সালমান-রনি দ্বন্দ্ব, “টক অফ দ্যা টাউন”

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২৪ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪৯:৪৮ রাত

আলোচিত-সমালোচিত সাংসদ গোলাম মাওলা রনিকে নিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নাটক আর নাটককে কেন্দ্র করে সাংবাদিকের মাইর খাওয়া, মামলা- পাল্টা মামলা জামিন, আবার জামিন আদেশ বাতিল আবেদন, অতঃপর জামিন আদেশ বাতিল এবং গ্রেফতারি পরওয়ানার নির্দেশ এবং গ্রেফতার এই সব ঘটনা প্রবাহ এখন “টক অফ দ্যা টাউন”।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয় সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দ্বন্দে টিকতে না পেরে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন সাংসদ গোলাম মাওলা রনি।

অবশ্য মঙ্গলবার সকালে ফেসবুকে সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার কথা লিখেছিলেন আলোচিত সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। ফেসবুকের স্ট্যাটাসে এমপি রনি লিখেন, ‘সম্ভবত আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছি। আমি অনুভব করছি সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছি। আমাদের গণমাধ্যম আমার সংসদ সদস্য পদকে কলঙ্কিত করেছে।’

স্ট্যাটসের শেষোক্তে তিনি দৃঢ়তা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমি প্রমাণ করতে সক্ষম হব এই ঘটনার পেছনের প্রকৃত সত্য কী।’ এছাড়াও তিনি মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের আহ্বান জানান তার নিজের জন্য এবং তার প্রতিপক্ষের জন্য সমান সুযোগ (লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে। যেন রীতিমত কোন যুদ্ধ ময়দানে নামতে যাচ্ছেন ।

এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করলে সাংসদ গোলাম মাওলা রনি ফেসবুকের লেখার কথা স্বীকার করে বলেন- আমি সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার কথা ভাবছি। অবশ্য কথায় আছে যতত গর্জে তত যে বর্ষে না তা তিনি যথারীতি প্রমাণ করেন ।শেষতক সাংবাদিক সম্মেলন করে রণভঙ্গ দেন যা বলে, তার সারসংক্ষেপ হল, তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দল চাইলে যে কোনো মুহূর্তে পদত্যাগ করতে রাজি আছি।’

মুলত এই ঘটনার মুল হোতা বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান । তার স্বার্থ বিরোধী কথা বলার কারনে তিনি গোলাম মাওলা রনির উপর খুব স্বাভাবিক ভাবে ক্ষিপ্ত হন । কিন্তু তিনি সরাসরি দ্বন্দ্বে না এসে তার মিডিয়া বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমপি রনিও কম নয়। হাতে নাতে ধরে ঘা মেরে বেকায়দায় পড়ে যান ।আর চির স্বভাবসুলভ সালমান এফ রহমান কোন পরিস্হিতিতেই মুখ খোলা থেকে বিরত থাকেন ।

তবে সচেতন মহল মনে করেন, সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কর্মিরা যা করেছেন তা সালমানের ব্যক্তি স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্যই আজ্ঞাবহ হিসেবে করেছেন। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে সাংবাদিক কমিউনিটি রাস্তায় নেমে যা বলছে তাতে পাবলিক কর্ণপাত করছেনা।সাংবাদিকতার মানে যে কারো কর্পোরেট স্বার্থকে রক্ষা করা না তা আমাদের সাংবাদিকদের ভুলে গেলে চলবেনা । ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের মত নিউজ কভারিংয়েও সিন্ডিকেটশনের কথা শুনা যাচ্ছে এ থেকে আমাদের মুক্ত হবার প্রতি বিশেষজ্ঞ মহল তাগিদ দিয়েছেন ।

তবে সালমান যে কতটা শক্তিশালী তা অর্থমন্ত্রি অনেক পূর্বেই বূঝেছিলেন ফলে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী রিপোর্ট প্রকাশের পরও আজ পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেন নি ঘোষণার দেয়ার মাধ্যমে ।রনি ভাষ্য মতে, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ইস্যু নিয়ে যখন সালমান রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন দলের ভেতর থেকে একজন লোকও তাকে বলেনি যে, তুমি ওনার বিরুদ্ধে কথা বলো না। একইভাবে সবশেষ দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ওই ঘটনার পরে তিনি যখন সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করলেন, তখনও নাকি তাকে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়নি যে, সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বিরোধে যেও না।'' কিন্ত একটা পর্যায়ে এসে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সহ অনেকে সমালোচনা করেন ।গোলাম মাওলা রনির এর ফলে ‘পুরো বিষয়টাকে গভীর চক্রান্ত।' বলেই মনে করেন ।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আবার সালমান এফ রহমানের প্রসঙ্গ তুলে রণি বলেন, ''ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই সংবাদকর্মীর সঙ্গে আমার যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তার পরের ঘটনা প্রবাহ দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, সালমান এফ রহমান খুবই শক্তিশালী লোক।'' গোলাম মাওলা রণি তার জামিন আদেশ বাতিল ও গ্রেফতারী পরওয়ানার জারির মাধ্যমে এবার হারে হাড্ডিতে উপলব্ধি করছেন ''সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগের কেউ নন।’। তার পরও তিনিই যে সব কিছু তার প্রমাণ পেয়ে গেছেন ।

সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় ইন্ডিপেডেন্ট টেলিভিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারপূর্বে সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, আমার জামিন বাতিল হয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমার একটি বিশ্বাস ছিল- যে সব রাষ্ট্রীয় দূর্নীতি এবং ব্যক্তি বিশেষের অন্যায় ও অবিচার সর্ম্পকে আমি সরব ছিলাম তার ‍সাথে সরকারের কোনো সংযোগ নেই। নির্বোধের মত এই বিশ্বাসের পিঠে সোওয়ার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আজ সেই বিশ্বাসে চীড় ধরেছে। যেভাবে জামিনটি বাতিল হল- তা স্বাধীন বাংলাদেশে নয়-ই, পাকিস্তান আমলেও ঘটেনি।

পুরো ঘটনা প্রবাহের প্রতি উৎসুক মানুষের যে এক ধরণের আগ্রহ রয়েছে, তা ফেসবুক দেখলেই স্পষ্ট হয়ে উঠে । কারণ রনির প্রতি গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি এবং গ্রেফতারের পর এই খবর স্বল্প সময়ের মধ্যে যে হারে ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে, তাতে মনে হয় সচেতন মহলের দৃষ্টি শেষ পর্যন্তও এর প্রতি নিবদ্ধ থাকবে ।



বিষয়: বিবিধ

১৬৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File