার যদি লেবেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে তাহলে আমরা আন্দোলন করবো না। জনগণ যে রায় দেয় তা মেনে নেবো।’

`অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া তা সম্ভব নয়। কারণ সরকার প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আদালতকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ ও সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।যদি দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে থাকেন তবে প্রচারণা না চালিয়ে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক বিল পাস করুন।’

অন্যদিকে গণভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় প্রধানমন্ত্রী জানান,‘জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কারা ক্ষমতায় আসবে। দেশ সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে।’

বারবার সরকার নিজেদের অধিনে নির্বাচনের কথা বলছেন, আর এ ক্ষেত্রে তারা দলীয় বিবেচনায়, আওয়ামীলীগের একক সিদ্ধান্তে করা বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা সংশোধিত সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন । যা সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবার মনে সন্দেহ তীব্রতর হচ্ছে । সরকার সৃষ্ট সমস্যা সমাধান তথা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতা প্রচেষ্টায় কূটনৈতিক মহলের তৎপরতা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে ।এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক নিয়ম-নীতি ভেঙে ৬ আগষ্ট নজিরবিহীনভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাসায় ইফতার-ডিনারের ছলে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান নিয়ে সর্বত্র জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। তবে এ বিষয় ‘সরকার ও বিরোধী দলের অনড় অবস্থান’ ছাড়া কোন ধরণের সুখবরের ধারণা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছেনা ।ফলে কোন কোন মহল ধারণা করছে, যতই কূটনৈতিক মহলের তৎপরতা চলুক না কেন সরকারের আচরণ অনেকটাই ‘বিচার মানি কিন্তু তাল গাছটা আমার চাই’ পরিস্থিতির মত । যার দরুণ এই প্রচেষ্টার ইতিবাচক কোন ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে ।উল্টো সরকার ঈদ পরবর্তি আন্দোলনের নৈতিক শক্তি ক্ষর্ব করার কৌশল হিসেবে দাবার চাল এটেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন ।

তবে সরকার বিরোধী দলকে নানামূখী চাপে রেখে এরই মধ্যে আপসরফা করতে চাইছে বলে অনেকে মনে করছেন। আর এ চাপে সবচেয়ে বেশি জর্জরিত জামায়াত ।প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টে ‘বাংলাদেশ’স পলিটিক্স: ডিসপেনসাবল অ্যালাইস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সরকারের এই চাপ কে শোরগোল বলে উল্লেখ করা হয়েছে । আর এর মধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের খড়গ অন্যতম ।দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ‘আওয়ামী লীগ জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলে যে শোরগোল তুলছে তা অন্তঃসারশূণ্য।’

ভোটের হাওয়া এখন যেদিকে টার্ন নিয়েছে তাতে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও ক্ষমতায় বিএনপি’র প্রত্যাবর্তন করতে পারে ধারণার বশবর্তী হয়ে বিএনপি হয়ত সরকারের ফাঁদে পা দিলেও দিতে পারে।কিন্তু চলতি আওয়ামী লীগের শাসনমলে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল নির্যাতনের স্বীকার জামায়াতে ইসলামী এবং গণহত্যার স্বীকার হেফাজত সহজে দমে যাবার নয় । বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধাণ কারণ আদর্শিক ।আদর্শের কারণে তারা হয়ত যে কোন পরিস্থিতিতে প্রধাণ মিত্রকে সাথে না পেলেও তাদের নিজস্ব বলে বলিয়ান হয়ে রাজপথে অবস্থান করার আশংকা থেকেই যাচ্ছে ।আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও সেই সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির পূর্বাভাস দিচ্ছে ।এই রুপ পরিস্থিতিতে সরকারের দায়ই বেশি ।আর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবেন, নাকি পরিস্থিতি আরো উস্কে দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষকে আরো অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিবেন তাই এখন সকলের বিবেচ্য বিষয় ।

বিষয়: রাজনীতি

১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File