রাজধানীতে উন্নয়নের বিলবোর্ড, মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগ
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪৪:৪৭ দুপুর
সিকদার মোহাম্মদঃ
বারবার ঘোষণা দিয়ে, সংবাদ সম্মেলন করে মানুষ ভোলানোর গল্প সুনিয়েছিলেন আমাদের মিডিয়া প্রেমী যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তার কথায় জনগণ আস্বস্তও হয়ছিল, কিন্ত তার পূর্বের প্রতিশ্রূতির কোন বাস্তবয়ন না দেখে জনগণ হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হচ্ছে । ঢাকা শহর সরকারের উন্নয়ন বার্তায় ছেয়ে গেছে, আর ঢাকা থেকে বছরের একটি বিশেষ দিনে নাড়ির টানে ঘর মুখীমানুষ বাড়ি ফিরতে গিয়ে চরম দূর্ভোগে পতিত হয়েছে বিগত বছর গুলোর ন্যায় এবারও। ফলে সরকার ও যোগাযোগ মন্ত্রির প্রতি জনক্ষোভ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে ।মানুষের খুশির ঈদ ফিকে হয়ে যাচ্ছে মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটে । আর এ ক্ষেত্রে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীদের ঈদের খুশি ফিকে হবার এক দীর্ঘ মহাকাব্যের নাম ।
মূলত বিগত জোট সরকারের আমলে সর্ব প্রথম প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়, আর শেষ কেয়ারটেকার সরকারের আমলে চূড়ান্ত ভাবে একনকে অনুমোদন করা হয় । প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের উপর । কেবল প্রক্ল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েই সরকারে চরম ব্যর্থতায় সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ ক্ষোভে রূপান্তরিত হচ্ছে ।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয়। কয়েক দফা দরপত্র বাতিলের কারণে সে সময় প্রকল্পটি পিছিয়ে যায়। ২০০৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর এবং ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দুই দফা একনেকের বৈঠকে প্রকল্প বরাদ্দ অনুমোদন দেওয়ার পরও নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৮ সালের ১০ মার্চ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করলে ১৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ না করায় সে দরপত্রও বাতিল হয়ে যায়। ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি এ প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। চতুর্থ দফায় ৩৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। যাচাই-বাছাই শেষে রেজা কনস্ট্রাকশন ও টিবিএল-এসিএল এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরো প্রকল্পকে ১০টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্পটি একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়।
আওয়ামীলীগ সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ।বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী তিন দফা লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেও তা অর্জনে সফল হতে পারেননি। বিগত আট বছরে মাত্র ৩৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে প্রকল্পটির মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দুই হাজার ৩৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান ঋণ মওকুফ তহবিল যৌথভাবে প্রকল্পে অর্থের জোগান সাপেক্ষে ২০১০ সালের ২৩ আগষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ।এতে দেখা যায় কাজ শুরু করতেই আওয়ামীলীগ সরকার ৭-৮ মাস নষ্ট করেন আর প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সে হিসাবে সাত মাস আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কাথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি । সূত্র মতে জানা যায়, প্রকল্পটির ৬৫ শতাংশ কাজ এখনো বাকি। এর মধ্যে সেতুগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজই বাকি। সর্বশেষ নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী দেড় বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এ কাজের বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। এছাড়া নির্বাচনের বছরে কাজের গতি স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। এ অবস্থায় কবে নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
চলতি বছরে এপ্রিলের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ৭৩ কিলোমিটার দৃশ্যমান করার ঘোষণা করেছিলেন বাগপটু যোগাযোগমন্ত্রি অথচ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ১২ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়। আর জুলাই পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির ৩২ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করেন যোগাযোগমন্ত্রী। কিন্তু তাও যথাসময়ে অর্জন সম্ভব হয়নি। তারও আগে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর পরই যোগাযোগমন্ত্রী ২০১২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির ৩৭ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্য ঠিক করলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা সম্পন্ন হয়নি।
প্রকল্পবাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এ বিষয় বিপরীতমূখী বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে ।
এ প্রসঙ্গে একটি দৈনিকে মন্ত্রি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমিতে বেশকিছু মসজিদ, কবরস্থান, মন্দির ও বিদ্যালয় ছিল। সেগুলো স্থানান্তরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করতে হয়। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির বড় একটি অংশ দৃশ্যমান হবে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে।
আর ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ধীরগতির কারণ উদঘাটন ও নিবিড় পরিবীক্ষণে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতে, প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ করার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। এর ৭০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড এক্ষেত্রে বেশি পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ২২ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ বাস্তবায়নে নিয়োজিত দেশীয় দু’টি কোম্পানি মোটামুটি দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটি এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। পাশাপাশি প্রকল্পটিতে এ পর্যন্ত ১১ জন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরিচালক পদে ঘন ঘন এ পরিবর্তন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির অন্যতম কারণ।যদিও আবার এই মতের সঙ্গে একমত নন বর্তমান প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান। তিনি বলেন আবার বিলম্বের অন্য যুক্তি দাড় করান, মাটি ও পাথরের অভাব বিটুমিন না পাওয়ায় মত বিষয়কে ।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা, প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা,মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত না মেনে সওজের ইচ্ছামতো কাজ করা কাজে ধীরগতির অন্যতম কারণ। এছাড়া এর সঙ্গে রয়েছে কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকার কতৃক অর্থ বরাদ্দ না দেয়া।
সূত্র মতে, লক্ষ্য ঠিক রাখতে তিন বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত ১ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছর আরো ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে শেষ ছয় মাসে দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে; যা প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়া আরো পিছিয়ে যাবে।
সূত্র বলেছে,বাস্তবায়নচিত্র হতাশাজনক হলেও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি আর নকশা পরিবর্তন দেখিয়ে গত মার্চে প্রকল্প ব্যয় ৮০৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। যদিও এর পুরোটাই ধরা হয়েছে অদৃশ্য খাতে। এ নিয়ে তিন দফা বাড়ানো হয় প্রকল্প ব্যয়। নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রকল্পটির বিটুমিনে ১৬৪ কোটি ৭৬ লাখ ও মাটির কাজে ৫৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। বাকি অর্থ ব্যয় সমন্বয় ও বিবিধ খাতের নামে থোক বরাদ্দ হিসেবে রাখা হয়েছে। এ দুই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ৪০৭ কোটি ২৬ লাখ ও ৩৮ কোটি টাকা টাকা।
সময়মতো কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতি বছরই ঈদের সময় মহাসড়কটি হয়ে ওঠে জনভোগান্তির অন্যতম কারণ। মাত্রাতিরিক্ত যান চলাচল, সড়ক দুর্ঘটনা আর যানজটের কারণে চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। আর ঈদের পূর্বে যাত্রা শুরুর সময় নির্ধারিত থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছার নেই নির্ধারিত কোন সময় । বিগত আওয়ামীলীগের চার বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর ওপর সোমবার গভীর রাতে দুটি কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভাটেরচর থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে রোগী, বৃদ্ধ বা শিশু রয়েছেন তাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে। ৫ মিনিটের রাস্তা পেরোতে ৫ ঘণ্টা লাগছে। মহাসড়কে যানজটের কারণে সংযোগ সড়ক গৌরীপুর-হোমনা, গৌরীপুর-মতলব ও গৌরীপুর-কচুয়া সড়কেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত-দিন ব্যাপী যানজট, বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরমে যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বহু যাত্রী ও শিশু পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে ৮-১০ ঘণ্টার মতো লাগছে বলে যাত্রীরা জানান।যাত্রীরা বলেন, এভাবে যানজট লেগে থাকলে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে রাস্তায় ঈদ করতে হবে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের সার্জন আসাদ মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটারের অধিক যানজটের ঘটনা নিশ্চিত করেন।
বাসযাত্রীরা জানান, সোমবার রাত ১১টায় মেঘনা-গোমতী সেতুর পশ্চিম পাশে যানজটে আটকা পড়ে ভোররাত সাড়ে ৪টায় দাউদকান্দি টোল প্লাজায় পৌঁছি। পাউরুটি-কলা খেয়ে সেহরি সেরেছি।
স্থানীয়রা জানায়, মহাসড়কের গৌরীপুরে চার লেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা একটি কালভার্ট নির্মাণ করে রাস্তায় পিচ ঢালাই না দিয়েই বালু আর পাথর ফেলে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেন। এতে ওই রাস্তা দিয়ে কাভার্ড ভ্যান, লরি ও ভারী মালামাল বহনকারী যানবাহন চলাচলের সময় চাকা দেবে বিকল হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।
ঘরমুখো মানুষে মুখে বলতে শুনা যায় ‘ঢাকা শহরে উন্নয়নেরর প্রচারে জন্য আওয়ামীলীগ মানুষের বিলবোর্ড হাইজ্যাক করছে, আর বাড়ি যেতে রাস্তায় এসে আবার বুঝলাম সরকারের কথা কাজে কোন মিল নাই এরা মিথ্যা আর চাপাবাজিতেই ওস্তাদ ।’
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন