পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত?

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৩০:৪৮ দুপুর

সিকদার মোহাম্মদঃ টানা চার কর্মদিবস ভয়াবহ পতন, একদিন উত্থান, একদিন পর আবারো পতন । এ জন্য অনেকে দায়ী করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। বাজার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ না থাকলে এভাবে পতন হওয়ার কোন কারণ নেই। বুধবার প্রাতিষ্ঠানিক বিক্রির চাপ না থাকায় বাজার বেড়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার আবার বিক্রির চাপ আসায় বাজারে দরপতন হয় বরে অনেকে মনে করছে। ঘটনা যদি সঠিক হয় তাহলে কেন এই পতন? বার বার পতন ঘটিয়ে কাদের স্বার্থ কারা উদ্ধার করছে? নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বা কি করছে? সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আজ এটাই প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর অজানা ।

অনেকেই হয়ত মনে করছেন মূদ্রানীতির কারণে এমনটি হয়েছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূদ্রানীতির সাথে বর্তমান শেয়ারবাজারের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ এ ধরণের মূদ্রানীতি গত দুই বছর ধরে প্রণয়ন করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলো এখন নতুন করে কোন বিনিয়োগ করছে না। এখন ব্যাংক আর পুঁজিবাজারে কোথাও তারল্য সংকট নেই। তাই মূদ্রানীতিতে নতুন করে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোন সুযোগ নেই।

৫দিন ভয়াবহ দরপতনের পর একদিন বাজার ঘুরে দাঁড়ালো। ঠিক তার পরদিনই আবারো পতনের ব্যাপারে অনেকেরই অভিমত, এখানে নিশ্চয়ই কারসাজি আছে। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ভয়াবহ দরপতনের কোন কারণই নেই।

এতবড় একটি বাজার নিয়ে কোন ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এভাবে খেলতে পারে না বলে ধারণা করছেন এসইসি’র সাবেক এক চেয়ারম্যান। কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী একসাথে এই কাজ করতে পারে বলে ধারণা তার। তিনি জানান, আড়াই বছর পরে বাজারে যখনই লেনদেন ও বিনিয়োগকারী উভয়ই বাড়া শুরু করল ঠিক তখনই অস্থির করা হচ্ছে বাজারকে। বিনিয়োগকারীদের মনে অনাস্থার সৃষ্টি করতেই এমনটি করা হচ্ছে বলে ধারণা তার।

গত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে যে ৬দিন ভয়াবহ দরপতন হয়েছে সেখানে প্রত্যেক দিনই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ ছিল। বিএসইসি’র তথ্য মতে, শীর্ষ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তেমন শেয়ার বিক্রি না করলেও তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রচুর পরিমানে শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে।

এসইসি’র সাবেক এই চেয়ারম্যান মনে করেন, বর্তমান বিএসইসি’র এখানে চরম ব্যর্থতা রয়েছে। কারণ, বিএসইসি’র কাছে যে সফটওয়্যার রয়েছে, তাতে কে এই কারসাজি করছে তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। তারপরও বিএসইসি তা প্রকাশ করছে না কিংবা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

টানা কয়েকদিন কোন কৃত্রিম বিক্রির চাপ না থাকলে এমনিতেই বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মত দেন বাজার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা লোকসানে শেয়ার বিক্রি করছে না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আচরণ সত্যিই হতাশাজনক বলে জানান তারা।

এই মুহূর্তে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই বাজার পতনের পেছনে অনেকে সমন্বয়হীনতার কথা বলছে এছাড়াও ডিএসসি’র নব-নির্বাচিত সভাপতির অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতা বিষয়ও অনেকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন, কারণ হিসেবে তারা বলছেন বাজারের এত ভয়াবহ পতনেও সভাপতি চুপ হয়ে বসে আছেন, বিনিয়োগকারীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার নূন্যতম কোন ভূমিকা তিনি রাখছেন না যা বড় ধরণের রহস্যের জন্ম দিচ্ছে । অথচ অন্যান্য ডিএসসি’র সভাপতি সময় অন্ততঃ পক্ষে সংবাদ সন্মেলন করে বক্তব্য দেয়া হতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনোবল ধরে রাখার জন্য ।

অবশ্য ডিএসসি’র সভাপতি’র অনভিজ্ঞতা এবং অন্যান্যদের তুলনায় বয়স কম হওয়ার ফলে তার ইমেজ সংকটের কারণে যথাযথ ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলেও অনেকে মনে করেণ; ফলে কেবল নিজস্ব বন্ধু বান্ধব নিয়ে কুঠুরিতে আড্ডা দিচ্ছেন বলে ফেসবুকের একটি পেজে মন্তব্য করা হয় ।ছাড়াও উক্ত পেজে ব্যক্তিগত কোন্দল, বিএসইসির অনেক কিছু দেখে না দেখার বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ।

এছাড়াও বাজার গত বুধবার ২০০ পয়েন্টের মত কেনই বৃদ্ধি পেল এবং বৃহস্পতিবার কম দরে এমনকি লসে কারা শেয়ার/ফান্ড বিক্রয় করে বাজারকে দমিয়ে রাখতে চাইছে - এটা একটা রহস্য!!! বিএসইসি চাইলে সিডিবিএল ঘেটে যে কোন সময়ে ও ধরণের অপকর্ম কারা করছে তা অতি সহজেই বের করতে পারে এবং সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারে । অথচ তা না করাতে খোদ বিএসইসি প্রতিই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সন্দেহের তীর নিক্ষিপ্ত হচ্ছে ।তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো লেনদেন চলাকালীন বিএসইসির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ; অবশ্য শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) লেনদেন চলাকালীন সময়ে তথ্য প্রকাশের আইনটি বিএসইসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে জানায়।

লেনদেন চলাকালীন সময়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বিএসইসির এমন সিদ্ধান্ত বাজারে লেনদেন চলাকালীন সময়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। প্রসঙ্গত, বুধবার বাজার চলাকালীন সময়ে বিএসইসি সব মিউচ্যুয়াল ফান্ড বোনাস শেয়ার দিতে পারবে এমন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে। এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে। বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে বিএসইসির খবর বাজারে আসার পর ৩টি ছাড়া সবগুলো মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য বেড়ে যায়। বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে উর্ধ্বমুখি ধারা দেখা গেছে দেশের দুই শেয়ারবাজরে।

গত ২৩ জুলাই বিএসইর ৪৮৭তম কমিশন সভা শুরু হয়। তবে ওইদিন সভা শেষ না হওয়ায় ২৪ জুলাই সকালে মূলতবী সভা শুরু হয়। সভার বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত সমূহ চুড়ান্ত হলে, বিএসইসি তা বেলা সাড়ে ১১টায় প্রকাশ করে।

এদিকে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, কমিশনের মূলতবী সভা শেষ হওয়ার পর তাৎক্ষণিক ভাবে বাজারের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়েছে। বিএসইসির মনে করে এ সকল তথ্য বিনিয়োগকারী দ্রুত জানানো প্রয়োজন ছিল।অথচ বুধবার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বোনাস ইউনিট ঘোষণার ফলে বাজারে ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা দিলেও একদিনের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার উল্টো চিত্র লক্ষ করা যায়। দিন শেষে ৪৩টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩টির দরপতন, ৬টি দর বৃদ্ধি ও ৪টির দর অপরিবর্তিত থাকে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড বোনাস ইউনিট প্রদান করতে পারবে এমন সিদ্ধান্ত আসার আগে আরো অনেক আগে থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই খাতটি নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। এমনও দেখা গেছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বোনাস ইউনিট প্রদান করতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু বিষয়টি যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাস্তবে রূপদান করেছে তখন তার প্রভাব নেই। তাহলে কার স্বার্থ হাসিল করল বিএসইসি লেনদেন চলাকালীন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা ।

অন্যদিকে সরকারী শেয়ার গুলোর বিষয় এক ধরণের কারসাজির অভিযোগে আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে । তাদের অভিযোগ, যে মূহুর্তে সরকারী শেয়ার গুলোর দাম একটা পর্যায়ে স্হিতিশীল ছিল তখন কিছু অন-লাইন পত্রিকায় মার্কেটে সরকারী শেয়ার নেই বলে প্রচারণা চালানো হয়; এই সংবাদের পর মাত্র কয়েক কর্মদিবসের ব্যবধানে ঐ সমস্ত শেয়ার গুলোর দাম ৪০-৫০ ভাগ দাম বেড়ে যায়, তার পরক্ষণে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সরকারী শেয়ার অফলোডের সংবাদ পরিবেশ করা হয় ফলে সরকারী শেয়ারসহ পুরো বাজার অস্থির হয়ে পরে । এই অস্থিরতার মাঝেই দীর্ঘদিন আটকে থাকা মিচুয়ালফান্ডে বিষয় নাটকীয়ভাবে বোনাস দিতে পারার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএসইসি । যা বাজারের বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি হয় ।

সার্বিক পরিস্হিতি দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণা, এই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বাজারের পতনের পেছনে কারসাজি রয়েছে আর এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা কোন নিয়ন্ত্রকসংস্থাই গ্রহণ না করার মাধ্যমে তারা বাজার বিষয় কি বার্তা দিচ্ছেন তা পরিস্কার না । ফলে বাজারে নানামূখী গুজব ভর করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো পরিকল্পিতভাবে কোন মহলকে একটি বিশেষ দামের মধ্যে শেয়ার কেনার সুযোগ করে দিচ্ছেন । যার দরুণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দর্শকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ।যদিও পতনের কারণ তদন্তের কথা বলা হচ্ছে তবে তা লোক দেখানো বলেই মনে করেন বিনিয়োগকারীরা ।

২০১০ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের দ্বিতীয় দফায় শেয়াবাজার লুটের পর যে মহাধ্বস নামে তখন থেকে বাজার ঠিক করার জন্য নানা মহল থেকে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ার বাজারে বিনেয়োগের সুযোগ চেয়ে আসছিল; কিন্ত সরকারের অর্থমন্ত্রি তাতে কর্ণপাত করেননি । অথচ সরকারের শেষ বাজেটে মেঘ না চাইতে বৃষ্টির ন্যায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে । আর এটা করা হয়েছে দলীয় বিবেচনা থেকেই । ২০০৯ থেকে যে সমস্ত সরকার দলীয় লোকজন কালোটাকার পাহাড় গড়েছে তাদের সে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার জন্যই শেষ বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা বিনিয়োগ সহ নানা প্রনোদনার সুযোগ বাজেটে রাখা হয়েছে । আর বর্তমান শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রকরা এই সকল কালো টাকার মালিকদেরকে কম দামে শেয়ার পাইয়ে দিতে ছক অনুযায়ী শেয়ার বাজার পরিচালনা করছেন বলে বাজারে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন । এর ফলে শেয়ার বাজারের উপর আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রন আরো সংহত হবে এবং দলীয় লোক নেতা কর্মিদের কালো টাকা সাদা হবে ভবিসৎ সরকারকে শেয়ার বাজার ইসূ্তে বেকায়দায় ফেলা যাবে । সরকারের শেষ সময় এসে এই নক্সা বাস্তবায়নেই বিএসইসি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আর টিটুর মতো অর্বাচিনদের দেশের এতো গুরুত্বপূর্ণ স্হানে শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় নির্বাচিত করা হয়েছে ।

বিষয়: বিবিধ

১৪৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File