‘নৈতিকতার’ প্রশ্নে জর্জরিত বিলবোর্ডে ‘উন্নয়ন বার্তার’ প্রচারণা !!
লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪৫:৩০ দুপুর
সিকদার মোহাম্মদঃ সকল ক্ষমতার মালিক কে তা নিয়ে ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ কয়েকদিন যাবৎ আলোচনা হচ্ছিল ।আর রাজনীতির অঙ্গনে তারেক-জয় ইস্যূ শেষ হতে না হতেই নতুন করে বিলবোর্ড ইস্যূ ব্যপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে । এর সাথে যুক্ত হয়েছে নৈতিকতার প্রশ্নটি । তবে বিলবোর্ড ইস্যূটি এখন কেবল রাজনৈতিক ময়দানে আবদ্ধ নয়, এর গন্ডি আরো অনেক দূর পর্যন্ত ছাড়িয়ে সাধারণের মাঝেও আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে । বিলবোর্ড প্রচারণার নৈতিকতার বিষয় সচেতন সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন । এ শিল্পের সাথে জড়িত মানুষের রুটি-রুজি কতটা হুমকির মুখে পড়ল তাও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে ।
সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়ায় যারা বিলবোর্ড প্রচারণা চারিয়েছেন তাদের এ কর্মকান্ডের নৈতিক ভিত্তির বিষয় প্রশ্ন উত্থাপন করা হলেও সরকার দলীয় নেতা-কর্মি বা মন্ত্রিদের মন্তব্যে নৈতিকতার ছিটেফোঁটা লক্ষ্য করা যায়নি ।
প্রাথমিক ভাবে অবশ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বিলবোর্ড টানানোর বিষয়ে কিছু জানেন না বলে গণমাধ্যমের নিকট বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলেন পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে অনেকেই মুখ খুলেন ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন একটি অন লাইন পোর্টালকে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রচার তো আওয়ামী লীগই করবে। দলের প্রচারের জন্য প্রচার সেল সব ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু এই বিলবোর্ড কে টানিয়েছে সেটা না দেখে কিছু বলা যাবে না।’
এর সাথে তিনি এ কথাও বলেন যে, এটি আওয়ামী লীগ করলে সেখানে প্রচার সেলের নাম অবশ্যই থাকতো।’
এ বিষয়ে রীতিমত বোমা ফাটিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এ বিষয় তার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই নৈতিকতার প্রশ্নটি সকলের সামনে চলে আসে। তিনি বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রাজধানীতে এসব বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে।তার বক্তব্য ছিল এ রকম ‘আমি এবং আমার মন্ত্রণালয় জনগণের উন্নয়নে কাজ করল, তাহলে তো অবশ্যই আমি তার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করব। ফায়দা নেব না তা কী করে হয়। বরং ফায়দা নেওয়াটাই স্বাভাবিক।’
আওয়ামীলীগের বর্তমান সরকারের এ কাজ কে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রীতিমত ‘দখল’ রাজনীতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে । বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে দেওয়া তথ্যমতে, বিলবোর্ড দখলের এমন চিত্র এই প্রথম না। এর আগেও সরকার দলের অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী যুব লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত বছর এভাবে দখল করা হয় অনেক বিলবোর্ড। তবে এবার দখল হওয়া বিলবোর্ডে সংখ্যা অনেক বেশি ।এ ছাড়া্ও বিগত জোট সরকারে আমলে বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন বাণিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার কথা শুনা গেলেও এবার এক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে বলে ভুক্তভূগী মহল মনে করছেন ।
বিলবোর্ড ‘দখল’ করে সরকারের ‘উন্নয়ন বার্তা’ যাদের নিকট পৌঁছে দেবার জন্য এতো সব আয়োজন তারাই যে সকল কারেণে এর নৈতিকতার বিষয় প্রশ্ন তুলেছেন তার সার-সংক্ষেপ হলোঃ
বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার অনুমোদন ও অনুমতি না নিয়ে
বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও বিজ্ঞাপনদাতাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ উদ্ভব করা হল কেন?
সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সরকারদলীয় নেতাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন চিত্র সম্বলিত বিলবোর্ডগুলো এই ‘দখলদারিত্ব’ এর বাইরে রাখা হল কেন?
বিলবোর্ডে সরকার দলের দলীয় শ্লোগান ব্যবহার করে কারা এটা প্রচার করল সে তথ্য গোপন রাখা হল কেন?
বিলবোর্ড প্রচারণার পেছনে অর্থ যোগানসহ এর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারের গোজামিলের আশ্রয় গ্রহণ করল কেন?
বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুতে অনেক অসত্য এবং আংশিক তথ্য প্রচার করার কারণ কি?
সরকার বা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিলবোর্ড ব্যবহার করা হলো কেন?
এই প্রচারণার ফলে সুবিধাভূগী যদি আওয়ামীলীগ বা বর্তমান সরকার হয় তবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এর ব্যয়ভার বহন করা হবে কেন?
রাজনৈতিকদল-সরকার-রাষ্ট্র কি এক কথা?
সরকারের এই ‘উন্নয়ন বার্তা’ পৌঁছে দেয়া সম্পর্কে সচেতন মহলের বক্তব্য হল,পূর্ব আকাশে যখন প্রতিদিন রবি উদিত হয় তখন এই খবর কাউকেই কিন্তু জানানোর প্রয়োজন হয় না এছাড়া কথায় বলে চেনা বামুনের পৈতা দরকার হয় না ।
তাহলে কেন সরকারের এই পন্থা অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ল এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকদের মন্তব্য হচ্ছে, সরকারর সম্ভবত তার জনপ্রিয়তার ভাটা পড়ার বিষয়টি অনুভব করে শেষ সময়ে এসে এ ধরণের অনৈতিক কাজের আশ্রয় গ্রহণ করে জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন ।
সোমবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিলবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে বলেছেন, ‘বিএনপির অপপ্রচার ঠেকানোর কৌশলের অংশ হিসেবেই বিলবোর্ডে সরকারের উন্নয়ন প্রচার করা হয়েছে।’
বিটিভি’তে নিরঙ্কুশভাবে সরকারের ‘উন্নয়ন’ প্রচার করে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রনে প্রায় সমস্ত প্রচার মাধ্যম থাকার পরও কেন সরকার বিলবোর্ড এর মাধ্যমকে ‘অনৈতিক’ ভাবে ‘দখল’ করে ‘উন্নয়ন’ প্রচার মাধ্যম বানালো তা শহরের বাসিন্দাদের নিকট প্রশ্নই থেকে গেল ।
তবে সরকার দল আওয়ামীলীগ যে সত্যিই ‘অনৈতিকতার’ আশ্রয়গ্রহণ করেছেন এবং সাধারণের মাঝে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বিলবোর্ড সাঁটানোর পাঁচ দিনের মাথায় বুঝতে পেরে খোদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিএনপি কে একই ধরণের কাজ করার আহবান জানান ।
মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পরামর্শ দিয়ে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি যদি কোনো উন্নয়ন করে থাকে তবে তা জাতির সামনে তুলে ধরে বিলবোর্ড প্রচার করুক ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র এক কর্মি শেয়ালের লেজ কাটা যাওয়া গল্পের অবতারণা করে বলেন, ‘সরকার তার খারাপ কাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরণের খারাপ কাজে আমাদের আহবান করছে এদের থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।’
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন