বিতর্কিত ভূমিকায় নির্বাচন কমিশন

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ২২ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৪৫:১৩ সন্ধ্যা

সিকদার মোহাম্মদঃ

নানামূখী কৌশল অবলম্বনে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন, ক্রমশই তাদের কর্মকান্ডে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে । একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নয়, বরং তারা সরকারের নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলেই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলসহ জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে ।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সদ্য সমাপ্ত পাঁচ সিটি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী পক্ষের সেনা মোতায়েনের দাবী উপেক্ষা করা, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বা বিএনএফ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রদানের উদ্যোগ, ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও এসএমএসে নির্বাচনী প্রচার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ অন্যতম ।ফলে আগামী দিনগুলোতে অতীতের মত নির্বাচন কমিশন ইস্যূ কেন্দ্র করে আন্দোলন সংগ্রাম দানা বাঁধতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশংকা ।

সাম্প্রতিক সময় বিএনএফ ইস্যূতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চরম অসস্তিতে আছে এবং তারা প্রতিনিয়ত নির্বাচন কমিকশনের সাথে দেন-দরবারে ব্যস্ত সময় পার করছেন । বিএনপি’র তরফ থেকে একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । রোববার(২১জুলাই) দুপুরে নির্বাচন কমিশনে বিএনএফ-এর বিষয়ে আলোচনা শেষে এম কে আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবারো প্রধান বিরোধী দল ভাঙার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বা বিএনএফ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে এক-এগারোর মতো আবারো বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে তারা।’ আর এ থেকে জনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, নির্বাচন কমিশন কি কথিত ‘ষড়যন্ত্র’ এর সহযোগী কিনা?

নিয়ম মাফিক নির্বাচন কমিশন যে কোন দলকে নিবন্ধন দিতেই পারেন, কিন্ত সমস্যা হল একটি প্রতিষ্ঠিত এবং প্রধান বিরোধী দলের কাছাকাছি নাম ও প্রতিক বরাদ্দ চেয়ে যখন আবেদন করা হয়, তখন বিতর্ক এড়ানোর জন্য, স্বাভাবিক ভাবেই কমিশনকেই দ্রুততার সাথে তা পরিস্কার করা উচিৎ; কিন্তু ঘটনা তার উল্টো ।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘বিএনএফ-এর ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’ এ থেকেও কমিশনের আচরণে ‘রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে’ বলে মনে করার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে ।তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান , ‘বিএনপির লোগো এবং প্রতীকসহ যদি নির্বাচন কমিশন বিএনএফকে নিবন্ধন দেয়, তাহলে এই কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপি কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

অন্য এক খবরে প্রকাশ ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও সেলফোনের এসএমএসের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফেসবুক, টুইটার ও সেলফোনের এসএমএসের মাধ্যমে বিধি লঙ্ঘন এবং অপপ্রচার ঠেকাতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব দিচ্ছে ইসি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা । এসব নির্বাচনে বিভিন্ন সময়ে অপপ্রচার রোধে কমিশনকে বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে বলে জানান তারা।

এছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার ও অপপ্রচার রোধে কমিশন ব্যর্থ হয়েছে দাবি করা হয়।

ইসি সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অপপ্রচার চালানো হয়। এছাড়া উস্কানিমূলক বক্তব্যসহ পরস্পরকে কটূক্তি করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে আচরণবিধিতে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রার্থীরা আচরণবিধি অনুসরণ করে প্রচার চালাতে পারবেন তবে সেলফোনের এসএমএস বা ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে সম্মানহানিকর কোনো প্রচার চালানো যাবে না।

তিনি জানান, বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আচরণবিধি সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এছাড়া পোস্টার লাগানোর জন্য স্থান সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি এতে প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের সঙ্গে জোট প্রধানের ছবিও রাখার সুযোগের বিষয়টি রাখা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার চালানোর জন্য মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১ ঘণ্টা বাড়িয়ে নির্বাচনী এলাকায় বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বস্তুত সরকারের জন্য হাল সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম গুলো বেশ অসস্থির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এজন্য বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন পেজ, ব্লগ, বন্ধ করে দিয়েছে এমনকি ফেসবুক এর থেকে বাদ যায়নি ফলে সকারের মনোভাবের সাথে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের যোগসূত্র আবিস্কার করা কঠিন কোন কাজ না ।

এছাড়াও বর্তমান নির্বাচন কমিশন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে গত দু’বছর যে ইঁদুর বিড়াল খেলা শুরু করেছে এবং বাঙালকে হাইকোর্ট দেখিয়ে যাচ্ছে তাও সাধারণ ঢাকাবাসী সহ দেশের সর্ব স্তরের সচেতন জনগণ গভীর আগ্রহের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে । ফলে কমিশন যদি সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয় ভুলে গিয়ে কেবল আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তবে তা গনতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকেই সংকটে ফেলবে ।

বিষয়: বিবিধ

১১৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File